অলক্ষ্য রঙ লাগলো আমার অকারণের সুখে
বসন্ত যে এসেছে, সে জানে কেবল এক পাগল কোকিল। অফিস ঢুকছি, কুউউউউ...লাঞ্চে নেমেছি, না, ঝুপস্-এ খেতে নয়, এমনি এলোমেলো হাঁটতে, অমনি কুউউউউ....BSNL অফিস ছুটছি, আর্জেন্ট মিটিং, কুউউউউ... হ্যাঁ, আর বলবেন না আর কোথাও জায়গা পায় নি, আমারই অফিসের সামনের কোনো এক গাছে বাসা বেঁধেছে। এমনিই আমার ডেস্কের পিছনে দেওয়ালটা হঠাৎ শেষ হয়ে গেছে জানলায়। ঠিক যেখানে মেট্রোর সেক্টর ফাইভ স্টেশন আর উইপ্রো ফ্লাইওভার দুজনে দুজনকে না ছুঁয়ে ছুটে যাচ্ছে সেখানে আকাশ তার সমস্ত মন খারাপ নিয়ে থমকে থাকে, বলে "আয়"....তার মধ্যে ঐ কোকিল!!!
না, এই বসন্তে দিকশূণ্যপুর যাবার উপায় নেই, দিগন্ত ব্যাপী নীলে গুচ্ছ গুচ্ছ পলাশের লালের আগুন হয়ে জ্বলে থাকা যে এমনিই দেখতে পায় তার কাছে এ রোজকারের ব্যাপার, সে কি করে বুঝবে কালো কফিতে চুমুক দিতে থাকা আমি-র এই বারোতলার বদ্ধতা?....তাই বোধহয় ঐ এক দেওয়াল আকাশ, ঐ পাগল কোকিল আর অফিস থেকে ফেরার পথে "বসন্তের ঐ মাতাল সমীরণ"...
এর মধ্যে একদিন হৃদি জানালো, তার স্কুলের অ্যাসেম্বলিতে এবারে "ওরে গৃহবাসী" গাইতে গাইতে, নাচতে নাচতে আবির আর গাঁদা ফুলের পাপড়ি ছড়াবে সে আর তার বন্ধুরা। বসন্তের আরো কত গান বাজবে ম্যাণ্ডোলিনে, গীটারে, বাঁশিতে... হৃদি কি সব জানে? সে হাত ঘুরিয়ে দেখায়, "দেখো মাম্মা, এইখানে আমরা একটা রাউন্ড দেবো "।
এক প্যাকেট আবীর লাগবে, রাত ন'টায় গড়িয়াহাট বাজারে দশকর্মা ভাণ্ডারের সামনে টুল নিয়ে বসে পড়ি, তার আগে পাড়া-বেপাড়ার সব দোকানীরা "এর মধ্যে আবীর, দোল তো দেরী আছে বৌদি" বলে জবাব দিয়েছে। আবীর পাওয়া গেল, লাল, হলুদ, গোলাপী, বেগুনী সব ক'টাই ব্যাগবন্দী হচ্ছে দেখে দশকর্মা ভাণ্ডারের মালিকের মুখে চওড়া হাসি, "বললেন, একটা লাগবে!!!"....বিজন সেতুর উপর বসন্তের হাওয়া ফিসফিসিয়ে উঠল, "কার সঙ্গে, কার সঙ্গে?"....ওমা তাইতো, যার সঙ্গে খেলা আমার, তার "হালকা ওডিকোলনের গন্ধ" তো "সমুদ্রের ঐ পারে বিশ্রাম নিচ্ছে", তাহলে?...ছেলে-মেয়েদের পরীক্ষা শেষ, বন্ধুরা একদিন জড়ো হয়ে হা হা হি হি আড্ডা হবে ঠিক হয়েছে কিন্তু সুব্রতার পৃথিবীর প্রায় সব কণাতেই অ্যালার্জি, মালবিকার জীবনে রং কখনো রংরুটে ঢুকে পড়ে নি হঠাৎই। তাহলে?...তাহলে আর কি?......কিছু নয়,জাস্ট কিচ্ছু নয়।
আরে, আবীরও তো জমানো যায়, যেমন জমে থাকে বিষাদ, খসে পড়া পলাশের শুকনো পাতার ডালে।