google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re অণুগল্প ।। অসহ্য জীবন ।। মিঠুন মুখার্জী - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

শনিবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২২

অণুগল্প ।। অসহ্য জীবন ।। মিঠুন মুখার্জী


।।  অসহ্য জীবন  ।।

মিঠুন মুখার্জী। 


কথায় আছে "জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে তিন বিধাতা নিয়ে"। জন্ম,মৃত্যু ও বিয়ে কার কখন ও কোথায় হবে, কেউ বলতে পারে না। তবে প্রতিটি পিতা-মাতা চায় -- তার সন্তানেরা যেন সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে পৃথিবীর মুখ দেখে। কিন্তু কখনো কখনো ভাগ্যের পরিহাস মেনে নিতে হয় আমাদের। মানসিক ও শারীরিক ভারসাম্যহীন প্রচুর শিশু এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে। যাদের নিয়ে পিতা-মাতার দুঃখের অন্ত থাকে না। ফেলেও দিতে পারে না। কারণ, সে যে নাড়ি  ছেঁড়া ধন। সন্তান যেমনই হোক মায়ের কাছে তার গুরুত্ব অপরিসীম।
            ছোট্ট তাপসী ওরফে তপু জন্মেছিল পশ্চিমবঙ্গের ছোট একটি গ্রামে। নাম গোবরডাঙ্গা। যদিও বর্তমানে গোবরডাঙ্গার অনেক উন্নতি হয়েছে। যখন তার দু-বছর বয়স তখন তার মা মাসির কাছে তাকে রেখে এক পরপুরুষের সঙ্গে পালিয়ে যায়। বাবা সুরাসক্ত। শ্মশানে মড়া পোড়ায় ও ভ্যান চালায়। মেয়ের প্রতি কোন নজর নেই তার। মাসির অবহেলায় বড় হয়ে ওঠে সে। কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হওয়ায় ওর কাজে মাসি বিরক্তি বোধ করে। বিছানায় পেচ্ছাপ করে দিত, কাজ করতে চাইত না, অগোছালো নোংরা জামা পড়েই  মাসের পর মাস কাটিয়ে দিত। সব যেন সহ্য হয়ে গেছে ওর।
           আজ তপুর ষোলো বছর বয়স। এই বয়সেই অনেক ঝড় বয়ে গেছে ওর উপর দিয়ে। এক  ঠাকুমা ছিল ওর। তারও মৃত্যু হয়েছে। মাসি তাড়িয়ে দিয়েছে পাঁচ বছর আগে। তাই পরের বাড়ি কাজ করে, কখনো কালী মন্দিরে বসে মানুষের কাছে চেয়ে-চিন্তে দিন অতিবাহিত হয়েছে তার। কান্তি চক্রবর্তী নামক এক প্রতিবেশী কাকার দয়ায় কাজ করার বিনিময়ে বর্তমানে থাকা-খাওয়া পায় তপু। তবে তার নোংরা স্বভাব তারাও পছন্দ করে না।
          তার উপর সমাজের একশ্রেণীর নীচ মানুষের চোখও পড়েছে অনেকবার। রাতের অন্ধকারে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টাও করেছেন অনেকে। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। টাকা নিয়ে তাদের কথামতো কাজ করেনি ‌ও।তাই বিপদ ছিল ওর পায়ে পায়ে। পুকুরঘাটে থালা- বাসন মাজতে গেলে, কখনো স্নান করতে গেলে সবাই ওকে এড়িয়ে চলত, বকতো। ওর কাছে যেতেই ঘৃণা পেত। কিন্তু ও সবার সঙ্গে কথা বলতো। সমাজের কোনো জটিলতা, চালাকি ওর নিষ্পাপ মনকে স্পর্শ করতে পারেনি কখনো। সকলকে আপন করে নেওয়ার গুণ ছিল ওর মধ্যে। তবে অন্যের করুণায় ওকে বেঁচে থাকতে হয়, বেঁচে থাকতে হবে। শকুনদের হাত থেকে কতদিন ও রেহায় পাবে!! মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় ওর চোখের কোনে মাঝেমাঝে জল দেখা যায়।  তপুর মতো মানুষের এরকম জীবনের জন্য দায়ী কে?

=================

মিঠুন মুখার্জী
গ্ৰাম : নবজীবন পল্লী
পোস্ট+থানা -- গোবরডাঙা
জেলা -- উত্তর ২৪ পরগণা
পিন-- 743252

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন