Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

গল্প ।। প্রশ্ন ।। আব্দুস সাত্তার বিশ্বাস

               


            



                              এক

   হাসপাতালে "প্রসূতি মা" বিভাগের সামনে অশ্বত্থ গাছতলায় কিছু মেয়েমানুষ বসে রয়েছে।ভীষণ রোদ আর গরমে তারা ছায়ায় বসে একটু বিশ্রাম নিচ্ছে।উপরের ওই বিভাগে হয়তো তাদের রোগী ভর্তি আছে। তাই,তারা বসে অপেক্ষা করছে।দারোয়ান গেট বন্ধ করে রেখেছে।বাইরের কোন লোককে এখন ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছে না। এখন পেশেন্ট ছুটি হওয়ার সময়।ছুটি হওয়া পেশেন্ট গুলোই কেবল ভিতর থেকে এখন বাইরে বের হচ্ছে।আর একটু পর যখন সময় হবে তখন ভিতরে ঢোকার জন্য যারা বাইরে অপেক্ষা করছে তারা প্রত‍্যেকেই ভিতরে ঢুকতে পারবে।তখন যে সকলের জন্য দ্বার উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।পেশেন্টদের বাড়ির লোক তখন অনায়াসে ভিতরে ঢুকে গিয়ে নিজ নিজ পেশেন্টের সঙ্গে দেখা করে  আসতে পারবে।দারোয়ান তখন কাউকে বাধা দেবেনা বা নিষেধ করবে না।
   ঠিক এইসময় ছুটি হওয়া একটা মেয়ে ভিতর থেকে তার থালা বাটি ঘটি যা ছিল সব গুছিয়ে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে গাছতলায় ওই মেয়ে গুলোর পাশে বসে ও তার সদ‍্যোজাত কোলের কচি শিশুটির দিকে তাকিয়ে কান্না জুড়ে দেয়,"ও মা গো,এ আবার কী হল গো!আমার এখন কী হবে গো!আমি কার বাড়ি যাবো গো!কে আমাকে দেখবে গো!কে আমাকে পুষবে গো!ও মা গো!..."
    মেয়েটার সঙ্গে ভারি বয়সের একটা মেয়েও রয়েছে।মেয়েটা তাকেই শুনিয়ে শুনিয়ে কান্না করছে।
    হ‍্যাঁ,ওই মেয়েটাই হল তার গর্ভধারিণী মা। গত পরশুদিন বাড়িতে তার লেবার পেন উঠলে ওই মেয়েটাই তাকে হাসপাতালে এনে ভর্তি করে এবং সেদিন থেকে সে এ পর্যন্ত মেয়ের কাছেই রয়েছে।সবসময় মেয়ের কাছেই রয়েছে।মেয়েকে ছেড়ে কোত্থাও যায়নি।নর্মাল ডেলিভারি হওয়ায় মা ও শিশু দু'জনেই সুস্থ আছে।ডাক্তার তাই মাঝে একটা দিন রেখে আজ ছুটি দিয়ে দেয়।
   যাইহোক,মেয়েটার কান্নায় তার মায়েরও কান্না চলে আসে এবং ধরা ধরা গলায় বলে,"আল্লা শুনল না তো কী করবি বল মা,কী করবি বল!এ কী মানুষের হাতে যে,তার সাথে ঝামেলা করবি,কাজিয়া করবি।আল্লার যেটা ভালো লেগেছে সেটাই করেছে।এতে মানুষের কী করার আছে বল!"তারপর যা বলে,"যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে,ও নিয়ে আর দুঃখ করিসনা,আর কান্না করিসনা।কপালে যেটা আছে সেটাই তো ঘটবে।তার বেশি কিছু ঘটবে না।মনটা এবার একটু শক্ত কর।ঘটনা ঘটার আগে অত বেশি ভেঙে পড়লে চলবেনা।আগে ঘটুক তো তখন দেখা যাবে।..."
   আরও কতরকম ভাবে বুঝিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করে তার মা ও আরও কতরকম ভাবে সান্ত্বনা দিয়ে।কিন্তু মায়ের কোন কথাতেই তার কান্না থামেনা বা কোন সান্ত্বনাতেই সে সান্ত্বনা পায়না।যেকারণে তার কান্নাও থামেনা।কেঁদেই চলে,শুধু কেঁদেই চলে....।

                               দুই
 
   এরপর পাশের মেয়ে গুলোর মধ্যে থেকে একটা মেয়ে ওই মেয়েটার মাকে জিজ্ঞেস করে,"কী হয়েছে গো,মেয়েটা কাঁদছে কেন? বাচ্চার কিছু হয়নি তো?"
   মেয়েটার মা বলে,"না গো,বাচ্চার কিছু হয়নি।বাচ্চা এবং মা দু'জনেই সুস্থ আছে।"
   "তাহলে কাঁদছে কেন?"
   "মনের দুঃখে।"
   "তোমাদের বাড়ি কোথায়?"
   "শরৎপুর গ্রামে।"
   "সেটা আবার কোনদিকে?"
   "এই দিকে,পুবে।"হাত দিয়ে দেখায়।
   "বাচ্চা নর্মাল?না সিজার হয়েছে?"
   "নর্মাল হয়েছে।"
   "কবে হয়েছে?"
   "গত পরশুদিন হয়েছে।"
   "আর ভর্তি কবে হয়েছিল?"
   "সেদিনই হয়েছিল।হওয়ার পর কিছুক্ষণের মধ্যেই বাচ্চা হয়ে যায়।"
   "আজ তাই ছাড় হল বুঝি!"
   "হ‍্যাঁ।"
   এরপর মেয়েটা জিজ্ঞেস করে,"কী বাচ্চা হয়েছে ছেলে?না মেয়ে?"
   "মেয়ে।"
   "ক'টা বাচ্চা হল?"
   "পাঁচটা।"
   "ও গুলো কী বাচ্চা?"
   "সব গুলোই মেয়ে।দুঃখের কপাল গো,ছেলে নেই।"
   "এই জন‍্যই বুঝি মনে দুঃখ!"
   "হ‍্যাঁ।একটা ছেলে হলে মনে দুঃখ থাকতো না।"
   মেয়েটা তখন বলে,"মেয়ে দেখতে কেমন হয়েছে দেখি!"
   ক্রন্দনরত মেয়েটার মা তখন বাচ্চাটা কোলে নিয়ে মেয়েটাকে দেখায়।দেখে মেয়েটা বলে,"মেয়ে দেখতে তো খুবই সুন্দরী হয়েছে গো,খুবই সুন্দরী হয়েছে‌।মা তো সুন্দরী আছেই তার চাইতেও বেশি সুন্দরী হয়েছে।যেকোন ছেলেই পছন্দ করে নিয়ে চলে যাবে।বিয়ে দিতে একটুও কষ্ট হবেনা,একটুও না।"এই বলে মেয়েটাও তাকে কাঁদতে বারণ করে এবং তার মায়ের মতো এই মেয়েটাও তাকে বিভিন্ন ভাবে বোঝায়। মেয়ে হয়েছে তো কী হয়েছে?মেয়ে দেখতে খুবই সুন্দরী হয়েছে।কোন ভয় নেই।আপনি বিয়ে হয়ে যাবে।বিয়ে দিতে এক পয়সা লাগবে না।তাছাড়া মানুষ বোঝেনা তাই। মেয়েই ভালো।মা-বাবার দুঃখ বুঝবে ও ভালো ভাবে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করতে পারলে মেয়েই ভালো। সমাজে ছেলের চাইতে মেয়ে আজকাল কোন অংশেই কম নেই।সময় পাল্টেছে। মেয়েরা এখন আর শুধু মেয়ে হয়ে নেই।দেশ ও দশের অর্ধেক।মেয়ে ছাড়া দেশের কোন কাজই আজকাল সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয়না। এছাড়া ছেলেই বা কার মেয়েই বা কার! দুটোই তো ওই এক বিধাতার হাতে।সুতরাং তিনি যাকে যেটা দেন জানতে হবে সেটাই ভালো,সেটাই কল‍্যাণকর।অতএব এরজন্য দুঃখ বা কান্না করা ঠিক নয়,বিধাতাকে শুধু অসন্তুষ্ট করানো হয়।

                             তিন
 
   কীসে কী!মেয়েটার কান্না তবু থামেনা। আসলে মেয়েটা যে শুধু মেয়ে হওয়ার জন‍্যই কাঁদছে তা তো নয়।সে কাঁদছে আরো অন্য কারণে।
   হ‍্যাঁ,মাত্র পনেরো বছর বয়সে তার বিয়ে হয়।যদিও তার বয়স এখন  ছাব্বিশ-সাতাশ। তার বাবা নেই,মা আছে।কিন্তু মা বড় গরিব। লোকের বাড়ি কাজ করে খায়।সুতরাং তার স্বামী যদি তাকে এখন তালাক দেয় তো তার যে কোথাও গিয়ে দাঁড়ানোর জায়গা নেই। দুঃখের সাগরে তাকে ভেসে বেড়াতে হবে তার মায়ের মতো সারাজীবন।আর লোকের বাড়ি তাকেও কাজ করে খেতে হবে। আত্মসম্মান বলতে তার কিছু থাকবেনা। ইজ্জত বলতেও না।তার কারণ,তার মায়ের না হয় বয়স হয়েছে বলে কোন পুরুষ তার দিকে তাকায় না।কিন্তু তার তো বয়স হয়নি। তার শরীরে এখনও যৌবন রয়েছে,জৌলুস আছে।সুতরাং সে রক্ষা পাবেনা।যে বাড়িতেই কাজ করতে যাবে সেই বাড়িরই পুরুষ তাকে---
   মেয়েটার স্বামী বাড়িতে থাকে না,আরবে থাকে।কাজ করে।মাস সাতেক হল গিয়েছে। যাওয়ার সময় সে তাকে বলে গিয়েছে যে,সে যেন এবার আর কন‍্যা সন্তান নয়,পুত্র সন্তান প্রসব করে।না হলে সে তাকে বাড়িতে তো রাখবেই না বরং তালাক দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেবে।দিয়ে পরে বাড়ি এসে সে আবার একটা বিয়ে করবে।মেয়ে তার ঠিক করা আছে।
   এহেন আরও কতরকমের কথা তার স্বামী তাকে শুধু বলে গিয়েই ক্ষান্ত হয়নি।সে যাতে ভুলে না যায় তারজন্য তাকে মাঝে মাঝেই ফোন করে কথা গুলো স্মরণ করে দেয়,"হ‍্যাঁ রে,মনে আছে তো?"
   "কী?"
   "এবার পুত্র সন্তান না হলে..."
   তাই স্বামীর কারণেই তার যত দুঃখ,যত কান্না।কারণ,সে যে এবারও একটা কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছে এটা তার স্বামী জানেনা। জানলেই যে স্বামী তাকে----
    এতদিন ধরে স্বামী-সংসার করেও তাকে তালাক হতে হবে।তার নিজ হাতে গোছানো সংসার ফেলে চলে যেতে হবে।তার কোন অধিকার থাকবেনা সংসারের কোন কিছুতে। এমনকি তার গর্ভজাত সন্তানদের প্রতিও না।....নানাবিধ কারণেই তার কান্না থামতে চায়না।তার স্বামী শুধু শোনেনি তাই,শুনলেই ফোনে তাকে তালাক দেবে।তালাক তালাক এক তালাক,তালাক তালাক দুই তালাক,তালাক তালাক তিন তালাক,তালাক তালাক বায়ান তালাক এইভাবে বলে।হ‍্যাঁ,ফোনেই দেবে।কারণ,রেগে মেগে গিয়ে সে তখন হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ে ফোনেই তালাক দেবে।যাওয়ার সময় সেকথা সে বলেও গেছে তাকে।ফোনেও কতদিন বলেছে।তাহলে তার কান্না থামে কী করে?কী করে থামে?


                            চার
 
   পাশের মেয়েগুলো এখন আর কেউ নেই। যে মেয়েটা অতক্ষণ ধরে তাদের সঙ্গে কথা বলছিল সেই মেয়েটাও নেই।কারণ, দারোয়ান গেট খুলে দিয়েছে।সবাই সেই গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকে গেছে।এখন শুধু এখানে থাকা বলতে তারাই দুই মা-মেয়ে বসে আছে। কিন্তু তাদের থেকে একটু দূরে আরও একটা মেয়ে বসে রয়েছে।ওই মেয়েটাও তার মতো বসে বসে কাঁদছে।মেয়েটার কান্না দেখে তার এবার আপনি কান্না থেমে যায়।যাওয়ার পর তার মা তাকে বলে,"চল মা আমিনা,আমরা এবার বাড়ি যাই।"
    আমিনা বলে,"না মা,বাড়ি যাবোনা।বাড়ি গেলেই সব জানাজানি হয়ে যাবে।"
    তার মা বলে,"বাড়ি যাবিনা তো কী করবি তাহলে এখানে?"
    সোজা কথায় আমিনা বলে,"আমি মরবো। হ‍্যাঁ মা,আমি মরবো।আমার অযাচিত সন্তান নিয়ে আমি মরবো।কাছেই রেললাইন।আমি রেললাইনে মাথা দিয়ে মরবো।স্বামীর তালাক পাওয়ার চাইতে মরে যাওয়া অনেক ভালো। তাও মানসম্মান থাকবে।তাই,আমি মরবো।...মরবো.... মরবো...."
   আমিনার এই কথা শুনে তার মা ভয় পেয়ে যায়।আমিনাকে সে তখন বলে,"না মা,তুই মরবি না।একদম মরবি না।আল্লা যেদিন মরণ করবে সেদিনই মরবি।তার আগে মরবি না,মরতে পারিস না।"
   আমিনা তার মাকে তখন শোনায়,"তুমি জানোনা মা,মানুষ কি এমনি এমনি মরতে চায়?যখন তার চোখ থেকে বাঁচার সব স্বপ্ন হারিয়ে যায় তখনই মরতে চায়।আমার চোখেও যে এখন কোন স্বপ্ন নেই।তাই,আমিও মরবো।"
    "না মা,তবু তুই মরবি না।সবাই মরলেও তুই মরবি না।আমি তোকে মরতে দেবোনা।" আমিনার মা আবারও বলে।
    শুকনো হেসে আমিনা বলে,"আমি মরলে তুমি কি আমাকে আটকাতে পারবে? পারবেনা।"
    তার মা এবার বোঝাতে ব‍্যর্থ হয়ে আমিনাকে বলে,"চল মা,ওই মেয়েটার কাছে আমরা একটু যাই।মেয়েটা কী জন্য কাঁদছে দেখে আসি।"
   মায়ের কথায় আমিনা রাজি হয়ে গিয়ে মেয়েটার কাছে গিয়ে বসে।এই মেয়েটার কোলেও একটা সদ‍্যোজাত ফুটফুটে কচি শিশু রয়েছে।আমিনা তাকে জিজ্ঞেস করে,"তোমার কী হয়েছে গো,কাঁদছ কেন?"
    মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে আমিনার প্রশ্নের উত্তর দেয়,"আমার কিছু হয়নি গো,আমার কিছু হয়নি।"
    "কিছু হয়নি তো কাঁদছ কেন?"
    "আমি ভয়ে কাঁদছি গো,আমি ভয়ে কাঁদছি।"
    "ভয়ে কাঁদছ!"
    "হ‍্যাঁ গো,আমি ভয়ে কাঁদছি।"
    "কীসের ভয়ে কাঁদছ?"
    মেয়েটা তখন বলে যে,তার স্বামী বাইরে থাকে।কয়েক মাস হল গিয়েছে।আর কিছুদিন বাদে বাড়ি ফিরবে।ফিরেই তাকে তালাক দেবে।এই ভয়ে সে কাঁদছে।
   "সে কী!তালাক দেবে কেন?"
   মেয়েটা তখন জানায় যে,তার পরপর চার ছেলে হয়।চার ছেলে হওয়ার পর সে আবারও পোয়াতি হয়।হলে তার স্বামী তাকে ছেলে নয়,মেয়ে জন্ম দিতে বলে।কেননা, বছর বছর শুধু ছেলে হলে ছেলেদের জন্য মাটি কিনে ঘরবাড়ি করতেই যে শেষ হয়ে যেতে হবে।আর মেয়ে হলে সে সবের কোনও ঝামেলা নেই।বিয়ে দিয়ে শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়ে দিলেই ঝামেলা মিটে গেল।তাই,মেয়ে জন্ম দিতে না পারলে তাকে তালাক দেবে বলে হুঁশিয়ারি দেয় ও চিরদিনের জন্য বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেবে বলে।অথচ এবারও তার ছেলে হয়।বসে বসে সেই ভয়েই সে কাঁদছে।
    মেয়েটার কথা শুনে আমিনা তো অবাক হয়,"সে কী গো!"হয়ে বলে,"এরকম তো কোনদিন শুনিনি।ছেলে না হলেই তো স্বামীরা----- আর তোমার স্বামী দেখছি পুরো একটা উলটো মানুষ।"
    "হ‍্যাঁ গো,আমার স্বামী পুরো একটা উলটো মানুষ।"বলে বলে,"শুধু তালাকই দেবেনা, মেরে আগে আধমরা করবে।তারপর তালাক দেবে।তারমানে মারও খেতে হবে আবার তালাকও পেতে হবে।সুতরাং,স্বামীর এসব অত‍্যাচার থেকে বাঁচার জন্য যদি কেউ রাজি হতো তো আমি তার সঙ্গে আমার ছেলেটা বদল করতাম।অর্থাৎ তার মেয়েটা আমি নিতাম আর আমার ছেলেটা তাকে দিতাম।"
   "সত্যি বলছ?"
   "হ‍্যাঁ গো,সত্যি বলছি।অত‍্যাচারী স্বামীর হাত থেকে এছাড়া যে বাঁচার আমার আর কোন উপায় নেই।নিজের পেটের ছেলের জন্য হয়তো কিছুদিন কষ্ট হবে,মন কাঁদবে। কিন্তু আস্তে আস্তে কিছুদিন বাদে আবার ঠিক হয়ে যাবে।তার কারণ,এটা না করলে যে বাঁচতে পারব না।বাঁচার জন্য এটা করতেই হবে আমাকে।না করে কোন উপায় নেই।"
    মেয়েটাকে নিয়ে আমিনা এবার ভাবতে শুরু করে।মেয়েটার কথা গুলো নিয়েও। ভাবতে ভাবতে একসময় যখন ভাবনা শেষ হয় মেয়েটাকে সে বলে,"তোমার আমার যে একই রকম সমস্যা গো!একই রকম দুঃখ গো!আমার স্বামীও যে আমাকে একই রকম কথা বলে গেছে।একটু আগে তাই আমিও বসে বসে কাঁদছিলাম।"
   মেয়েটা বলে,"তোমার কী বাচ্চা হয়েছে ছেলে?না মেয়ে?"
    "মেয়ে।"
    কোন দিকে না তাকিয়ে মেয়েটা এবার সোজা আমিনার হাত দুটো চেপে ধরে,"বুবু, তোমার মেয়েটা তাহলে আমাকে দাও,আর  আমার ছেলেটা তুমি নাও।আমাদের দু'জনের যেহেতু একই রকম দুঃখ,একই রকম সমস্যা।তাহলে তুমিও বাঁচবে আমিও বাঁচবো।"
    মেয়েটার প্রস্তাবে আমিনা রাজি হয়ে যায়। তারপর কাঙ্ক্ষিত ধন নিয়ে তারা নিজ নিজ বাড়ি চলে যায়।উভয়ের বাড়িতেই এবার চাঁদের একটা হাট বসবে।

                            পাঁচ
 
   বাচ্চা দুটো বড় হয়ে এখন যৌবনে পা রেখেছে।এইসময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি দেখে তারা একে অপরের প্রেমে পড়ে যায় এবং বিয়ে করে ফেলে।
   অত:পর আমিনা একদিন ছেলের শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে আসে।এসে হাসপাতালের ওই মেয়েটাকে দেখে চিনতে পেরে যায়।যার সঙ্গে সে মেয়ে বদল করেছিল।চিনতে পেরে যাওয়ার পর সে চমকে উঠে,"এ কী!বুবু,তুমি!"
   "এই বাড়িই তো আমার।"
   কিন্তু সেদিনের সেই কথা তারা কোন মানুষের সামনেই প্রকাশ করতে পারে না বা ফিরে পাওয়া সন্তানের জন্য কেউই তারা উচ্ছ্বসিত হতে পারেনা।ভিতরেই সব কিছু চেপে রেখে দেয়।না হলে সমাজের মানুষ যে তাদের ধিক্কার দেবে,ধিক!ধিক!ধিক!
    সৃষ্টি কর্তার তাদের প্রতি এটা আশীর্বাদ?না অভিশাপ?না কোনটাই নয়?
                     
                                                          ------------------
 

 
ঠিকানা:-
গ্রাম+পোস্ট:-সারাংপুর খাসপাড়া,
থানা-ডোমকল,
জেলা-মুর্শিদাবাদ।
মোবাইল ও হোয়াটস এ্যাপ:৯৯৩২০১৭৫৬৫।


মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩