Featured Post

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

ছবি
   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন:  'লেখাটি স্বরচিত ও অপ্রকাশিত'। মেল আইডি :  printednabapravat@gm

গল্প ।। মিৎসুবিশি ।। অনিন্দ্য পাল

 মিৎসুবিশি 

 অনিন্দ্য পাল


ঠাণ্ডাটা আজ একটু বেশিই পড়েছে। কিঙ্কর এখনও শুয়ে আছেন, বলা ভালো-- ইচ্ছা থাকলেও উঠতে পারছেন না বিছানা ছেড়ে। বড়বৌমা যতক্ষণ না চা দিয়ে যাবে ততক্ষণ বিছানা ছেড়ে ওঠার হুকুম নেই কিঙ্করের। 'বেড টি'র অভ্যাস আগে ছিল না, রমলা চলে যাওয়ার আগের দিন পর্যন্ত সকালে একসঙ্গে বারান্দায় বসে চা খেতে খেতে গল্প করেছেন। গল্প শুধু নয়, সংসারের খুঁটিনাটি নিয়েও চলতো কথাবার্তা, খুনসুটি, এমনকি কখনও সখনও জম্পেশ তক্কাতক্কিও বেঁধে যেত দুজনার। হঠাৎ কি যে হল, আর ফেরানো গেল না। 
--উঠুন বাবা। 
বড়বৌমা মিলি চা নিয়ে ঢুকলো ঘরে। এবার উঠতে পারবেন কিঙ্কর। ছেলে মেয়েদের এবং সবাইকে ব্রেকফাস্ট দিয়ে তবে মিলি তার জন্য চা নিয়ে আসার ফুরসত পায়। প্রথম প্রথম এই ব্যবস্থা মেনে নিতে কষ্ট হয়েছিল কিঙ্করের, কিন্তু যখন বুঝলেন মিলি ও তার মতই এই ব্যবস্থায় বাধ্য সৈনিক, তখন মেনে নিলেন। বুঝেছিলেন এর আগে বিছানা ছাড়লে বাথরুম ফাঁকা পাওয়া যাবে না। এখন কিঙ্করের মনে হয়, মিলি যদি তার মেয়ে হত তবে কি এর চেয়ে যত্ন পেতেন? বোধ হয় না। মাসের পর মাস কেটে যায় খোঁজও নেয় না ছোট ছেলে। গ্রামেই দুই ছেলের জন্য বাড়ি করেছিলেন, ব্যাঙ্ক থেকে হাউজিং লোন তুলে। ছোট ছেলে শহরে শ্বশুরবাড়ি থাকে। যাদবপুরের বস্তি এলাকায় একচিলতে দুকামরার পাকা বাড়ি। দখলি যায়গা, তবু সেখানে নাকি অনেক সুযোগ সুবিধা, হেসে খেলে দিনে পাঁচ-ছশো ইনকাম হয়ে যায়। অবশ্য এছাড়াও অন্য একটা ছক কষে রেখেছে ছোট ছেলে পাটু। শ্বশুর চির রুগ্ন, পাটুর বৌ, কিঙ্করের ছোট বৌমা বন্যা বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে। পাটুর শ্বশুর গত হয়েছে ওদের বিয়ের পরেপরেই, শাশুড়ীর হার্টের ব্যামো। তবু এখনও বাজারে নিজেদের মাছের দোকানটাতে নিয়ম করে বসে, মাছের কাটতিও বেশ ভালো। পাটু একদিন কিঙ্করকে একান্তে বলেছিল, "বুড়িটা মরলেই দোকানটা আমার, ঠিক করে চালাতে পারলে লাখপতি হয়ে যাব বুঝলে, আর বস্তিতে বাড়িটার এখনই হাতবদল করলে তিরিশ লাখ পেয়ে যাব। একটু সবুর করো, দেখ না তোমার ছোট ছেলে তোমার মত হতে পারে কি না। তোমার বড় ছেলের মত সারা জীবন কি প্রাইভেট কোম্পানীতে খাতা বওয়ার কাজ করবো? ও জন্য আমি জন্মাইনি, বুঝলে!" 
কিঙ্কর বুঝেছিল। তার মত হতে পারা বলতে পাটু কি বলতে চাইলো সেটাও বুঝেছিল। এতে কি তার আনন্দ পাওয়ার কথা? এটা বুঝতে পারেন না কিঙ্কর। 
--নিন, চা টা খেয়ে উঠে পড়ুন। কটা ডিম এনে দেবেন। একটু সবজিও লাগবে। 
বিছানার উপর চা-এর কাপটা নামিয়ে রেখে চলে যায় মিলি। 
চা টা বড় ভালো করে মেয়েটা। তৃপ্তি করে খেয়ে সকালের কাজকর্ম সেরে যখন থলে হাতে বেরোলেন বাজারের দিকে, এক ঝলক ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলেন, সাড়ে আটটা। 
বাজারে যাওয়ার পথে রমেনের মুদির দোকান। ডিমের ব্যাগটা ওর কাছে দিয়ে গেলেন। ও ট্রেতে দশটা ডিম প্যাক করে রেখে দেবে। 
সবজি নিয়ে ফিরছেন, দেখা হল রবির সঙ্গে। খুড়তুতো ভাই। সমবয়স্ক আর স্বভাব চরিত্রে একরকম হওয়ায় এখনও খানিকটা বন্ধুত্ব রয়েছে বিকেলের রোদের মত। 
--কি রে! হবে না কি এক পেয়ালা? না কি বৌমার ভয়ে ...
-- ভয় কিসের? চল তাহলে হোক একটু। 
বছর দশেক আগেও দুজনে এভাবে রমজানের দোকানে বসতেন, তবে তরলটা ছিল সোনালী। রমলা মৃদু আপত্তি জানিয়েছে বরাবর কিন্তু কখনও বাধা দেয় নি। রমলা চলে যাওয়ার পর মিলির সংসারে এসব বালাই একেবারে নিষিদ্ধ। এখন তাই দাশুর দোকানের লিকার। 
দাশু দুটো কাগজের কাপে লিকার চা ধরিয়ে দিয়ে কোথাও একটা গেল। কিঙ্কর আর রবি তার পুরোনো খদ্দের। এদের ভরসায় দোকান ছেড়ে যাওয়াতে সমস্যার কিছু নেই, সেটা দাশু ভালো করে জানে। 
গরম চায়ে চুমুক দিয়ে রবি একটু উসখুস করে উঠলেন। কয়েক সেকেন্ড পর কিঙ্করের দিকে তাকিয়ে বললেন, 
-- কদিন ধরেই ভাবছিলাম তোকে একটা কথা বলি। কিন্তু সেটা আর হয়ে উঠছে না। বলেই ফেলি কি বলিস? 
--তোর আবার হলটা কি? আমার সঙ্গে স্পেশাল কথা? কি রে এই সত্তরে কি আবার কেউ এল নাকি জীবনে? বিপাশা জানে? 
রবির মুখের দিকে একটা দুষ্টুমির চাউনি ছুঁড়ে দিয়ে হো হো করে হেসে উঠলেন কিঙ্কর। 
কিঙ্করের এই মজা কিন্তু রবিকে ছুঁতে পারলো না। রবির মুখের উপর ছায়া। চোখে একটা বিষণ্ণতা। 
কাগজের চায়ের কাপটা বেঞ্চের পাশে রাখা নীল রঙের ড্রামটাতে ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন রবি। তারপর পাঞ্জাবীর পকেট থেকে একটা কাগজের মোড়ক বের করে কিঙ্করের হাতে দিলেন। 
-- কি এটা? 
-- দেখ খুলে...
কিঙ্কর একটু অবাক হয়ে কয়েক মুহুর্ত তাকিয়ে থাকলেন রবির দিকে। তারপর কৌতুহলী হয়ে কাগজের মোড়কটা খুলেই থমকে গেলেন। কিঙ্করের 
বুকের মধ্যেটা হঠাৎ কেমন যেন ফাঁকা হয়ে গেল। একটা অদ্ভুত মানসিক চাপ যেন কয়েক টন ভারি হয়ে চেপে বসলো তার বুকে। 
অস্ফুটে বললেন, 
-- এটা? এটা তুই কোথা থেকে পেলি? 
রবির মুখটা বুকের উপর নেমে এসেছে। কিঙ্কর কোন উত্তর না পেয়ে এবার কেমন একটা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন। রবিকে একটা ধাক্কা দিয়ে চিৎকার করে উঠলেন, 
-- তুই? তুই তাহলে? কেন রবি কেন? তুই এত বড় সর্বনাশটা করতে পারলি আমার? আমার ভাইটা আত্মহত্যা করলো এই কারণে -- সেটা তাহলে তোর জন্য! আর সবাই জানলো ভুলোর মৃত্যর জন্য আমিই দায়ি। ভুলোও তাই লিখে গেল। আমার জীবনটাও তছনছ হয়ে গেল। বিনা অপরাধে সাত বছর জেলে কেটে গেল আমার। বাঁধা চাকরিটা হল না। কেন? কেন রবি? আমি তোর কি ক্ষতি করেছিলাম? 
চারদিকে অনেক আওয়াজ সত্ত্বেও দুই সত্তর উত্তীর্ণ ছোটবেলার বন্ধুর মনে হল চারধারটা একেবারে শ্মশানের মত নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। 
বেশ কিছুক্ষণ দুজনেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। রবিই প্রথম কথা শুরু করে, 
-- সেদিন সন্ধ্যায় তোদের বাড়ি গিয়ে যখন দেখলাম তোর ভাইয়ের হাতে এই পেনটা, আমার খুব পছন্দ হয়ে গেল। জানতাম আমার বাবাকে বললে কোনদিন অত দামি পেনটা কিনে দেবে না। তাই আমি আর লোভ সামলাতে পারি নি। তক্কে তক্কে ছিলাম। তুই এলি। পেনটা নিয়ে তোদের দুই ভাইয়ের টানাটানি ছিল। তোরা দুজনেই পেনটা নিজের কাছে রাখতে চাইছিলি। তোদের ঝগড়াটা চলতে চলতেই আমি বেরিয়ে আসি। কিন্তু বাড়ি চলে যাইনি। আমি ছিলাম তোদের গোয়াল ঘরের পাশে, ঘাপটি মেরে। ওখান থেকে তোদের ঘরটা স্পষ্ট দেখা যায়। তোর মা এসে তোদের দুজনকে বকে ঘর থেকে বের করে দিল। আমিও সুযোগ বুঝে ঘরে ঢুকে পেনটা পকেটে নিয়ে চলে এলাম। কিন্তু তার পরিণতি ওই রকম কিছু হতে পারে, সেটা আমার ধারণা ছিল না। পরদিন স্কুলে গিয়ে যখন দেখলাম তুই আসিস নি, তখনও আমি কিছু জানতাম না। এমনকি আমার পেনটার কথাও মনে ছিল না। টিফিনের সময় হঠাৎ শুনলাম। তোর থেকে ন-বছরের ছিল ছোট তোর ভাই, ভাবিনি এরকমটা ঘটতে পারে। ক্লাস টু এর একটা ছেলে একটা পেনের জন্য তিন তলার ছাদ থেকে ঝাঁপ দিতে পারে কি করে ভাববো বল? আর ভুলো পেনসিলে লিখে গেছিল "দাদা আমার মিৎসুবিশি পেনটা নিয়ে নিল কেন? আমি তাই মরে যাবো। " এটুকুর জন্য যে তোকেই জেলে যেতে হবে সেটা আমি ভাবতে পারি নি। 
একটানা এতগুলো কথা বলে হাঁপিয়ে উঠেছেন রবি, একটু বড় করে শ্বাস নিয়ে আবার শুরু করলেন, 
--পেনটাও আমি কখনো ব্যবহার করি নি। লুকিয়ে রেখেছিলাম চিলেকোঠার ঘরে। ফেরত দেব বা তোর বাবা মা কে বলবো আমিই এসবের জন্য দায়ি সেই সাহস আমার ছিল না। 
কয়েকদিন আগে বাড়ি পরিস্কার করতে গিয়ে ছেলে আমার সেই স্কুল ব্যাগটা পেয়ে সবাইকে দেখাচ্ছিল। তখনি ওর ভিতরের লুকানো খোপ থেকে পেনটা পড়লো। আমি ভুলেই গেছিলাম। 
     কিঙ্কর পেনটা হাতে নিয়ে তার গায়ে পরম মমতায় হাত বুলিয়ে নিচ্ছিল। ঠিক তখনি তার মনে হল যেন কেউ তার কানের কাছে আলতো স্বরে বলে গেল "দাদা ওটা আমার মিৎসুবিশি পেন, তুই নিবি না কিন্তু" । 
কিঙ্করের মনে হল কেউ যেন তার চারপাশ থেকে হঠাৎ সমস্ত পৃথিবীটাকে এক ধাক্কায় সরিয়ে নিয়েছে, এতটুকু বাতাসও রাখেনি তার জন্য। এই নিস্তব্ধ জনশূন্য পৃথিবীতে শুধু একটা ছোট্ট নরম হাত তাকে পরম আদরে টানতে টানতে কোন এক অজানা জগতের দিকে নিয়ে চলেছে। কানের মধ্যে শুধু বেজে চলেছে, "দাদা ওটা আমার মিৎসুবিশি পেন, তুই নিবি না কিন্তু"।

======০০০======
 
অনিন্দ্য পাল
গ্রাম -- জাফরপুর 
পোঃ-- চম্পাহাটিি 
পিন - ৭৪৩৩৩০
থানা -- সোনারপুর 
জেলা -- দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা 

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক