Featured Post

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

ছবি
   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন:  'লেখাটি স্বরচিত ও অপ্রকাশিত'। মেল আইডি :  printednabapravat@gm

স্মরণ ।। তুষার কাঞ্জিলাল ।। সুদীপ পাঠক

স্মৃতি-বিস্মৃতির অতল থেকে উদ্ধার 

একমুঠো শুভ্রকান্তি তুষার  


সুদীপ পাঠক



খবরে প্রকাশ : বিশিষ্ট সমাজকর্মী, পদ্মশ্রী শ্রী তুষার কাঞ্জিলাল আর আমাদের মধ্যে নেই ( জন্ম : ১ মার্চ ১৯৩৫ , মৃত্যু : ২৯ জানুয়ারী ২০২০ )  । চমকে উঠলাম ! যাহ শেষ হয়ে গেল একটা ধারা , একটা ঘরানা , একটা শৈলী , একটা বিশেষ রকমের জীবনচর্চা । তিনি এই সব কিছুর প্রতিষ্ঠাতা ও পথিকৃৎ । এমন এক দর্শন যা গড়পড়তা গেরস্তপোষা বাঙালি জীবনে খুবই অচেনা আর তাই যথেষ্ঠ অস্বস্তিকর । কিছু মানুষ থাকেন যারা চলে গেলে একটি মাত্র বাক্য প্রযোজ্য হয়ে ওঠে : লাস্ট অফ্ হিজ কাইন্ড । নিজের ফিলজোফিকে হাতে কলমে প্রমাণ করার স্বনিয়জিত দায়ভার কাঁধে তুলে নিয়ে যারা পথ চলেন আজীবন । 

সে সব আঠারো উনিশ বছর আগের কথা । পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য সংস্কৃতি দপ্তর ইতালির সেন্ত্রো ওরিয়েন্তামেন্ত এদুকেতিভো সংস্থার কাছ থেকে কারিগরী সহায়তায় নিয়ে ২০০২ সালে রূপকলা কেন্দ্র নামের প্রতিষ্ঠানের  যাত্রা শুরু করলো । গোড়ার দিকে অনেকেই ধন্দ্ধে ছিলেন এই ভেবে যে এই প্রতিষ্ঠানটির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রকৃতপক্ষে ঠিক কি ? এটিকে ফিল্ম স্কুল হিসাবে মান্যতা দেবার ব্যাপারে বহুজন সংশয় প্রকাশ করেন । হবে নাই বা কেনো ! তখন মেন গেটের ওপর গ্লো শাইনে জ্বলজ্বল করছে "এ্যান ইনস্টিটিউট অফ সোসিয়াল কমিউনিকেশন ইউজিং ভিডিও টেকনোলজি" এই শব্দবন্ধ । ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে স্বমহিমায় বিরাজমান যে সব বাঘা বাঘা ব্যক্তিত্ব প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রূপকলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাঁরা এই বিষয়ে যথেষ্ট উন্নাসিকতার পরিচয় দিয়েছেন সেই সময় । চিরাচরিত ধ্যানধারণা অনুযায়ী ফিল্ম স্কুল বলতে বোঝায় এফ টি আই এবং পরবর্তী কালে এস আর এফ টি আই । সেখানে রূপকলা কোনো রেশিওতেই আসে না ! অনেকেই ভাবতেন এটা বোধহয় মাসকম পড়ার জায়গা বা ঐ গোত্রের কিছু একটা হবে । অর্থাৎ পূর্বোক্ত দুটি জাতীয় স্তরের প্রতিষ্ঠানের তুলনায় নিতান্তই ব্ল্যাকশিপ । এই মনোভাব প্রথমেই আমাদের অনেকখানি দমিয়ে দিয়েছিল । কিন্তু সব জিনিসেরই দুটো বিপরীত অভিমুখ আছে , ভালো এবং মন্দ । সেটা তখন বুঝতে পারিনি , আজ মর্মে মর্মে উপলব্ধি করি । কথায় আছে না শাঁপে বর , আমাদেরও তাই হয়েছিল । 

ক্লাস শুরু হওয়ার অল্প কিছু দিনের মধ্যেই প্রবল রকমের হতাশা ও নৈরাশ্যের কুয়াশা এসে আমাদের গ্রাস করলো । মনে হতে লাগলো আমরা ঠকে গেছি , দুধের বদলে পীটুলি গোলা গেলানো হচ্ছে ।        আমরা প্রথম শিক্ষাবর্ষের স্টুডেন্টরা হলাম গিনিপিগ । কর্তৃপক্ষ তাদের সমস্ত রকমের পরীক্ষা নিরীক্ষা আমাদের ওপর দিয়ে চালিয়ে নিচ্ছে একথা মানতেই হবে , ইত্যাদি ইত্যাদি । প্রতিদিন প্রবল বিরক্তি নিয়ে হাজির হতাম আর দাঁতে দাঁত চেপে বসে থাকতাম । কেনো এমনটা হলো সে বিষয়ে সামান্য ব্যাখ্যা দেওয়া প্রয়োজন । ফার্স্ট ব্যাচে পাঁচটি স্ট্রিম নিয়ে পাঠক্রম শুরু হয় , যথা : ডিরেকশন , সিনেম্যাটোগ্রাফি , এডিটিং , এ্যানিমেশন এবং ডেভেলপমেন্ট কমিউনিকেশন । সমস্যার সূত্রপাত এই শেষোক্ত বিষয়টি নিয়ে । গোড়া থেকেই কপালে সমাজ সংযোগের লেবেল সেঁটে থাকার ফলে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয় । বাকি চারটি বিভাগের পঠনপাঠনের বিষয় , পদ্ধতি ও কার্যকারিতা নিয়ে কারো মনে কোনো সংশয় নেই । শুধু শেষেরটি যে ঠিক কি বস্তু তাই নিয়ে কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই । কেউ কেউ নিজের মতন করে ব্যাখ্যা করে নিয়েছিল : এই বিষয়ে পড়ে এন জি ও তে  চাকরী করা যায় , এই রকম । আদতে ব্যাপারটা মোটেও তা নয় বলাই বাহুল্য । তৎকালীন রাজ্য সরকার একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন , যাকে পরিভাষায় ন্যারোকাস্ট বা নিকট সঞ্চার বলা হয় । স্যাটালাইট আপ লিংকিংয়ের মাধ্যমে রূপকলা কেন্দ্রের স্টুডিও থেকে সরাসরি বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া যাবে এই হল উদ্দেশ্য । গ্রামের বিভিন্ন পেশার মানুষ যেমন কৃষিজীবী , মস্যজীবি , তন্তুবায় থেকে শুরু করে একাধিক হস্তশিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরবে এবং স্টুডিও থেকে তার সমাধানের উপায় বাৎলে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে । তাছাড়া নতুন নতুন বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে । গ্রামীণ অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনে এই প্রযুক্তির ভূমিকা অপরিসীম । উদ্যোগটি যে মহৎ এবং সাধুবাদ যোগ্য তাই নিয়ে কোনো দ্বিমত থাকার কথাই নয় । এই সামগ্রিক বিষয় নিয়ে কাজ করার জন্য যে সিস্টেমেটিক স্টাডি সেটাই ডেভেলপমেন্ট কমিউনিকেশনের আওতায় পড়ে ; এ কথা ধীরে ধীরে বুঝতে পারি । 

মুশকিল হল অন্য দিকে । তখন ডেভেলপমেন্ট কমিউনিকেশন বিভাগে সবেধন নীলমণি একটি মাত্র স্টুডেন্ট । একজনকে নিয়ে তো আর ডিপার্টমেন্ট চালানো যায় না । ফলে অন্য রকম ভাবে ক্লাসের আরেঞ্জমেন্ট করতে হলো । কমন সিমেস্টারে আমরা সবাই সমাজ সংযোগের পাঠ নিতে বাধ্য হলাম সঙ্গে ডি সির সেই স্টুডেন্ট । ফলে অচিরেই সেটা বোরিং মনে হতে লাগলো । যারা ফিল্ম মেকিং শিখতে এসেছে তাদের কাছে সেটাই তো স্বাভাবিক । একটা হার্ডকোর টেকনিক্যাল সাবজেক্ট শিখতে হবে , নিজেকে ইন্ডাস্ট্রির উপযুক্ত করে তুলতে হবে , তাও মাত্র দু' বছরের মধ্যে অথচ সময় বয়ে যাচ্ছে হু হু করে । কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে যথা নিয়মে । এই রকমই এক বিরক্তি উৎপাদনকারী ও নিস্তরঙ্গ সময়ে হঠাৎ একদিন ক্লাসে দেখানো হলো একটি তথ্যচিত্র । বিষয় : সুন্দরবন । সঠিক ভাবে বলতে গেলে সেখানকার অধিবাসীদের জীবন সংগ্রাম নিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে বাস্তব খণ্ডচিত্র তুলে ধরা এবং সেই সঙ্গে জরুরী কিছু পরিসংখ্যান ও তথ্য পরিবেশন করা । ছবি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম । কি দারুন উপস্থাপনা ! উপরন্তু বিস্ময়ের আরো এক ধাপ বাকী ছিল , সেটা হলো এই ছবিটা আমাদের ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের হাতে তৈরী । বেশ একটা  ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে ভাবতে থাকলাম টিচাররা যদি এমন ছবি তৈরী করতে পারে তবে আমরাই বা পারবো না কেনো ? ছবি দেখা ও আলোচনা পর্ব মেটার পর জানতে পারলাম এই ছবি নির্মাণ হয়েছে যাকে কেন্দ্র করে সেই মানুষটি আগামীকাল আসবেন আমাদের সঙ্গে কথা বলতে । তিনি শ্রী তুষার কাঞ্জিলাল । কে ইনি ? কি এনার পরিচয় ? জানা গেলো ইনি হলেন সমাজকর্মী ও সুন্দরবন উন্নয়ন আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ ও পুরোধা পুরুষ । সেই সঙ্গে এটাও জানানো হলো যে ওনার সময়ানুবর্তিতা নাকি দৃষ্টান্ত স্থাপন করার মতন একটি বিষয় । পাঁচ মিনিটের দেরী উনি সহ্য করেন না । ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের যে টিম রঙাবেলিয়ায় গিয়ে ওনার সঙ্গে কথা বলেছে তাদের নাকি সেই অভিজ্ঞতা হয়েছে । নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছতে দেরী হওয়ায় উনি সেখান থেকে চলে গেছেন । ফলে প্রতঃভ্রমণরত অবস্থায় ওনার সঙ্গে পা মিলিয়ে চলতে গিয়ে তাদের হিমশিম খেতে হয়েছে । তাই আমাদের সতর্ক করে দেওয়া হলো ক্লাসে আসতে দেরি যেনো মোটেই না হয় । 

পরের দিন সাক্ষাৎ হলো তাঁর সঙ্গে । টেগোর সোসাইটি ফর রুরাল ডেভেলপমেন্টের কর্ণধার তুষারবাবু , মাষ্টারমশাই নামে যিনি সমধিক খ্যাত । আপাদমস্তক শুভ্রকান্তি একজন মানুষ । হ্যাঁ ঠিক তাই , পরনে সাদা ধুতি পাঞ্জাবি আর এক মাথা ধপধপে সাদা চুল । সুপুরুষ এবং গৌরবর্ণ তাইতে দীর্ঘদিন ফিল্ড ওয়ার্কের ছাপ পড়েছে তাই টকটকে লালচে ভাব । শিক্ষা , বৈদগ্ধ , পাণ্ডিত্য , বয়েস ও অভিজ্ঞতার ভারে ঋদ্ধ এক আকর্ষণীয় ও সম্ভ্রম জাগানো ব্যক্তিত্ব । প্রথম দর্শনেই খুব কাছের ও আদরণীয় বলে মনে হয় । শুরু হলো আলাপচারিতা । জানা গেলো সুন্দরবনের নদীবাঁধ এবং সেখানকার ভাঙ্গন সম্পর্কিত বহু অজানা তথ্য । রাঙাবেলিয়াকে সেন্টার করে আসেপাশের দ্বীপবাসী মানুষজনের আশঙ্কা , সমস্যা , দৈনন্দিন জীবনযাপন । জলে কুমীর ডাঙায় বাঘ সহ বিচিত্র কর্ম ও জীবন প্রণালীর আলেখ্য । কিভাবে ঐ সমস্ত অধিবাসীদের কাছ থেকে পার্টিসিপেটারি ফরম্যাটে কি কি তথ্য সংগ্রহ করা হয় ও উন্ননের কাজে সেটার ইমপ্লিমেন্ট কি ভাবে হয় এই সমস্ত কিছু গল্পের ছলে বলে গেলেন আমাদের । সেই ভাষণে কোনো গেরেম্ভারি চাল নেই , সম্পূর্ণ বাহুল্য বর্জিত এবং তার সঙ্গে অনাবিল হাস্যরসের মিশেল । যদি খুব ভুল না হয় যতদূর মনে পড়ে উনি সাকুল্যে দিন দুই কি তিন এসেছিলেন রূপকলায় । নিজের সুদীর্ঘ ও সুবিস্তৃত কর্ম জীবনের নানান অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছিলেন । অসামান্য রসবোধের পরিচয় ছিল সেই কথার ছত্রে ছত্রে । গোড়াতেই বললেন : শোনো বাছারা আমার কাজ শুরুর প্রথম দিকের একটা গপ্পো তোমাদের বলি । তখন আমি যাকে বলে সত্যি সত্যিই ইয়াংম্যান , রক্ত গরম একেবারে টগবগ করে ফুটছে ।  একদিন এক পথ সভায় একটা চৌকি গোছের কিছুর ওপর উঠে খুব খানিকটা তেড়ে লেকচার দিলাম । যাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছিলাম তাদের কিসে মঙ্গল হয় সেটা বোঝানই ছিল আমার লক্ষ্য । গলা শুকিয়ে যখন কাঠ তখন বাধ্য হয়ে চৌকি থেকে নামতে হল । জল না পেলে আর প্রাণে বাঁচি না এমন অবস্থা । মুটামুটি ছোটখাটো বেশ একটা জমায়েত হয়েছিল , তার ভিতর থেকে এক বুড়ো মোল্লাচাচা এগিয়ে এসে বললে এই ছাওয়ালডার গলার ত্যাজ আছে হেইডা কিন্তু মানতেই হইব । বোঝো ঠ্যালা ! দিনের শেষে আমার কপালে তাহলে কি জুটলো তোমরাই ভেবে দেখো একবার ! 
এই রকম অসংখ্য মনিমানিক্য ছড়িয়ে ছিল তাঁর লেকচার সেশনে । একজন ফিল্ড ওয়ার্কারকে কি ভীষণ শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম করতে হয় তা বলতে গিয়ে ব্যঙ্গ মিশ্রিত ধমক দিয়ে বলেছিলেন : তোমরা তো জন্মেছ সব এক একটা যেন দেবশিশু , ননীরপুতুল । গায়ে দু ফোঁটা জল পড়লেই গোলে পাঁক হয়ে যাবে । 
অর্থাৎ একজন সমাজকর্মীকে হতে হবে ক্লান্তিহীন বিরামহীন সদা সর্বদা প্রস্তুত ও সজাগ । তার ছুটি বলে কিছু নেই , থাকার কথাও নয় । বলেছিলেন মনে রেখো একশো শতাংশ কাজের পর তোমার প্রাপ্তির ভাঁড়ারে জমা পড়বে হয়তো এক শতাংশ । ভেঙে পড়লে চলবে না , দোমে গেলে চলবে না । জানবে তুমি ঠিক ততটুকুই পেয়েছ যতটুকু তোমার প্রাপ্য । ওখানেই তোমার সাফল্য ওখানেই তোমার কাজ করার স্বার্থকতা । কি অমোঘ বাণী ! এতো দিন পরে ভাবতে গিয়ে শিহরন অনুভব করি । কথাগুলি যে খুব জোরালো ও মজবুত বিশ্বাসের ভীতের ওপর দাঁড়িয়ে বলা সেটা বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় না । আগাগোড়া নিজের ব্যবহারিক জীবনে সেটাই তো প্রমাণ করে গেছেন ।  

আজকাল চতুর্দিকে একটা কথা খুব শোনা যায় : মোটিভেশনাল স্পীচ । সেটা প্রকৃত অর্থে কি এবং তার জোর কত তা আঠারো বছর আগেই উপলব্ধি করেছিলাম । মনে আছে সকলের ভিতর যে পাহাড় প্রমাণ ক্ষোভ ও অভিযোগ জমা হয়েছিল ; মাষ্টারমশাইয়ের ক্লাস এ্যাটেন্ড করার পর কমবেশি তার উপশম ঘটে । সর্বাংশে না হলেও বহুলাংশে তো বটেই । ব্যক্তগতভাবে বলতে দ্বিধা নেই ওনার কথা শোনার পর বুঝতে পারি সমাজ সংযোগের এই পাঠ ফিল্ম মেকিং এর অন্যতম জরুরী অধ্যায় , এ বিষয়ে না জানলে অন্য ধারার ছবি তৈরী করা অসম্ভব । প্রশ্ন উঠতেই পারে এতকাল ধরে প্রবাদপ্রতিম চলচ্চিত্রকারগণ দুনিয়া কাঁপানো সব ছবি বানিয়েছেন তাঁরা ডি সি পড়েছেন বুঝি ? উত্তর হল : হ্যাঁ পড়েছেন , তবে নিজের মতন করে । এখন যখন অর্গানাইজড সেক্টর তৈরী হয়েছে তখন তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করা হবে না কেনো ? রূপকলা কেন্দ্রের আমার এক সহপাঠি ও সহকর্মী তার প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের কাহিনীচিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালকের জাতীয় পুরস্কার লাভ করে । একাধিক সাক্ষাৎকারে সে এই পড়াশোনার গুরুত্বের কথা বলেছে ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছে । আজ যখন তামাম দুনিয়ার বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদগণ বিশ্ব উষ্ণনায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ঙ্কর রূপ ও তার সুতীব্র প্রভাব নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তিত । তখন খুব প্রাসঙ্গিক ভাবেই মাষ্টার মশাইয়ের কিছু কথা মনে পড়ে : প্রকৃতি তার নিজের নিয়মে নিজের পথে চলবে তার স্বভাবজাত আচরণ করবে । তুমি প্রকৃতির বিরুদ্ধে যেতে পারো না । সব চাইতে ভালো যা তুমি করতে পারো তা হলো প্রকৃতির কাছ থেকে উৎকৃষ্ট কিছু সময় ক্রয় করতে পারো । নদীর এক ধারে যেমন ভাঙ্গন হচ্ছে তেমন অন্য ধারে আবার নতুন চর জেগে ওঠার ব্যাপারটাও রয়েছে । এমন ভাবেই চলবে , তার মধ্যেই আমাদের সব রকম পরিকল্পনা গুলোকে ঠিকঠাক ভাবে সাজিয়ে ফেলতে হবে । 

আঠারো বছর আগে অতি অল্প সময়ের জন্য যে ব্যক্তির সাক্ষাৎ পেয়েছিলাম তাঁর প্রয়ান সংবাদ কেনো এভাবে বুকে বাজে ? যিনি অনায়াসে বলতে পারেন : মানুষকে ভালোবেসে মানুষের জন্য কাজ করলেই কি তুমি বিনিময়ে অঢেল ভালোবাসা পাবে , লোকে তোমাকে মাথায় তুলে ধেই ধেই করে নেত্য করবে বলে মনে করেছ ? তোমার মুন্ডু , ঠিক তার উল্টোটাই হবে ! যে কোনো ভালো কাজ করতে গেলেই তোমার কপালে অশেষ ঘৃণা , লাঞ্ছনা গঞ্জনা , কটূক্তি আর অপমান বরাদ্দ হয়ে আছে সেটা মনে রাখবে । তাই বলে কি তুমি হাত পা গুটিয়ে ঘরে বসে থাকবে ? সেটা তো আর হয় না , তোমাকে কাজ চালিয়ে যেতে হবে । সেই তিনি কবে পদ্মশ্রী পুরস্কার লাভ করেছেন , সেই সময় কেন্দ্রে কোন রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন ছিল এসব সালতামামি আমার কাছে অবান্তর বলে মনে হয় তাই জানার প্রয়োজন বোধ করিনি । শুধু এটুকু বলা যায় ওনাকে সন্মান প্রদর্শন করে দেশবাসীর ঋণ খুব সামান্য হলেও পরিশোধ হয়েছে বলে মনে হয় । একাধিক গুণী মানুষের কাছে শুনেছি যাদের রবীন্দ্রনাথ কিম্বা সত্যজিৎ রায়ের সংস্পর্শে আসার সৌভাগ্য হয়েছে তাদের জীবনদর্শন আমূল পাল্টে গেছে । রূপকলা কেন্দ্রের কোর্স শেষ হওয়ার পর আমাদের মধ্যে অনেকেরই এক ধরনের অপূর্ণতা ও অতৃপ্তির বোধ জাগে । বিশেষত আমরা যারা সিনেম্যাটোগ্রাফি শিখতে চেয়েছিলাম তাদের । কারণ শুধু মাত্র ভিডিওগ্রাফি শিখে স্ট্রিংগার হিসাবে কাজ করতে রাজি ছিলাম না । তাই ' সিনেম্যাটোগ্রাফি এন্ড ফিল্ম মেকিং ইন দ্যা ট্রু সেন্স '  শিখতে ও জানতে আমার দুই সহপাঠী এফ টি আই , পুনের উদ্যেশ্য যাত্রা করে এবং আমি ; ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান এল ভি প্রসাদ ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন এ্যাকাডেমি , চেন্নাই তে গিয়ে হাজির হই । ফিল্ম স্কুলের ছাত্র হিসাবে আমাদের দেশের সেরা প্রশিক্ষকদের পেয়েছিলাম তো বটেই এমন কি হলিউডের স্বনামধন্য ও জগৎ বিখ্যাত প্রযুক্তিবিদদের কাছে তালিম নেওয়ার বিরলতম সুযোগ হয়েছে । কিন্তু চেন্নাইয়ের সেই দিন গুলোতে দ্বিতীয় আর একজন তুষার কাঞ্জিলালকে পাইনি এ কথা অনস্বীকার্য ।

সমাপ্ত
 
SUDIP  PATHAK

Swapno Neer Apartment , 
3rd floor , flat no : 3 ,
321 Purba Sinthee Road , 
Madhugarh , DumDum ,
Kolkata -700030 

Phone & what's app number : 
9874919948 



 
  
 
 



 

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক