শেষ বেলা
আবার ছোট বেলার ঘর। বহু বছর পর। পূর্ব দিকে মাথা করে শুয়ে আছেন রবি। বাধ্য। শরীর অষাড়। আবছা স্মৃতি ছুঁয়ে যাচ্ছে তাকে। এই ঘরেই না কত বেয়াদপি, চাকর বাকর অতিষ্ঠ হয়ে উঠত। আর আজ উঠবার জো টুকু নেই। মৃত্যু দেখে- শুনে ক্লান্ত রবি ঠাকুর। নিজের মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও নির্বিকার। আফসোস একটাই, শেষ পর্যন্ত কাটা ছেঁড়া হলোই তবে। কি যন্ত্রণা! এবার তারও ছুটি নেবার পালা।বউঠান কী জন্য? ডুকরে উঠল কবির বুক। অবহেলা ক্ষমা করো ছুটি। মায়ের মুখ বারবার ভেসে আসছে। সেই গন্ধ! কী নরম শীতল হাত। কী উষ্ণ আঁচল।কানের কাছে জপ হচ্ছে ব্রাম্ভ মন্ত্র, "শান্তম্, শিবম্, অদ্বৈতম্... তমসো মা জ্যোতির্গময়" । ঘর জুড়ে কান্নার রোল।রবি নেই।... ওকি কাঁপা কাঁপা বাম হাত সরে এল বুকের কাছে, ডান হাতের পাশে। হাত জড়ো হল উল্টানো বই-এর মতো। এবার সত্যি নিথর। দুপুর ১২ টা ১০ ।গুরুদেব নেই। বাড়ি থেকে বাইরে লোক জমায়েত। শেষ দেখা টুকু। ছাদে সাধের নন্দন কাননে হাওয়া বইল। ছুটিকে রবির পাঠানো অনেক চিঠির মাঝে অভিমানে পড়ে থাকল, একটা ঘোলাটে না পাঠানো প্রত্যুত্তর, মৃণালিনী ।
==================================
নিসর্গ নির্যাস মাহাতো
কেরানিটোলা, মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর