google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re ছোটোগল্প ।। কৃষ্ণাকাবেরী ।। অঞ্জনা গোড়িয়া - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

রবিবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০২১

ছোটোগল্প ।। কৃষ্ণাকাবেরী ।। অঞ্জনা গোড়িয়া




তখন আমি সবে মাত্র H.Sপাশ করেছি।
জামাই বাবুর নির্দেশ বেসিক ট্রেনিং এ ভর্তি হতে হবে।আর পড়া নয় আপাততঃ।
মনটা একটু খারাপ হলো। মিশন হোষ্টেলে থাকতে হবে  শুনে ।
 অবশ্য ভর্তি হয়েই সব খারাপ লাগা গুলি আনন্দে মুখর হয়ে উঠল।
বিভিন্ন জেলা বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমরা ২১ জন মেয়ে ভর্তি হলাম মিশন-১ প্রাইমারী বেসিক সেন্টারে।
আস্তে আস্তে সবার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেল।
যেমন পড়াশোনার চাপ ছিল।তেমন  কঠোর পরিশ্রম করতে হতো।
কৃষ্ণা আর কাবেরী দুই বান্ধবী ছিল আমার ।
 খুব মজা করতো। একজনের বাড়ি নদীয়ার কৃষ্ণ নগরে।আর কাবেরীর বাড়ি হাওড়া  জেলায় ।
যোগাযোগ বলতে পোষ্ট কার্ড চিঠি বা ইংল্যান্ড খাম। ফোন ছিল না কারোর।
আমাদের আলাদা আলাদা বিছানা ছিল।
তবু মাঝে মধ্যেই একসাথে রাত কাটাতাম। সারা রাত গল্প করতাম্ ।
 এরই মাঝে চোখে পড়ল নতুন এক দৃশ্য। ওদের দুজনে বন্ধুত্ব দিন দিন একটু বাড়াবাড়ি পর্যায়ে ।
 কৃষ্ণা কাবেরীর ভালোবাসা বাড়তেই থাকে
মনে হলো ওরা যেন প্রেমিক প্রেমিকা ।
একসাথে থাকা।একসাথে বেড়ানো।মাঝে মধ্যেই অস্বাভাবিক ভাবেই জড়িয়ে ধরতো।একসাথে স্নান করা ।
এমনকি দুজন দুজন কে চুমু খেতে ও দেখেছি অনেক বার ।
আমরাই লজ্জা পেতাম। 
জানি দুজনেই মেয়ে তবু। 
এমন কি দুজনে একবিছানায় কতদিন রাত কাটিয়েছে। নিষেধ থাকা স্বত্তেও  একবিছানায় রাত কাটাতো।।এ নিয়ে কানাকানি ফিসফিসানি হতেই হোস্টেলের মাসি ও দিদির কানে গেল কথাটা।তাঁরা তো শুনে রেগে আগুন।
 দুজনের ডাক পড়ল বড়দির ঘরে। ভীষন বোকাবকি করল।
এমন কি  অভিভাবকদের জানানো হবে বলে ও নির্দেশ দিলেন বড়দি ।
 তারপরে কটা দিন একটু সাবধানে লুকিয়ে মিলিত হতো।
আমরা দুজনের নাম দিয়ে ছিলাম রাধা কৃষ্ণ।ঠিক যেমন বাঁশীর আওয়াজে রাধিকা পাগল তেমনই কাবেরীর নুপূরের আওয়াজে কৃষ্ণা (কৃষ্ণ)পাগল হয়ে যেত ।
আবার দুজনে একসাথে রাত কাটানো। এক বিছানায় থাকা।
পাশেই থাকতাম আমি আরো দুজন।
 ওদের অস্ফুট  আওয়াজে আমাদের ঘুম হতো না। সে আওয়াজের অর্থ তখন অত টা বুঝতাম না।  অসহ্য যন্ত্রনার ছাপ ফুটে উঠতো চোখে মুখে।উঃ আঃ শব্দে আতঙ্কে  দিন চলে যেত।একদিন সরল মনে জানতে চাইলাম। কি করিস রে তোরা রাতে?বিছানা এত নড়ে কেন?আর এমন আওয়াজ কিসের?
দুজনে ই বলে তোর জেনে কি হবে?
ছেলে মানুষ বুঝবি না।একটা কথা মনে রাখিস,আমরা কেউ কাউ কে ছাড়তে পারবো না।
অনেক নিষেধ আদেশ সত্বেও ওরা ঐ একবছর কোন দিনই আলাদা থাকে নি ।
শাড়ি ব্লাউজ জামা এমনকি প্যান্টি টা ও একে অপরের ব্যবহার করে। কৃষ্ণার আচরণ কিছু টা ছেলের মতন। 
কথা বার্তা চালচলন,মাসিরা শেষে অতিষ্ঠ হয়ে দুজন কে আলাদা ঘরে বিছানা করে দিল ।
তারপর পরীক্ষা শেষ।বাড়ি ফেরার পালা ।
কান্নার রোল পড়ে গেল সারা হোস্টেল টায় ।
সবাই প্রচুর কেঁদেছি। ঠিকানা লিখে রেখেছিলাম ডায়েরীর পাতায় ।
আজ ও সে ছেঁড়া ডায়েরীটার জমা ধুলো পরিষ্কার করি। আর সবার কথা ভাবি।
কেউ কিছুতেই ছাড়তে চায় না দুজনকে ।
 প্রত্যেকের অভিভাবকের সঙ্গে সই করে বাড়ি ফিরতে হলো। 
ওদের বাবা মা একসাথে ই দুজনের কান্না থামিয়ে নিয়ে চলে গেল । 
গল্প শেষ!আজ আর জানি না ওরা কোথায়?কেমন আছে?
জানা নেই , কি পরিনত?
আজ ও মনে পড়ে রাধাকৃষ্ণের প্রেম লীলা তথা কৃষ্ণা কাবেরীর প্রেম পর্ব।



 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন