google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re মুক্তগদ্যঃ শেফালি সর - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

সোমবার, ১৭ জুন, ২০১৯

মুক্তগদ্যঃ শেফালি সর

 ।। প্রথম।।        


                        জীবনের শুরু টাই তো প্রথম। প্রথম যা কিছু তার মধ্যে থাকে একটা নবীনতা যা সবকিছুকে সুন্দর করে তোলে। প্রথম ভূমিষ্ঠ হলাম যেদিন, সেদিন পৃথিবীর আলোটাও ছিল আমার কাছে প্রথম। মায়ের হাতের প্রথম পরশ পেলাম সেদিন-অনুভূতিটাকে হয়তো উপলব্ধি করতে পারি নি, তবু ও সেই প্রথম পরশ আমাকে পবিত্র করেছিল। তারপর জীবন নদী প্রবাহিত হ'তে শুরু ক'রল। জীবন প্রবাহিত হবার যে কী অপরিসীম আনন্দ তার  উপলব্ধি  কত মধুরতম! উচ্ছল চঞ্চল জীবন প্রবাহ কত মন ছুঁয়ে ছুঁয়ে জীবনের ঘাট পেরিয়ে পেরিয়ে কত কথা কয়ে কয়ে এগিয়ে চলেছে। কখনো সে থামেনা বুঝি থামবেও না। সেই অনন্ত প্রবাহ মিলিত হবে অনাদি কালের স্রোতে। কিন্তু সেই প্রথম প্রবাহের ক্ষণ টি যেন কত সুন্দর কত মধুময়!তা লেখা আছে কালের জীবন পঞ্জিকা তে।  তারপর প্রথম পাঠশালা মায়ের কোল। প্রথমেই মা হাতে খড়ি টা ধরিয়ে  শ্লেটের উপরে দাগ কাটতে শেখালেন। কালো শ্লেটের উপরে সেই প্রথম খড়ির সাদা  দাগটা আজ ও চোখের সামনে ভেসে ওঠে। মনের ঘরে তখন একরাশ ভালো লাগা যেন আজ ও অনুভবে ধরা পড়ে।একপা একপা করে সবে হাঁটতে শিখছি যখন, তখন সেই প্রথম হাঁটার দিনটি আমার স্মৃতি কে আচ্ছন্ন করে। মনে হয়, আমি সেই আমি আজ যে কিনা দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম হ'লাম। তারপর থেকে তো হাঁটছি আর হাঁটছি কখনো দ্রুত কখনো মন্থর জীবনের তরঙ্গ দোলায় দুলতে দুলতে।
       জীবন প্রবাহ বয়ে যেতে যেতে পরিচিত র সীমকে অতিক্রম করে ফেলেছে। জীবনের পথে কত প্রিয়জন হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বন্ধু হবার জন্য।সবার বন্ধুত্বের দিনের ওএকটা প্রথম দিন ছিল। কিন্তু প্রথম বন্ধুর প্রথম হাতটি বাড়ানোর দিনটা মনের মাঝে এক বিশেষ অনুভূতির আলোড়ন তোলে।তা যেন স্বপ্নের মত মনে হয়।যেন মনে হয় জীবনে প্রথম বর্ষার আবির্ভাব ঘ'টলো। সেই প্রথম বর্ষার যেন আষাঢ়ের প্রথম মেঘের মতো যৌবন কে উচ্ছল ও চঞ্চল করে তোলে। আজ আমার জরা তাকে স্পর্শ করতে পারে না। আমার আশা, নিরাশা তার থেকে বহু দূরে। এই জন্য ই কালিদাস উজ্জয়িনীর প্রাসাদ শিখর থেকে আষাঢ়ের প্রথম মেঘকে দেখেছিলেন। আজ ও আমরা সেই মেঘ দেখি কিন্তু পরিবর্তমান মানুষের ইতিহাস তাকে আজ ও স্পর্শ করে নি। কিন্তু সে অবন্তী,সে বিদিশা আজ  কোথায়?
     প্রথম দেখার সেদিন কত দ্বিধা ছিল মনে।কত যদি এসে ভিড় করেছিল মনে প্রশ্ন হয়ে। যদি সে আমার স্বপ্নের মত না হয় তবে? যদি সে আগে কথা না বলে যদি আমাকে তার না ভালো লাগে তবে! তবে কি সব মিছে হয়ে যাবে! এমনি কত কিছু ভয় ঘিরে থাকে প্রথম দেখার সেদিন। তবু দেখা হয়, এলোমেলো ভাবনার শেষ হয়। তারপর কতবার দেখা হয়েছে কিন্তু সেই প্রথম দেখার অনুভূতি  আজ ও মনে মনে তরঙ্গায়িত হয় মধুর আবেশে। প্রথম ভালোলাগা আর প্রথম ভালোবাসা সারা জীবন জুড়ে জড়িয়ে থাকে জীবনের পরতে পরতে পুষ্প ও পুষ্প গন্ধ সম।
      মেঘ দূতের মেঘ প্রতি বছর চির নূতন চির পুরাতন হয়ে দেখা দেয়। সেই মেঘ দেখলেই সুখীমানুষ ও আনমনা হয় অকারণে।সেই মেঘ সংসারের সকল প্রয়োজনীয় সম্বন্ধ গুলো কে ভুলিয়ে দেয়।আর ঠিক তখনই তো হৃদয় আপনার বাঁধ ভেঙে আপনার বাহির হ ও য়ার পথ বের করে ফেলে। মেঘ কিন্তু আপনার নিত্য নূতন চিত্র বিন্যাসে অন্ধকারে, গর্জনে ও বর্ষণে চেনা পৃথিবীর  উপর একটা অচেনার আভাস নিক্ষেপ করে। প্রথম বরষা প্রথম চুম্বনের মতো বড় মধুর বড়ো বিস্ময়কর। চারিদিক নিস্তব্ধ পাখীদের কলরব নেই, বাতাস স্তব্ধ,বন মর্মর স্হির হয়ে গেছে, জনশূন্য নদী তীর, সন্ধ্যার আঁধার সমাসন্ন নীরব বাতায়নে দুজনের সেই প্রথম চুম্বন ধ্বনি সাঁঝের তারারাও শিহরিত উঠে। দুজনার অশ্রু বারি চিকচিক করে। প্রথম এভাবেই মনের অন্তঃস্থলে সাড়া জাগায় অতি সংগোপনে।
 =================================

 শেফালি সর,জনাদাড়ি, গোপীনাথপুর, পূর্ব মেদিনীপুর।