google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re গল্প ।। পু ন রা য় ইঁ দু র ।। চন্দন মিত্র - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

মঙ্গলবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২১

গল্প ।। পু ন রা য় ইঁ দু র ।। চন্দন মিত্র


 
         
                              

 

হাফহাতা সোয়েটারটার দাম পাঁচ হাজার টাকা, মাফলারটার দাম দু-হাজার টাকা, জুতো জোড়ার দাম পনেরো হাজার। বিজ্ঞাপন মারফত এই সব ব্র্যান্ডেড জিনিসপত্রের কথা জানতাম। কিন্তু আমাদের পরিচিত মহলে এতদিন পর্যন্ত এসব পরার মতো দামি লোক কেউ ছিল না। তাই অখিলেশদাকে দেখে স্বভাবতই আমরা ধাঁধিয়ে গেলাম। ভালোই হল এবার এইসব ব্র্যান্ড সম্পর্কে  হাতে গরম অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে। অখিলেশদা বকখালি থেকে মানিমার্কেটের সূত্রে  ফ্লাওয়ার ভ্যালি বা ওই ধরণের কিছু একটা নাম, তার এজেন্ট হয়ে এখানে এসেছে। বেশ দিলদরিয়া টাইপের ছেলে ; ঠেকে এলে আমাদের চা-সিগারেট ফ্রি। তবে একটাই দোষ সবসময় হামবড়াই  ভাব। কথায় কথায় অন্যদের ছোটো করাতেই যেন তার আনন্দ। বিশেষত তার যাবতীয় রাগের কেন্দ্রবিন্দু বিশ্বাসদা, আমাদের ঠেকের মাস্টারমশাই।  

  
    একদিন রাত নটার দিকে অখিলেশদা টলোমলো পায়ে ঠেকে ঢুকে বলল—মাস্টার  ! তুমি তো  আর্টসের তাও আবার বাংলার ! এতক্ষণ দুজন  সায়েন্সের মাস্টারের সঙ্গে  টিচার্স খাচ্ছিলাম  ওঃ  ! টিচার্স কী, তাও তো তোমাকে বলে দিতে হবে। টিচার্স হল স্কচ হুইস্কি। দাম শুনলে তোমার দম বন্ধ হয়ে যাবে 
আমি আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না— অখিলেশদা শোনো এসব এখানে চলবে না। মদ  খেয়ে তুমি ঠেকে ঢুকবে না
 

অখিলেশদা অন্যভাবে খেলতে শুরু করে— সুমিতভাই, রাগ কোরো  না। তুমি তো সায়েন্সের তোমার তো রেগে যাওয়ার কথা নয়। তাছাড়া তুমি  তো আর চার পয়সার মাস্টার হবে না। আমাকে দ্যাখো। এইচ এস ব্যাক। শালা মাস্টাররা আমাকে বলত আমি নাকি কিচ্ছু করতে পারব না। দেখে যা শালারা অখিলেশ আজ কোটিপতি হতে চলেছে।  

    তারপরেও অখিলেশদা ঠেকে এসেছে। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ তার মদের পার্টনার হয়েছে ; তার চারচাকায় সওয়ার হয়ে দীঘা-বকখালি ঘুরে এসেছে। ক্রমে ঠেকে আমরা কয়েকজন সংখ্যালঘু হয়ে পড়লাম। অখিলেশদা এবং তার চ্যালারা আমাদের এড়িয়ে চলতে লাগল। ঠেক ভাঙো-ভাঙো। এমন সময় ঘনিয়ে এল বিপর্যয়। মানিমার্কেট নিয়ে ধরপাকড় শুরু হল। অখিলেশদা গা-ঢাকা দিল। ঠেকে আবার প্রাণ ফিরে এল।   

    —বিজুদা ক'বান্ডিল দেব ?  কণ্ঠস্বরটা কেমন চেনা চেনা লাগল। রবিবার সকালের লক্ষ্মী টি স্টল তখন জমজমাট। ঠেকের প্রায় সব সদস্য হাজির। মনীশকে জিজ্ঞেস করি—এই যে লোকটা বিড়ি দিতে  এসেছে কেমন চেনা চেনা লাগছে না 

—আরে চিনতে পারছিস না,ও তো অখিলেশদা। টুপি পরে আছে বলে ঠিক চিনতে পারছিস না। কাল সন্ধ্যায় তুই ঠেকে আসার আগে বিজুদার  সঙ্গে কথা বলে গেছিল কালকে আমার সঙ্গে অনেক কথা হয়েছে মাস্টারমশাই বিশ্বাসদা অবাক হয়ে বললেন— অখিলেশের একি চেহারা হয়েছে ! ডাকব নাকি !  রমেশ থামিয়ে দিল— ডাকবেন না  আমি ওর সম্পর্কে সব জানি  মাসখানেক হল ও আমাদের পাড়ায় বাড়ি ভাড়া  নিয়েছে বছর দুয়েক আগে সবজি ওলা হারানের বউকে নিয়ে পালিয়ে গেছিল। দারুণ ক্যাচাল  হয়েছিল তখন। অখিলেশদার তখন রমরমা।  চারদিকে টাকা ছড়িয়ে সবকিছু ম্যানেজ করে নেয়। এখন সেই মহিলার সঙ্গেই থাকে চিটফান্ড নিয়ে ঝামেলার পর অখিলেশদা দেউলিয়া  হয়ে  গেছে এখন দেশে ফিরলে যারা ওর কাছে পলিসি করেছিল, তারা পিটিয়ে মেরে দেবে কদিন আগে ওর বউ দুই মেয়েকে নিয়ে এসেছিল  হারানের বউয়ের সঙ্গে তাদের খুব ঝগড়াঝাটি হয়  অখিলেশদাএখন পৈতৃক বিড়িবাঁধার ব্যবসায় ফিরেছে শ্যামল ফুট কাটে— এ তো একেবারে পুনর্মূষিক ভব ! বলেই হো হো করে হেসে ওঠে। তাকিয়ে দেখি অখিলেশদা নেই। কথা শেষ করে অনেক আগেই বেরিয়ে গেছে।     

                                            -----------------     

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন