Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

ভ্রমণকাহিনি ।। অপরূপা গুরুদোংমার ।। শংকর লাল সরকার

অপরূপা গুরুদোংমার

 


চিরতুষারাচ্ছাদিত পর্বতশৃঙ্গ, ঘন সবুজ অরণ্য, বিস্তৃত উপত্যকা, অপরূপ সব ঝর্ণা, ঝোরা আর হ্রদের সমন্বয়ে গড়ে উঠা অত্যাশ্চর্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় উত্তর সিকিম! হিমালয় কন্যা সিকিম যেন একখণ্ড স্বপ্নের দেশ বারে বারে গেলেও সিকিম কখনও পুরানো হয়না গ্যাংটক ছেড়ে উত্তরে লাচেন ছাড়িয়ে আরও উত্তরে গেলে পৌছে যাওয়া যায় সেই স্বপ্নের ঠিকানায় ঘন নীল আকাশের বুকে নির্ভার ভেসে বেড়ানো মেঘের টুকরোগুলো আপনাকে ইশারায় নিয়ে যাবে ঘন সবুজ অরণ্যের ভিতর দিয়ে অন্য কোথাও, অন্য কোন কোনখানে যেখানে পাহাড়ের বুক চিরে খাড়া নেমে এসেছে অসংখ্য নাম না জানা ঝর্ণা তারা কুলুকুলূ নুপুর নিক্কনে চঞ্চল কিশোরীর মত চলার পথে সঙ্গ দেবে

কলকাতা থেকে রাতের ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন। তারপর শিলিগুড়ি হয়ে সিকিম পরিবহনের বাসে গ্যান্টক। একছুটে কলকাতার আইঢাই গরম থেকে পালিয়ে এলাম হিমালয়ের কোলে। অন্যরাজ্য হলেও গ্যান্টকের পরতে পরতে মিশে আছে বাঙালি সংস্কৃতি। পথ চলতি চোখে পড়ে বাঙালি মুখ। এ যেন বাঙালির ঘরের বাইরে আর একটা ঘর। বাসস্ট্যাণ্ডের কাছেই হোটেল পেতে অসুবিধা হয় না। গ্যান্টক থেকে শুরু হবে আমাদের দুরাত তিন দিনের উত্তর সিকিম ট্যুর। আধার কার্ড, ভোটার কার্ড আর একগাদা ছবি দিয়ে পারমিট করানোর পালা।


 

সকালে গ্যান্টক থেকে রওনা দিলাম লাচেনের উদ্দেশ্যে, দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। ব্রিজ পার হতেই সামনে লেখা ওলেকাম টু নর্থ সিকিম ঝলমলে সবুজ বনভূমি, ছোটবড়ো ঢেউ খেলানো উপত্যকা আর নদীর কলধ্বনী শুনতে শুনতে পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে অগ্রসর হতে লাগলাম। পৌছে গেলাম মঙ্গন, উত্তর সিকিমের সদর শহর। অনেকটা লম্বা এক ঝুলন্ত সেতু পার হতে হল। ড্রাইভার বলল এই রংরং হল এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ঝুলন্ত সেতু। পাহাড়ের একটা খাঁজ থেকে প্রবল বেগে জল বেরিয়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ছে গভীর খাদের মধ্যে। নাগা জলপ্রপাত। লাচেন পৌছবার ঠিক আগে শেষ বড়ো জনপদ ছাতেন সেখানে দেখলাম আর একটা জলপ্রপাত। উত্তর সিকিমের ছোট্ট গ্রাম লাচেন যখন পৌছলাম তখন দিনের আলো নিভতে বসেছে, শুরু হয়েছে হালকা বর্ষা। গাড়ি থকে নামতেই প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় একেবারে কেঁপে উঠলাম। কয়েকটা হোটেল, ছোট্ট একটা বাজার, কয়েকঘর স্থানীয় বাসিন্দা আর নিজস্ব একটা বৌদ্ধগুম্ফা ব্যাস লাচেন বলতে এইটুকুই।       

লাচেন নদীর ধারে ছবির মতো সুন্দর গ্রাম লাচেন ভোর চারটের সময়ে লাচেন থেকে রওনা হয়ে চলেছি জঙ্গল আর পাহাড়ের মধ্য দিয়ে। অন্ধকার কেটে  সদ্য ভোর হচ্ছে। বৃষ্টিস্নাত সবুজ বনভূমি আমাদের সাদরে বরণ করে নিল। পুরো পথটাই অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পূর্ণ। বর্ষায় সেই রূপ আরও খোলতাই হয়েছে। বৃষ্টিভেজা বলিউডি নায়িকার মত ঝলমলে মনোমুগ্ধকর সেই সৌন্দর্য থেকে চোখ ফেরানো দায়। পথের ধার দিয়ে বয়ে চলেছে উচ্ছ্বসিত কল্লোলিনী লাচেন চু, চু অর্থাৎ নদী। ঘন সবুজ জঙ্গলে ঢাকা কালচে নীল পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা দুধ সাদা ঝর্ণার অপরূপ শোভা। পথে আসতে আসতে কত যে ঝর্ণা দেখলাম তা গুণে শেষ করা যাবে না। টিইট্ টিইট্, একটা অচেনা আওয়াজ শুনে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি, দেখি পথের পাশে পাথরের উপরে বসে উজ্জ্বল কমলা রঙের একটা পাখি। মাথায় সাদা তিলক। হিমালয়ের ব্ল্যাক রেডস্টার্ট।

রাস্তার অবস্থা কিন্তু ভীষন খারাপ। কোথাও কোথাও রাস্তার উপর দিয়েই নদী বয়ে গেছে। কখনও আবার মনে হচ্ছে নদীর ভিতর দিয়েই এগিয়ে চলেছি। গাড়িতে নয় চেপেছি যেন রোলার কোস্টারে। একজায়গায় দেখলাম ধ্বস নেমে রাস্তা প্রায় বন্ধ। পাথরের কোনটা কাটিয়ে খাদের ধার বাঁচিয়ে ঝাকুনী খেতে খেতে কোনক্রমে এগিয়ে চলা।


 

পথের শেষ গ্রাম থাঙ্গু, আমাদের সাময়িক বিরতি। থাঙ্গু থেকে যতই এগিয়ে চলেছি জঙ্গলের ঘনত্ব ক্রমশ কমে আসছে। কোথাও উচুনীচু ঢেউ খেলানো উপত্যকার সামান্য বিস্তার কোথাও আবার রাস্তার ধার থেকেই খাড়া উঠে গেছে নাম না জানা পর্বতশৃঙ্গ। ১৫০০০ ফুট উচ্চতায় সামরিক চেকপোস্ট, উপত্যকায় প্রবেশদ্বার। এই চেকপোস্টে পর্যটকদের বিনামূল্যে চা কফি অফার করার পাশাপাশি মেডিকেল চেকআপও করা হয় ডাক্তারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তবেই মিলবে হিমালয়ের এই মরূভূমিতে প্রবেশাধিকার 

চেকপোস্টের গেট পার হতেই সামনে ধূধূ মালভুমি। পাহাড় সরে গেছে অনেক দূরে। দিগন্ত বিস্তৃত তামাটে হলদে প্রান্তরের মাঝবরাবর একেবেঁকে সাপের মতো চলেছে কালো পিচের রাস্তা। সবুজ, বেগুনী, পাটকিলে, হলদেটে কাছে দূরে নানারঙের সব পাহাড়। দূরে দল বেধে চরে বেড়াচ্ছে কিয়াং, তিব্বতীয় বন্য গাধা।

উপত্যকায় ছড়িয়ে থাকা পাথরের আশপাশ থেকে উঁকি মারছে একএকটা মারগট হালকা বাদামি লোমশ শরীরগুলো এক একটা যেন তুলোর পুতুল ক্যামেরা তাক করতেই অতবড়ো নাদুসনুদুস শরীরটা নিয়ে চোখের পলকে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে কিছুতেই ওরা ক্যামেরার মেগাপিক্সেলে বন্দী হবে না

তৃণশূন্য মরুপাথরের দেশে অতিকায় ডায়নোসরের পিঠের মত পাহাড়গুলো ঘন নীল আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে বিশ্রাম করছে। আচমকা সামনের দৃষ্টি অবরোধকারী পাথুরে বাধা সরে গিয়ে চোখের সামনে ভেসে উঠল বিশাল নীলাভ পর্বতশৃঙ্গ। সারা গায়ে বরফের কারুকার্য, মাথায় জমে থাকা বরফ ডানা মেলে নীল আকাশে উড়ে যাবার অপেক্ষায়। কালো পিচের রাস্তা সামনের দিকে আরও এগিয়ে চলে গেছে চিন সীমান্তের দিকে। ডান দিকে বাঁক নিয়ে মূল রাস্তা ছেড়ে গাড়ি চলল মাটি পাথর পার হয়ে নিজস্ব পথ তৈরী করে। একজায়গায় এসে একেবারে থেমে গেলাম, আর এগোবার পথ নেই। গাড়ি থেকে নামতেই প্রচণ্ড ঝোড়ো বাতাস আর ঠাণ্ডায় কেঁপে উঠলাম। একটু ধাতস্থ হতে চোখের সামনে খুলে গেল এক অত্যাশ্চর্য দুনিয়া। ঘন নীল আকাশের প্রেক্ষাপটে সাদা বরফে মোড়া পাহাড়। দুটো বরফাবৃত পর্বতশৃঙ্গের মাঝখান দিয়ে দুধ সাদা হিমবাহ নেমে এসে মিশেছে নীল ফিরোজা রঙের বিশাল এক হ্রদের প্রান্তে। বাতাসের তালে তালে সেই জলে তৈরী হচ্ছে নানা রঙের সব অপরূপ মূর্ছণা। চোখের সামনে গুরুদোংমার লেক। হ্রদের জলে গুরুদোংমার আর কাংচেনজাই পর্বতশৃঙ্গের রমণীয় প্রতিবিম্ব।


 

১৭৩০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত গুরুদোংমার লেক বৌদ্ধদের কাছে অতি পবিত্র। তিব্বতে মহাযান বৌদ্ধধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু পদ্মসম্ভব অষ্টম শতাব্দীতে তিব্বতে যাবার আগে এই হ্রদের জলে স্নান করেছিলেন ধর্মপ্রাণ মানুষের বিশ্বাস পবিত্র এই হ্রদ দর্শণ করলে মানুষের মনোস্কামনা পূর্ণ হয়

হ্রদের ধারে একটা ছোট্ট বৌদ্ধগুম্ফা। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝখানে মানুষ তৈরী করে ভগবানের উপাসনালয়। মানুষের মন যেখানে আপনা আপনিই সমস্ত রকম ক্ষুদ্রতা তুচ্ছতা স্বার্থপরতা ভুলে যায়। আমিত্ব ধাবিত হয় সেই পরম করুণাময়ের দিকে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও একসময় ফিরতে হল। সঞ্চয় হিসাবে নিয়ে চললাম আমার ভ্রামনিক জীবনের কিছু শ্রেষ্ঠ স্মৃতি আর ক্যামেরার মেমোরি কার্ডে কয়েকটা মন ভালো করে দেওয়ার মত ছবি।

***

 


 

শংকর লাল সরকার

8637852643 

34, Mearber (Sil Bagan)

Chinsurah, Hooghly- 712101

 




 

মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩