Featured Post
গ্রন্থ-কথা ।। 'গল্প কবিতা ও প্রবন্ধে ২০২০' ।। রণেশ রায়
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
সাহিত্যিকের কাজ হলো সময়টাকে ধরা তাকে উপলব্ধি করা। সময় যদি বিশেষ বার্তাবাহক হয় তবে সাহিত্যের মাধ্যমে সেই বার্তা সাধারণের কাছে গল্প উপন্যাস কবিতা প্রবন্ধের মাধ্যমে তুলে ধরার সামাজিক দায়িত্ব সাহিত্যিক অস্বীকার করতে পারেন না। ২০২০ এমনি একটা সময়কাল যা করোনা আর অর্থনৈতিক সংকটের দ্বিমুখী আক্রমণে আমাদের সমাজ জীবনকে বিশ্ব জুড়ে তছনছ করে দিয়েছে। এর স্বরূপ তুলে ধরে এর থেকে বেরোবার উপায় খুঁজে পাবার চেষ্টা করা হয়েছে এই বইতে।
এই শতাব্দীর বিশের দশকের শুরুর বছরটা শেষ হতে চলেছে। কি দেখলাম কেমন থাকলাম কি করলাম এ বছরটায়? প্রশ্ন উঠবেই কারণ অন্য বছরগুলো থেকে এ বছরের থাকা খাওয়া পরা করা দেখা সবই আলাদা। সারাবছরই কোন একটা ঘরে বন্দী থাকলাম একান্তে নিভৃতে। বুকে নিয়ে একরাশ নিরাশা। বিচ্ছিন্ন একা একা মুখোশ পরে সবার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বলা চলে কারাগারের কোন এক সেলে। ভয়ঙ্কর এক আতঙ্কের মধ্যে। আপাতদৃষ্টিতে এক বিশাল শূন্যতা অনিশ্চয়তা। জানতে পারি মানুষ করোনা ১৯ নামে মারণরোগে আক্রান্ত অথবা আতংকগ্রস্থ, কখন তাকে ধরে। অর্থনীতি সংকটে, বাজারে চাকুরী নেই, আজ যাদের আছে কাল থাকবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ। বাচ্চাদের খেলাধুলো বন্ধ। বছরটা করোনা বছর বলে চিহ্নিত। সমাজজীবন ভেঙে তছনছ। বাচ্চা বুড়ো সবাই ঘর বন্দী। একজন আরেকজনকে সন্দেহ। বোধ হয় করোনা ভাইরাস নিয়ে এসেছে। কাছে এলেই ছুলেই সংক্রমণ। তাই না আসাই ভালো। করোনা আতঙ্কের সঙ্গে জুটেছে চিকিৎসা আতংক। সত্যি করোনা হয়েছে কিনা, হলেও এর চিকিৎসা কি কত টাকার দায়, সমাজে অস্পৃশ্য হয়ে যাওয়ার ভয়, মরলে শব দাহ কিভাবে হবে কে করবে এসব নিয়ে প্রশ্ন। আর এরই মধ্যে করোনাকে সামনে রেখে রাষ্ট্র একের পর এক তথাকথিত সংস্কার নীতি অবলম্বন করে চলেছে যা কর্পোরেট রাজের ভীত শক্ত করে।
এই সবের মধ্যে আমিও পড়ি। তবে আমার বয়স ৭৫ এর ওপর। আমার বাইরের জগৎ ছোট হতে হতে চার দেয়ালের মধ্যে আটকে গেছে। এমনিতেই নিরূপদ্রোপ একাকিত্বের জীবন। খাওয়া পরা ঘুম। জীবনের রূপ রস বর্ণ গন্ধ বিলীন হতে চলেছে। মোবাইল বা কিছুটা লেখালিখি নিয়ে সময় কাটে। স্কুল কলেজ নেই খেলাধুলো নেই, পরিচিত বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় শূন্যে পৌঁছেছে। কোন কাজে যাবার তাড়া নেই। তাই জীবনটা শূন্যে দোদুল্যমান। অপেক্ষারত। কিন্তু যাদের জীবনে এখনও প্রানের স্পন্দন তাদের অবস্থাটা কি? ভাবা যায় না। অবশ্য ঘরে দাদু দিদা বাবা মা ছেলে মেয়ে নিয়ে পরিপূর্ণ সংসার। একজন আরেকজনকে আরো সময় দিতে পারছে যদিও বিধান আছে 'সামাজিক দূরত্ব' বজায় রাখার। এই একাকিত্বের মধ্যে থেকেও মানুষ ভাবে, আশা নিয়ে বাঁচে।
আমারও এইভাবে কাটে বছরটা। এই নৈরাশ্যের মধ্যেও শিখলাম জানলাম অনেক কিছু। জানলাম সমাজজীবনে কোন ধরণের সরকারের প্রয়োজন কেন, স্বাস্থ্য শিক্ষা গবেষণার ওপর সরকারের খরচ বাড়ান দরকার কেন। উগ্র শিল্পায়নে পরিবেশ ধ্বংস কতটা ক্ষতিকর। কিভাবে এই সংকটকালেও মুনাফাবাজরা ফায়দা তোলে, ভোগবাদ কতটা অসাড়, যুদ্ধবাজরা যুদ্ধের মহড়া দেয়। জানলাম সমাজটাকে ঢেলে সাজাবার প্রয়োজন কেন। এর থেকে প্রতিভাত হওয়া মনন নিয়ে বছরটা ধরে কালি কলম নিয়ে কাটালাম। এই করোনা কালে মানব সমাজের আর্থসামাজিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে যা নিয়ে কলম ধরতে হয়েছে। আর এরই ফসল এই বই। এটাই এই সংকটকালে আমার প্রাপ্তি। এতদিনকার চলমান জীবন ছেড়ে এই অন্ধকারের থিতু জীবনের মধ্যে আলো। বইতে ২০২০ র সংকটকালটা তুলে ধরার যেমন চেষ্টা হয়েছে তেমনি এর থেকে প্রাপ্য শিক্ষা জায়গা পেয়েছে । আর আছে এই কালের আগের লেখা দুএকটা লেখা।আজ এই করোনা সংকটের সময়কালে যা আরও তাৎপর্য পূর্ণ হয়ে উঠেছে। সমাজ পরিবর্তনের দাবি আরও সোচ্চার করে তুলেছে বলে আমরা মনে করি। তাই বইটার নাম দেওয়া হয়েছে 'গল্প কবিতা ও প্রবন্ধে ২০২০'। বইটাতে করোনা নিয়ে কিছু কবিতা গল্প প্রবন্ধ থাকলেও এটা সামগ্রিকতায় আমার জীবন ভাবনার প্রকাশ। পাঠকের পাতে তার স্বাদ কেমন সেটা জানার অপেক্ষায় রইলাম।
বইটি ডাউনলোড করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধে ২০২০
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন