Featured Post

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ছবি
  এই সংখ্যায় একটি গ্রন্থ আলোচনা ও একটি ধারাবাহিক রচনা ছাড়া সব লেখাই ভাষা দিবস, মাতৃভাষা, ভাষাচেতনা ও ভাষা সমস্যা বিষয়ক রচনা। লেখাগুলি এই সংখ্যাকে অনেকটাই সমৃদ্ধ করেছে। পড়ুন। শেয়ার করুন। মতামত জানান। লেখকগণ নিজের নিজের লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন যতখুশি, যে মাধ্যমে খুশি। কিন্তু স্ক্রিনশট শেয়ার নৈব নৈব চ!  অন্য বিষয়ের লেখাগুলি আগামী সংখ্যার জন্য রইল।  সকলকে ধন্যবাদ, অভিনন্দন। ভালো থাকুন।   --সম্পাদক, নবপ্রভাত। ==  সূ  চি  প  ত্র  == প্রবন্ধ-নিবন্ধ অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙ্গালীর বাংলা ভাষা দুর্জয় দিবস।। বটু কৃষ্ণ হালদার ভাষা শহীদদের পঁচাত্তর বছর।। অনিন্দ্য পাল একুশে ফেব্রুয়ারি : বাঙালির শ্রেষ্ঠ অশ্রুবিন্দু।। জীবনকুমার সরকার কবিগানের সাহিত্যিক ও সমাজতাত্ত্বিক মূল্য।। বারিদ বরন গুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি।। শ্যামল হুদাতী মায়ের দুধ আর মাতৃভাষা।। প্রদীপ কুমার দে একুশে ফেব্রুয়ারি : কিছু কথা।। বনশ্রী গোপ বাংলায় কথা বাংলায় কাজ।। চন্দন দাশগুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও তার মুক্তির পথ।। মিঠুন মুখার্জী. হে অমর একুশে, তোমায় ভুলিনি, ভুলব না।। মহম্মদ মফিজুল ইসলা...

প্রবন্ধ ।। করোনা ভাইরাসের বিশ্বভ্রমণ ।। সবিতা বিশ্বাস

 করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় একটা ঢেউ কি আসবে? - BBC News বাংলা

করোনা ভাইরাসের বিশ্বভ্রমণ

                                                                                                            

 সবিতা বিশ্বাস 

 

 

 ছটফটে, স্মার্ট করোনাকে কেউ আটকে রাখতে পারলনা | ১৯৩০ সাল থেকেই সে চেষ্টা করছিল বেরিয়ে পড়ার, কিন্তু ডাক্তাররা, বিজ্ঞানীরা আটকে দিয়েছে বারবার | তখন অবশ্য অন্য নাম ছিল, ব্রঙ্কাইটিস ভাইরাস | সেবার বেশিদূর যেতেও পারেনি | ওই মুরগীর খোঁয়াড় পর্যন্ত | একেবারেই যে মানুষদের বাড়ি যায়নি তা নয়, তাদের বাড়ি গিয়ে তাদের দেহের কুঠুরিতেও হানা দিয়েছিল | তবে ওই যে ডাক্তার! তারা টেনে বের করে নিয়ে গেল গবেষনাগারে |

 

এবার অবশ্য একটা নয়, দু'দুটো নাম দিয়ে দিল | 'মনুষ্য করোনাভাইরাস ২২৯ই' এবং 'মনুষ্য করোনাভাইরাস ওসি৪৩' | বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন একে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেবেন, কিন্তু করোনা ভাইরাস একা নয়, আরো জ্ঞাতিদের ডেকে নিয়ে এল | তাদের নামকরণ ও হল | ২০০৩ সালে 'এসএআরএস-সিওভি',২০০৪ সালে 'এইচসিওভি এন এল ৬৩, ২০০৫ সালে 'এইচকেইউ১', ২০১২ সালে 'এমইআরএস-সিওভি' এইরকম সব কঠিন কঠিন নাম | তবে নামে কি আসে যায়! কাজটাই আসল |

 

এই করোনা নামটা কিন্তু দারুন! করোনাভাইরাস শব্দটি ল্যাটিন ভাষার করোনা থেকে নেওয়া হয়েছে যার অর্থ 'মুকুট' | এই নামকরণের যথার্থ কারণ ও আছে | দ্বিমাত্রিক সঞ্চালন ইলেকট্রন অনুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখা গেছে এই ভাইরাসের গায়ে যে গদা আকৃতির প্রোটিনের কাঁটা আছে সেগুলোকে অনেকটা মুকুটের মত দেখায় | ভাইরাসের উপরিভাগ প্রোটিন সমৃদ্ধ থাকে যা ভাইরাল স্পাইক পেপ্লমার দ্বারা এর অঙ্গসংস্থান গঠন করে | এ প্রোটিন সংক্রমিত হওয়া টিস্যু বিনষ্ট করে |

 

২০১৯ সালে চীনে 'এসএআরএস-সিওভি-২' নামের যে প্রজাতিটি পাওয়া যায় সেই হল নোভেল করোনাভাইরাস | ঐসব সাংকেতিক নাম একেবারেই পছন্দ ছিল না করোনার | এই নামটা দারুণ!

পছন্দসই নাম পাবার পরই করোনা বেরিয়ে পড়ল অভিযানে, বিশ্বভ্রমণে | কিন্তু করোনা তো একা একা ট্রেনে, বাসে, প্লেনে চেপে বিশ্বভ্রমণ করতে পারবে না, তাই প্রথমে করোনা বাদুড়কে টার্গেট করলো, ওদের সঙ্গে বেরিয়ে পড়বে | কিন্তু নাঃ! এভাবে হবেনা | অন্য প্রাণী দিয়ে কোনো কাজ হবেনা, একমাত্র মানুষই করোনার মনোবাঞ্ছা পূরণ করতে পারবে | কেননা মানুষ সবসময় সব জায়গায় ঘুরছে | পাহাড়, পর্বত, নদী, সাগর, ঝড়, ঝঞ্ঝা, বন্যা, তুফান  যাই হোক না কেন মানুষ থেমে নেই | তাই ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে মাসে চীনের উহান প্রদেশ থেকে করোনা ভাইরাস যাত্রা শুরু করে | করোনার যাত্রাপথ একেবারে নিষ্কন্টক | এক এক করে বিশ্বের প্রায় সব দেশ জয় করে ফেলছে | মানুষকে ঘরবন্দী করে জনজীবন অচল করে রাজপথে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে করোনা ভাইরাস |

 

করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুদের শ্বসনতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায় | ক্ষতির সম্ভাবনার দিক থেকে এই ভাইরাস বৈচিত্র্যময় | ঠান্ডার পাশাপাশি বড় ধরণের কিছু উপসর্গ সৃষ্টি করে, যেমন জ্বর, ফুলে যাওয়া অ্যাডিনয়েডের ফলে গলা ব্যথা | ভাইরাসটি একইসাথে সিভিয়ার এ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) এবং উর্দ্ধ ও নিম্ন শ্বাসনালীর সংক্রমণ ঘটায় | শ্বাসের সাথে যে জলকণা বেরোয় তার মাধ্যমে চোখ, মুখ, বা নাকের মধ্য দিয়ে একজন সুস্থ মানুষের শরীরে ভাইরাস কণা অর্থাত ভিরিয়ন ঢুকে শ্বাসনালীর মধ্যে দিয়ে ফুসফুসে পৌঁছয় | ফুসফুসে পৌঁছে শ্বাসনালী ব্রঙ্কি (bronchi) বলে দুটো ভাগে ভেঙ্গে যায় | এই ভাইরাস ব্রঙ্কির এক বিশেষ ধরণের কোষকে আক্রমণ করে | এর ক্লিনিকাল লক্ষণ হল জ্বর, কাশি, ক্লান্তি, থুতু ওঠা, শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা আর কিছু ক্ষেত্রে পাতলা পায়খানা এবং বমি | এইসব লক্ষণ দেখে ডাক্তার ঠিক করেন রোগী কোভিড-১৯ এ ভুগছেন কি না |

 

সাধারণত সুস্থ লোকের রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়ায় ছয় থেকে আট দিনের মধ্যে সংক্রমণ সেরে যাওয়া উচিত | কিন্তু যাদের সুগার, প্রেশার, এইচ আই ভি, ক্যান্সার, হার্টের অসুখ বা অটোইমিউন ডিসঅর্ডার আছে তাদের ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো গুরুতর হয়ে ওঠে | অঙ্গ প্রতিস্থাপন (ট্রান্সপ্লান্ট) হওয়ার ফলে যারা প্রতিরোধ ব্যবস্থা স্তিমিত করার ( ইমিউনোপ্রেসিভ) ওষুধ খান তাদেরও একই সমস্যা দেখা দেয় | এইসব রোগীদের ক্ষেত্রে প্রতিরোধ ব্যবস্থা সহজেই নাজেহাল হয়ে পড়ে আর সংক্রমণের বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে অতিসক্রিয় হয়ে ওঠে | শরীরের এই অত্যধিক রোগ প্রতিরোধের প্রচেষ্টার ফলে প্রচুর সক্রিয় শ্বেতরক্তকণিকা ফুসফুসে জড়ো হয় আর ফুসফুসের ক্ষতি করে, যার পোশাকি নাম ইমিউন-ইনডিউসড লাং প্যাথলজি | এরপর ফুসফুসের ছিদ্রে (অ্যালভিওলিতে) জল জমে নিউমোনিয়া সৃষ্টি করে এবং রোগীকে শ্বাস নিতে ভেন্টিলেটরের মতো জীবনদায়ী ব্যবস্থার সাহায্য নিতে হয় | এর সাথে অতিসক্রিয় রোগ প্রতিরোধক কোষ (ইমিউন সেল) থেকে অতিরিক্ত সাইটোকাইন ঝড়ের মতো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে | কিডনি, লিভার, এবং হার্টের মতো শরীরের অনেক অঙ্গে একসাথে পড়ে এর প্রভাব | এইসময় রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা একেবারে ভেঙ্গে পড়ার পর্যায়ে চলে যায় | এর সুযোগ নিয়ে শরীরে অন্যান্য ব্যাকটিরিয়ার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে এবং পরিস্থিতি আরো জটিল করে তোলে | এইসব ব্যাকটিরিয়ার সংক্রমণ সাধারণ সময়ে প্রাণঘাতী নয় | কিন্তু এখন এরাই সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে সেপটিক শক সৃষ্টি করে | এর শেষ হতে পারে একাধিক অঙ্গের একসাথে ব্যর্থতার (মাল্টিপল অর্গান ফেইলিওর) ফলে রোগীর মৃত্যুতে |

 

প্রথম থেকেই করোনাকে আটকাবার জন্য মাস্ক দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখার কথা বলেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা | কারণ শ্বাসের সাথে যে জলকণা বেরোয় তার মাধ্যমে চোখ, মুখ বা নাকের মধ্য দিয়ে একজন সুস্থ মানুষের শরীরে ভিরিয়ন সরাসরি ঢুকে পড়তে পারে | এছাড়া দূষিত পৃষ্ঠতল থেকেও মানুষের শরীরে ভিরিয়ন ঢুকতে পারে | এই ভাইরাস প্রথমে নির্দিষ্ট কোষকে চিহ্নিত করে, সেই কোষের ওপর গিয়ে আটকায়, তারপর কোষের ভিতরে ঢোকে এবং কোষের ভিতরে নিজের আরএনএ (RNA) ছেড়ে দেয় | এরপর ভাইরাস কোষের যন্ত্রপাতি ছিনতাই করে নিজের জিনোম আর প্রোটিন বানাতে শুরু করে | সবশেষে অনেক নতুন ভাইরাস কণা বা ভিরিয়ন তৈরী হয় | তারপর এরা কোষ থেকে বেরিয়ে চারপাশের সুস্থ কোষকে আক্রান্ত করে |

 

করোনাভাইরাস এইভাবে মানুষ থেকে মানুষে চেনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র বিশ্ব দাপিয়ে বেড়াচ্ছে | একে আটকাবার জন্য জোর কদমে চলছে গবেষণা | খুব তাড়াতাড়ি একে থামিয়ে দেবে বিশ্বের বিজ্ঞানীরা |

করোনা ভাইরাসের বিশ্বজয়ের স্বপ্ন ভেঙ্গে ফেলার দায় শুধুমাত্র ডাক্তার বা বিজ্ঞানীর নয়, আমাদেরও দায় দায়িত্ব নিতে হবে | বার বার হাত ধোওয়া, জীবাণুনাশক ব্যবহার, ছয় ফুট দূরত্ব মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলার পাশাপাশি ৬৫ বছরের বেশি বয়সের ও ১০ বছরের কমবয়সীদের বেশি যত্ন নিতে হবে | এভাবেই করোনার বিশ্বজয়কে প্রতিহত করতে হবে, যদিও ইতিমধ্যেই বিশ্বে ৬৯,২৪০,১৯৬ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন করোনায় (১০/১২/২০২০) | মারা গেছেন ১,৫৭৫,৮১৯ জন | এবং করোনাকে বাধা দিয়ে লড়াই করে জয়ী হয়েছেন ৪৭,৯৯৫,২৬৯ জন |

 

করোনা যতই স্মার্ট, ছটফটে, সুযোগসন্ধানী হোক না কেন ওকে থামতেই হবে | অনেক ক্ষতি করেছে, এবার করোনাকে ধ্বংস হতেই হবে | করোনাভাইরাসের পরিবারের চারটি ক্যাটাগরি | আলফা, বিটা, গামা ও ডেল্টা | সার্স কোভ-২ হল বিটা করোনাভাইরাস | চারটি ক্যটাগরিতে মোট ৬০ টি প্রজাতির করোনাভাইরাস রয়েছে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন | এই বিশাল পরিবারের জিনোম পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে বাইরে থেকে আরএনএ ঢুকিয়ে ভাইরাসের আরএনএ কে খতম করা সম্ভব | আর বেশি দেরী নেই, করোনার বিশ্বভ্রমণের সমাপ্তি ঘটতে | 

 

                                                ---------


 

                                                তথ্যসুত্র—১) আন্তর্জাল

সবিতা বিশ্বাস                                             ২ ) আ ব প পত্রিকা

প্রযত্নে – লন্কেশ্বর বিশ্বাস                                  

গ্রাম + পোস্ট – মাজদিয়া (বিশ্বাসপাড়া)

(শুভক্ষণ লজের পাশে )

জেলা-নদীয়া পিন-৭৪১৫০৭

ফোন-৮৯০০৭৩৯৭৮৮

ভারত

ই মেইল- sraybiswas@gmail.com

 


 

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত