নারী ও নারী দিবস
আর একটা বিশেষ দিন,পার করে ফেললাম দেখতে দেখতে, নারী দিবসের ঢেউ।রাত বারোটা বাজার অপেক্ষা, মোবাইল আতঙ্কিত হচ্ছিল ," ম্যাসেজ সুনামি" আসবে,এই বুঝি জলোচ্ছাসের থেকে বেশি স্পর্ধা নিয়ে! চারিদিকে তোড়জোড় পোস্টার-ফেস্টুন,কত প্রশংসা স্তুতি আছড়ে পড়ছে নেট দুনিয়া জুড়ে।ভাবছি এর কয়েক আউন্স নজর যদি বাড়ির পুরুষ রা নিজ নিজ বাড়ির মহিলা,বয়ষ্কা, শিশু কন্যাটির প্রতি দেখাতো,তাহলে বেশ হতো।কিন্তু একজন নারী প্রতি মুহূর্তে উপলব্ধি করে চলেছে আসল বাস্তবতাকে নগ্ন ভাবে। নারী নিয়ে মাদকতা আছে, কিন্তু নারী'র প্রথম অক্ষরটিই 'না' বলেই হয়তো আজও একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে এসেও নারীকে শুনতে হয় প্রতি পদে পদে ঘরে বাইরে কেবল 'না' শব্দ।
মানবচক্রের যেই মাধ্যমে আমাদের এই পৃথিবীতে আসা, তার একটি অপার মাধ্যম এই নারী। এই নারী কখনো আপনার মা, কখনো আপনার বোন আবার কখনো স্ত্রী। ধর্মেও আছে নারীর সম্মানের স্থান। হাজার সম্পর্কের মাঝে তাদের সঙ্গে আপনার আমার সম্পর্ক অন্যতম। নিজেকে অন্যের সুখে হাসতে হাসতে বিলিয়ে দিতে পিছপা হন না এই নারী। প্রত্যেকে নিজের মায়ের কথা একবার মনে করুন, প্রায় প্রত্যেকে দেখবেন স্মৃতি পটে ভেসে উঠবে এক স্নেহভরা,দরদী ,পরিবারের জন্য সর্বস্ব ত্যাগ স্বীকার করা একটা মুখ,যে সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে চলেছে সংসারের জন্য। এই মানুষটিকে আমরা কি বলতে পারি না,মা তোমার রেষ্ট দরকার,আজ তুমি বসো মা। চরম অসুস্থ হওয়া ছাড়া এই মানুষটা, শরীরের শক্তির শেষ বিন্দু পর্যন্ত নিজেকে, সঁপে দেয় ।ঠিক এই ভাবে স্মরণ করুন আপনার সহধর্মিনী কে, আপনার দিদি-বোনকে,মাসিমা-কাকিমা , দিদিমা,ঠাকুমা আপনার প্রতি একনিষ্ঠ বান্ধবীটিকে,এমনকি কাজের মহিলা টিকে,দেখবেন কত রকমের প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে এই নারীদের চলতে হয়।এনারা জানেন স্নেহ,দয়া মায়া ভালোবাসায়,নিজের কাছেই মানুষ গুলোর সমস্যা ও সমাধানের হালটি কাঁধে তুলে নিতে। নানা ঘাত-প্রতিঘাত পার করেই চলে এই নারীর জীবন।
নারীদের জন্য উৎসর্গ করা যায় বছরের প্রত্যেকটি দিন। তাকে উদ্দেশ্য করে যা-ই করা হয়, তা-ই হয়তো তার করা কাজের কাছে কম। তাই নারীদের উদ্দেশ্য করে আর তাকে সম্মান জানাতে বিশ্বে একটি দিন পালিত হয় নারী দিবস হিসেবে। সেই দিনটি হল আজ ৮ মার্চ।নারী দিবসের ইতিহাসমূলত দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরি-বৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকরা। সেই মিছিলে চলে সরকারের লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন।১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে নিউ ইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হয়। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ; জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বৎসর ৮ মার্চকে 'আন্তর্জাতিক নারী দিবস' হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন।সিদ্ধান্ত হয়, ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চে নারী দিবস পালিত হয়। বাংলাদেশ ১৯৭৫ সাল থেকে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করছে। বর্তমানে পৃথিবীজুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি, নারীর সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার অভীপ্সা নিয়ে। সেই থেকেই আজ অবধি ৮ মার্চ বিশ্বজুড়ে পালিত হয় 'বিশ্ব নারী দিবস'।দেশে দেশে নারী দিবসবাংলাদেশে দিনব্যাপী র্যালি আর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালিত হয় বিশ্ব নারী দিবস। এছাড়া নারী দিবসকে ঘিরে বেগুনি রঙের শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ কিংবা নারী তার পছন্দের মতো পোশাকটি পরে দিনটি উদযাপন করে।ভারতে দিনটিকে ঘিরে নানা আয়োজন করা হয়। এইদিনে নারীদের তাদের কর্মস্থলে সবচেয়ে বড় পদে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। যেমন একটি পুরো বিমানের প্রত্যেকটি পদে দেওয়া হয় নারীকে এবং সেই উড়োজাহাজটি ফেরত আসে ঠিক দুদিন পর। কানাডায় নারীর প্রতি সম্মান জানিয়ে ব্যাকনোটে যুক্ত করা হয় নারীর ছবি। যা দেশটির মুদ্রার দেড়শ' বছরেও হয়নি। নারী দিবসকে ঘিরেই এ আয়োজন করেন তারা। এছাড়া নারীর প্রতি সম্মান জানিয়ে সৌদি আরবেও পালিত হয় বিশ্ব নারী দিবস। তবে তারা তা ৮ মার্চ পালন করে না। তারা তাদের মতো দিন ঠিক করে দিনটি পালন করে আসছে। অন্যদিকে চীন, জাপানে দিনটিতে নারীদের কর্মস্থল থেকে ছুটি ঘোষণার রেওয়াজ আছে।
নারীদের,প্রতি নিয়ত ,আমাদের সমাজে, পরিবারে,কি অফিস কি রাস্তা ঘাট,পাবলিক প্লেস সর্বত্র আশঙ্কায় দিন কাটাতে হয়।একটু সাহায্য করে আরো বড় ফাঁদ নিয়ে ছুঁক ছুঁক করা মুখোশ পড়া কিছু ঘৃণ্য মানুষ ক্রমাগত নারীদের অপমানিত,একটু দয়া দাক্ষিণ্য পেতে উদগ্রীব আর তাদের মুখোশ খসে পড়লেই বদনামের তকমায়।নারী রা একজন পূর্ন স্বাধীন মানুষ,একটা স্বাধীন স্বত্তা আছে তাদের ,জোর করে তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ,নিয়ন্ত্রণ করা ,মানসিক অত্যাচার করা কখনোই নারী প্রগতির সহায়ক হতে পারে না,যতই নারী দিবসের জয় ধ্বজা ওড়ানো হোক না কেন !
=====================
রাণা চ্যাটার্জী
বিবেকানন্দ কলেজ মোড়