রিপ ভ্যান ট্যাবলেট
একদিন পড়াশোনা শেষ করে হাঁটতে বেরিয়েছে তিতলিদিদি। পুচকিকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে খেলবে। হঠাৎ চোখে পড়ে গেল একটা হোয়াইট গোট। মানে সাদা ছাগল। কী সুন্দর ধবধবে সাদা। এর সঙ্গে আলাপ না করলে বা একে কোলে তুলে একটু আদর না করলে কি হয়? অন্তত গায়ে তো একটু হাত দিতেই হয়। নাহলে দিনটাই যে মাটি। পুচকির কাছে যাওয়া মাথায় উঠল। ছুটল সাদা গোটির কাছে।
কিন্তু ওমা একি! এ যে ঘুমিয়ে একেবারে কাদা। বুকের কাছে একটা থান ইঁট দিয়ে দিব্বি নাক না ডেকে ঘুমোচ্ছে। আচ্ছা তো! ইঁটটা ওর কোলবালিশ নাকি?
--আমি তোমার তিতলিদিদি গো। ভাব করতে এলাম ওঠো। সুন্দর হেসে তিতলিদিদি বলল।
কিন্তু না নট নড়নচড়ন নট কিচ্ছু। দিদির সন্দেহ হল কাল বিশ্বকাপ দেখেছে নাকি। তাই এত ক্লান্ত? কিন্তু তাহলে তো মুস্কিল। খেলবে কাকে নিয়ে? তার দেরি দেখে পুচকি নিশ্চয় এতক্ষণে পড়তে বসে গেছে। তাই একে জাগাতেই হবে।
বিশ্বকাপে জয়ের আনন্দে বাজাবার জন্যে একটা ঢাক এসেছিল বাড়িতে। সেটা দিয়েই ট্রাই করা যাক তবে। বাড়ি থেকে নিয়ে আসা গেল ঢাক। মাঠেই দিদি বসে গেল বাজাতে। কিন্তু ছাগলের ঘুম তো ভাঙ্গেই না। প্রথমে মধুর সুরে বাজাচ্ছিল তারপর সুর চড়াতে লাগল। ধুড়ুম ধুড়ুম ধড়াম ধড়াম ধক।
ওরে বাবা বাজ পড়ল নাকি! ঘুম ভাঙল ছাগলের। না ভেঙ্গে আর উপায় কি?
--এই অসময়ে এত ঘুমোচ্ছ কেন গোটি? হেঁকে উঠল দিদি খুব বিরক্ত হয়ে। খুব রাগ হয়ে গেছে। এমন অসময়ে কেউ ঘুমোয়? নিশ্চয় মা পড়া ধরেছিল বলতে পারে নি তাই বকুনি খেয়েছে। আর রাগ করে ঘাস না খেয়ে ঘাসের ওপর ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু ঢাকের আওয়াজ বড় জব্বর। কানের ভেতরে ঢুকে একেবারে মাথার পোকা নড়িয়ে দিল। তাই জেগে উঠতেই হয়েছে।
--একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলুম দিদি। লজ্জা পেয়ে গোটি বলল।
--সে তো বুঝলুম কিন্তু কেন এই অসময়ে? তিতলিদিদি তো রেগে কাঁই। অসময়ে ঘুম সে একদম দেখতে পারে না। মা পই পই করে তাদের বলে দিয়েছে, অসময়ের একটা ঘুম মানে সময়ের দশটা ঘুম নষ্ট বুঝলে বাছারা?
--সরি কাল একটা রিপ ভ্যান ট্যাবলেট খেয়ে ফেলেছিলাম গো দিদি। যারা একসঙ্গে অনেকক্ষণ ঘুমোতে চায় তারা খায় এই রিপ ভ্যান ট্যাবলেট। চোখ ঘাসে কচলাতে কচলাতে বলল গোটি।
--রিপ ভ্যান ট্যাবলেট? সে আবার কি? তিতলি তো অবাক।
তিতলিদিদি অবশ্য শুনেছিল রিপ ভ্যান উইংকেলের নাম। সেই আংকেল একসঙ্গে কুড়ি বছর একটানা ঘুমিয়ে গল্পের বইতে জায়গা করে নিয়েছিল পাকাপাকি। আমাদের দেশে কেউ অকাতরে অনেকক্ষণ ঘুমোলে তাকে বলে, দেখ দেখ একেবারে কুম্ভকর্ণের মত ঘুমোচ্ছে। কিন্তু কোন দেশে যেন বলে, দেখ দেখ একেবারে রিপ ভ্যানের মত ঘুমোচ্ছে। কিন্তু কোন দেশে যে বলে তা জানে না তিতলিদিদি। জেঠু বোধহয় কবে বলেছিল কিন্তু এখন আর ঠিক মনে করতে পারে না সে। তার নামে এখন ট্যাবলেট বেরিয়েছে তাও জানত না। সেটা নাকি একটা ঘুমের ওষুধ?
--ঘুম হয় তবে মিষ্টি ঘুম। শরীরের ক্ষতি হয় না গো দিদি।
তিতলি অমনি ধমকে উঠল গোটিকে, তুই জানিস না গোটি। বাচ্চাদের এসব ঘুমের ওষুধ খেতে নেই। জেঠু বলেছে এতে নাকি শরীর খারাপ হয়।
গোটি অমনি চোখ বড় বড় করে বলল, তাই নাকি? তোর জেঠু বলেছে বুঝি? ইস বড় ভুল হয়ে গেছে তবে।
--কেন এসব খেলি কেন? সুর একটু নরম করল তিতলিদিদি।
--ঐ যে কোম্পানীর লোকগুলো বলল। ওরা বলল এখন গিনিপিগদের ওপর সব পরীক্ষা বন্ধ। তাই ওরা আমার ওপর পরীক্ষা করতে চায়। আসলে কি জান দিদি, আমি তো গিনিপিগ নই। আমি তো ছাগল। আর তাছাড়া ওরা বলল—
তিতলি কোমরে দুই হাত রেখে বেশ দিদি সুলভ ভঙ্গিতে গম্ভীর ভাবে বলল, ওরা কি বলল শুনি?
-- ওরা বলল অন্য জায়গা থেকে ভাল কচি ঘাস এনে দেবে। বল দিদি আমাদের তো আর টাকাপয়সার দরকার নেই তোমাদের মত? তাই—
বেচারির মুখটা শুকিয়ে একেবারে আমসি হয়ে গেছে। কে জানে বাবা রিপ ভ্যান ট্যাবলেট কত খারাপ। দিদি অবশ্য জানে। আর মা তো ওই জন্যেই নাকি বলে, রোজ ভাল করে কাঁঠাল পাতা চিবিয়ো সোনা। রাতে ভাল ঘুম হবে। তবে কচি কচি ঘাস তো আর রোজ তেমন জোটে না। সেই লোভেই কোম্পানীর দেওয়া ট্যাবলেট সে খেয়েছে।
-ওরা দিল আর তুই অমনি খেয়ে নিলি? গাধা ছাগল কোথাকার!
তিতলিদিদি ভাবছিল ছাগলে নাকি সব খায়। কথাটা তবে সত্যি?
========================================================
(Dr.) ARUN CHATTOPADHYAY
181/44 G.T.Road (Gantir Bagan)
P.O.Baidyabati
Dist. Hooghly(PIN 712222)