দশমীর মেলা
মিনাক্ষী মন্ডল
অগ্নিশ্বর বাবু ও তার স্ত্রী বিমলা দেবী দুর্গাপূজার সময় ঘুরে ঘুরে প্রতিমা না দেখলেও সুজনি পাড়ার মাঠে দশমীর মেলাতে ওনাদের যাওয়া চাই। সেখানেই মিলন ঘটে গ্রামের মানুষের সাথে। সকলের জীবনে আসে আনন্দের ছোঁয়া।
স্বামী-স্ত্রী দু'জন তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেন, "একদল মানুষের জিনিস বেচাকেনা আরেকদল মানুষের ভাব বিনিময় খেলা"।
সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন এই দিনটির জন্য, এই মেলা নিয়ম অনুযায়ী সব প্রতিমা আগে এখানে আসে তারপর গঙ্গার ঘাটে যায়।
আশপাশের গ্রামের লোকেরাও এই মেলায় আসে আনন্দ উপভোগ করতে কেউবা দোকান সাজাতে।
কোথাও মনোহারী দোকান, কোথাও খেলনা ও মাটির পুতুলের দোকান ,কোথাও তেলে ভাজা ,পাপড় ঘুগনির দোকান, কোথাও হাঁড়ি, কলসি ,কাস্তে কাটারি,দাঁ এইসবের দোকান ,কোথাও ঘর সাজাবার জিনিসপত্রের দোকান, কোথাও মিষ্টির দোকান, চায়ের দোকান , কোথাও চাওমিন- এগ রোলের দোকান,ছবির দোকান, বাঁশির দোকান, কোথাও চুড়ি-ফিতে কাঁটার দোকান, কোথাও বিভিন্ন বইয়ের দোকান ।
আবার একদিকে বাচ্চাদের জন্য নাগরদোলা, ট্রয় ট্রেন, ছোটখাটো রোলার কোস্টার।
এই মেলায় শিশুদের উপস্থিতি এক অপার্থিব সুখ ছড়িয়ে দেয় নিত্য-নৈমিত্তিক কাজের মধ্যে হাঁপিয়ে ওঠা সন্তানহীন স্বামী-স্ত্রীর মনে।
দশ-বারো বছরের একটি ছেলে কতগুলো বেলুন নিয়ে বসেছে বিক্রির জন্য, মেলার আর পাঁচটা বাচ্চার মত আনন্দ থেকে বঞ্চিত হলেও অগ্নিশ্বর বাবু লক্ষ্য করছেন, 'একটা বেলুন বিক্রির মধ্যে তার মুখে শতক আনন্দের রেখা ফুটে উঠেছে'। অগ্নিশ্বর বাবু ছেলেটির কাছ থেকে ন্যায্য দামে সবগুলো বেলুন কিনলেন। ছেলেটি মহা আনন্দে বলল, বাবু, আজ আপনার বাড়িতে কারো জন্মদিন আছে বুঝি'?
অগ্নিশ্বর বাবু হেসে বাচ্চাটির হাতে একটা বেলুন দিয়ে বললেন, 'সাবধানে টাকাগুলো নিয়ে বাড়ি যা'।
বেলুনগুলো মেলার কিছু বাচ্চাদের বিলিয়ে বাড়ি এলেন দম্পতি। সেই ফাঁকা ঘর সেই শূন্যতা!
অগ্নিশ্বর বাবু স্ত্রীকে বললেন,"একবার শেষ চেষ্টা করতে চাই এই ঘর পূর্ণ করার যদি না হয় , অনাথ আশ্রমের মত সমুদ্র তো আছেই সেখান থেকে না হয় এক বালতি জল ঘরে আনব"।
।। সমাপ্ত।।
✍️ মিনাক্ষী মন্ডল
খামারপাড়া, রায়লেন
বাঁশবেড়িয়া, হুগলি
থানা- চুঁচুড়া
পিন-৭১২৫০২
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন