সনাতনী ভাবাবেগ মোড়কে ঢাকা খাজুরাহর কলঙ্কিত অধ্যায়
হাজার বছর আগেকার ঘটনা । সে কারণে , সঠিক কোনো ইতিহাস নেই । প্রায় পুরোটাই দাঁড়িয়ে আছে মিথের উপর । বিশ্বাসেরব উপর । যেহেতু বিষয়টি সনাতনী হিন্দু ভাবাবেগ সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে সে কারণে হয়তো সমসাময়িক ঐতিহাসিকগণ বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন । হয়তো বা স্পর্শকাতর হিন্দু ভাবাবেগে আঘাত লাগবে ভেবেই । বা ঐতিহাসিকগণ মনে মনে করে ছিলেন বিষয়টির মধ্যে ঐতিহাসিক কোনো উপাদান নেই ।
#
প্রতিবেদকের আধুনিক দৃষ্টিতে ধরা পড়েছে খাজুরাহর মন্দির সৃষ্টির নেপথ্যের এক কলঙ্কিত অধ্যায় । যৌবন ও যৌনতার অধ্যায় । সেটাকে ঢাকার জন্য মন্দির গাত্রে যৌন ভাস্কর্য । যেটা এক সময় ছিল দ্যা টেম্পল অফ সেক্স । সেটাকে বতর্মানে সারা বিশ্বকে দেখানো হচ্ছে দ্যা টেম্পল অফ লাভ । কেবল মাত্র বিশ্বায়নের জন্য । পর্যটন শিল্পের জন্য ।
#
খাজুরাহর মিথটা হলো , রাজেব্রাহ্মনের কণ্যা হেতস্বী অপূর্ব সুন্দরী । অল্প বয়সেই বিধবা হয়ে বাপের বাড়ি ফিরে আসেন। এক রাতে নদীতে স্নান করতে গিয়ে চন্দ্রদেবের আকাঙ্ক্ষার শিকার হন এবং দুজনের যৌন মিলন ঘটে । চন্দ্রদেব ও হেতস্বীর মিলনের ফলে যে সন্তান জন্মনেন তিনি চান্দেল রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন । তিনিই খাজুরাহর মন্দির গুলি নির্মাণ করেন ।
#
আধুনিক দৃষ্টিতে যদি মূল্যায়ন করা যায় তাহলে যে বিষয়টি উঠে আসে সেটি হলো , ব্রাম্ভনকন্যা হেতস্বী । অল্প বয়সে বিধবা । বাপের বাড়ি ফিরে আসেন । তার যৌবন ধরে রাখতে পারেন না । বিবাহিত জীবনে যৌন অভিজ্ঞতা । তাড়া করে । তাই সে রাতের অন্ধকারে চন্দ্রদেব নামে একজন পুরুষ মানুষের সঙ্গে যৌনমিলনে রত হন । তার ফলে গর্ভবতী হয়ে পড়েন । বিষয়টি যেহেতু আজ থেকে হাজার বছর আগে । সে সময় বিধবা বিয়ের কোনো প্রচলন ছিল না । সে সময় বিধবা নারীর গর্ভবতী হওয়ার কথা সমাজ মেনে নেবেনা । সে কারণে মধ্যপ্রদেশের প্রান্তিক এলাকায় বসবাস করতে থাকেন । সন্তানের জন্ম দেন। যে সন্তান পরবর্তী কালে চান্দেল রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন । তবে সেটাও কোনো সঠিক তথ্য নেই ।
#
হেতস্বী ও চন্দ্রদেবের ঔরসজাত পুত্র পরবর্তী সময়ে মায়ের কলঙ্ক ঢাকতে ও নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠা ও সম্মান পেতে ওই এলাকায় মন্দির গুলি তৈরি করান । চন্দ্রদেব হয়তো অভিজাত কোনো মানুষ ছিলেন । তারই সম্পত্তি নিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের মন্দির প্রতিষ্ঠা । এটার মধ্যে দিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন যৌনতা কোনো পাপ নয় , পবিত্র বিষয় । দেবতাদের বিষয় । স্বর্গের বিষয় । সাধনার বিষয় । সে কারণে মন্দির গাত্রে বিভিন্ন ধরনের যৌন মিলনের ভাস্কর্যের রূপায়ণ । সাধারণ মানুষ মন্দিরে পূজা দিতে গিয়ে ভাববে হেতস্বী ও তার প্রজন্ম কলঙ্কিত নয় , পবিত্র ।
#
সে সময়কার মানুষ বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি । তার ফলে মন্দির গুলি তীর্থস্থান হতে পারে নি । হতে পারে নি সাধন ভূমি । সে সময়কার হিন্দু সমাজ মন্দির গুলি গ্রহণ করেনি । দীর্ঘ দিন ধরে সাধারণ মানুষের ওদিকে না যাওয়ার ফলে মন্দির গুলি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে । তার ফলে এক সময় ছিয়াশিটি মন্দিরই জঙ্গলে ঢাকা পড়ে যায় । ইংরেজ শাসনকালে ইংরেজরাই পুনরুদ্ধার করে ।
#
পরবর্তি কালে বিভিন্ন ঐতিহাসিকগণ গবেষণা করেন । কিন্তু সঠিকভাবে কোনো ঐতিহাসিক তথ্য দিতে পারেন নি । তবে মন্দির গুলি ৯৫০ থেকে ১০৫০ খ্রিস্টাব্দে তৈরি হয় । তার পর বাকি সকল তথ্য আনুমানিক । আজ থেকে ১০০০ বছর আগে মধ্যপ্রদেশের ছত্রপুর জেলার প্রান্তিক এলাকার খাজুরাহর মন্দির গুলি আজও যৌনতার প্রতীক হয়ে থেকে গেলো । যদিও অনেক ঐতিহাসিক কষ্টকল্পিত ভাবে উপস্থাপিত করতে চেয়েছিলেন যে , হিন্দু ধর্মের শাস্ত্রের কাহিনী অবলম্বনে মন্দির গাত্রে যৌন ভাস্কর্য গুলি তৈরি । আবার অনেকের অভিমত কামশাস্ত্র অবলম্বনে তৈরি ।
#
যে বা যারাই এই মন্দির গুলি তৈরি করিয়ে ছিলেন তাঁদের মূল উদ্দেশ্য ছিল তাদের যৌন জীবন ও যৌন কেলেঙ্কারি সমাজের কাছে পবিত্র দেখানো । এর জন্যে ঢাল করে ছিল মন্দিরকে । কিন্তু হিন্দুসমাজ কোনো ভাবেই বিষয়টি মেনে নেয়নি এবং আজও । শেষে একথা বলা যায় যে হেতস্বীর অবৈধ যৌন জীবনের কালিমালিপ্ত অধ্যায়ের স্মারক হয়ে বেঁচে থাকবে তাঁর প্রজন্মের তৈরি খাজুরাহর মন্দিরগুলি ।।
-------
Sumit Modak , "Sona jhuri ", Po : Dighirpar Bazar , Falta , 24Pgs (s), Pin : 743503. M 9002977488