google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re গল্প ।। অংশু।। অনিন্দ্য পাল - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

রবিবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০২১

গল্প ।। অংশু।। অনিন্দ্য পাল



অংশু

অনিন্দ্য পাল

===========       

              
                                  ১.
 
বাইকটাতে স্টার্ট দিয়ে ক্লাচটা ধরে গিয়ারে ফেলতে যেতেই মাথাটা ঝট করে চক্কর দিয়ে উঠলো অংশুর। আজ একটু বেশিই টানা হয়ে গেছে, বাড়ি অব্দি ঠিকঠাক পৌঁছতে পারলে হয়। ক্লাবের ভিতরে একবার তাকিয়ে দেখলো অংশু, আরও একটা বোতল আছে, ওরা শেষ করেই বেরোবে। এত তাড়াতাড়ি তারও যে যাবার ইচ্ছা ছিলো তা নয়, কিন্তু পুলিশ খুব অত্যাচার চালাচ্ছে। দশটার পর হলেই ধরছে। তাই এই ন'টা বত্রিশে বেরিয়ে এসেছে অংশু। 
             দু'মিনিট ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে একটু জ্ঞান-গম্যি জড়ো করে চালিয়ে দিল গাড়িটা। কুড়িতে চালাচ্ছে অংশু। ছররাতলার মোড়টা পেরিয়ে যাওয়ার পর একটু ঘোরটা কমলো, এখনও দু'কিলোমিটার। বাড়ি পৌঁছেই আছড়ে পড়বে বিছানায় -- ভাবতে ভাবতে গতিটা একটু বাড়াতেই হেডলাইটের আলোয় চোখে পড়লো কেউ একটা সাইকেল চালিয়ে রাস্তার ধার ঘেঁষে যাচ্ছে। একটা মেয়ে মনে হচ্ছে! এত রাতে? নেশার ঘোরে নিজেই নিজেকে বললো, "যাকগে, মরুকগে। অংশু, তোর কি? চল বাপ বাড়ি চল।" আর একটু কাছে আসতেই হঠাৎ একটা বদবুদ্ধি খেলে গেল অংশুর মাথায়। বদমায়েশি মজায় মনটা নেচে উঠলো। 
স্পিডোমিটারের কাঁটা ষাট ছুঁয়েছে। যা ---- ! একটা নোংরা গালাগাল দিয়ে, আবার নিজের মনে হেসে উঠলো অংশু। "এতক্ষণ পানাপুকুরে ডুবে ডুবে জল খাচ্ছে মালটা!" গাড়িটা আরো জোরে টেনে দিল, বলা যায় না কে কোথায় ঘাপটি মেরে আছে, ঘাপ করে ধরবে। বাড়ি পৌঁছে গেলে আর চিন্তা নেই। নেশার ঘোরটা বেশ কেটে গেছে এবার। মুখোরোচক আনন্দে তরল হয়ে বাইকটা নিয়ে হাওয়ায় ভেসে গেল অংশু। 
 
                                      ২. 
 
ওহ! আচ্ছা জ্বালাতন তো! এই সাত সকালে এরকম চিল-চেল্লাচ্ছে কে? রাতের নেশার ঘোরটা কাটলেও হ্যাংওভারটা রয়েছে। মাথাটা কেমন একটা ঝিমঝিম -- দপদপ করে উঠলো অংশুর। এক মুখ বিরক্তি নিয়ে  বাইরে বেরিয়ে এল সে। উঠোনটা লোকারণ্য। ভিড়ের মাঝখানে কিছু একটা রয়েছে। সবাই সেটাই দেখছে, কেউ কেউ চিৎকার করে গালাগাল করছে কোন এক লোক কে। হঠাৎ একটা কান্নার শব্দে অংশু চমকে উঠলো। চম্পার গলা যে! চম্পা কাঁদছে? ভালো করে কান পেতে শুনলো। হ্যাঁ, কোন ভুল নেই, চম্পাই কাঁদছে। কিন্তু কেন। সে তো বেঁচে বর্তে রয়েছে। একবার নিজের গায়ে হাত বুলিয়ে দেখে নিল অংশু। নাহ, ঠিকই আছে। তাহলে, চম্পা তো বিধবা হয় নি, তাহলে সাত-সকালে এরকম মড়া কান্না কাঁদছে কেন?  
বারান্দাটা পেরিয়ে নেমে এল অংশু, সবাই তার দিকে কেমন অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে -- অংশুর অবাক লাগলো। "কি রে বাবা! কেসটা কি?" হাত দিয়ে ভিড় ঠেলে ভিতরে ঢুকে প্রথমেই তার চোখ গেল চম্পার দিকে। একটা সাদা কাপড়ে ঢাকা মানুষের পায়ের কাছে বসে মড়া কান্না কাঁদছে। মানুষটা কে? এবার অংশুর চোখটা গিয়ে পড়লো সেই সাদা কাপড়ে ঢাকা মানুষটার মুখের উপর। কিন্তু একি? এতো বৈঁচি! তার মেয়ে। ক্লাস ইলেভেনে পড়ে। হঠাৎ করে অংশুর চোখের সামনে গতকাল রাতটা ভিড় করে এল। পাশ থেকে কেউ একটা বললো, " কাল রাত থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেল না। পড়তি গে না কি দেরি হয়ে গেছলো। চম্পা, আমরা সবাই খুব করে খুঁজিছি, সব জায়গায়, তন্ন তন্ন করে, কিন্তু পাইনিকো। আজ সকালে ও পাড়ার হারুর ছেলে এসে খবরটা দিল। ছররাতলার মোড়টা পেইরে ঘোষেদের যে বড় পানাপুকুরটা, ওখেনে ডুবে ছেল। সাইকেলটা পাড়ে আটকে ছেল। বই এর ব্যাগটাও পিঠেই আটকে ছেল গো। তা তুমি বোধ হয় এসবের কিছুই জান না। আর জানবেই কি করে? মদের নেশায় তো বেছনায় পড়ে ছেলে। আহারে সোমত্ত মেয়েটা -- চলে গেল। খুব মিশুকে ছেল, জানো। আমারে সব সময় ..." 
               আর কিছু শুনতে পারছিল না অংশু। এমনকি চিৎকার করে মেয়েটাকে ডাকতে চাইলো, তাও পারল না, গলাটা আটকে গেল। শুধু কানে কাল রাতের একটা আর্তনাদ হঠাৎ ভেসে উঠলো, আর চোখে ভেসে উঠলো বাইকের হেড লাইটের আলোয় দেখা একটা মেয়ে, সাইকেল চালিয়ে রাস্তার ধার ঘেঁষে চলেছে। 
 
=============================== 
 
 

 

 
অনিন্দ্য পাল 
প্রজত্নে -- বিশ্বনাথ পাল 
গ্রাম -- জাফরপুর 
পোঃ-- চম্পাহাটিি 
পিন - ৭৪৩৩৩০
থানা -- সোনারপুর 
জেলা -- দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা 
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত 
Mob: 9163812351
ধন্যবাদ। 





 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন