শহীদ সফদর হাসমি
ঐতিহাসিক স্বর্ণালী মুহূর্তে হুড়মুড় ভাঙন নাট্যব্যক্তিত্বের শরীরী মোচ্ছব
হাটখোলা রাজপথে চৈত্রের কাঠফাটা রোদ্দুরের দীর্ঘশ্বাস।
বিষন্নতার কোলে জাগা দুটি বিদ্রোহীদ্দীপ্ত আঁখি দগ্ধ মনুষ্য শোকে
নাটকীয় পথ সংলাপের ভগ্নাংশে অরণ্যে দিনরাত্রি সোচ্চারে ভগ্ন কন্ঠসাঁকো।
তোমার জীবন্ত বিগ্রহে প্রতিষ্ঠিত আপামর জনতার কল্লোলিত
উদ্বাস্তু পথ উজ্জ্বল, তুমি কোন ধ্রুবতারা রক্তমাংসের অধরা অস্তিত্ব
জলসা দৃঢ় চিবুক দামাল হাওয়ার উদ্দাম স্রোতের জোয়ারে।
ছিন্নভিন্ন নখরাঘাতে কুৎসিত মুখোশের ঘোমটার তলায় অর্ধস্বত্তা।
রাজপথের কোঁচকানো ভাঁজে না বলা কত কথা অস্ফুট আবেগে
উল্লাসে ফেটে পড়ে আধোমুখ বোজা অধিকার।
লাঠির নৃশংস বজ্রাঘাতে দুমড়ে মুচড়ে হাড়কঙ্কাল নকসীকাঁথা।
তবুও তুমি থামাওনি তোমার দীর্ঘ সংগ্রামী পথ আলোড়িত ভুবন
শিয়রে সংক্রান্তি কর্মযোগে অমোঘ আলস্যে গড়িয়ে চলে।
জড়পাথর মনুষ্য চিত্তে শ্যাওলার আস্তরণ তোমার সাহসে
পাথরেও যে ফুল ফোটাও সাম্প্রদায়িকতা মক্ষীরানি, কৃষ্ণচূড়ার মগডাল।
কালপুরুষের আমরণ খোঁচানো তীরে কাঙালপনা অন্ধ সন্ধ্যালি
যুগযুগান্তরে তোমার কন্ঠে সিক্ত হোক বাংলার ধরিত্রী।
এসো হে বৈশাখ
উড়িয়ে তপ্ত চৈত্রভস্মের দগ্ধ ধূলা উৎকন্ঠিত জরা পুরানো পত্রলেখায় প্রচ্ছদ অপাংক্তেয়।
আঁজলা ভরা শীতলতার প্রশ্বাসের ঠান্ডা সমীরণে ভগ্ন কন্ঠসাঁকো হাতপাখার মোড়ক।
জামাই আদরে ধরি ধুতির মালকোঁচা মোরগ ঝুঁটি নব প্রত্যুষে
তুমি আজি এসো হে বৈশাখে আমার রাজপ্রাসাদের মহানায়ক উত্তম কুমার।
তোমার রাইকমল আমি পঞ্চব্যঞ্জনে সরসী ভাতের উঠান হৃদয়ের মাৎসর্যে নববর্ষে।
লাজে রাঙা কনে বউ এর একহাত সংসার লাল কাঁচের চুরি তোমার হাতে লাগুক রঙ নবকুমার মোর সিঁথির সাঁকোয় অতীন্দ্রিয় প্রহরী
তোমার অঞ্জনে হোক তিল পরিমান বসিয়ে আমার চিবুকে নজর লাগা দোষের শুদ্ধিকরন
ছোঁয়াচে তোমার অর্ধেনু ভোজন মোর সাষ্ঠাঙ্গে পরিবেশন তোমার প্রেম মোর আঁখিপাতে।
হোক ঘটা করে বিনিদ্র রজনীর মর্মরে ছিন্নবীনায় তোমার শরীরের আঁচে আমার নিষিক্ত জরায়ু।
নিষ্পাপ নতুন প্রজন্ম তোমার ঔরস মোর গর্ভে আশ্রয়।
অস্ফুট বাকরোধ কেটে মেঘ ফেটে ভাঙাচালে কুঁড়েঘরে আসুক ষোলআনা বাঙালী ঐতিহ্য
গোলাপ ওষ্ঠে ঘনাক ঘাম আমার আদর প্রত্যুষে তোমার দৈহিক আলাপনে।
গ্রীবায় সারস কোঁ কোঁ ডাকে হম্ভিদম্ভি ঔচিত্যের হালখাতা তোমার কটিদেশের রসালো নারকেল দড়ির টান
চুম্বকীয় জিহ্বা তোলা দেনা আমার প্রেমদুগ্ধের ঋণ মহাজনী তোমার হিসেব কষে চোখ রাঙানো আস্পর্ধা।
খড়ির ভাস্কর্যে স্রোতসিনীতে অবগাহন অংশুমালীর
তোমার ফেলে যাওয়া নৈঃশব্দে চরন আমার মাধুরী আগুন বিহঙ্গ বোধগম্য নিঃশর্ত আত্মসমর্পন।
এসো হে বৈশাখ এসো হে।
তাপসনিঃশ্বাসবায়ে মূমুর্ষ চিত্তের আত্মগ্লানি উড়ায়ে।
তোমার প্রিয় বউ
রন্ধ্রে রন্ধ্রে মোড়কের গুটি,
গুমোটের আস্ফালন লুকানো দীর্ঘশ্বাস,
অব্যক্ত ছেঁড়া কাঁথায় লুকানো শীৎকার ধ্বনি রাতের পর রাত।
ব্যবহৃত পরিচ্ছেদে অস্তগামী নতুনের সূর্য,
শরীরের মুষ্টিমেয় আটপৌরে উনুনের, রুটি সেঁকা গোয়ালের গোঁজে বাঁধা।
শৃঙ্খলের গনগনে তাপ,
স্বীকৃতির অন্ধ প্রত্যাশায় গাঁটছোলার সীমাহীন দুরত্ব,
করছি আর করেই যাচ্ছি নিশিদিন।
বিনিদ্র রজনীর সেই এক চেনা জানা একঘেঁয়েমি,
আঁচলের তলায় মাথা নুইয়ে,
ঈশ্বরের পরমাশক্তির পায়ে সমর্পনের আঙ্গিকে,
দিবারাত্রি ঐকান্তিক মোহ মায়ার আকুতির,
দমফাটা আর্তনাদ আমার সংসার যেন থাকে সুখে,
যেন সন্তান থাকে দুধে ভাতে।
ভুলেই গেছে মারতে গিট আঁচলে,
একটু ভাববে নিজের কথা।
সেটা আবার কি, হয় নাকি আমার অস্তিত্ব আলাদা করে,
ওদের মুখে ফুটলে হাসি,
ধরবে শশী ।
বর্নময় বিচিত্রানুষ্ঠানে চ্ছটার দিগন্তজোড়া রূপ,
দিনের শেষে মুখভার নয় ঠোঁটের কোনে হাসি গুঁজে,
যখন দর্পন তোমায় সাক্ষী রেখে জানতে চাইবে আমি কে,
কে আমি বল না দেখো না ভালো করে,
মূঢ় বিবেক কাঁচের মতন ঠুনকো ঘায়ে পড়বে।
টুকরো টুকরো শত সহস্র ঘাত প্রতিঘাতের,
টুকরো জীবনস্মৃতি ফ্ল্যাশব্যাকে আনবে,
অতীন্দ্রীয় মোহ মায়ায় তোমার প্রেমে শুদ্ধ স্নানে,
হয়ে উঠবো পুনরায় মুষিক ভবন সালংকারা।
দিনের শেষে তোমার প্রিয়তমা, তোমার প্রিয় বউ।
পোড়াস্মৃতি
উন্মুক্ত কাঠফাটা রোদ, দিগন্তজোড়া আঁখির কাজল,
সুখ বিভ্রমে অসুখের উদাসী ছায়া,
প্রসারিত বক্ষ আত্মগোপনে সন্দিহান কোল,
সে কি আসবে না ফেলে যাবে পোড়াস্মৃতি।।
পর্নমোচীর বাসর শয্যা, পদাঙ্কুর লক্ষ্মীর আলতা,
লক্ষ্মীর প্যাঁচার মতন, গোমট করা মুখভার অবসাদ,
বিনিদ্র রজনী অক্লান্ত আঁখিতে, জেগে জেগে হতে লেগেছে পার, সে কি আসবে না ফেলে যাবে পোড়াস্মৃতি।।
রবিরশ্মিরাগে অশ্রুসিক্ত,
বহুদিন পরে তোমাকে কাছে পেয়ে,
পেয়েছিলাম চুম্বনরেখার সোহাগ, আমার নগন্য সিঁথির সিঁদুরে।কোলবালিশের ঘাপটি মেরে অর্ধস্বত্তা,
মন এলোপাথারি উজবুক, অস্থির অঙ্গুলীচারনা,
এই ছুঁতে পারবো, ছুঁয়ে দেখি তুমি সত্যি এলে,
না অতীতের বয়ে যাওয়া গঙ্গাবক্ষে স্বপ্নিল বালুচর,
সে কি আসবে না ফেলে যাবে পোড়াস্মৃতি।।
কাষ্ঠনির্মিত রৌদ্রদগ্ধ শরীর পরিত্যক্ত উন্মুক্ত প্রাঙ্গনে,
কখন কোন আগন্তুক ফেলবে তার ছায়া,
শীতলতার চুম্বনে মোক্ষপ্রাপ্তি কায়া।
অতৃপ্ত নাছোড়বান্দা অশরীরী, আমি তো পাষানপ্রস্তর, প্রানপ্রতিষ্ঠা শুধু পাই, তোমার সোহাগে দীপ্ত আঁখিদানে।
তবুও জানিনা কেন, কিলিবিলি সর্বাঙ্গে কাষ্ঠে ঘূণ,
খোকলা করে দিচ্ছে, প্রতিক্ষনে সর্বাঙ্গে অবাধ বিচরন,
দাঁত কিড়মির অলেখ্য গতি।
আমি অসহায় নির্বাক, অভিশাপগ্রস্থ কাষ্ঠ।
শুধু নির্লিপ্ত মনে শতাধিক প্রশ্নের,
মিছিলে স্তব্ধ শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি,
মৌন মুখরের দ্বিচারিতা।
সে কি আসবে না ফেলে যাবে কোন পোড়াস্মৃতি।।
সন্ধ্যার মিটিমিটি তারাদের আলোয় ফুলশয্যা।
শুধু কি শরীরের উন্মুক্ত ভোগ, পিপাসা, ছোঁয়া।
না না একদম না হতে পারে না।
আমার কাঁধে তোমার মাথা রেখে,
কোলঘেঁষে পরম সুখে আলাপচারিতা,
ভালো লাগলে একটু দিও পরশ সোহাগের চুম্বন,
আমার নগন্য সিঁথির সিঁদুরে।
সময় নিয়ে দেখবো আমি, তোমার বুকে মাথা রেখে,
আমার ছোট সংসার অলীক সুখ।।
==================
সুপ্রীতি বর্মন
সুভাষপল্লী, কালীতলার সন্নিকট
পোস্ট + জেলা : পূর্ব বর্ধমান