এক চিলতে রোদ্দুর
অদিতি ঘটক
'কথারা ভিড় করে আসে তবু তোর চোখের দিকে তাকালে
বুকের ভেতর নিরন্তর ঢেউ ভাঙার শব্দ
আমায় অবশ করে রাখে
তুই তো
কোনো জাদুকর নয়
তবুও এই সম্মোহনী মায়া
দিগন্তের মত বিস্তৃত হেঁয়ালি কিছু
অবগাহন না সঞ্চরন তোরই হাতে
আমার জীবন মরণ
আমার সকল বোধ' .........
"মা, এই লোকটা কে? যে তোমায় রোজ কবিতা লেখে। তোমায় লেখে কেন?"
"বুবু, তুই আবার আমার ফোন ধরেছিস! বারণ করেছি না।"
--"আমার ফোনে নেট আসছিল না। তাই নিয়েছি। লোকটা জানে তোমার এত বড় মেয়ে আছে?" বোলো। তাহলে আর লিখবে না। কোনো বুড়িকে কেউ কবিতা লেখে না। হিঃ, হিঃ।
মেয়ের কথায় বিদিশার চোখে জল চলে আসে। তবুও কিছু বলে না। একটা কিশোরী বয়সের মেয়েকে সব অনুভূতি ব্যাখ্যা করা যায় না। ফেসবুক ঘাঁটতে ঘাঁটতে হঠাৎই একজনের কবিতা ভালো লাগে। কয়েক দিন পর পর পড়ে কমেন্ট করার পর লেখক নিজেই কবিতা কোথাও পোষ্ট করার আগে বিদিশাকে পাঠায়। বিদিশা পড়ে অনুমোদন দিলে বা সংশোধন করে দিলে তবে লেখক কবিতা পোস্ট করেন। এই ভাবেই দুজনের মধ্যে এক অদ্ভুত রসায়ন গড়ে উঠেছে। এই নাম বিহীন নির্ভরশীলতার কোনো দিক নেই কোনো দিশা নেই বিদিশা তা জানে। তবুও কিসের যেন টান তাকে এই দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তার একঘেয়ে জীবনে যেন এক চিলতে মরুদ্যান। যেন এক ঝলক ঠান্ডা বাতাস। একটা টুকরো দখিন খোলা বারান্দা।
কবিতা বিদিশার খুব প্রিয়। পলাশও বিয়ের আগে কলেজে অনেক কবিতা শোনাত। সবই কোনো না কোনো কবির। বিদিশা তাই শুনেই তদ্গত হয়ে যেত। বিয়ের পর প্রথম দিকে বিদিশা বলেছিল এই আমায় নিয়ে একটা কবিতা লেখো না গো। তুমি তো এত কবিতা পড়। পলাশ হাসিতে ফেটে পড়ে বলেছিল, "তুমি পারোও বটে। আরে, সেসব তো তোমাকে পটানোর জন্য। কত কষ্ট করে মুখস্থ করতে হত। বন্ধু বান্ধবদের থেকে ঝাঁপতে হত। পকেটে চিট নিয়ে ঘুরতাম। চোখ মটকে বলেছিল, না হলে হার্টথ্রব বিদিশা ম্যাডাম কি এই নগণ্যর গলায় মালা দিত?" তারপর বিদিশা কোনোদিন পলাশকে আর কবিতার কথা বলেনি। পলাশও নিজে থেকে এক দু লাইন আওড়াইনি। বরং সকালে বেরিয়ে রাতে ফিরে এসে খাওয়া দাওয়া করে বিদিশার দখল নেওয়াকেই তার দায়িত্ব ও অধিকার বলে মনে করেছে। বিদিশাও এতদিন সংসারের সব দায়িত্ব কর্তব্য একাহাতে সামলিয়ে এটাকেই জীবনের স্বাভাবিক গতি বলে মেনে নিয়েছে। তার অসময়ে বুড়িয়ে যাওয়াও যেন সেই দায়িত্বের গুরুভার পালনেরই অঙ্গ। মাথার চুলে পাক, চোখের তলায় কালি, মুখে বলিরেখার দাগ প্রতিদিনের যুদ্ধের সৈনিকের চিহ্ন বহন করছে। তারই মাঝে এই এক টুকরো আকাশ বিদিশাকে দিয়েছে নিজস্বতার সুন্দর স্বাদ। কোনো কিছুর বদলেই বিদিশা তার এই এক চিলতে রোদ্দুর হারাতে নারাজ। সমস্ত দায় দায়িত্বের সাথে থাক না একটু উষ্ণ পরশ। যেখানে সে পায় ফেলে আসা বসন্তের মাধুর্য আগামীর পথ চলার পাথেয়।
ছবিঋণ- ইন্টারনেট
#######################
অদিতি ঘটক
চুঁচুড়া
হুগলি
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন