Featured Post

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

ছবি
   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন:  'লেখাটি স্বরচিত ও অপ্রকাশিত'। মেল আইডি :  printednabapravat@gm

প্রবন্ধ ।। ধ্রুপদী কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত ।। শংকর ব্রহ্ম




ধ্রুপদী কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত

শংকর ব্রহ্ম



[কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্তর একশত-কুড়ি বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে -

ধ্রুপদী একজন স্বতন্ত্র কবির প্রতি শ্রদ্ধা-জ্ঞাপন]



এক).


                  বাংলা সাহিত্যের প্রাঙ্গণে যে ক'জন ধ্রুপদী লেখকের সন্ধান আমরা পেয়েছি, কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে অন্যতম একজন। তাঁর লেখা কবিতা কলাকৈবল্যবাদে'র (Art for art sake) মন্ত্রণায় উজ্জীবিত। অথচ আশ্চর্যজনক ভাবে তিনি 'পরিচয়'-এর মতো পত্রিকার (বাম মনস্কতার পত্রিকা) সম্পাদনায় নিযুক্ত ছিলেন বহুদিন। 

     তিনি খুব কবিতা বেশী লেখেন নি। অনুবাদ বাদে ত্রিশ বছরে মাত্র ১৩০টির মতাে কবিতা। ১৯২৪ থেকে ১৯৩৩ সালের মধ্যে প্রায় শতাধিক কবিতা, যা পরবর্তীকালে  তাঁর চারটি কাব্যগ্রন্থে সংকলিত হয়েছে।


১। তন্বী (এম. সি. সরকার এন্ড সন্স)

২। অর্কেষ্ট্রা (ভারতী ভবন)

৩। ক্রন্দসী (ভারতী ভবন)

৪। উত্তর ফাল্গনী।


               তাঁর ২৯ বছর বয়সে প্রথম কবিতার বই 'তন্বী' (এম. সি. সরকার এন্ড সন্স - থেকে ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ) প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থে রবীন্দ্র প্রভাব সুস্পষ্ট ভাবে ধরা পড়েছে। তিনি তা নির্দ্বিধায় স্বীকারও করেছেন ।

তিনি জানিয়েছেন,

" কবিতাগুলাের উপরে স্বদেশী বিদেশী অনেক কবিই ছায়াপাত করেছেন - সব সময়ে গ্রন্থকারের সম্মতিক্রমে নয়। কেবল রবীন্দ্রনাথের ঋণ সর্বত্রই জ্ঞানকৃত । "

      এই কাব্যগ্রন্থে তাঁর বিশেষ স্বকীয়তার পরিচয় তেমন পাওয়া যায় না। পঁচিশ বছর বয়স থেকে উনত্রিশ বছর বয়স পর্যন্ত তাঁর নবিসী পর্ব' বা কাব্য সৃজনের প্রাথমিক স্তর বলা চলে। কবি জীবনানন্দ দাশ অবশ্য তাঁর উনত্রিশ বছর বয়সের মধ্যে পাঠকদের উপহার দিয়েছেন 'বােধ', ক্যাম্পে'-র মতাে স্মরণীয় কবিতা। 

      এই বয়সের মধ্যে, প্রেমেন্দ্র মিত্র, বুদ্ধদেব বসু, সময় সেন, অজিত দত্ত প্রমুখেরাও তাঁদের রচনায় স্বাতন্ত্রের পরিচয় দিয়েছেন, যার জন্য সমকালীন পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। কিন্তু কবি  সুধীন্দ্রনাথ দত্তের ক্ষেত্রে মোটেও তা ঘটেনি।

                   তবে তারপর মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে তাঁর দ্রুত উত্তরণ ঘটে। 'তন্থী' প্রকাশিত হওয়ার পর মাত্র পাঁচ বছর পরে দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ  - অর্কেষ্ট্রা (ভারতী ভবন - থেকে) প্রকাশিত হয়। এখানে তিনি স্বকীতার পরিচয় রেখেছেন স্পষ্ট ভাবেই।

      এর পরবর্তী তাঁর তিনটি কাব্যগ্রন্থ 'অর্কেস্ট্রা', 'ক্রন্দসী', উত্তর ফাল্গনী' (১৯২৯ সাল থেকে ১৯৩৩ সাল) এই পাঁচ বছরের মধ্যে রচিত কবিতা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল।

        সুধীন্দ্রনাথ দত্ত যৌবনেই বেশী লিখেছিলেন। প্রায় শতাধিক কবিতা লিখেছেন, মাত্র ১২ বছরের মধ্যে (১৯২৪ থেকে ১৯৩৩-র মধ্যে)। তারপর পরবর্তী দীর্ঘ ১৮ বছরে (১৯৩৮ থেকে ১৯৫৪) মাত্র ২৬টি কবিতা, যা উত্তর কালের দুটি কাব্যগ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। 'সংবর্ত' ও 'দশমী'-তে।

       সুধীন্দ্রনাথের স্বার্থকতা যাতে সর্বপেক্ষা সার্থক রূপে ধরা পড়েছে 'সংবর্ত' কাব্যগ্রন্থে। এগুলি পরিণত বয়সের রসসৃষ্টি তাঁর। 

            বিশ - ত্রিশ বছর ধরে জ্ঞানত গদ্য-পদ্যের নির্বিরােধ পরিণতি চাওয়ার ফল স্বরূপ , তাঁর গদ্য-কবিতা রচনার প্রয়াস, এই কাব্যগ্রন্থে দেখা যায়।

১৯৩৪ থেকে ১৯৩৭ সাল এই চার বছর তিনি প্রায় কিছুই লেখেননি। সময় কেটেছে তার পুরনাে লেখার পরিমার্জনে। তিনি নিজের কবিতা কিংবা অনুবাদের সংস্কারে অনমনীয় ভাবে অটল ছিলেন। এ কারণে ধূর্জটি প্রসাদ মুখােপাধ্যায় একবার রসিকতা করে তাঁকে বলেছিলেন, 'সুধীন্দ্রনাথের দুর্বলতা, তিনি Incompetent কবি হতে লজ্জ্বা পান।' তারপরেই তিনি অবশ্য স্বীকার করেছেন, 'লজ্জ্বাটা স্বাভাবিক,  কিন্তু এ'লজ্জ্বার পিছনে একটা চিত্তশুদ্ধি এবং কবিতার রূপ সম্বন্ধে একটা মোক্ষম ধারণা আছে, যার উৎপত্তি বােধহয় মালার্মে, ভ্যালেরী প্রভৃতির কবিতা ও কবিতা সংক্রান্ত মতামতে।' সুধীন্দ্রনাথ যেমন কবিতা পরিমার্জনে বিশ্বাসী ছিলেন, কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় তেমন ঠিক এর বিরুদ্ধাচারী ছিলেন। তিনি কবিতার পরিমার্জনে বিশ্বাসী করতেন না।

          সুধীন্দ্রনাথের আরও বিশ্বাস ছিল, উচ্ছ্বাস কবিতার ভীষণরকম ক্ষতি করে। প্রচলিত শব্দ ব্যবহারও, তিনি তাঁর কবিতায় সতর্কভাবে পরিহার করে চলতেন।

         কবিতা রচনার ক্ষেত্রে সুধীন্দ্রনাথ দত্ত প্রেরণার প্রতি সম্পূর্ণরূপে আস্থাহীন ছিলেন না। তাঁর ধারণায় অভিজ্ঞতাই কাব্যের মৌলিক উপাদান। গতানুগতিক কাব্য রচনায় তাঁর অনীহা ছিল। তাঁর কথায় 'সাহিত্য সংক্রান্ত সামান্যীকরণে পর্যন্ত আমি সচরাচর এক চক্ষু হরিণ হলেও কচিৎ-কদাচিত হটকারীও বটে।' 

       এই জন্যই বােধহয় সুধীন্দ্রনাথ দত্ত আধুনিক বাংলা কবিতার আসরে বিশিষ্ট এবং স্বতন্ত্র। মনীষা এবং সচেতন কারুকৃতির অন্যতম পথিকৃত।

            উল্লেখিত ছ'টি কাব্যগ্রন্থ ছাড়া (তন্বী, অর্কেস্ট্রা, ক্রন্দসী, উত্তর ফাল্গুনী, সংবর্ত, দশমী) তার মাত্র দুটি উল্লেখযােগ্য প্রবন্ধ সংকলন প্রকাশিত হয়েছে।

১। স্বগত (ভাৱতী ভবন) ১৩৪৫ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত।

২। কুলায় ও কালপুরুষ (সিগনেট প্রেস) ১৩৬৪ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত।

        প্রবন্ধগুলি পড়লেই বােঝা যায়, মেধা ও মননশীলতা তাঁর কত গভীর ছিল। কবিতার মতাে তার প্রবন্ধের গদ্যরীতিও তিনি পাঠকের কাছ স্বাতন্ত্রের দাবী রাখেন । প্রসঙ্গত কমলকুমার মজুমদারের গদ্যরীতির কথা মনে পড়ে যায়।

       তিনি প্রাচ্য ও পশ্চাত্যের শিল্প-সাহিত্য, ধর্ম, দর্শন ও ইতিহাসের অনুরাগী পাঠক ছিলেন। হয়তাে ব্যক্তি জীবনে ইংরেজী সাহিত্যের অধ্যপনার সুবাদে তিনি এ ব্যাপারে অনুসন্ধিসু ছিলেন। 

     বুদ্ধদেব বসুর কাছে জানতে পারি, 'সুধীন্দ্রনাথ ছিলেন, বহুভাষাবিদ পণ্ডিত মনস্বী, তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণী বুদ্ধির অধিকারী, তথ্যে ও তত্ত্বে আসক্ত, দর্শনে ও সংলগ্ন শাস্ত্র সমূহে বিদ্বান, তাঁর পঠনের পরিধি ছিল বিরাট ও বােধের ক্ষিপ্রতা ছিল অসামান্য' সেই সঙ্গে যাকে বলে কান্ডজ্ঞান সাংসারিক ও সামাজিক সুবুদ্ধি , তাও পূর্ণ মাত্রায় ছিল তাঁর, কোনাে কর্তব্যে অবহেলা করতেন না।

গার্হস্থ্য ধর্মপালনে অনিন্দ্যনীয় ছিলেন, ছিলেন আলাপদ, রসিক, প্রখর ব্যক্তিত্বশালী, আচরণের পুঙ্খানুপুখে সচেতন এবং সর্ব-বিষয়ে উৎসুক ও মনােযােগী।'

         নিন্দুকদের মতে তাঁর কবিতা 'সংস্কৃত আর ইংরেজী ভাষার বর্ণসংকর ঘটিয়ে অস্পৃশ্য রচনারীতির জন্ম দিয়েছে, বঙ্গ ভাষার নাট মন্দিরে সে হরিজনের প্রবেশ নিষিদ্ধ। 

    এ প্রসঙ্গে সুধীন্দ্রনাথ দত্ত আক্ষেপ করে বলেছেন, কবি প্রতিভার অভাব এবং তার বিরূপ পরিমণ্ডল কবির পক্ষে অভিশাপ।

       তিনি কখনােই প্রেমেন্দ্র মিত্রের মতাে জনতার কবি হতে চান নি। তিনি স্বীকার করেছেন 'বস্তুত আমি নিরবধিকাল বা বিপুল পৃথ্বীর অনুগ্রহকাঙ্খী নই, সমানধর্মী সহানুভূতিই আমার একান্ত কাম্য।'

তাঁর লেখা কবিতা  দুরূহ বলে নিন্দিত হলেও, তাকে অগ্রাহ্য করার মতাে স্পর্ধা, কখনােই কারাের হয়নি।

   সকলেই করি নয়, কেউ কেউ কবি'- জীবনানন্দ দাশের এ'কথার সত্যতা তিনিও মানতেন । কিন্তু দু'জনের মধ্যে ভাবাদর্শে আসমান-জমিন ফারাক ছিল। জীবনানন্দ দাশ ছিলেন স্বভাবে আবেগ প্রবণ কবি, অর্থাৎ যাকে কি না বলে 'স্বভাব-জাত' কবি। আর সুধীন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন মেধা ও মনন সম্পন্ন কবি অর্থাৎ কি না বােধ-বুদ্ধি গ্রাহ্য, সচেতন কাব্য-কারু কর্মী।

    গল্পকার কমলকুমার মজুমদারের মতাে তারও আত্মশ্লাঘা ছিল যে তাঁর লেখা বুঝবার জন্য পাঠককেও পরিশ্রমী হতে হবে। নিজেকে যােগ্য করে তুলতে হবে পাঠক হিসাবে। পিটুলী গােলা-গেলা পাঠক, তিনি অপছন্দ করতেন। তিনি জানতেন, সকলে তার লেখা বুঝতে

পারবেন না। তার লেখার রস গ্রহণ করার জন্য পাঠককেও মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে। থাকতে হবে মননশীলতা এবং কাব্যানুরাগ। তা তিনি তাঁর কবিতা পাঠকের কাছে প্রত্যাশা করতেন। 

           তাঁর সমানধর্মী অনুভূতিশীল পাঠকেরই একান্ত কামনা করতেন। কবিতাকে তিনি দূরত্ব দান করেছিলেন ইচ্ছাকৃতভাবে, যাতে সে দূরত্ব কাব্য পাঠকের চেতনাকে নাড়া দিয়ে সতর্ক করে। তিনি আক্ষেপ করে বলতেন, 'আমাদের মধ্যে লেখা পড়ার অসামঞ্জস্য বিস্ময়কর ; এবং তার ফলে বাংলা প্রবন্ধই বিপদগ্রস্ত নয়, বাংলা কাব্যও অসংলগ্ন ভাবচ্ছবির অনিকাম সংঘট্ট।'

          তিনি যেমন কাব্য রচনার ক্ষেত্রে অক্লান্ত মনােযােগী ছিলেন, পাঠকের কাছেও তা প্রত্যাশা করতেন।


দুই).


              কবিতা লেখার প্রধাণতঃ দুটি ধারা লক্ষনীয় :

কবিদের অধিকাংশই আবেগ-প্রবণ ধারার বাহক। অন্য ধারাটি ক্ষীণতনু বুদ্ধিগ্রাহ্য ধারা, যাদের বাহক- মাইকেল মধুসূধন দত্ত, প্রমথ চৌধুরী, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বিষ্ণু দে প্রমুখ কবিরা।

            কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত যে হেতু বুদ্ধি কর্ষিত ধারার লেখক। ফলতঃ আবেগ বর্জন তার প্রথম কর্তব্য বলে মনে করেছেন, তিনি জানিয়েছেন, 'আমি মরমী প্রাগলভ্যের জাত-শত্রু।

     .... এমন কোনাে ভাব বা আবেগ নেই, যা কায়মনােবাক্যের সহযােগ ব্যতিরেকেও, কেবল কাব্য রচনার উপযােগী।'

      তিনি মনে করতেন, 'কবিতা শুধু আবেগ নির্ভর নয়, কাব্যাবেগকে মনস্কচর্চার মাধ্যমে, প্রকাশ যােগ্য করে তুলতে হবে। তিনি বলতেন, 'বর্তমানের সহিত সাধনা যে নৈরাত্ম সিদ্ধির রূপ অভাবেই ধ্রুপদী পদবীর অযােগ্য এবং ইদান্তীন্তন বিদগ্ধ সমাজ যে আনুপূর্বিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্যই সময়ােচিত রস গ্রহণে অক্ষম এমন একটা স্বতােবিরােধী বিশ্বাস আমার মনে বদ্ধমূল। তিনি বলতেন, 'কাব্য কবির পূর্বপুরুষ, কবি কাব্যের জন্মদাতা নয়। প্রথম কবিতার আবির্ভাব হয়েছিল কোনও ব্যক্তি বিশেষের মনে নয়, একটা মানব সমষ্টির মনে।

      প্রথম কবিতার প্রসার শুধু একটি মানুষের উপর নয়, সমগ্র জীবনের উপর ; প্রাথমিক কবিতার উদ্দেশ্য বিকলন নয়, সঙ্কলন।

       প্রেরণা নামক কোন অলৌকিক শক্তিতে তাঁর বিশ্বাস ছিল না। তাঁর বিশ্বাস ছিল, 'রূপ আর প্রসঙ্গের পরিপূর্ণ সঙ্গমেই কাব্যের জন্ম।'

         তাঁর মতে, 'নির্ব্বিরোধ ন্যায়ের নিত্য আদর্শই

মহান কাব্যের প্রধান উপজীব্য।'


তিন).


          তিনি (কবি সুধীন্দ্রনাথ দ্ত্ত) ছিলেন, সুদর্শন। প্রখর ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন বনেদী ঘরের সুসন্তান। গভীর চিন্তাধারার অধিকারী। মননশীল শ্রোতা এবং পাঠক। তাঁর যােগ্য সহধর্মিনী ছিলেন রবীন্দ্র সঙ্গীত সাম্রাজ্ঞী রাজেশ্বরী দত্ত। পিতা ছিলেন তাঁর হীরেন্দ্রনাথ দ্ত্ত।

          জন্ম তাঁর  ১৯০১ সালের ৩০শে অক্টোবর। ১৯৬০ সালের ২৫শে জুন তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। 

         সুধীন্দ্রনাথ দত্ত বেশী বয়সে কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন। তাঁর প্রথম কবিতার বই 'তন্বী'  (১৩৩৭ বঙ্গাব্দে) তাঁর উনত্রিশ বছর বয়সে প্রকাশিত হয়েছিল। 

         বুদ্ধদেব বসুর কাছে জানতে পারি 'সুধীন্দ্রনাথের প্রথম যৌবনে, বাংলা ভাষা তাঁর অন্তরঙ্গ ছিল না। তাঁর বাল্যশিক্ষা ঘটেছিল কাশীতে, তিনি সংস্কৃতে পারদর্শী ছিলেন। তিনি সংস্কৃত ও ইংরেজি ভালভাবে শিখেছিলেন, কিন্ত্র বাংলা চর্চার তেমন সুযােগ পান নি।'

         তাঁর নিজের আগ্রহ ছিল ইংরেজি, মার্কিন, ফরাসী ও য়ুরােপীয় কবিদের প্রতি। তাঁরাই তাঁর কাব্যের আদর্শ ছিল। 'সংবর্ত' কাব্যগ্রন্থের ভূমিকায় সুধীন্দ্রনাথ দত্ত জানিয়েছেন, মার্লার্মে প্রবর্তিত কাব্যাদর্শই আমার অন্বিষ্ট : আমিও মানি যে কবিতার মুখ্য উপাদান শব্দ।

     তাঁর সমসাময়িক বাংলা কবিতার প্রতি তিনি তেমন আগ্রহ বােধ করেন নি।

     তাঁর অগ্রজ কবি রবীন্দ্রনাথ ছাড়া তিনি বিষ্ণু দের 'চোরাবালি' পড়ে তাঁর লেখার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। 

      তা ছাড়া তার মতে বুদ্ধদেব বসুর মতাে সাবলীল লেখক এ-দেশে বেশি জন্মায়নি।'

   কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় কবি জীবনানন্দ দাশ কিংবা অমিয় চক্রবর্তীর কবিতার প্রসঙ্গে তাঁর কোন রকম অভিমত আমরা পারিনি।

লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো,  তার মতাে বিষ্ণু দে এবং বুদ্ধদেব বসুও বিশ্ব-সাহিত্য সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিবহাল ছিলেন।

      মধুসূদনের মতাে তিনিও প্রচলিত বাংলা কাব্য রীতিতে সন্তুষ্ট হতে পারেন নি। তাই তিনি বাংলা কবিতার প্রবাহমান ঐতিহ্যে, যুয়োরোপীয় আধুনিকতার সঞ্চার করতে, মধুসূদনের মতােই উদ্যোগী হয়েছিলেন। মধুসূদনকে, ভারতচন্দ্রের গ্রাম্যতা দোষযুক্ত রসঘন কবিতা, তৃপ্তি দিতে পারে নি। যেমন সমসাময়িক কবিরা সুধীন্দ্রনাথ দত্তকে পরিতৃপ্ত করতে পারেন নি। কাব্য রচনায় মধুসূদনের মতাে তাকেও প্রচুর সময় দিতে হয়েছিল, কবিতার সমসাময়িক প্রচলিত রচনারীতিকে অগ্রাহ্য করে, বিকল্প শব্দ ব্যবহারে।

        বুদ্ধদেব বসুর কথায় জানতে পারি, 'তিনিই একমাত্র কবি, যিনি বাংলা ও বাংলায় ব্যবহার যােগ্য প্রতিটি সংস্কৃত শব্দের নির্ভুল বানান জানতেন, এবং শব্দতত্ব ও ছন্দশাস্ত্র বিষয়ে যাঁর ধারণায় ছিল জ্ঞানাশ্রিত স্পষ্টতা। এই শব্দের প্রেমিক শব্দকে প্রতিটি সম্ভবপর উপায়ে অর্জন করেছিলেন ; জীবনব্যাপী সেই সংসর্গ ও অনুচিন্তনের ফলেই সম্ভব হয়েছিল 'দ্বিধা-মলিদা' বা 'গুরু-অগুরু'- মতাে বিস্ময়কর অথচ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অন্ত্যানুপ্রাস।'


- " রহস্যের অনড় অভিধা

মুকুরিত সরোবরে, হতবাক দ্রুমে

প্রবিষ্ট নিবিড় ছায়া, বহিরঙ্গে বিশীর্ণ মলিদা;

অবলুপ্ত জনপদ ইন্দ্রনীল ধূমে,

ঘরে ঘরে প্রদোষের দ্বিধা।

 - "অগ্রহায়ণ" (কবিতা)।


                  এখানে 'মলিদা' মানে সূক্ষ্ম পশমী শীতবস্ত্র।

তখন তাঁর কবিতার যথার্থ দুরূহতার কারণ বােঝা যায়। অবান্তরকে বর্জনের উদ্যোগ মধুসূদনের মতাে তাঁরও ছিল স্বাভাবিক প্রবণতা।

            গতানুগতিক কবিতা রচনায় প্রথম থেকেই তাঁর আপত্তি ছিল। তিনি কবিতার পরিমার্জনে বিশ্বাসী ছিলেন। কাব্য প্রকাশে তিনি নতুনত্বের সাহায্যে পাঠকের চৈতন্যকে জাগিয়ে রাখার পক্ষপাতী ছিলেন। প্রবাহমান ঐতিহ্যকে আত্মস্থ করেই কবিতার রূপান্তর সম্ভব, এ কথা তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন। তার কাব্য ভাবনা, 'উক্তি ও উপলব্ধির' সাযুজ্য সন্ধানে ব্যাপৃত ছিল। কাব্য রচনায় তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম অনুধাবনীয়।

            তিনি বলতেন, কবির উদেশ্য তার চারপাশের অবিচ্ছিন্ন জীবনের সঙ্গে প্রবহমান জীবনের সমীকরণ। কবির ব্রত তার স্বকীয় চৈতন্যের রসায়নে শুদ্ধ চৈতণ্যের উদ্ভাবন।' 

           তিনি বুঝতেন, 'অন্তপুরে বসে রূপকথার রাজপুত্রের স্বপ্ন দেখা কাব্যের কাব্য-কথা আর চলবে না। তাকে বেরিয়ে আসতে হবে, পােকায়া-খাওয়া শিরােপা, মরচে-পড়া সাঁজোয়া, রজ্জুসার জয়মাল্য ফেলে তাকে বেরিয়ে আসতে হবে হাটের মাঝে, যেখানে পাপ-পুণ্য, ভালাে-মন্দ, দেব-দানব সমস্বরে জটলা পাকাতে ব্যস্ত।

তার মতে 'মহাকবি তিনিই, যিনি দৃশ্যমান বস্তুমাত্রের প্রচ্ছন্ন উদ্দীপনা শক্তিকে নিজের শরীরে ধরে, সেই দুর্বল উত্তেজনাকে অনুকূল ঘটনা চক্রের অনুগ্রহে, পাঠকের অঙ্গ প্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে দেন... কাব্য রচনার উপলক্ষে কোনও অলৌকিক প্রেরণা কবিকে পেয়ে বসে না।' তিনি বলতেন নির্বিরােধ-ন্যায়ের সত্য আদর্শই মহৎ কাব্যের প্রধান উপজীব্য।'

        তিনি মনে করতেন 'যখন সাহিত্য আর সংবাদপত্রের মধ্যে কোনও ব্যবধান থাকে না, তখন মন প্রাণ, বা আত্মিক সম্পদের জন্য গৌরববােধ কবির কর্তব্য নয়, তার আরাধ্য মাত্রা - জ্ঞান আর তন্ময়তা।'


চার).


       কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত প্রধানতঃ দুঃখবাদের প্রবক্তা। প্রসঙ্গতঃ তার ভাষায়- 'কৃত্রিম কল্পনা ত্যাগ, নিরাসক্ত অসাধ্য সাধন, অনন্ত প্রস্থান মিথ্যা, সত্য শুধু আত্ম পরিক্রমা।' 

    মােহিতলাল আবার বলেছেন, 'সত্য শুধু কামনাই মিথ্যা চিরমরণ পিপাসা।'  যতীন্দ্রমােহন সেনগুপ্ত, মােহিতলাল মজুমদার এরাও দুঃখবাদী কবি। তফাৎ শুধু এদের শিকড় ভারতীয় দুঃখবাদী দর্শনে প্রােথিত, আর সুধীন্দ্রনাথের দুঃখবাদের আশ্রয়-বােদলয়ের, মালার্মে, ভ্যালেরী প্রভৃতি কবিদের কাছে।

      'ক্রন্দসী'-তে যে সব কবিতা সংকলিত হয়েছে, তাতে দুঃখবাদ ও হতাশীর ক্ষরণ লক্ষ্যণীয়।

      নরক' কবিতায় তার শূন্যবাদী দর্শনের চিত্ররূপময়তা-


' জীবনের সার কথা পিশাচের উপভােগ্য হওয়া

নির্বিকারে, নির্বিবাদে সওয়া

শবের সংসর্গ আর শিবার সদভাবে।'


এরপরে কবি সিদ্ধান্তে আসেন -


'অমেয় জগতে

নিজস্ব নরক মোর বাঁধ ভেঙে ছড়ায়েছে আজ

মানুষের মর্মে মর্মে করিছে বিরাজ

সংক্রমিত মড়কের কীট,

শুকায়েছে কালস্রোত ; কর্দমে মেলে না পাদপীঠ 

অতএব পরিত্রাণ নাই

যন্ত্রণাই জীবনের একমাত্র সত্য, তারই নিরুদ্দেশে

আমাদের প্রাণ যাত্রাসাঙ্গ হয় প্রত্যেক নিমেষে।'


          'অর্কেস্ট্রা' ও 'উত্তর ফান্ধুনী' মূলতঃ প্রেমের কবিতার বই । অনাদি যুগের যত চাওয়া যত পাওয়া।

সুধীন্দ্রনাথের প্রেমের কবিতায় তেমন উচ্ছ্বাস চোখে পড়ে না মোটেও। 


"খেলাচ্ছলে শুধিয়েছিলাম, "তােমার প্রেম

নই কি আমি প্রথম আগন্তক ?"

অবাক বিষাদ এল তােমার চক্ষে নেমে

রক্তে ভাটা, ফিরিয়ে নিলে মুখ।"


অন্যত্র আবার দেখি -


"তােমারে যে কেন বাসি ভালাে,

সে-সত্য জানার আগে মিলনের মুহূর্ত ফুরাল

শুরু হলাে দীর্ঘায়িত বিচ্ছেদের রাতি।"


কিংবা


"তােমারই কেশের প্রতিচ্ছায়

গােধূলীর মেঘ সােনা হয়ে যায়,

পাকা দ্রাক্ষার অরাল লতায়

তােমারই তনুর মদিরা ভরা। "


       ক্রন্দসী' কাব্যগ্রন্থে সুধীন্দ্রনাথ আরাে বিস্তারে ও গভীরতায় ডুবেছেন। আত্মসন্তুষ্টির অভাব, পুরনাে পৃথিবীর নিঃশেষিত মূল্যবােধ সম্পর্কে সম্যক উপলব্ধির প্রকাশ ঘটেছে এই কাব্যগ্রন্থের প্রায় সব কবিতায়। 'সৃষ্টি রহস্য', 'নরক', 'প্রার্থনা' প্রভৃতি কবিতাগুলাে- দুঃখবাদ ও হতাশায় আক্রান্ত।


"কিছুরই কি নেই অব্যাহতি ?

জীবনের মরুপ্রান্তে স্মরণ অখ্যতি বসতি,

তারেও করিবে ছারখার

রক্তলােভাতুর তব দিগ্বিজয়ী শকট দুর্বার

হে কাল হে মহাকাল।"


 'উটপাখী'-র মতাে হাল্কা মেজাজের তির্যক কবিতা সুধীন্দ্রনাথ দত্ত আর একটিও লেখেননি।


"কোথায় পালাবে? ছুটবে বা আর কত ?

উদাসীন বালি ঢাকবে না পদরেখা।

প্রাক-পুরানিক বাল্য বন্ধু যত

বিগত সবাই, তুমি অসহায় একা।

....................................................

ফাটা ডিমে আর তা দিয়ে কী ফল পাবে?

মনস্তাপেও লাগবে না ওতে জোড়া।

অখিল ক্ষুধায় শেষে কি নিজেকে খাবে?

কেবল শূন্যে চলবে না আগা গোড়া।'

ছন্দে-মেজাজে-আচরণে-অনুভবে, সুধীন্দ্রনাথ দত্তের কাব্যসৃষ্টির অন্যতম দৃষ্টান্ত -

"সেদিনও এমন ফসল বিলাসী হাওয়া

মেতেছিল তার চিকুরের পাকা ধানে

অনাদি যুগের যত চাওয়া যত পাওয়া

খুঁজেছিল তার আনত দিঠির মানে।

একটি কথার দ্বিধা থর থর চুড়ে

ভর করেছিল সাতটি অমরাবতী

একটি নিমেষ দাঁড়াল সরণী জুড়ে

থামিল কালের চির চঞ্চল গতি,'

[শাশ্বতী]

     

           স্পষ্ট কোনাে রাজনৈতিক বিশ্বাস তার কবিতায় ধরা পড়েনি। তিনি যেমন হিটলারের শাসনে শঙ্কিত, তেমনি স্ট্যালিনের উখানেও উদ্বিগ্ন। 


           যযাতি' কবিতায় তিনি বলেছেন -


"আমি বিংশ শতাব্দীর

সমান বয়সী ; মজ্জমান বঙ্গোপসাগরে, বীর

নই, তবু জন্মাবধি যুদ্ধে যুদ্ধে বিপ্লবে বিপ্লবে

বিনষ্টির চক্রবৃদ্ধি দেখে, মনুষ্যধর্মের স্তরে

নিরুত্তর, অভিব্যক্তিবাদে অবিশ্বাসী, প্রগতিতে

যত না পশ্চাৎপদ, ততােধিক বিমুখ অতীতে।"


কিংবা –


"তবু জানি যবে জয় হবে বলেছিলে

চাওনি তখন তুমিও এ-পরিনাম :

শূন্যে ঠেকেছে লাভে লােকসানে মিলে,

ক্লান্তির মতাে, শান্তিও অনিকাম,

এরই আয়ােজন অর্ধশতক ধ'রে,

দু-দুটো যুদ্ধে, একাধিক বিপ্লবে

কোটি কোটি শব পচে অগভীর গােরে,

মেদিনী মুখর একনায়কের স্তবে !"


      সমসাময়িক কবিকুল, যখন দেখি, জনপ্রিয়তায় উদগ্র লালচে প্রচারের আলােয় উদ্ভাসিত হবার জন্য যতটা উদ্গ্রীব, সৃজনের ব্যাপারে ততটা যত্নশীল নন। তখন আশ্চর্য লাগে সুধীন্দ্রনাথ দত্তের জনপ্রিয়তার মােহ সযত্নে বিষবৎ পরিত্যাগের পরিকল্পনাকে।


      এইসব জেনে বুঝেই কী জনপ্রিয় কবি জয় গােস্বামী বলেন -


'তার যে কী হবে আমি জানি না।

সে তাে কবি বেশী কিছু জ্ঞানী না।'


এমন কথা কেউ ভাবতে পারেন, মনে করেই বােধহয় সুধীন্দ্রনাথ দত্ত বলেছিলেন,


"কবিদের কান্ডয় জনসাধারণ যতই হাসুক না কেন, তবু তার সম্বন্ধে কিংবদন্তীর অন্ত নাই। এই রূপকথাগুলাের মধ্যে যেটা সবচেয়ে দুর্মর ও রহস্যময়, সে হচ্ছে প্রেরণা নামক এক অলৌকিক শক্তি। যারা কবিতা লেখেন না, শুধু পড়েন, যারা লেখা, পড়া কিছুরই ধার ধারেন না, তারা যদি ভাবেন যে কাব্যরচনার জন্য বিদ্যা-বুদ্ধি, শিক্ষা-দীক্ষা, সাধনা-সংযম, এ সমস্তই অনাবশ্যক, প্রয়ােজন শুধু অখন্ড অবসর আর অপার দৈবানুগ্রহ, তবে প্রতিবাদ করে লাভ নেই।"


              কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্তের কবিতা, পাঠকের কাছে, দুর্বোধ্য বা দুরূহ মনে হলেও, তাঁর কবিতায় একটিও উদ্ভট বা অসংলগ্ন শব্দ খুঁজে পাওয়া যাবে না।

        যদি কেউ বারবার তার কবিতা পড়েন, শব্দের অর্থ বুঝবার জন্য অভিধানের সহায়তা গ্রহণ করেন, তবে তিনি তার (সুধীন্দ্রনাথ দত্তের) কবিতার রস গ্রহণে সক্ষম হবেন, তাঁর কবিতা পাঠে অভ্যস্ত হয়ে উঠবেন, এ কথা নির্দ্বিধায় বলা চলে। এ কথা আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।

     সামগ্রিক ভাবে, কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, আধুনিক বাংলা কবিতার আসরে- বিশিষ্ট, স্বতন্ত্র এবং অভিনব, এ কথা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। মেধা-মনীষা এবং সচেতন কারুকৃতির অন্যতম পথিকৃত কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত। পরিশেষে স্বীকার করি, যদিও আমি তার অনুগামী (যারা তাঁর মতো লিখতে চান) নই, তবুও তাঁর কাব্য-প্রতিভা ও ব্যক্তিত্বকে  অস্বীকার করতে পারি না।




মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক