খবরে প্রকাশ : বিশিষ্ট সমাজকর্মী, পদ্মশ্রী শ্রী তুষার কাঞ্জিলাল আর আমাদের মধ্যে নেই ( জন্ম : ১ মার্চ ১৯৩৫ , মৃত্যু : ২৯ জানুয়ারী ২০২০ ) । চমকে উঠলাম ! যাহ শেষ হয়ে গেল একটা ধারা , একটা ঘরানা , একটা শৈলী , একটা বিশেষ রকমের জীবনচর্চা । তিনি এই সব কিছুর প্রতিষ্ঠাতা ও পথিকৃৎ । এমন এক দর্শন যা গড়পড়তা গেরস্তপোষা বাঙালি জীবনে খুবই অচেনা আর তাই যথেষ্ঠ অস্বস্তিকর । কিছু মানুষ থাকেন যারা চলে গেলে একটি মাত্র বাক্য প্রযোজ্য হয়ে ওঠে : লাস্ট অফ্ হিজ কাইন্ড । নিজের ফিলজোফিকে হাতে কলমে প্রমাণ করার স্বনিয়জিত দায়ভার কাঁধে তুলে নিয়ে যারা পথ চলেন আজীবন ।
সে সব আঠারো উনিশ বছর আগের কথা । পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য সংস্কৃতি দপ্তর ইতালির সেন্ত্রো ওরিয়েন্তামেন্ত এদুকেতিভো সংস্থার কাছ থেকে কারিগরী সহায়তায় নিয়ে ২০০২ সালে রূপকলা কেন্দ্র নামের প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু করলো । গোড়ার দিকে অনেকেই ধন্দ্ধে ছিলেন এই ভেবে যে এই প্রতিষ্ঠানটির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রকৃতপক্ষে ঠিক কি ? এটিকে ফিল্ম স্কুল হিসাবে মান্যতা দেবার ব্যাপারে বহুজন সংশয় প্রকাশ করেন । হবে নাই বা কেনো ! তখন মেন গেটের ওপর গ্লো শাইনে জ্বলজ্বল করছে "এ্যান ইনস্টিটিউট অফ সোসিয়াল কমিউনিকেশন ইউজিং ভিডিও টেকনোলজি" এই শব্দবন্ধ । ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে স্বমহিমায় বিরাজমান যে সব বাঘা বাঘা ব্যক্তিত্ব প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রূপকলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাঁরা এই বিষয়ে যথেষ্ট উন্নাসিকতার পরিচয় দিয়েছেন সেই সময় । চিরাচরিত ধ্যানধারণা অনুযায়ী ফিল্ম স্কুল বলতে বোঝায় এফ টি আই এবং পরবর্তী কালে এস আর এফ টি আই । সেখানে রূপকলা কোনো রেশিওতেই আসে না ! অনেকেই ভাবতেন এটা বোধহয় মাসকম পড়ার জায়গা বা ঐ গোত্রের কিছু একটা হবে । অর্থাৎ পূর্বোক্ত দুটি জাতীয় স্তরের প্রতিষ্ঠানের তুলনায় নিতান্তই ব্ল্যাকশিপ । এই মনোভাব প্রথমেই আমাদের অনেকখানি দমিয়ে দিয়েছিল । কিন্তু সব জিনিসেরই দুটো বিপরীত অভিমুখ আছে , ভালো এবং মন্দ । সেটা তখন বুঝতে পারিনি , আজ মর্মে মর্মে উপলব্ধি করি । কথায় আছে না শাঁপে বর , আমাদেরও তাই হয়েছিল ।
ক্লাস শুরু হওয়ার অল্প কিছু দিনের মধ্যেই প্রবল রকমের হতাশা ও নৈরাশ্যের কুয়াশা এসে আমাদের গ্রাস করলো । মনে হতে লাগলো আমরা ঠকে গেছি , দুধের বদলে পীটুলি গোলা গেলানো হচ্ছে । আমরা প্রথম শিক্ষাবর্ষের স্টুডেন্টরা হলাম গিনিপিগ । কর্তৃপক্ষ তাদের সমস্ত রকমের পরীক্ষা নিরীক্ষা আমাদের ওপর দিয়ে চালিয়ে নিচ্ছে একথা মানতেই হবে , ইত্যাদি ইত্যাদি । প্রতিদিন প্রবল বিরক্তি নিয়ে হাজির হতাম আর দাঁতে দাঁত চেপে বসে থাকতাম । কেনো এমনটা হলো সে বিষয়ে সামান্য ব্যাখ্যা দেওয়া প্রয়োজন । ফার্স্ট ব্যাচে পাঁচটি স্ট্রিম নিয়ে পাঠক্রম শুরু হয় , যথা : ডিরেকশন , সিনেম্যাটোগ্রাফি , এডিটিং , এ্যানিমেশন এবং ডেভেলপমেন্ট কমিউনিকেশন । সমস্যার সূত্রপাত এই শেষোক্ত বিষয়টি নিয়ে । গোড়া থেকেই কপালে সমাজ সংযোগের লেবেল সেঁটে থাকার ফলে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয় । বাকি চারটি বিভাগের পঠনপাঠনের বিষয় , পদ্ধতি ও কার্যকারিতা নিয়ে কারো মনে কোনো সংশয় নেই । শুধু শেষেরটি যে ঠিক কি বস্তু তাই নিয়ে কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই । কেউ কেউ নিজের মতন করে ব্যাখ্যা করে নিয়েছিল : এই বিষয়ে পড়ে এন জি ও তে চাকরী করা যায় , এই রকম । আদতে ব্যাপারটা মোটেও তা নয় বলাই বাহুল্য । তৎকালীন রাজ্য সরকার একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন , যাকে পরিভাষায় ন্যারোকাস্ট বা নিকট সঞ্চার বলা হয় । স্যাটালাইট আপ লিংকিংয়ের মাধ্যমে রূপকলা কেন্দ্রের স্টুডিও থেকে সরাসরি বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া যাবে এই হল উদ্দেশ্য । গ্রামের বিভিন্ন পেশার মানুষ যেমন কৃষিজীবী , মস্যজীবি , তন্তুবায় থেকে শুরু করে একাধিক হস্তশিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরবে এবং স্টুডিও থেকে তার সমাধানের উপায় বাৎলে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে । তাছাড়া নতুন নতুন বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে । গ্রামীণ অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনে এই প্রযুক্তির ভূমিকা অপরিসীম । উদ্যোগটি যে মহৎ এবং সাধুবাদ যোগ্য তাই নিয়ে কোনো দ্বিমত থাকার কথাই নয় । এই সামগ্রিক বিষয় নিয়ে কাজ করার জন্য যে সিস্টেমেটিক স্টাডি সেটাই ডেভেলপমেন্ট কমিউনিকেশনের আওতায় পড়ে ; এ কথা ধীরে ধীরে বুঝতে পারি ।
মুশকিল হল অন্য দিকে । তখন ডেভেলপমেন্ট কমিউনিকেশন বিভাগে সবেধন নীলমণি একটি মাত্র স্টুডেন্ট । একজনকে নিয়ে তো আর ডিপার্টমেন্ট চালানো যায় না । ফলে অন্য রকম ভাবে ক্লাসের আরেঞ্জমেন্ট করতে হলো । কমন সিমেস্টারে আমরা সবাই সমাজ সংযোগের পাঠ নিতে বাধ্য হলাম সঙ্গে ডি সির সেই স্টুডেন্ট । ফলে অচিরেই সেটা বোরিং মনে হতে লাগলো । যারা ফিল্ম মেকিং শিখতে এসেছে তাদের কাছে সেটাই তো স্বাভাবিক । একটা হার্ডকোর টেকনিক্যাল সাবজেক্ট শিখতে হবে , নিজেকে ইন্ডাস্ট্রির উপযুক্ত করে তুলতে হবে , তাও মাত্র দু' বছরের মধ্যে অথচ সময় বয়ে যাচ্ছে হু হু করে । কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে যথা নিয়মে । এই রকমই এক বিরক্তি উৎপাদনকারী ও নিস্তরঙ্গ সময়ে হঠাৎ একদিন ক্লাসে দেখানো হলো একটি তথ্যচিত্র । বিষয় : সুন্দরবন । সঠিক ভাবে বলতে গেলে সেখানকার অধিবাসীদের জীবন সংগ্রাম নিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে বাস্তব খণ্ডচিত্র তুলে ধরা এবং সেই সঙ্গে জরুরী কিছু পরিসংখ্যান ও তথ্য পরিবেশন করা । ছবি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম । কি দারুন উপস্থাপনা ! উপরন্তু বিস্ময়ের আরো এক ধাপ বাকী ছিল , সেটা হলো এই ছবিটা আমাদের ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের হাতে তৈরী । বেশ একটা ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে ভাবতে থাকলাম টিচাররা যদি এমন ছবি তৈরী করতে পারে তবে আমরাই বা পারবো না কেনো ? ছবি দেখা ও আলোচনা পর্ব মেটার পর জানতে পারলাম এই ছবি নির্মাণ হয়েছে যাকে কেন্দ্র করে সেই মানুষটি আগামীকাল আসবেন আমাদের সঙ্গে কথা বলতে । তিনি শ্রী তুষার কাঞ্জিলাল । কে ইনি ? কি এনার পরিচয় ? জানা গেলো ইনি হলেন সমাজকর্মী ও সুন্দরবন উন্নয়ন আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ ও পুরোধা পুরুষ । সেই সঙ্গে এটাও জানানো হলো যে ওনার সময়ানুবর্তিতা নাকি দৃষ্টান্ত স্থাপন করার মতন একটি বিষয় । পাঁচ মিনিটের দেরী উনি সহ্য করেন না । ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের যে টিম রঙাবেলিয়ায় গিয়ে ওনার সঙ্গে কথা বলেছে তাদের নাকি সেই অভিজ্ঞতা হয়েছে । নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছতে দেরী হওয়ায় উনি সেখান থেকে চলে গেছেন । ফলে প্রতঃভ্রমণরত অবস্থায় ওনার সঙ্গে পা মিলিয়ে চলতে গিয়ে তাদের হিমশিম খেতে হয়েছে । তাই আমাদের সতর্ক করে দেওয়া হলো ক্লাসে আসতে দেরি যেনো মোটেই না হয় ।
পরের দিন সাক্ষাৎ হলো তাঁর সঙ্গে । টেগোর সোসাইটি ফর রুরাল ডেভেলপমেন্টের কর্ণধার তুষারবাবু , মাষ্টারমশাই নামে যিনি সমধিক খ্যাত । আপাদমস্তক শুভ্রকান্তি একজন মানুষ । হ্যাঁ ঠিক তাই , পরনে সাদা ধুতি পাঞ্জাবি আর এক মাথা ধপধপে সাদা চুল । সুপুরুষ এবং গৌরবর্ণ তাইতে দীর্ঘদিন ফিল্ড ওয়ার্কের ছাপ পড়েছে তাই টকটকে লালচে ভাব । শিক্ষা , বৈদগ্ধ , পাণ্ডিত্য , বয়েস ও অভিজ্ঞতার ভারে ঋদ্ধ এক আকর্ষণীয় ও সম্ভ্রম জাগানো ব্যক্তিত্ব । প্রথম দর্শনেই খুব কাছের ও আদরণীয় বলে মনে হয় । শুরু হলো আলাপচারিতা । জানা গেলো সুন্দরবনের নদীবাঁধ এবং সেখানকার ভাঙ্গন সম্পর্কিত বহু অজানা তথ্য । রাঙাবেলিয়াকে সেন্টার করে আসেপাশের দ্বীপবাসী মানুষজনের আশঙ্কা , সমস্যা , দৈনন্দিন জীবনযাপন । জলে কুমীর ডাঙায় বাঘ সহ বিচিত্র কর্ম ও জীবন প্রণালীর আলেখ্য । কিভাবে ঐ সমস্ত অধিবাসীদের কাছ থেকে পার্টিসিপেটারি ফরম্যাটে কি কি তথ্য সংগ্রহ করা হয় ও উন্ননের কাজে সেটার ইমপ্লিমেন্ট কি ভাবে হয় এই সমস্ত কিছু গল্পের ছলে বলে গেলেন আমাদের । সেই ভাষণে কোনো গেরেম্ভারি চাল নেই , সম্পূর্ণ বাহুল্য বর্জিত এবং তার সঙ্গে অনাবিল হাস্যরসের মিশেল । যদি খুব ভুল না হয় যতদূর মনে পড়ে উনি সাকুল্যে দিন দুই কি তিন এসেছিলেন রূপকলায় । নিজের সুদীর্ঘ ও সুবিস্তৃত কর্ম জীবনের নানান অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছিলেন । অসামান্য রসবোধের পরিচয় ছিল সেই কথার ছত্রে ছত্রে । গোড়াতেই বললেন : শোনো বাছারা আমার কাজ শুরুর প্রথম দিকের একটা গপ্পো তোমাদের বলি । তখন আমি যাকে বলে সত্যি সত্যিই ইয়াংম্যান , রক্ত গরম একেবারে টগবগ করে ফুটছে । একদিন এক পথ সভায় একটা চৌকি গোছের কিছুর ওপর উঠে খুব খানিকটা তেড়ে লেকচার দিলাম । যাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছিলাম তাদের কিসে মঙ্গল হয় সেটা বোঝানই ছিল আমার লক্ষ্য । গলা শুকিয়ে যখন কাঠ তখন বাধ্য হয়ে চৌকি থেকে নামতে হল । জল না পেলে আর প্রাণে বাঁচি না এমন অবস্থা । মুটামুটি ছোটখাটো বেশ একটা জমায়েত হয়েছিল , তার ভিতর থেকে এক বুড়ো মোল্লাচাচা এগিয়ে এসে বললে এই ছাওয়ালডার গলার ত্যাজ আছে হেইডা কিন্তু মানতেই হইব । বোঝো ঠ্যালা ! দিনের শেষে আমার কপালে তাহলে কি জুটলো তোমরাই ভেবে দেখো একবার !
এই রকম অসংখ্য মনিমানিক্য ছড়িয়ে ছিল তাঁর লেকচার সেশনে । একজন ফিল্ড ওয়ার্কারকে কি ভীষণ শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম করতে হয় তা বলতে গিয়ে ব্যঙ্গ মিশ্রিত ধমক দিয়ে বলেছিলেন : তোমরা তো জন্মেছ সব এক একটা যেন দেবশিশু , ননীরপুতুল । গায়ে দু ফোঁটা জল পড়লেই গোলে পাঁক হয়ে যাবে ।
অর্থাৎ একজন সমাজকর্মীকে হতে হবে ক্লান্তিহীন বিরামহীন সদা সর্বদা প্রস্তুত ও সজাগ । তার ছুটি বলে কিছু নেই , থাকার কথাও নয় । বলেছিলেন মনে রেখো একশো শতাংশ কাজের পর তোমার প্রাপ্তির ভাঁড়ারে জমা পড়বে হয়তো এক শতাংশ । ভেঙে পড়লে চলবে না , দোমে গেলে চলবে না । জানবে তুমি ঠিক ততটুকুই পেয়েছ যতটুকু তোমার প্রাপ্য । ওখানেই তোমার সাফল্য ওখানেই তোমার কাজ করার স্বার্থকতা । কি অমোঘ বাণী ! এতো দিন পরে ভাবতে গিয়ে শিহরন অনুভব করি । কথাগুলি যে খুব জোরালো ও মজবুত বিশ্বাসের ভীতের ওপর দাঁড়িয়ে বলা সেটা বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় না । আগাগোড়া নিজের ব্যবহারিক জীবনে সেটাই তো প্রমাণ করে গেছেন ।
আজকাল চতুর্দিকে একটা কথা খুব শোনা যায় : মোটিভেশনাল স্পীচ । সেটা প্রকৃত অর্থে কি এবং তার জোর কত তা আঠারো বছর আগেই উপলব্ধি করেছিলাম । মনে আছে সকলের ভিতর যে পাহাড় প্রমাণ ক্ষোভ ও অভিযোগ জমা হয়েছিল ; মাষ্টারমশাইয়ের ক্লাস এ্যাটেন্ড করার পর কমবেশি তার উপশম ঘটে । সর্বাংশে না হলেও বহুলাংশে তো বটেই । ব্যক্তগতভাবে বলতে দ্বিধা নেই ওনার কথা শোনার পর বুঝতে পারি সমাজ সংযোগের এই পাঠ ফিল্ম মেকিং এর অন্যতম জরুরী অধ্যায় , এ বিষয়ে না জানলে অন্য ধারার ছবি তৈরী করা অসম্ভব । প্রশ্ন উঠতেই পারে এতকাল ধরে প্রবাদপ্রতিম চলচ্চিত্রকারগণ দুনিয়া কাঁপানো সব ছবি বানিয়েছেন তাঁরা ডি সি পড়েছেন বুঝি ? উত্তর হল : হ্যাঁ পড়েছেন , তবে নিজের মতন করে । এখন যখন অর্গানাইজড সেক্টর তৈরী হয়েছে তখন তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করা হবে না কেনো ? রূপকলা কেন্দ্রের আমার এক সহপাঠি ও সহকর্মী তার প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের কাহিনীচিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালকের জাতীয় পুরস্কার লাভ করে । একাধিক সাক্ষাৎকারে সে এই পড়াশোনার গুরুত্বের কথা বলেছে ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছে । আজ যখন তামাম দুনিয়ার বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদগণ বিশ্ব উষ্ণনায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ঙ্কর রূপ ও তার সুতীব্র প্রভাব নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তিত । তখন খুব প্রাসঙ্গিক ভাবেই মাষ্টার মশাইয়ের কিছু কথা মনে পড়ে : প্রকৃতি তার নিজের নিয়মে নিজের পথে চলবে তার স্বভাবজাত আচরণ করবে । তুমি প্রকৃতির বিরুদ্ধে যেতে পারো না । সব চাইতে ভালো যা তুমি করতে পারো তা হলো প্রকৃতির কাছ থেকে উৎকৃষ্ট কিছু সময় ক্রয় করতে পারো । নদীর এক ধারে যেমন ভাঙ্গন হচ্ছে তেমন অন্য ধারে আবার নতুন চর জেগে ওঠার ব্যাপারটাও রয়েছে । এমন ভাবেই চলবে , তার মধ্যেই আমাদের সব রকম পরিকল্পনা গুলোকে ঠিকঠাক ভাবে সাজিয়ে ফেলতে হবে ।
আঠারো বছর আগে অতি অল্প সময়ের জন্য যে ব্যক্তির সাক্ষাৎ পেয়েছিলাম তাঁর প্রয়ান সংবাদ কেনো এভাবে বুকে বাজে ? যিনি অনায়াসে বলতে পারেন : মানুষকে ভালোবেসে মানুষের জন্য কাজ করলেই কি তুমি বিনিময়ে অঢেল ভালোবাসা পাবে , লোকে তোমাকে মাথায় তুলে ধেই ধেই করে নেত্য করবে বলে মনে করেছ ? তোমার মুন্ডু , ঠিক তার উল্টোটাই হবে ! যে কোনো ভালো কাজ করতে গেলেই তোমার কপালে অশেষ ঘৃণা , লাঞ্ছনা গঞ্জনা , কটূক্তি আর অপমান বরাদ্দ হয়ে আছে সেটা মনে রাখবে । তাই বলে কি তুমি হাত পা গুটিয়ে ঘরে বসে থাকবে ? সেটা তো আর হয় না , তোমাকে কাজ চালিয়ে যেতে হবে । সেই তিনি কবে পদ্মশ্রী পুরস্কার লাভ করেছেন , সেই সময় কেন্দ্রে কোন রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন ছিল এসব সালতামামি আমার কাছে অবান্তর বলে মনে হয় তাই জানার প্রয়োজন বোধ করিনি । শুধু এটুকু বলা যায় ওনাকে সন্মান প্রদর্শন করে দেশবাসীর ঋণ খুব সামান্য হলেও পরিশোধ হয়েছে বলে মনে হয় । একাধিক গুণী মানুষের কাছে শুনেছি যাদের রবীন্দ্রনাথ কিম্বা সত্যজিৎ রায়ের সংস্পর্শে আসার সৌভাগ্য হয়েছে তাদের জীবনদর্শন আমূল পাল্টে গেছে । রূপকলা কেন্দ্রের কোর্স শেষ হওয়ার পর আমাদের মধ্যে অনেকেরই এক ধরনের অপূর্ণতা ও অতৃপ্তির বোধ জাগে । বিশেষত আমরা যারা সিনেম্যাটোগ্রাফি শিখতে চেয়েছিলাম তাদের । কারণ শুধু মাত্র ভিডিওগ্রাফি শিখে স্ট্রিংগার হিসাবে কাজ করতে রাজি ছিলাম না । তাই ' সিনেম্যাটোগ্রাফি এন্ড ফিল্ম মেকিং ইন দ্যা ট্রু সেন্স ' শিখতে ও জানতে আমার দুই সহপাঠী এফ টি আই , পুনের উদ্যেশ্য যাত্রা করে এবং আমি ; ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান এল ভি প্রসাদ ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন এ্যাকাডেমি , চেন্নাই তে গিয়ে হাজির হই । ফিল্ম স্কুলের ছাত্র হিসাবে আমাদের দেশের সেরা প্রশিক্ষকদের পেয়েছিলাম তো বটেই এমন কি হলিউডের স্বনামধন্য ও জগৎ বিখ্যাত প্রযুক্তিবিদদের কাছে তালিম নেওয়ার বিরলতম সুযোগ হয়েছে । কিন্তু চেন্নাইয়ের সেই দিন গুলোতে দ্বিতীয় আর একজন তুষার কাঞ্জিলালকে পাইনি এ কথা অনস্বীকার্য ।
সমাপ্ত
SUDIP PATHAK
Swapno Neer Apartment ,
3rd floor , flat no : 3 ,
321 Purba Sinthee Road ,
Madhugarh , DumDum ,
Kolkata -700030
Phone & what's app number :
9874919948
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন