google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re অণুগল্পঃ তরুনার্ক লাহা - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

রবিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৯

অণুগল্পঃ তরুনার্ক লাহা




                        

                          বিজয়া                     

               ----------------


---মনসারাম,বাড়ি আছো?
রান্নায় ব্যস্ত মনসারামের বৌ বিন্দির কানে এসে পৌঁছায় এই ডাক।কড়াইটা নামিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে।জনাপাঁচেক ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে ।।বিন্দি জানতে চায়---তুমরা কে গো?
ধুতি পাঞ্জাবি পরা বয়স্ক ভদ্রলোকটি এগিয়ে এসে বলে---আমরা এসেছি সীতারামপুর থেকে।দুর্গা 
পূজায় মনসারামকে বাজাতে হবে গো।আমরা বায়না   করতে এসেছি।মনসারাম কোথায় গেল?
বিন্দি দ্বিধাগ্রস্ত।তবু মন শক্ত করে বলে---আমি উয়ার বৌ।তুমরা বায়না করে যাও।ইখানে একটুকুন দাঁড়াও।আমি আসছি।
বিন্দি দ্রুত পা চালিয়ে পাশের গলিতে ঢুকে যায়।মিনিট দশেক পর ফিরে আসে প্যালারামকে সাথে নিয়ে।মনসারামের  ভাই ।যমজ ।প্যালারামের সামনেই বায়না হয়ে যায়।লোকগুলো খুশী মনে ফিরে যায়।
প্যালারাম বিন্দিকে জিজ্ঞেস করে---ইটা কি হল্য,বৌদিদি?তুমার সাহস ত কম লয়!তুমি ইবার সামাল দিবে কি করে?আমরা ত আর দাদার মতন বাজাতে পারি নাই।লোকে আমাদের মারবেক।
  বিন্দির কণ্ঠস্বরে ভীষণ দৃঢ়তা ---এত ভয় পাওয়ার  কিছু নাই।তুমার দাদা না থাকলেও আমি ত আছি।আমিও বাজাতে জানি।তুমার দাদার কাছে শিখেছি।আজ থেকেই আমরা মহড়া শুরু করব।
প্যালারাম বিন্দিকে যতই দেখে অবাক হয়।বিন্দি কম চেষ্টা করে নি মনসাকে মদ থেকে দূরে রাখার জন্য ।কিন্তু মদই মনসাকে শেষ করে দিয়েছিল।ঢাক বাজাবার সময় মনসার অন্য রূপ।সবাই মুগ্ধ হয়ে যেত তার ঢাকের বোল শুনে ।ঠিক যেন কবিতা আওড়াচ্ছে।গ্রাম শহরে অনেক নাম ছড়িয়েছিল মনসার।বিন্দিকেও শিখিয়েছিল অনেক কৌশল ।দুর্গাপূজা এলে বিন্দি যেতে চাইত।মরার একবছর আগে কাশিমবাজারে নিয়ে গিয়েছিল বিন্দিকে।না বাজালেও বিন্দি দেখে এসেছে দুর্গা মায়ের সামনে মনসার মনপ্রাণ ঢেলে দেওয়া ঢাক বাজাবার অদ্ভূত কলা।
একদিন বাজাতে বাজাতেই মনসা ঢাক আঁকড়ে ঢলে যায়।বিন্দি দৌড়ে আসে।সব শেষ ।বিন্দি বিধবা হয়।
    দেখতে দেখতে শরৎ আসে।পুকুর পাড়ে সাদা কাশের ঝোপ জানান দেয় পূজো আর দেরী নেই। সামনেই অগ্নিপরীক্ষা ।
সীতারামপুরে বিন্দি তার ঢাকের দল নিয়ে হাজির।বিন্দিকে দেখেই গাঁয়ের লোক বলাবলি করতে থাকে---মিঞা মানুষ ঢাক বাজাবে,এটা কেমন হবে?পারবে তো?
কেউ কেউ বলে---সস্তায় পেয়েছে রে;
বিন্দি আজ লাল শাড়িতে সেজেছে।বিধবা মানুষ ।লাল শাড়ি পরা বারন।বিন্দি ওসবের তোয়াক্কা করে করে নি।সিঁথি আকাশ গঙ্গা হলেও সারাশরীরে ঔজ্জ্বল্য কম নেই।কোমরে লাল ওড়না বাঁধা।পায়ে ঘুঙুর।বিন্দি কারো কথায় কান না দিয়ে ঢাক বাজাতে শুরু করে।দলের মধ্যমণি বিন্দি। নাচতে নাচতে ঘুঙুরের তালে তালে বিন্দি ঢাক বাজিয়ে চলে।সঙ্গত দেয় প্যালারাম ওতার দলের লোকেরা।ঢাকের সুর ছন্দে মন্দির প্রাঙ্গন গমগম করতে থাকে।
উপস্থিত সকলেই মন্ত্রমুগ্ধ।বিন্দির ঢাক বাজানো দেখতে আট থেকে আশি সবাই হাজির।ঢাক বাজানো শেষ হয়।কমিটির সেক্রেটারী  খুশী হয়ে বিন্দির ওড়নায় একশ টাকার নোট গেঁথে দেয়।
বিন্দির চোখ আনন্দে চিকচিক করে।স্বামীর মান রেখেছে সে।সে যে মনসারামের বৌ প্রমাণ করেছে আজ। 
                           ***
তরুনার্ক লাহা
গ্রাম +পোষ্ট বেলিয়াতোড়(কলেজ পাড়া)
জেলা বাঁকুড়া 
পিন ৭২২২০৩