**** পুতুল ****
সারাদিন কখনও টিপটিপ আবার কখনও মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিলো । আজ রবিবার । প্রবীর বাড়িতেই ছিল । বৃষ্টি একটু ধরতেই সে বাজার থেকে ইলিশ মাছ এনে কাজল কে দিয়ে বলল - আজকের মেনু , খিচুড়ি আর ইলিশ ভাজা । বর্ষায় একেবারে জমে যাবে ।
রাত একটু বাড়তেই বৃষ্টির সাথে শুরু হল ঝড়। আর সঙ্গে মুহূর্মুহু বজ্রপাত। হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। এই ঝড়ের রাতে কে এলো ! প্রবীর দরজা খুলতে এগিয়ে যায়।
-- এ কি বিনয়! তুই ? এই সময়ে? ভিজে গিয়েছিস যে একেবারে! আয় আয় ভেতরে আয়।
-- তোদের এখানেই তো আসছিলাম। অফিস ফেরত ভাবলাম অনেকদিন হোল তোদের সাথে দেখা হয়নি। একবার দেখা করে যাই। তারপর যা ঝড় বৃষ্টির মুখে পড়লাম! বাপরে বাপ! আমার রুমকিমা কোথায় ? দেখছি না তো?
-- ঐ যে আছে ভেতরে মায়ের সঙ্গে। মামণি এই দেখো কে এসেছে। এসে ভালোই করেছিস। জমিয়ে খাওয়া যাবে। এই নে তোয়ালে। জামা প্যান্ট ছাড়। আমার লুঙ্গি আর জামা দিচ্ছি...
-- হ্যাঁ ঠিক গলা শুনেই বুঝেছি বিনয় ঠাকুরপো। তা আসবে যখন একটা খবর তো দেবে?
-- অসময়ে এসে তাহলে ভুল করেছি বৌদি।
-- ও মা! দেখো কি কথার কি কথা। আগে থেকে বললে তো তোমার দাদাকে দিয়ে মাটন আনিয়ে রাখতাম। যা রান্নার হাত তোমার ঠাকুরপো! এখনো মুখে লেগে আছে।
--- কেনো শরমিন্দা করো বৌদি। তবে আমি কিন্তু গন্ধ একটা পাচ্ছি। বলতে পারো ঐ গন্ধের টানে এই দুর্যোগ মাথায় করেও ছুটে আসা।
এ কথায় হবাই একসাথে হো হো করে হেসে ওঠে।
-- তোমার সাথে কথা বলব না বিনয়কাকু। আড়ি আড়ি আড়ি ।
-- কি গো রুমকি সোনা। আমার ওপর তুমি বুঝি রাগ করেছ?
-- করেছিই তো।
-- তাহলে এই আমি উট হলাম। তুমি আমার পিঠে বসো। মরুভূমির দেশ থেকে ঘুরিয়ে আনি তোমায়...।
--- তুমি না কিচ্ছু জানোনা। রাগ করলে কি কেউ বেড়াতে যায়?
-- ও মা তাইতো! ইস কি বোকা আমি। তাহলে বলো রাগ করেছো কেন ? মিছামিছি তাই না ?
--- না না একদম সত্যি। তুমি যে সেবার কথা দিয়ে গেলে আমার জন্য কথাবলা পুতুল এনে দেবে। কৈ আনলে না তো! এই মুখে আঙুল দিলাম। আর কথা বলব না।
তিন বছরের ছোট্ট রুমকির রকম দেখে বিনয় তো হেসে লুটোপুটি।
শিশুদের কে না ভালোবাসে। কিন্তু রুমকির প্রতি বিনয়ের টানটা একটু অন্যরকম। রুমকির মতোই তারও ফুটফুটে একটি মেয়ে ছিল। গত বছর ফ্যামিলী ট্যুরে বেরিয়ে শহরের রেকলেশ ড্রাইভিং কেড়ে নিয়েছিল মা-মেয়ের জীবন। চোখের সামনেই ঘটেছিল ঘটনাটা। সেই শোক নিয়ত তাড়িয়ে বেড়ায় বিনয়কে। আজ তার মেয়ের জন্মদিন পালন হতো বাড়িতে। আত্মীয় স্বজন মিলে হৈ হৈ কাণ্ড চলত। কিন্তু তা তো আর হওয়ার নয়। রুমকির মধ্যে নিজের মেয়েকেই যেন খুঁজে পায় বিনয়। তাই অবসর পেলেই ছুটে আসে এখানে বন্ধুর বাড়ি। দু-দণ্ড শান্তির আশায়।
--- এই নাও তোমার কথাবলা পুতুল। এবার খুশি তো দিদিমনি?
-- তুমি সত্যিই এনেছো কাকু। কি সুন্দর! ও মা দেখো কাকু কি এনেছে।
সঙ্গে সঙ্গে পুতুলটাও একই কথা পুনরাবৃত্তি করে ওঠে। তাই শুনে অবাক বিস্ময়ে হেসে ওঠে রুমকি। পুতুলটাও।
তারপর আরও কত খেলনা চকোলেট এবং জামা বের করে বিনয় ব্যাগ থেকে। একসঙ্গে এত উপহার দেখেনি কখন রুমকি। খুব খুশী সে । খাওয়া দাওয়ার পরও খেলনাগুলো নাড়াচাড়া করতে করতে বিনয়ের পাশেই কখন ঘুমিয়ে পড়ে সে।
খুব সকালে মোবাইল বেজে ওঠে প্রবীরের। এ কি স্ক্রিনে ভেসে উঠছে বিনয়ের নাম! মোবাইলটা হাতে নিয়ে পাশের রুমে গিয়ে দেখে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে রুমকি। ঘরময় ছড়িয়ে আছে খেলনাগুলো। কিন্তু বিনয় কোথায়?
-- হ্যালো
-- থানা থেকে বলছি। গতকাল ঝড়বৃষ্টির রাতে পার্কসার্কাস মোড়ে ভয়ঙ্কর এক বাস দুর্ঘটনা ঘটে। মোবাইলটা পেলাম এক বডির থেকে। মনে হোল আপনার পরিচিত কেউ হবে। বেলভিউতে চলে আসুন প্লিজ কিছু প্রাথমিক কাজ আছে।
( সমাপ্ত )
আকাশ নীল মাইতি
গ্রাম & পো : খারুই
থানা: তমলুক
জেলা : পূর্ব মেদিনীপুর