google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re স্মৃতিকথা ।। ৺বিজয়ার চিঠি ।। ভাস্কর চৌধুরী - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

মঙ্গলবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২১

স্মৃতিকথা ।। ৺বিজয়ার চিঠি ।। ভাস্কর চৌধুরী





উৎসব শেষের শূন্যতা এখন গ্রাস করে আছে আদিগন্ত। হঠাৎ ভেসে আসা ছাতিম ফুলের গন্ধ যেমন মাতাল করে দেয় ঠিক তেমনই মন আচ্ছন্ন হয়ে থাকে এক না ছুঁতে পাওয়া আলোর পিপাসায়। উৎসব শেষের নিভে যাওয়া সন্ধ্যেবেলার আলোয় ম্লান হয়ে আসে জীবনের টুকরো টুকরো খুশির আমেজ। 


বিসর্জনের শেষে ছেলেবেলায় গোটা গোটা অক্ষরে হলদে রঙা পোস্টকার্ড আর নীলচে-সবুজ ইনল্যান্ড লেটারে দূরের সব্বাইকে পাঠাতে হতো ৺বিজয়ার চিঠি! বয়ান মোটামুটি ওই একই ― বড়দের শুভ ৺বিজয়ার প্রনাম আর যেহেতু আমরা তখন ছোট তাই আশীর্বাদ জানানোর কেউ থাকতো না। তবুও কুঁচোকাঁচা ছোট ভাইবোনদের মনের আদর কলমের ডগায় উগড়ে দিতুম সে চিঠিতে! 


৺বিজয়ার চিঠি আসলে পুজোর ছুটির শেষে হাতের লেখা করিয়ে নেবার এক অলৌকিক ষড়যন্ত্র! ইচ্ছে নেই তবুও জোর করে ওই হাতের লেখা শুধু নয়, বানান, বাক্যগঠন সব কিছু সুকৌশলে করিয়ে নেওয়ার ফন্দি। এটা বুঝেছি অনেক পরে। আর যখন বুঝতে পেরেছি তখন কিন্তু সেই চিঠি পাঠানোর মানুষগুলো মনের মধ্যে গেঁথে গেছে। তখন যেন সত্যি সত্যি মন বলতো হোক না ওই পোস্টকার্ড বা ইনল্যান্ড লেটারের একচিলতে জমি, আমার খাস দখল তো থাকবে তাতে! জানেন, এখন আর কেউ ৺বিজয়ার চিঠি পাঠায় না! পুজো পার হয়ে যাওয়া দুপুরগুলোয় সেই "চিঠি আছে" বলে পিয়নকাকুর ডাকও আর শোনা যায় না। পোস্টকার্ড আর ইনল্যান্ড লেটার বেয়ে আসা সেই দূরে থাকা কাছের মানুষগুলোর গন্ধও আর পাওয়া যায় না মনের মাঝে। এখন শুধুই হোয়াটসঅ্যাপ বা মেসেঞ্জার বেয়ে আসে ৺বিজয়ার সম্ভাষণ। ৺বিজয়ার ছবি বা দু-কলি লেখা দিয়ে সে শুভেচ্ছাবার্তা কয়েক মুহূর্তেই উবে যায় কর্পূরের মতো।


তবুও আজ আমার খুব ইচ্ছে হলো একটা ৺বিজয়ার চিঠি লিখতে। আপনাকে, আপনাদের সব্বাইকে। গত কয়েকদিন ধরে যে মন্ডপ ছিল আলোকবিন্দুর মধ্যভাগে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে নেমে আসবে মনখারাপের নিস্তব্ধতা। মা জলে পড়লে একটা মনখারাপের হিমেল আমেজ নিয়ে সবাই ঘরে ফিরবেন। শূন্য মন্ডপ থেকে যাবে প্রদীপের আলো ও শান্তিকলসবারি সম্বল করে।


যদিও এ বছরটা অন্যরকম! উচ্ছাস ও কলরবের উপর লাগামের মুখোশ এঁটে দিয়েছে সবার মুখেই! তবুও পৃথিবীর অসুখ সেরে যাক এই প্রার্থনা নিয়েই মা কে বিদায় জানাই। আবার একটি গোটা বছরের অপেক্ষা নিয়ে আমরা থেকে যাবো আলোআঁধারী জীবন যুদ্ধের ময়দানে। আমার পাশে আজ যে মুখগুলো হাসি আর গানে ভরিয়ে তুলছে আকাশ বাতাস। হয়তো তাঁদের কেউ পরের বছর থাকবে দূরের দেশে আবার কেউ পাড়ি দেবে না ফেরার দেশে। শূন্যস্থান ভরাট করতে আরও কিছু নতুন মুখের সারি চলে আসবে আমার বা আপনার আসেপাশে। জীবন চলতে থাকবে তার নিজের নিয়মে। মা আসবেন আবার সময় করে চলেও যাবেন। রোদ-জল-ঝড় পার করে আরও একটা বছরের অপেক্ষায় থাকবো আমরা সব্বাই।


বড়দের প্রণাম, ছোটদের ভালোবাসা ও আদর, আর সব বন্ধুদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।

সবার জীবন শান্তি, সৌভাগ্য, আরোগ্য, আনন্দ ও সাফল্যে ভরে উঠুক। পৃথিবী তার সব অসুখ সারিয়ে হয়ে উঠুক শস্যশ্যামলা-সুজলা-সুফলা। রঙিন স্বপ্নজাল না হয় ঘিরেই থাকুক এই দৈনন্দিন নাগরিক জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে। এবার কাজে ফেরার পালা। সবাই খুব ভালো থাকুন।



শুভ ৺বিজয়া…!

---------------------------------

 



ভাস্কর চৌধুরী


নবপল্লী, শিবমন্দির, ইটনা কলোনী, বারাসাত, কলকাতা - ৭০০১২৬ (বিশ্বাস সেলুনের গলি)।



 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন