Featured Post

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

ছবি
   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন:  'লেখাটি স্বরচিত ও অপ্রকাশিত'। মেল আইডি :  printednabapravat@gm

প্রবন্ধ: অরুণ চট্টোপাধ্যায়


নারীর অধিকার, সম্মান ও মর্যাদা
--
এটা বললে নিশ্চয় বেশী বলা হবে না যে মানব প্রাণ সৃষ্টির মুহূর্ত থেকে শরীর বা মনের দিক থেকে নারী দুর্বল ছিল। কিন্তু নারীকে নরের প্রয়োজন ছিল। আবার নরকেও নারীর। এই পারস্পরিক প্রয়োজন প্রাকৃতিক ভাবে বংশ প্রবাহকে রক্ষা করার খাতিরে।
এছাড়াও আছে নারীর প্রতি নরের আবেগ আর আকর্ষণ। নর আর নারী এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ভালবাসার বন্ধন বা হৃদয়ের টান ঠিক কবে থেকে এসেছিল তা হয়ত বলা বেশ একটু শক্তই হবে। প্রথম দিকে হয়ত যৌনাবেগটাই প্রবল ছিল। আর এই তাড়নাতে নর নারীকে সর্বদা সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করত। হয়ত নারীকে সে কেবল তার সম্ভোগের বস্তু বলে ধরে নিত আর নিজের সম্পত্তির মত তাকে আগলে রাখার চেষ্টা করত।
এই সুরক্ষার প্রয়াস অবশ্যই নিজের স্বার্থে একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। একথা অবশ্যই অস্বীকার করার উপায় নেই যে যৌনতার আবেগ হল জগতের সবচেয়ে বড় আবেগ। অন্য সমস্ত আবেগকে হার মানিয়ে দেয় এই আবেগ। এই আবেগ যখন চরমে ওঠে তখন মানুষ পারিপার্শ্ব ভুলে যায়। ভুলে যায় সব যুক্তি তর্ক।
তাই এই আবেগ হল মানুষের আদিম আবেগ। এই আবেগ মানুষকে আচরণে এমন কী পোশাকেও করে তোলে সম্পূর্ণ আদিম। পৃথিবী যতই খাক পাকের পরে পাক, যতই তার ওপর পড়ুক সভ্যতার আবরণের পরে আবরণ, খুব সামান্য কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া মানুষ কিন্তু এই আবেগের কাছে নতি স্বীকার করবেই। কারণ যৌনতা জীবনের অতি স্বাভাবিক এক ক্রিয়াকর্ম। খাদ্য ও শ্বাসগ্রহণ আর মলমূত্র পরিত্যাগের মতই স্বাভাবিক ও নিয়মিত।
পুরুষ মানুষ তার শ্রেষ্ঠতম সম্পত্তির মত সুরক্ষিত করতে চাইত নারীকে। ধীরে ধীরে সে সৃষ্টি করতে লাগল নারীকে কেন্দ্র করে একটা সুরক্ষা বলয়। এই সুরক্ষা বলয় কোনও বস্তু দিয়ে গড়া নয়। নানা নিয়ম কানুনের নিগঢ়ে বাঁধা এই বলয় ভেদ করা ক্রমেই দুঃসাধ্য হয়ে উঠল নারীর পক্ষে। বস্তুর বাধা অতিক্রম করা শারীরিক শক্তির কাজ। নিয়মের বাধা অতিক্রম করতে লাগে মনের শক্তি। এই দুই শক্তিই নারীদের প্রাকৃতিক ভাবেই কম। আসলে শারীরিক শক্তি কিন্তু মনের শক্তির থেকে অনেক কম হয়। সেজন্যে যুদ্ধের সময় প্রত্যেক পক্ষই গলাবাজি আর বৃথা আস্ফালন করে বিপক্ষের মনের শক্তিকে কমিয়ে দিতে চেষ্টা করে।
এইভাবে পুরুষ নিয়মের কঠিন থেকে কঠিনতর বাধার প্রাচীর সৃষ্টি করে যেতেই লাগল। নানা ভয়ংকর কাল্পনিক পরিণতির কথা ভেবে নারী আর পরপুরুষের সঙ্গে মেশা তো দূরের কথা ঘরের চৌহদ্দির বাইরে যেতেও সাহস পেত না। এছাড়াও ছিল নানা আচার আর নানা প্রথার বাহুল্য যেগুলো একমাত্র নারীর ক্ষেত্রেই মানা বাধ্যতামূলক ছিল।  
সমাজ যতই এগিয়ে যাক, শিক্ষা আর সভ্যতার আলো যতই ছড়িয়ে পড়ুক, সেই আলো কিন্তু এসে পড়ত না সমাজের অন্দরমহলে। নারীর শিক্ষালাভ নিষিদ্ধ ছিল। কারণ শিক্ষা লাভ করলে কুক্তি দিয়ে বাধা নিষেধের অর্থ জানতে চাইবে। মানতে চাইবে না বা প্রতিবাদ করবে।
পরিবারের ঘেরাটোপের বাইরে যাওয়া নারীর কাছে নিষিদ্ধ ছিল। নারীকে বোঝান হয়েছিল সে দুর্বল। আর তাই নিজেকে রক্ষায় তত পারঙ্গম নয়। পরিবার পুরুষ-প্রধান ছিল। পুরুষের নির্দেশই ছিল সব।  
প্রথম দিকে উদ্দেশ্য যে মহৎ আর সৎ ছিল না তা বলা যায় না। এই নিষেধের বেড়াজাল ছিল যুক্তির সুতোয় বাঁধা। নারীদের পড়াশোনা করা বা জ্ঞানার্জনেও ছিল বিস্তর বাধা। তাই ঠিক আর ভুলের পার্থক্য নিরূপণ তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না।
ফলতই কয়েকটি মাত্র হাতে গোনা ব্যতিক্রম ছাড়া সমাজে পুরুষরাই এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল। নারীরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল একচুল এগোতে পারে নি তার থেকে। পর্দা শুধু মাত্র নারীর দরজা জানলাতেই নয়, মোটা পর্দার আড়ালে ঢাকা দেওয়া ছিল তার মন, মগজ আর ব্যক্তিত্ব। নারী মনে মনে বিদ্রোহী হয়ে উঠলেও সে ছিল নিরুপায়।
ভোরবেলায় প্রথম যখন সূর্য ওঠে তার আগে চারপাশ বেশ অন্ধকার থাকে। সূর্য ওঠার পরে ধীরে ধীরে আলো বাড়তে থাকে আর অন্ধকার কমতে থাকে। মধ্যাহ্নে সূর্য যখন চলে আসে মাথার ওপর তখন ছায়া সবচেয়ে ছোট হয় আর সবচেয়ে বেশী জায়গা আলোকিত হয়। যত দিন যায় সমাজ সভ্যতার আলোকে বেশী করে উদ্ভাসিত হতে থাকে। শিক্ষা মানুষের মনে আরও বেশী করে আলোর জোগান দিতে থাকে।
শিক্ষা আর জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে সমাজে সভ্যতা যত বেশী করে এগোতে থাকে, ততই এক শ্রেণীর মানুষ মানসিকতায় বেশী করে উন্নত হতে থাকে। সব মানুষের না হলেও কিছু মানুষের মনে মানবিক বোধ বাড়তে থাকে। আর তাঁরা এগিয়ে আসতে থাকেন সমাজ সংস্কারে। সমাজ সংস্কারের অর্থ সমাজের বুকে ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকা কুসংস্কারগুলোকে দূর করা। সে কাজ বড় সহজ নয়।
কুসংস্কার এক ধরণের নিরেট বিশ্বাস। এগুলো জগদ্দল পাথরের মত মানুষের মনে চেপে বসে থাকে। সংস্কার হয় যুক্তির নিরিখে। জ্ঞানের পরিধি যত বাড়তে থাকে ততই বাড়তে থাকে যুক্তির ধারও। কিন্তু কুসংস্কার গড়ে আর বেড়ে ওঠে অন্ধকার বিশ্বাসের স্যাঁতস্যাঁতে জমিতে। এতে আবেগের আঠা থাকলেও থাকে না যুক্তির উত্তাপ। আগাছার মতই মনের জমির গভীরে শক্ত শেকড় গেড়ে ঢুকে বসে থাকে। অন্ধবিশ্বাস এতই কঠিন আবরণ সৃষ্টি করে মানুষের মনে যে সেই আবরণ ভেদ করে শিক্ষা আর জ্ঞানের আলো পর্যন্ত প্রবেশ করতেও পারে না ভাল করে।
সুতরাং কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করা সহজ নয়। কুসংস্কারকে আগে কুসংস্কার এটা প্রমাণ করতে হয়। প্রচুর পরিমাণ জ্ঞান আহরণ না করলে সেটা সম্ভব নয়। আর কে না জানে প্রচলিত প্রথার অবসান ঘটাতে গেলে চারিদিক থেকে কত পরিমাণ বাধা আসা সম্ভব। একটা শক্ত আর মাটির গভীরে ঢুকে যাওয়া আগাছা তুলতে কী বিপুল পরিমাণ শারীরিক শক্তির প্রয়োজন সেটা যারা আগাছা পরিষ্কার করে তারা জানে। আর কুসংস্কারের আগাছা দূর করতে গেলে দরকার বিপুল পরিমাণ মানসিক শক্তি।
সেই বিপুল শক্তি ছিল রামমোহন, বংকিমচন্দ্র, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র প্রমুখের। নাহলে রদ হত না সতীদাহ প্রথা, বাল্যবিবাহের মত কুপ্রথা। বিধবা বিবাহের মধ্যে দিয়ে প্রচলন হত না বাল্যবিধবাদের যন্ত্রণা অবসানের সুপ্রথা। একেবারে খাস অন্দরমহলের ভেতরের কথা, নারী হৃদয়ের নির্যাস টেনে এনেছিলেন কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র। নারীর হয়ে তিনি বলেছেন অনেক কথা। নারীর কথা বলেছেন বংকিমচন্দ্র, বলেছেন রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু আপামর নারীর উপলব্ধির জমিতে কলম নামাতে সমর্থ হয়েছেন শরৎচন্দ্র। তাঁর কলম নারীকে এঁকেছে কত সুন্দর, স্বাভাবিক আর সাবলীল ভঙ্গিমায়।  
বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন যুগে কবি, সাহিত্যিক আর লেখকেরা কাব্য, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটকের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন নারীর দুঃখের কাহিনী, তাদের সমস্যা আর বাতলাতে চেয়েছেন সমাধানের পথ।
নারীকে সুরক্ষিত করা দরকার এই কথা অনেককে অসন্তুষ্ট করতে পারে। অনেকে এই কথাটা নিতে পারেন অন্য কোনও ভাবেও। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বয়ে  যাবে বংশধারা। এই বংশধারার প্রবাহে নারী এবং পুরুষের অবদান সমান সমান। কিন্তু নারীর অতিরিক্ত একটি মহান কাজ আছে। তা হল গর্ভস্থ সন্তানকে চল্লিশ সপ্তাহ ধরে নিজ জঠরে প্রতিপালন। নিজের পুষ্টি ভাগ করে পুষ্টি দিতে হয়, নিজের মধ্যে সুরক্ষা দিতে হয়, নিজের শ্বাসবায়ু ভাগ করে অক্সিজেন জোগাতে হয়। অর্থাৎ নারীকে সুরক্ষা দেওয়ার অর্থ ভাবী জীবন ধারাকেই সুরক্ষিত করা।
নারীকে সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়টাকে কেবল মাত্র আক্ষরিক অর্থের মধ্যেই বেঁধে রাখলে চলবে না। এই সুরক্ষার আরও অনেক অর্থ আছে। এই সুরক্ষার অর্থ তার সম্মান, অধিকার আর মর্যাদাকে রক্ষা করা। নারীর সুরক্ষার অর্থ নারীকে সমাজের সব কাজে পুরুষের সঙ্গে এক প্রবাহে প্রবাহিত করার অধিকার দেওয়া। কোনও নারীই দুর্বল নয়। জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে, রণে কিংবা বনে অনায়াসে সে হেঁটে যেতে পারে পুরুষের পাশাপাশি—কখনও সহযোগী হয়ে আবার কখনও বা প্রতিযোগী হয়ে। তাকে নানা নিষেধের দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখার অর্থ সমাজকেই বেঁধে রাখার প্রয়াস।
এখন আমাদের সভ্যতার রথ অনেক দূর এগিয়ে এসেছে। এখনও কি আমরা নারীকে পাশে দিয়ে সমতালে এগিয়ে যাবার ব্যাপারে চিন্তার কার্পণ্য দেখাব? আমাদের রথের চাকা মসৃণ ভাবে এগিয়ে যাক এখনও কি আমরা চাইব না?

=======================================

(DR.)ARUN CHATTOPADHYAY

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক