Featured Post

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

ছবি
   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন:  'লেখাটি স্বরচিত ও অপ্রকাশিত'। মেল আইডি :  printednabapravat@gm

মুক্তগদ্য ।। সময় নেই ।। শান্তনু ঘোষ

           


সময় নেই

শান্তনু ঘোষ


 আমার 'রবিবারের পাতা' লেখায় যদি, সর্বাধিক আপত্তি কারোর থেকে থাকে, তাহলে সে আমার মেয়ের। সপ্তাহের একটা রবিবারে, ওর বাবার কিছুটা সময় এই 'রবিবারের পাতা' খেয়ে নেয়, আর সেখানেই তার যত অভিমান, অনুযোগ, অভিযোগ। 

 

এই বিপত্তির সমাধানের উপায় আমাকে একটা খুঁজে বের করতে হয়েছে। একটা চুক্তি।

 

আমার মেয়ে এসে আমাকে একদিন জিজ্ঞাসা করল, "এই রবিবারের পাতা লিখে কি হয়?"

 

"আমি আনন্দ পাই। তোর যেমন টি ভি তে ডোরেমন, স্যালিবলিউড, ছোটা ভীম দেখে আনন্দ আসে, ঠিক তেমনি আমি রবিবারের পাতা লিখে আনন্দ পাই"

 

"এত কি সব লেখো?"

 

"গল্প"

 

"তুমি বানাও?"

 

"ঠিক তাই"

 

"তাহলে রবিবার রাত্রে ঘুমনোর সময় আমাকে সেই গল্প শোনাবে"

 

"ঠিক আছে, কিন্তু এই গল্প নয়, অন্য গল্প শোনাব"

 

এই হল সেই চুক্তি। কিন্তু এই ছোট্ট অলিখিত চুক্তির মধ্যে, আমার নিজের একটা ক্ষুদ্র লোভ লুকিয়ে ছিল।

 

ছোট বেলায়, আমার বাবা আমাকে কখনো এইরকম ঘুমনোর আগে গল্প শুনিয়েছেন বলে মনে করতে পারছি না। সেই সময়টা আলাদা ছিল। আর গ্রাম্য জীবনযাত্রার ধরনও ছিল একটু আলাদা।

 

সন্ধ্যে বেলায়, ছেলেরা হয় পড়াশুনা করবে, নয়তো ঠাকুমা-দিদিমার কাছে গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়বে। গ্রামে সন্ধ্যের বয়স একটু বাড়লেই রাত্রি হয়ে যায়, আর তখন সেই ঘুমন্ত ছেলেকে উঠিয়ে, ভাত খাইয়ে শুইয়ে দেওয়া। সন্ধ্যের এই স্বল্প বিস্তর ঘটনাতে, বাবার গল্প বলার ভূমিকা খুবই বেমানান আর তাৎপর্যহীন ছিল।

 

আর আমার লালসা সেখানেই। প্রথমত, আমার এই গল্প বলার সুযোগে, গল্প পড়ার স্বাদটাও পূর্ণ হবে। ছোট বেলায় সুকুমার রায় পড়ে থাকলেও, বলতে দ্বিধা নেই, সেই পরিবারের আর দুই শিশু সাহিত্যিকের লেখা ততটা পড়া হয়নি। তাই উপেন্দ্রকিশোর আর লীলা মজুমদারকে কাছে পাওয়ার সেই সুযোগ হাতছাড়া করার মানসিকতা ছিল না।

 

আর দ্বিতীয়ত, এবং অবশ্যম্ভাবী সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ, ছোটবেলার সেই অনাস্বাদিত সন্ধ্যের সময়কে ফিরে পাওয়া।

 

আমাদের মতো বাবাদের সংখ্যা অগুনিত। আমাদের মতো বাবাদের 'সময় নেই'। নোট কুড়নোর ব্যস্ততায় আমাদের কাছে ফুরসত নেই। একটু দাঁড়িয়ে জিরিয়ে নেওয়ার বিরাম নেই, হুকুম নেই। কর্মপরায়ণ একনিষ্ঠ কর্মীর মতো কাজ করে চলেছি, সরকারের, কম্পানির, মালিকের। আমাদের কাছে 'সময় নেই'। আমরা খুব ব্যস্ত।  

 

আমি ডেলি প্যাসেঞ্জারি করি। সকাল বেলায় দু মুঠো ভাত মুখে গুঁজে, বাস কিংবা ট্রেন ধরতে দৌড়ই। আমি এতটাই ব্যস্ত যে, আমি বৌ কে বলতে ভুলে যাই, রান্নাটা কেমন হয়েছে। সন্ধ্যে বেলায় ক্লান্ত শুয়োরের মতো ঘরে ফিরি আর রাত্রির অপেক্ষায় সময় কাটাই। ছেলের পরীক্ষা কেমন হল জানতে ভুলে যাই।

 

আমার প্রোমোশন দরজায় টোকা মারছে। বশ কে 'খুশ' করতে হবে। তার তোয়াজেই ব্যস্ত আমি। আমার পোয়াতি বউকে পাড়ার ছেলেরা হাসপাতালে নিয়ে গেছে, খবর পেয়েছি। কিন্তু এই সময় আমাকে 'দেখাতে' হবে আমি খুব কর্মঠ। রাতজেগে 'প্রোজেক্ট' শেষ করতে হবে।

 

আমি অফিসের উচ্চপদস্থ কর্মী, আমার অনেক 'চাপ'। সেই চাপের বোঝায়, বাবার হাঁপানিটা কেমন আছে জানা হয় না। মায়ের হাঁটুতে বাতের ব্যথা। প্রতিবেশীর বাবার শ্মশান যাত্রা অফিস যাওয়ার সময় চোখে পড়ল। লোকটা বড় ভালো মানুষ ছিলেন, আমার ছেলের অসুখের সময় অনেক সাহায্য করেছিলেন ভদ্রলোক।

 

আমার কাজের 'চাপ' বাড়ছে, আমার 'সময় নেই'। গতরাত্রে, ঘুমনোর আগে, আমি বউকে লেকচার দিয়েছি, তাকে 'অল রাউন্ডার' হতে হবে। আজকাল মেয়েরা কি না করে! রান্না করা থেকে শুরু করে, ছেলের 'হোম ওয়ার্ক', ইলেকট্রিক বিল, টেলিফোন বিল, আলু পেঁয়াজ, আটা, তেল, নুন, গ্যাস, ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস, ডাক্তার, কাজের মেয়ে, গোয়ালা, নিউজ পেপার, প্যারেন্টস মিটিং........সব করতে হবে, তার স্বামী বড় অফিসার, তার 'সময় নেই''সংসার সুখের হয়, রমণীর গুণে'

 

আমি অফিসের কাজে খুব ব্যস্ত থাকি। সারাদিন বোর্ড মিটিং চলে। মায়ের ফোন আসে দেখি, তুলতে পারি না। আজ বাবা মায়ের বিবাহবার্ষিকী, আমি ভুলে গেছি। গতবার মেয়ের জন্মদিনের দিন বাঙ্গালরে ছিলাম। মেয়েটার কত বছর হল যেন! এবার কি ক্লাস সিক্সে উঠল? আহা রে, রাত্রে অফিস ফেরার পথে ওর জন্য আইসক্রিম নিয়ে যাব, সট্রবেরি। না, আজ রাত্রে তো হবে না। আজ তো একজন ক্লায়েন্ট আসবে। কালকে? না, কালকে তো নতুন প্রোজেক্টের কাজ শুরু হবে, তবে পরশু? না......শুক্রবার? না......হবে না্.........না...তারপর দিন......না......পরের মাসে......না...না্......না।

 

সকলে ঘুমিয়ে পড়ে, আমি কাজ করি, অন্তহীন কাজ। সম্পর্কহীন কাজ। টাকা রোজকারের কাজ। বড় হওয়ার কাজ। সরকারের কাজ, কোম্পানির কাজ, মালিকের কাজ। সংসার পালনের কাজ। ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করার কাজ। ছেলেকে 'মানুষ' করার কাজ। মেয়ের বিয়ে দেওয়ার কাজ। বউয়ের কাপড়ের কাজ। মায়ের ঠাকুর পূজার কাজ। বাবার চিকিৎসার কাজ। ভাইয়ের চাকরির জন্য ঘুষ দেওয়ার কাজ। বোনের নিরাপত্তার জন্য কাজ।

 

আমি কাজ করি। রাত্রে বাড়ি ফিরে দেখি, মেয়ে ঘুমিয়ে কাদা, আমার গল্প না শুনেই সে ঘুমিয়ে গেছে। মেয়ে একদিন বড় হয়ে যাবে, আমার গল্প 'না বলা' থেকে যাবে। আমার সময় নেই।

 

                           

---------------***---------------


 

SANTANU GHOSH, F – 307 VENUS PARKLAND, NEAR POLICE CHOWKI,  VEJALPUR, AHMEDEBAD – 380051, GUJARAT.



মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক