Featured Post

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

ছবি
   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন:  'লেখাটি স্বরচিত ও অপ্রকাশিত'। মেল আইডি :  printednabapravat@gm

গল্প ।। নীহারিকা ।। অরুণ চট্টোপাধ্যায়


 

খুব জেদি মেয়ে। যেটা করতে চাইবে সেটা করা চাই। এই যেমন সে পড়তে চায়। হায়ার সেকেন্ডারীর পরে গ্র্যাজুয়েট। আজকাল এটা বিশেষ এমন আর কি?

কিন্তু বাবা দীনেশ একটা ছোট্ট মুদি দোকান চালায়। সারাদিনে তার এমন কিছু খদ্দের নয় যে দু দুটো ছেলেমেয়ে আর বৌকে নিয়ে যে বিরাট সংসার সেটা ভাল ভাবে চালাতে পারে। হাতে তেমন মূলধন থাকলে নানা রকম জিনিস এনে দোকান সাজানো যায়। মন ভরান যায় বড় বড় খদ্দেরদের আর অমনি ভরে ওঠে তার ক্যাসবাক্স।

কিন্তু সে সাধ্য কই? তাই পাড়ার কিছু গরিব কাজের লোক, রিক্সা বা টোটোওয়ালা ছাড়া তার খদ্দেরের তালিকায় তেমন পুষ্টি নেই। এদিকে ছেলেটা উঠেছে ক্লাস এইটে। পাড়ার সবাই বলছে ছেলেটাকে ভাল করে মানুষ কর দীনেশ। বড় হয়ে ভাল চাকরি করে সংসারের কাজে আসবে। আর মেয়ের তো আর কটা দিন পরে যা হয় একটা বিয়ে দিলেই হয়ে যাবে। শ্বশুর ঘর করতে করতে সে কি আর বাবার সংসারে সাহায্য করতে আসবে?

সেই মতলবেই ছিল সে। এর মধ্যেই পাত্র দেখা শুরু করেছে। নিমাই পরমানিকের ছেলে সপা এখন টোটো চালিয়ে ভাল রোজগার করছে। মেয়েকে লুকিয়ে কথাবার্তা চালাচ্ছে দীনেশসপা ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়েছে তাই নীহারিকার আপত্তি থাকবে সে জানে। কিন্তু চার হাত এক করে দিলে পারবে কি সে সহজে সে হাত ছাড়িয়ে বাবার কাছে চলে আসতে?

কথা অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ওই যে বলে, নীহারিকার জেদ বড় ভয়ংকর। একে তো শিক্ষায় বেশ কটা ধাপ নিচে সপাতাতে আবার গরিবের ঘরের মেয়ে হলেও নীহারিকা বেশ সুন্দরী। আর সাধারণের থেকেও অনেক তলানিতে ঠেকে আছে সপার দেহ-সৌষ্ঠব। রোগা লিকলিকে তো বটেই তাতে আবার স্বভাবটা বড় ছোঁচা।

নীহারিকা জেদ ধরেছে সে কলেজে পড়বেই। লেখাপড়ায় ভাল একটা মেয়ে আর কি চাইতে পারে? নিত্য তাকে নিয়ে বাবার সংসারে চলেছে তুলকালাম। মা তো মেয়ের প্রতি খুব সহানুভূতিশীল। মনে তার একটা সুপ্ত বাসনাও আছে যে তার শিক্ষিত সুন্দরী মেয়েটা যেন একটা যোগ্য হাতে পড়ে।

বলল, রোজ রোজ বাপবেটিতে এই লড়াই আর ভাল লাগছে না বাপু। আর মেয়ে কি এমন সোনাদানা চেয়েছে শুনি? একটু তো পড়া করতে চেয়েছে? আর আজকাল গ্র্যাজুয়েটের নিচে কোন মেয়েই বা আছে শুনি?

-সে তুমি বুঝছ না গিন্নি। একে ছেলের এই খরচ তাতে ওর কলেজের মাইনে, ভারি ভারি বইপত্তর আর ভারি ভারি মাস্টার দিয়ে পড়ানো। আমার মত লোক কি করে পেরে ওঠে গিন্নি?

এর মধ্যেই নীহারিকার মামা একদিন এসেছিল। সে থাকে বসিরহাটে। আসতে যেতে বড় কষ্ট তাই খুব কম আসে। ছোটবেলায় অনেক আসত। মামি আর মামাতো ভাইকে নিয়ে। মাধ্যমিকের পরেও এসেছে কয়েকবার।

হঠাৎ এবার সে এসে পড়েছে। আর  সে যখন এসেছে তখনও বাপে মেয়েতে জেদের লড়াই চলেছে। সে জামাইবাবুকে বলল, আচ্ছা ভাগ্নিকে আমি যদি আমার ওখানে নিয়ে গিয়ে কলেজে ভর্তি করার ব্যবস্থা করে দিই কেমন হবে? কলকাতার কোনও এক লেডিজ হোস্টেলে থেকে নাহয় কলেজে পড়বে ভাগ্নি। আমার ছেলে এখন একটা চাকরিতে ঢুকেছে। তাই আমি সামাল দিয়ে দেব খ'ন।

এমন প্রস্তাব কি ফেলে দেওয়ার? মামাকে বেশ ভালই বাসে নীহারিকা। তার বাড়ি থেকে পড়াশোনা করা আর হাতে চাঁদ পাওয়া সমান সমান। মামা যে হঠাৎ এমন প্রস্তাব দেবে ভাবাই যায় না। খুব খুশি নীহারিকা তো বটেই খুশি বাকি সবাইও 

মা বলল, মেয়ে আমার তোর কাছে যত্নেই থাকবে গোবিন্দ।

চুঁচড়ো থেকে ফেরিঘাট পেরিয়ে নৈহাটি। সেখান থেকে ট্রেনে দমদম। আবার দমদম থেকে ট্রেনে বসিরহাট। তারপর আবার অটো। যেতে বেশ কিছুটা সময় লেগে গেল। মামার বাড়িতে নীহারিকা এসেছে সেই কোন ছেলেবেলায় যখন মামি বেঁচেছিল।  মামি তাকে খুব ভালবাসত আর আদরযত্ন করত। মামা অবশ্য মায়ের নিজের ভাই নয়। মায়ের পিস্তুতো ভাই। কিন্তু মায়ের নিজের কোনও ভাই না থাকায় মা এই পিস্তুতো ভাইকেই নিজের ভাই মনে করত। মামার বোন মামিও তাকে বেশ ভালবাসত।

কিন্তু এখন মামি নেই। শক্ত রোগ হয়েছিল মারা গেছে। মামার ছেলে এখন বিয়ে করেছে। এখন সারাদিনের ধকলে সারা শরীর তার ঘেমে নেয়ে উঠেছে নীহারিকা। সে ভেবেছিল দাদা তার সঙ্গে এসে কথা বলবে। বৌদিও হাসিমুখে অভ্যর্থনা করবে তার ননদকে। এই তো প্রথম দেখা। দাদার বিয়ের কথা তারা জানত তবে নেমন্তন্ন করে নি তাদের। ভাইয়ের সঙ্গে বা বৌদির সঙ্গে কথা বললেও তো শরীরের কষ্ট একটু কমে। কিন্তু দাদা এল না। সংসারী হয়ে বোধহয় একটু গম্ভীর। বৌদিও এল না। তারা নীহারিকাকে দেখে বিশেষ খুশি বলে মনে হল না। আবার যখন শুনল এখানে থেকে সে পড়াশোনা করবে তখন মুখ বেজার করে বৌদি যা হয় একটা ভাতের থালা ধরে দিল। না খাইয়ে তো আর রাখা যায় না কাউকে। খাবারটা অন্য সকলের সঙ্গে দিল না। বাইরের ঘরে এনে দিল।

মামা একবার ভেতরের ঘর থেকে বলেছিল, ওকে তো আমাদের সঙ্গেই বসাতে পারতিস?

বৌমা বলল, আপনার যেমন! আমাদের এই চোব্যচোষ্য দিতে পারব না। মাপে মাপে তো নাকি?

ব্যাপারটা চোখে পড়েছে নীহারিকারও। কই বাবা গরিব হলেও বাবার সংসারে এমন অযত্ন তো হয় না তার? মাছ মাংস রোজ না জুটুক অন্তত পেটভরা ডাল ভাত তো পায়। একটা অন্তত যাহোক একটা তরকারি। কিন্তু এরা তো শুধু আলুভাতে ডাল আর ভাত দিয়ে গেল। তাছাড়া এই কটা ভাতে তার পেট ভরে? কোনও অতিথিকে তারা এমন অযত্নে খেতে দিতে পারত? নিজেদের থেকে কেটে দিত।

সে দিন রাতেই মামা সেই সুখবরটা দিল যার জন্যে অধীর হয়ে অপেক্ষা করছে। আসার কষ্ট এমন কি মামাতো ভাই আর বৌদির খারাপ ব্যবহার পর্যন্ত ভুলে গেল।

-গুড নিউজ মা নীহারিকা। তোর ব্যবস্থা কালকের মধ্যেই হয়ে যাবে।

বুক ধুকপুক করছে নীহারিকার। কাল তার স্বপ্ন পূরণের দিন। কলকাতার কলেছে ভর্তি হবে সে। ভাবা যায়? মনে মনে ঠিক করে রেখেছে কোন বিষয়ে অনার্স নেবে। তাকে যে বড় হতেই হবে। সারারাত ঘুম হল না উত্তেজনায়।

পরের দিন সকালে যিনি এলেন তিনি এক মহিলা। মামা পরিচয় করিয়ে দিল, ইনি আমার মামাতো বোন শৈল। তোদের বাড়িতেও গেছে তবে তখন তুই খুব ছোট ছিলি।

তা হতে পারে। নীহারিকার মনে পড়ে না। মামার মামাতো বোন। মানে মায়েরও একরকমের বোন। মানে তো মাসিই হল। পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল নীহারিকা। শৈল তো চোখ ফেরাতে পারছে না তার দিক থেকে। মামাকে বলল, হ্যাঁ দাদা এ তো দেখি খুব সুন্দর। তুমি যা বলেছিলে একেবারে ঠিক তাই।

মামা ভাগ্নির সৌন্দর্যে গর্ব বোধ করে বলল, হ্যাঁ আমি তোকে বলেছিলুম না?

নীহারিকা চলে গেল ভেতরে। আজ দুপুরে খেয়ে দেয়ে মামা আর শৈল মাসির সঙ্গে তাকে কোলকাতায় যেতে হবে। আগে লেডিজ হোস্টেলে ভর্তি হতে হবে। এখন কলেজে ভর্তি হবার সিজন চলছেতাই লেডিজ হোস্টেলেও আগেভাগে ব্যবস্থা না করলে জায়গা পাওয়া খুব মুস্কিল।

-কোলকাতায় তোর মাসির কিন্তু খুব প্রভাব আছে জানিস নীহারিকা?

মামার কথায় চোখ বড় বড় হয়ে উঠল নীহারিকার ঐ 'প্রভাব' কথাটায়। এই কথাটার মাহাত্ম অনেক। তার আক্ষেপ তার বাবার প্রভাব নেই এতটুকু। তাই তাদের এত কষ্ট। যাক প্রভাবশালী মাসিকে যখন পাওয়া গেছে তখন স্বপ্ন পূরণ তার হবেই।

চান করতে যাওয়ার আগে মামাকে কি একটা কথা বলতে মামার ঘরে ঢুকেছিল নীহারিকা। ভেতরে শৈল মাসি আর মামা নিজেদের মধ্যে কি যেন আলোচনা করছে। স্বাভাবিকের থেকেও একটু নিচু গলায়। ভাবল এ সময় তার না যাওয়াই ভাল। কথাটা বেরোবার আগে জিজ্ঞেস করলেও হবে।

বেরোনোর সময় দেখল মাসি প্রস্তুত কিন্তু মামা তার ঘরের পোশাকেই। নীহারিকা জিজ্ঞেস করল, মামা তুমি যাবে না?

-আজ একটু গা ম্যাজ ম্যাজ করছে মা। তুই তোর শৈল মাসির সঙ্গেই চলে যা।

তার একটু গয়ং গচ্ছ ভাব দেখে শৈল মাসি হেসে বলল, আমি কি তোর পর আমার বোনঝি?

কিন্তু ঐ যে বলে নীহারিকার জেদ। মামা না গেলে সেও বাড়ির বাইরে ঠেকাবে না একটা পা। নিজের ঘরে ছুটল জামাকাপড় পালটাতে। মুখে বলল, কালই আমাকে চুঁচড়ো দিয়ে আসবে মামা। আমি ওখানের কলেজেই ভর্তি হব। আর নাহয় নৈহাটিতে। লঞ্চ পেরিয়ে চলে যাব।

মামা আর মাসি মুখ চাওয়া চায়ি করল। কি যেন কথা হল তাদের চোখে চোখে। মামা বলল, মামা আর মাসি কি আলাদা হল রে বেটি? আমরা তো দুই ভাই বোন নাকি? হলেই বা মামাতো-পিস্তুতো? আর কোথায় নৈহাটি কলেজ আর কোথায় কলকাতার কলেজ।

মাসি বলল, আহা মিথ্যে জেদাজেদি করছ তুমি দাদা। আচ্ছা আমাকে যদি তেমন বিশ্বাস না হয় তো তুমিও চল না। আসলে তোমাকে ও দেখেছে বহুবার কিন্তু আমাকে তো আর দেখে নি?

অতএব তৈরি হতেই হল মামাকে। ট্রেনে করে দমদম। খুব ভীড় রাস্তায়। দমদমে তো আরও। এখান থেকে একটা ট্যাক্সি করে চলল তিনজন। পেছনে বসল মাসির পাশে নীহারিকা। সামনে ড্রাইভারের পাশে মামা।

-এবার আমরা যাব হোস্টেলে। মাসি বলল, তবে মা নীহারিকা খেয়াল রেখ, এটা কিন্তু একটা হোস্টেল। এদের নিজস্ব কড়া নিয়ম কানুন আছে। না মানলে-

অভিমানের সুরে নীহারিকা বলল, বা রে মানব না আবার কখন বললুম?

ট্যাক্সি থেকে নামল তারা। একটা গলির অনেকটা ভেতরে একটা বাড়ি। এত ভেতরে আর আঁকাবাঁকা পথে যে নীহারিকার সব গোলমাল হয়ে যেতে লাগল। একটা বিরাট বড় কোলাপসিবল গেট দেওয়া বাড়ি। গেট খুলতে ঢুকল তারা।

এক মোটা ফর্সা মধ্যবয়সী মহিলা হাসিমুখে এগিয়ে এলেননীহারিকার মামাকে কোথাও দেখা গেল না। শৈল বলল, এই আমার বোনঝি। এরই একটা বন্দোবস্ত করার কথা বলেছিলুম আমি।

ভদ্রমহিলা হেসে বললেন, বুঝেছি বুঝেছি। বসুন কাগজপত্র সব তৈরি করে দিচ্ছি। ছবি টবি এনেছেন তো?

-ছবি? মাসি একটু হোঁচট খেল মনে হল, মানে হঠাৎ চুঁচড়ো থেকে এসেছে কিনা।

-ঠিক আছে। আমিই ছবি তুলে নেব। বস তো মা ওখানে চুপটি করে।

নীহারিকা ভাবল ভর্তি হতে গেলে এসব তো লাগবে। তার রেজাল্ট আর অন্য কাগজপত্র দেবে কিনা ভাবতে ভাবতে সে এগিয়ে দিল।

-আচ্ছা সে আমি পরে নিয়ে নেব। এখানেই যখন থাকতে হচ্ছে। এখন চুপটি করে বস। আমি কাগজপত্র তৈরি করে নিই।

এদিক ওদিক তাকিয়ে মামাকে কোথাও দেখতে পেল না নীহারিকা। মামাকে না দেখে নীহারিকার খেয়াল হল এতক্ষণে। মামা তবে এ বাড়িতে ঢোকেই নি? আবার জেদ ধরল দেখা না হলে সে এখানে থাকবে না ফিরেই যাবে আবার মামার বাড়িতে। মাসি ফিসফিস করে বলল, মা, তুমি আর যাই হও পাগল তো নয়? অনেক করে এমন হোস্টেল জোগাড় করে দিলুম নিজের প্রভাব খাটিয়ে। সব পন্ড করে দিতে চাও?

তাও ঘাড় নাড়ে নীহারিকা। ফোনে যোগাযোগ করা হল মামার সঙ্গে। মামা বলল, একটা কাজে আটকে গেলুম মা। তোর হোস্টেলের দরজা থেকেই সে আমাকে ডেকে নিল।  তুই ভর্তি হয়ে যা। আমি কাল এসে তোর সঙ্গে দেখা করে যাব। তোর বইপত্তর আর কলেজে পড়ার টাকা সব দিয়ে যাব। তুই ভাবিস নি।

-বাবাকে কিন্তু খবরটা দিয়ে দেওয়া চাই। সত্যি মাসির জন্যেই এমন সাজানো গোছানো হোস্টেলটা পাওয়া গেল।  

আসার সময় মাসি বারবার বলল, তুই ভাবিস নি। আমরা আবার কাল আসব।

-কিন্তু আমার কলেজে ভর্তির ব্যাপারটা?

শৈল মাসি অভয় দিয়ে বলল, আরে সে সব ব্যবস্থা আন্টি করে দেবে।

তার থাকার ঘরের ব্যবস্থা হয়েছে। তিনজন থাকবে একসঙ্গে। তবে তারা কাল আসবে। সে ঘরে যাওয়ার আগে নীহারিকা আবার মহিলাকে নিজে জিজ্ঞেস করল, আমার কলেজের ফর্ম টর্ম সব এখান থেকেই ব্যবস্থা করে দেবেন তো আন্টি?

-আচ্ছা সে সব হবে খ'ন। গম্ভীর ভাবে কথাটা বলে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন মহিলা। বেশ একটু অবাক হল নীহারিকা। আহতও হলএকটু আগে তো বেশ ভাল সুরে কথা বলছিলেন। হঠাৎ কি এমন হল? সে কি খারাপ কিছু বলে ফেলল?

সে চলেই যাচ্ছিল। মহিলা আবার বললেন, আজ রেস্ট নাও সারা রাত। কাল বলা হবে তোমাকে কাজের কথা।

কাজ? এখানে আবার কাজও করতে হবে নাকি? মাইনে বা হোস্টেল ভাড়া এসব তো মামা নিজেই দেবে বলে বাবাকে বলেছে। তাহলে এত ভাবছে কেন সে। আসলে কাজের কথা মানে কলেজে তার ভর্তির কথাটাই হয়ত বলতে চাইছেন মহিলা।

একটা ঘর গোটাই আজকে তার জন্যে বরাদ্দ করা হয়েছে। তার মানে আজ তাকে কোনও রুমমেটের সঙ্গে ঘর শেয়ার করতে হচ্ছে না। সে থাকবে তার নিজের মত। বেশ আনন্দ লাগছে। সত্যি খুব প্রভাবশালী তার মাসি।  

রাতে খাবার দেওয়া হল। খুব সাদামাঠা। তাতে আক্ষেপ একটু আছে বৈকি। ভেবেছিল হোস্টেলে এরা একটু ভাল কিছু খেতে দেবে। অবশ্য তার ঘরেই দেওয়া হল। একটা জিনিস তার খুব ভাল লাগল না। সেটা হল তার জামাকপড় সমেত ব্যাগটা মহিলাকে জমা দিতে হয়েছে। এটাই নাকি নিয়ম। জামাকাপড় যা দরকার সব দেওয়া হবে এখান থেকে।

বাথরুম থেকে ফিরছিল সে। রাত তখন বেশ গভীর। একটা ঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। দুজন মেয়েপুরুষের অনুচ্চ স্বর আর চাপা খিলখিলে হাসি। অবাক হল নীহারিকা। মেয়েদের হোস্টেলে রাতে কি কোনও পুরুষ থাকে?

বুঝতে না পেরে নিজের ঘরে ফিরে শুয়ে পড়ল। কিন্তু একটু পরে কিছু ফিসফিস আওয়াজে ঘুম পাতলা হল। ঘরে একটা হালকা নাইট ল্যাম্প জ্বলছে। গরম কাল জানলা খোলাই আছে তবে পর্দা ফেলা। পর্দা সরিয়ে দেখার মত অশিক্ষা সে পায় নি। তবে মনে একটা কৌতূহল অনবরত খোঁচা দিতে লাগল তাকে।  

এবার মনে একটা খটকা এল। বুকটা গুড়গুড় করতে লাগল। এখানে আসার আগে বাড়িতে মামার ঘরে ঢোকার আগে সে মামা আর মাসিকে ফিসফিস করে কি যেন বলতে শুনেছিল। এখন হঠাৎ মনে পড়ল সেটা। আর দেখেছিল মাসিকে একটা নোটের বান্ডিল এগিয়ে দিতে।  কিন্তু নীহারিকাকে ভর্তি করার টাকা মামারই তো দেওয়ার কথা মাসিকে। এই উলটো ব্যাপারটা তখন অত খেয়াল করে নি। ঘরে ঢুকতে গিয়েও সংকোচ বশে ঢোকে নি।

পরের দিন ভোর থেকে খুব পেটে যন্ত্রনা শুরু হল নীহারিকার। এমন যন্ত্রণা যে শেষে ছুটে আসতে হল সেই মোটা মহিলাকেও। নাক কুঁচকে বললেন, কি হল আবার? দিব্বি তো ভালই ছিলে?

-মরে যাব আন্টিআমাকে শিগগির হাসপাতালে নিয়ে চলুনতলপেটে বেশ ব্যথা। আমার একবার এপেন্ডিসাইটিস হয়েছিল। ডাক্তার বলেছিল এবার হলে অপারেশন না করলে বাঁচবই না।

সেই বিরাট কোলাপ্সিবল গেটের বিরাট লোহার তালাটা খোলা হল। দুজন মেয়ে ওকে ধরাধরি করে নিয়ে চলল একটা টোটোয় চড়িয়ে। কিন্তু কড়া হুকুম সেই মোটা মহিলার, রাস্তায় একদম চিৎকার চেঁচামেচি চলবে না। একেবারে সোজা ডাক্তার শিকদারের কাছে। ওনার বাড়িতেই অপারেশনের ব্যবস্থা আছে।

টোটো চলছে। নীহারিকার মোবাইল তার ব্যাগে। আর ব্যাগ রয়েছে মোটা মহিলার জিম্মায়। ভেবে চলেছে নীহারিকা। বাড়িটার বাইরে বে্রোতে পারবে তা ভাবতে পারে নি। এখন একটা কিছু করতেই হবে।

পাশ দিয়ে সাদা পোশাকের ট্র্যাফিক পুলিশ। হয়ত ট্র্যাফিক স্ট্যান্ডে যাচ্ছে ডিউটি করতে। চিৎকার করে উঠল নীহারিকা, বাঁচান বাঁচান। ধরে নিয়ে যাচ্ছে।

এত সকালে লোক কম থাকে বটে তবে ট্র্যাফিক পুলিশের কান তো কম সজাগ নয়। সে ভ্রূ কুঁচকে তাকাল। টোটোর ড্রাইভার তখন হুড়মুড়িয়ে চালাতে শুরু করেছে। কিন্তু পুলিশ ততক্ষণে উঠে পড়ছে ড্রাইভারের পাশে। চেপে ধরেছে তার কলার

-ধরে নিয়ে যাচ্ছি না সাহেব। বিশ্বাস করুন। মেয়েটা পাগল ওকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাচ্ছি।

ততক্ষণে লোক জুটে গেছে আরও। মেয়েগুলো পালাতে গিয়েও ধরা পড়ে গেছে। আর চালকের কলার তো পুলিশের হাতের মুঠোয়।

-ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাচ্ছ তো প্রেস্ক্রিপশন দেখাও।

ধরা পড়ে গেল চক্রটা আর চাঁইগুলো। উদ্ধার পেল আরও অনেক এমন নিরীহ কলে পড়া  মেয়ে। মায়ের কাছে খুব দুঃখ প্রকাশ করেছে নীহারিকা তার মামা ধরা পড়ার জন্যেও। তার কাছ থেকে পাওয়া গেছে মাসির দেওয়া সেই টাকার চকচকে নোটের বান্ডিল। সত্যি কথা বলতে কি বান্ডিলের সেই চিক চিক করাটাই নীহারিকার মাথায় একটা খারাপ ইঙ্গিত চিক চিক করে উঠেছিল। আর এই ভাবনাটা- মামারই যেখানে মাসির হাতে টাকা দেওয়ার কথা তখন এই উলটো ব্যাপারটা ঘটল কেন? ইস এই ভাবনা যদি মামার বাড়ি থেকে বেরোনার আগে আসত মাথায় তো এত দুর্ভোগ হত না।

আবার ভাবল তা যদি হত তবে অপরাধীগুলো ধরা পড়ত কি করে?  

নিজেই মেয়ের নাম দিয়েছে তার মা। তাই নীহারিকা কথাটার মানে একটু একটু বুঝতবহু দূরের জিনিস। যাকে ধরা ছোঁয়া যায় না। এখন বুঝল তার বুদ্ধিকেও ধরা ছোঁয়া যায় না। দূরের না হয়ে খুব কাছের মেয়ে হয়েও দুষ্টচক্র তার ধরা ছোঁয়া পেল না। উলটে তারাই পড়ে গেল ধরা।

একদিন থানার বড়বাবুর আছে এলেন একটা এন-জি-ও কর্তাব্যক্তিরা। 

-স্যার, ওই যে চুঁচড়ার ওই মেয়েটি- নীহারিকা নাকি নাম। তার উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করতে চাই আমরাশুধু বুদ্ধি নয় সাহসের জন্যেও বটে। 


                    ----------------------------------  


 


Dr. Arun Chattopadhyay

181/44 G.T.Road (Gantir Bagan)

P.O. Baidyabati

Dist. Hooghly (PIN 712222) W.B.

Mobile 8017413028

Email chattopadhyayarun@gmail.com

 


মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক