Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

প্রবন্ধ।। বাংলায় মুসলিম বিজয় ও বাংলা সাহিত্য।। আবদুস সালাম


বাংলায় মুসলিম বিজয় ও বাংলা সাহিত্য

 আবদুস সালাম


দিল্লীতে তখন মুসলমান রাজ‍্য প্রতিষ্ঠিত।১২০৬ থেকে ১৭৬৫ (১২০০ থেকে ১৮০০)  ইতিহাসের বিচারে যেমন মধ‍্যযুগ, তেমনি বাংলা ভাষা সাহিত্যের হিসেবে ও মধ‍্যযুগের সূচনা। তুর্কী সেনা মহম্মদ বখতিয়ার খিলজী ( ১১৯৯_১২০৪খ্রীষ্টাব্দ )বাংলা দেশ জয় করেন ।তখন লক্ষন সেন বাংলা র রাজা। বখতিয়ার খিলজী র  ভয়ে রাজা লক্ষণ সেন পূর্ব বঙ্গে পলায়ন করেন।  ফলে এই সময় থেকে বাংলায় মুসলমান অনুপ্রবেশ ও শাসন চালু হয়।লক্ষণ সেনের সঙ্গে   বহু রাজপুত্র,বিজ্ঞজন তার সহযোগী হয়।  আর অনেক হিন্দু ও বৌদ্ধ নেপালে পলায়ন করেন।  অবশ্য পূর্ব বঙ্গের রাজত্ব  হিন্দু, বৌদ্ধ ,সেন ও বর্মণ রাজারা  সম্মিলিত ভাবে একশত বৎসর তুর্কী আক্রমণ ঠেকিয়ে রাখতে পেরেছিলেন।১২০০থেকে ১৩৫০ সাল পর্যন্ত এই সময়কে বাংলা ভাষা সাহিত্যে মধ‍্য যুগের সূচনা, আবার যুগ সন্ধিকাল ও বলা চলে।১২০০থেকে ১৩৫০এই দেড়শত বৎসর বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকে সাহিত্য  শূন্যতার  ইতিহাস বলা যেতে পারে ।

  তুর্কী বিজেতাগণ  রাজ‍্য বিস্তার করার সময় দলে দলে সুফী দরবেশ গাজী গণের  প্রবেশ ঘটে। তাদের চরিত্র মাধুরী , এবং ব‍্যাবহার দেখে দলে দলে হিন্দু মুসলমান একসূত্রে গাঁথা হতে থাকে।

  বিজয়ী মুসলমানগণ যে দেশে জয় করেছে সেখানকার অধিবাসীরা আস্তে আস্তে মুসলমান ধর্মের ছায়া তলে এসেছে। অথচ হিন্দু জাতির দেশে মুসলমান সম্রাটগণ সাতশত বৎসর রাজত্ব করলেও হিন্দু জাতিও হিন্দু ধর্ম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া তো দূরের কথা ভারতবর্ষের তিরিশ শতাংশ  হিন্দু   মুসলমান হয়নি । ইতিহাসের এ এক আশ্চর্য ঘটনা।


 বিজেতারা   পরাজিত জাতিকে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা না করে এদেশে তারা বসবাস শুরু করলো। বসবাসের সূত্র ধরে দেশবাসীর সঙ্গে নানা ভাবে জড়িয়ে পড়লো। এদেশে তারা বিবাহ  করে সামাজিক আদান প্রদানে অংশগ্রহণ করতে শুরু করলো। বিজেতা ওবিজিত ক্রমশ জীবন যাত্রা ও সংস্কৃতি কে আপন করে নিতে লাগল। সংস্কৃতিগত যে বিরোধ তার  উগ্রতা কমে এলো। দুই সংস্কৃতি এক হয়ে  না গেলেও দুই সংস্কৃতির মিশ্রণে মিশ্রিত সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। বিভেদ থেকে গেলেও বিরোধ ক্রমশ ক্ষীণ হতে শুরু করেছিল। 

     মুসলিম বিজয় যেমন সারা ভারতকে প্রভাবিত করে ছিলো তেমনি বাংলার ক্ষেত্রে ও একই রূপ নিয়েছিল। বিজয়ী মহম্মদ বখতিয়ার খিলজী ও বিজিত লক্ষণ সেন সম্ভবত দু'এক বৎসর এদিকে ওদিকে মৃত্যু বরণ করেন। সম্ভবত১২০৫খ্রীষ্টাব্দে । সেন রাজারা অনেকেই কবি ছিলেন।সেন রাজাদের অভ‍্যুদয়ের ফলে অপভ্রংশ ও বাংলায় রচিত । তান্ত্রিক ও সহজিয়া সাহিত্যের প্রসার অনেক টা কমে গিয়ে ছিলো । মধ্য যুগে বাংলা সাহিত্যে ও সংঘাত, প্রতিরোধ,ও সংযোগ মিলে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। সাহিত্য লিখবো বলে তো কেউ সাহিত্য রচনা করে না। সমাজের প্রয়োজনে কোনো কোনো  জিনিসের বর্ণনা রাখতে হয়েছে । এগুলো ই পরে সাহিত্যে জায়গা করে নিয়েছে।তখন ধর্মকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে সমাজের পরিচয়। এখানে একটা কবিতা তুলে দিলাম তখন কার সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে। পন্ডিত রামাঞি রচিত কবিতা তুলে দিলাম।


   অন্তরে জানিয়া মর্ম   বৈকুণ্ঠে থাকিয়া ধর্ম

         মায়ারূপী হলো খোন্দকার।

হইয়া যবন রূপী     শিরে পড়ে কালো টুপি

       হাতে শোভে ত্রিকচ কামান।

চাপিয়া উত্তম হয়   ত্রিভূবনে লাগে ভয়

        খোদায় বলিয়া একনাম।

নিরঞ্জন নিরাকার      হইল ভেস্ত অবতার

         মুখেতে বলয়ে দম্বদার।

যতেক দেবতা গত    সভে  হয়‍্যা একমন

       আনন্দে তে পরিলক্ষিত ইজার।

ব্রহ্মা হইলো মহামদ     বিষ্ণু হইল পয়গাম্বর

         আদম হইল শূলপাণি।

গণেশ হইল কাজী     কার্তিক হইল গাজী

      ফকির হইলো যত মুনি।

রেজিয়া আপন ভেক   নারদ হইল শেখ

        পুরন্দর হইল মৌলানা।

চন্দ্র সূর্য আদি দেবে    পদাতিক হয়‍্যা সেবে

      সভে মেলি  বাজায়  বাজনা ।

দেখিয়ে চন্ডিকা দেবী     তিহ হইল হায়া বিবি

      পদ্মা বতী হৈলো বিবি নূর।

যতেক দেবতাগণ     করিল দারুণ পণ

       প্রবেশ করিল জাজপুর। 

দেউল দোহারা ভাঙে   ক‍্যাড়াকিড়‍্যা খায় রঙ্গে

     পাখড় পাখড় বলে বোল্ ।

ধরিয়া ধর্মের পায়      পন্ডিত রামাঞি গায়

       এ বড়ো বিষম গন্ডগোল।

______


    ধর্মের গুরুত্ব কে খর্ব না করে ধর্মের নানা কাহিনী, কথা সাহিত্য কে তখন পুষ্টি জুগিয়েছে। সেদিনের মানুষের ধ‍্যান  ধারণা, বেদনা আনন্দ আর অন্তর্নিহিত সামাজিক ঘাত প্রতিঘাত, বেদনা ,বর্ণ বৈষম্য ,বর্ণ বিরোধ প্রভৃতি আপোষ রফা কথা লেখা হতো। এগুলো ই বাংলা গদ্য সাহিত্যের বুকে এঁকে দিয়েছিল পদচিহ্ন।।


আর্যী করণের পরবর্তী ৬০০বছর  জেলাঞ্চলে  অর্থনৈতিক , সামাজিক সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ইতিহাসের গতিধারা  আর্যী করণের দ্বারা প্রভাবিত ছিল। তবে ঐ ৬০০বছরে  বেশ কিছু পরিবর্তন আমাদের চোখে পড়ে ।

          যেমন রাষ্ট্রীয়  ভরকেন্দ্র মগধ থেকে সরে আসে বাংলায় এবং বিকাশ ঘটে সামন্তশ্রেণীর ।

          সপ্তম শতাব্দী থেকে ত্রয়োদশ  শতাব্দী পর্যন্ত রাজা শশাঙ্ক থেকে পাল ও সেন যুগে কর্ণ সুবর্ণ ও গৌড় কে কেন্দ্র করে রাষ্ট্র কাঠামো শক্তি শালী হয় ও সামন্ত শ্রেণীর পূর্ণ বিকাশ ঘটে।

           অষ্টম থেকে দশম শতাব্দীতে গৌড়ীয় প্রাকৃত ভাষা পরিবর্তিত হতে হতে বাংলা ভাষার উদ্ভব ঘটে ও বাংলা সাহিত্যের প্রাথমিক পরিচয় ও প্রসার শুরু হয় ।

             এই বাংলায় মুসলমান শাসকেরা ছিল বহিরাগত এবং তাদের  মুখের ভাষা ছিল তুর্কী।রাজ ভাষা ছিল ফারসি । সময়ের সাথে সাথে মূসলমান শাসকেরা সাধারণ প্রজাদের সাথে নিজেকে জড়িয়ে নেয়। বাংলায় মুসলমান শাসন শুরু হয় একেবারে দ্বাদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে। আর বাংলা ভাষায় কাব্য রচনা হয়  আরও দুশো বছর পর (শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন )!

১২০১_১৩৫২ সাল কে বাংলা সাহিত্যের জগতে এক  অন্ধকারময় যুগ। কারণ এই সময়ে স্থানীয় রাজাদের সাথে যুদ্ধ বিগ্রহ লেগেই থাকত। সাহিত্য চর্চার আদৌও কোন সুস্হ পরিবেশ ছিল না।


তুর্কী বিজয়ের প্রথম পর্ব ( ১২০০থেকে১৩৫০) এই দেড়শত বৎসর বা্ংলার সমাজ সংস্কৃতির তেমন কোন তথ্য প্রমাণ আমরা পাইনা ‌। অনেকেই এটা দাবি করে যে তুর্কী বিজয়ের ঢেউ নাকি এর জন্য দায়ী। ১২২৭থেকে ১২৮৭খিলজীও তুঘলকি বংশের শাসন১২৮৬থেকে১৩২৮বলবনী শাসকগোষ্ঠীর উত্থান পতন । বলবনী শাসনের আমলে উত্তর বঙ্গ (লক্ষণাবতী) সপ্তগ্রাম( মধ‍্যপশ্চিম বঙ্গ) সোনার গাঁও( মধ‍্যপূর্ববঙ্গ)ও চট্টগ্রাম( পূর্ব বঙ্গ) কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে রাজ‍্য বিস্তার। এই সময় সুফী দরবেশ গাজীগণের দলে দলে প্রবেশ করে ও   ইসলাম প্রচার করতে শুরু করে।এই সব সুফী দরবেশ গাজীগণের (আখলাক) চরিত্র মাধুর্য্য রাজ‍্য বিস্তারের প্রধান অঙ্গ  হয়ে ওঠে। ১৩৪২থেকে১৩৫৭সালে সুলতান সামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ বাংলায় স্বাধীন রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলায় ফিরে আসে স্বস্তির যুগ।

  আবার ইলিয়াস শাহী বংশের ছেলেরা আরাম আয়েশে মাতে ।পতন শুরু হয়।১৪১৮ থেকে ১৪৩১সাল পর্যন্ত হিন্দু রাজার রাজত্বে বাংলা শাসিত হয়।এই সময়  রাজা ছিলেন গণেশ । তিনি সম্ভবতঃ কোঁচ রাজা ছিলেন। অধ্যাপক সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় এর মতে বরেন্দ্র, কৈবর্ত অভ‍্যুদয়ের মতো একটা উপজাতির অভ‍্যুদয় হয় তখন ।  গণেশ তখন বাংলাদেশের রাজা। বাংলা সাহিত্যের আঙিনায় রাজা গণেশের নাম তখনই আসে।পরে রাজা গণেশের পুত্র যদু(  জালালুদ্দিন নাম নিয়ে) ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।ও রাজ‍্য চালাতে থাকেন। তিনি সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ বশতঃ কবি বৃহস্পতি মহিন্তাকে সভা কবির মর্যাদা দেন। কবি বৃহস্পতি মহিন্তার কাব্য রচনা আমরা উদ্ধার করতে পারিনি ।এরাজ‍্য বেশি দিন স্থায়ী হল না। আবার ইলিয়াস শাহী বংশের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা পায়।১৪৪২থেকে ১৪৮৭সাল পর্যন্ত তারাই বাংলার রাজা হয়ে বিরাজমান হন । ১৪৮৭থেকে ১৪৯৩ গৌড়ের সিংহাসন নিয়ে ছিনিমিনি চলে। 


         সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ্ )১৩৮৯___১৪১১) শিক্ষানুরাগী বলে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর পৃষ্ঠ পোষাকতায় শাহ মুহাম্মদ ঘুরী রচনা করেন বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ (ইউসুফ জুলেখা) ।এই ধর্মীয় কাব্য উপাখ্যান বাংলা কাব্য সাহিত্যে নবদিগন্তের সুচনা করে ।


           সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহর আমলে বাংলা সাহিত্যের জগতের অন্ধকার কেটে যায়। সাহিত্য সাধনার একটা পরিবেশ তৈরি হয় ।এই সময়কে বাংলা সাহিত্যের স্বর্ণ যুগ বলা যেতে পারে। মধ‍্যযুগের বাংলা সাহিত্য হুসেন শাহ ও তার পুত্র নুসরৎ শাহ্ এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। হুসেন শাহী বংশের বদন‍্যতায় বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে । ‌

১৪৯৩ সালে হুসেন শাহ বাংলায় রাজ‍্য প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন।১৪৯৩থেকে ১৫১৯সাল পর্যন্ত হুসেন শাহ এবং তার পুত্র নুসরৎ শাহ্ ১৫১৯থেকে ১৫৩২সাল পর্যন্ত রাজত্ব কায়েম করতে সক্ষম হন। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে অনেক  কবি রাষ্ট্রের সহায়তায়  জমাটি প্রেমের কাব্য রচনা করেন। এদের ভিতর বিখ্যাত ছিলেন সাবিরিদ খান (হানিফা ও কায়রা পুরী),দোনা গাজী (সয়ফুল মূলক), দৌলত উজির বাহরাম খান (লাইলা মজনু) প্রভৃতি ধর্মকেন্দ্রিক প্রেমকাব্য। এই সকল কবিগণের লেখায় মানবিকতা, নৈতিক গুণাবলী , চারিত্রিক বিশুদ্ধতার দিকে বেশি নজর ছিল।আব্বার এও লক্ষ্য করি ইতিহাসের সাথে কল্পনার মিশ্রণ ঘটিয়ে ইসলাম মুখের বীর গাথা রচনা করেন। সুলতান ইলিয়াস শাহের (১৪৭৪__১৪৮১) সভাকবি সেখ জৈনুদ্দিন রচনা করেন (রসুল বিজয়)। মূলত এই গ্রন্থের মূল উপাদান   সংগ্রহ করেছিলেন ফারসি গ্রন্থ থেকে।

 সেখ ফৈজুল্লাহ রচনা করেন ( গাজী বিজয়)।

পারস্যের কবি জালালুদ্দীন রুমী এবং অন্যান্য অনেক সূফী দরবেশ কবি সাহিত্যিকদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনা করেন। সুলতান হোসেন শাহ এর অধীনে চাঁদ কাজী (নবদ্বীপ এর) গীতিকবিতা রচনার প্রথম খ্যাতনামা কবি। মুসলিম কবি গণ এই সময় প্রচুর হামদ্ ও নাত্ রচনা করেন। এগুলো বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।


মধ‍্যযুগের বাংলা সাহিত্য হুসেন শাহ ও তার পুত্র নুসরৎ শাহ্ এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। হুসেন শাহী বংশের বদন‍্যতায় বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়ে উঠে।১৫৪৫_১৫৭৫এর মধ্যে শেখ ফয়জুল্লাহ সত্ পীরের আখ্যান মূলক কাব্য রচনা করেন এবং সমাদৃত হন। তিনি হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী ও মুসলিমদের হাদীস কোরআন ভিত্তিক আখ্যান মূলক কাব্য রচনা করেন। এই কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী১৫৭৫ সাল রচনা করেন বিখ্যাত চন্ডীমঙ্গল কাব্য। তিনি ছিলেন রাজা রঘুনাথ এর সমসাময়িক।

                              এই রকম কাব্য গাথা অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।


মুসলিম কবিগণ বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধ করার জন্য  আরবি ফারসি ভাষার বিভিন্ন শব্দের সমন্বয় ঘটিয়ে বাংলা কাব্য রচনা করেন।


 সুলতান নুসরত শাহের পুত্র যুবরাজ ফিরোজ শাহ এর পৃষ্ঠপোষকতায় আফজাল আলী বেশ কিছু ভালো কবিতা উপহার দেন । এগুলো সব বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। কবি আলাওলের সময় বাংলা ভাষায় ইসলামী সাহিত্যের ইসলামী ঐতিহ্য  উন্নতির শিখরে অবস্থান করে। এই সময় হিন্দু মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের কবি সাহিত্যিক বৃন্দ আরবি ফারসি ভাষার সংমিশ্রণে কাব্য রচনায় আগ্রহী হয়ে উঠেন।ও বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেন।


 রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে অনেক টা অন্ধকার দূর হলো। সুলতান শাসকগোষ্ঠী পুরাতন হিন্দু শাসকগোষ্ঠীর সমাদর করতে শুরু করেন। অভিজাতদের উপর তলার লোকেদের সাথে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ  জাগাতে সচেষ্ট হন। তৈরি করেন উন্নয়নের পরিবেশ। সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে হিন্দু মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষ জোট বাঁধে।


‌পরে আফগানী সুলতান ১৫৫৩থেকে ১৫৭৫এবং১৫৭৫থেকে ১৭৫৭সাল পর্যন্ত তার ধারা  অব‍্যাহত থাকলো।


 ------------- 

তথ্য সূত্র

 ১)হিস্ট্রি অফ বেঙ্গল :   সুরেন্দ্র নাথ

২)বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস জে আর এ এস১৯৩০ : নগেন্দ্রনাথ নাথ বসু

৩)প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের কালক্রম১৯৫৮:  শ্রী  সুখময় বন্দোপাধ্যায়

৪)বাংলার ইতিহাস সুলতানী আমল (পৃষ্ঠা ৪৫৮) : আব্দুল কাদেরখাঁ

৫) বাংলায় ইসলামের আবির্ভাব ও বিকাশ এবং একটি নতুন ধারার গোড়াপত্তন ( প্রবন্ধ) মোহাম্মদ ইউসুফ সিদ্দিকী ( বাংলাদেশ)


১০/০১/২০২১



আবদুস সালাম
 প্রয়াস শ্রীকান্ত বাটি মাদারল্যান্ড
ডাক রঘুনাথগঞ্জ 
মুর্শিদাবাদ ৭৪২২২৫
৯৭৩৪৩৩২৬৫৬








 


 

মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩