google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re কবিতা: জয়তী রায় - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

সোমবার, ১৭ জুন, ২০১৯

কবিতা: জয়তী রায়



অন্যায়ের নীরব সাক্ষ্মী আমি -- মন্দোদরী




ঋষি কাশ্যপ পুত্র অসুররাজ মায়াসুর ও অপ্সরা হেমার কন্যা আমি। 
সুন্দরী , তেজস্বিনী আমায় দেখে  প্রেমে পড়ে বিয়ে করলে  বৈদিক রীতি মেনে।
তোমার দম্ভ , তোমার নিজের প্রতি অহঙ্কারবোধ তোমাকে দাম্ভিক করে  তুললেও আমি তোমায় ভালোবেসেছিলাম।
গর্ববোধ করতাম তোমার শৌর্য্যে , তোমার বীর্য্যে।
মেঘনাদ , অতিকায়া , অক্ষয়কুমার গর্বিত আমি তিন বীর সন্তানের মা হয়ে।

নিত্য নতুন নারীসঙ্গ তোমার আসক্তি জেনেও চেষ্টা করেছি তোমাকে সৎ পথ দেখাতে।
বারংবার বারণ করেছিলাম ' নবগ্রহ' কে নিয়ন্ত্রণ না করতে , না করতে অধীন ' বেদবতী ' কে।
শুনলে না। 
নিজেই ডেকে আনলে নিজের ধ্বংসের , নিজের মৃত্যুর কারণ।
' সীতা' রূপে জন্ম হল 'বেদবতি' র।
ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধরে এনে বন্দী করলে অযোধ্যা রাজ পত্নী ' সীতা' কে।
শত অনুরোধ , অনুনয় , বিনয়েও  ফিরিয়ে দিলে না ' জানকী ' কে তাঁর স্বামীর কাছে।
সেই দিনই লিখিত হলো তোমার পতন , তোমার মৃত্যু।

সৌন্দর্যতা ও কামনায় মত্ত তুমি চাইলে রঘু পত্নীকে বিয়ে করতে।
প্রত্যাখ্যানে অন্ধ , চাইলে শেষ করে দিতে।
আমি রুখে না দাঁড়ালে আজ তুমি  ' স্ত্রী হত্যা ' র পাপে দুষ্ট হতে।
তোমার সব অন্যায়কে একপাশ করে আমি
তোমার শক্তি হয়ে তোমার পাশে  থেকেছি।
সন্তানদেরও চেয়েছিলাম সৎ পথে রাখতে।
কিন্তু পিতার আদর্শে গর্বিত পুত্ররা ধর্মাধর্ম বিভেদ করেনি। পথ প্রদর্শক করেছে পিতাকে।
একজন স্ত্রী ও মা হিসেবে হয়তো পতিব্রতা স্ত্রী ও স্নেহময়ী মা হয়েছি। 
কিন্তু একজন আদর্শ স্ত্রী ও মা হয়ে উঠতে পারিনি।
তাই 'পুত্র মৃত্যু শোক ' ছিল তোমার সব অপকর্মের ' নীরব সাক্ষ্মী ' হিসেবে আমার ' শাস্তি '।

প্রতি পদে পদে ছায়ার মতো তোমায় অনুসরণ করলেও জীবন ভোর জুটেছে উপেক্ষা তিরস্কার।
নির্মম সেই উপেক্ষা। সঙ্গে ছিন্নভিন্ন মাতৃত্ব পুত্র শোকে। 
আজ শৌর্য্যে বীর্য্যে উত্তম হয়েও আমার সন্তানরা বলি অধর্মের।
গর্ব করার মতো বীরত্ব ধূলিসাৎ হয়ে গেছে কর্ম দোষে।
এ বড় কষ্টের। বড় অপমানের নারীত্বের , মাতৃত্বের অসফলতা।
আজ প্রমাণিত মাতৃত্ব বিফল সৎ সন্তান পালনে।

আজও পৃথিবীর বুকে হাজার মন্দোদরী
 নিঃশেষে সঁপে দিচ্ছে নিজেকে স্বামী সুখের পাথেয় হিসেবে , সন্তান পালনে স্নেহময়ী মা হিসেবে।
নিঃশব্দে চেপে রেখে মনের হাহুতাশ।
কিন্তু আর কতদিন ?
আর কতদিন এই ভাবে নিজের অস্তিত্ব ভুলে, নিজের শিক্ষা , ভাবনা ,
নিজের ন্যায় - অন্যায় , উচিত - অনুচিত , ধর্মাধর্ম ভুলে অন্ধের মতো অনুসরণকারী হবে ?
আজ হোক নতুন ভোর , নতুন জাগরণ।
জন্ম নিক নতুন প্রজন্মের   ' মন্দোদরী' র।
যার পরিচিতি হোক ন্যায়নিষ্ঠ স্বাধীন সৎ মতবাদী নারী হিসেবে।
যেন আর ছুঁতে না পারে কোনো  মন্দোদরী তাঁর স্বামী পুত্রের মৃত্যু শোক।