শতরূপা
বিজয়া দেব
সেদিন তোমাকে দেখেই চিনতে পারলাম। অনেক মানুষের ভিড়ের ভেতর তুমি রাস্তা পার হচ্ছিলে। আমি ছিলাম গাড়িতে। সিগনাল এর লাল হলুদ হল তারপর সবুজ হল আমার গাড়ি স্টার্ট দিল, ততটুকু সময় তোমাকে আদ্যপান্ত দেখা হয়ে গেল। হালকা গোলাপী শাড়ি, সাদা ব্লাউজ, ঠোঁটে হালকা গোলাপী লিপস্টিক খোঁপায় লাল গোলাপ। রঙিন জীবন তোমার। শেষ দেখা হয়েছিল একটি বারে। সেখানে মাইক্রোফোন হাতে বিলিতি গানে গোটা বার মজিয়ে রেখেছিলে। একদিন খুব হতাশা থেকে মদ খেয়ে তোমার কাছে গিয়েছিলাম, তুমি আমায় খুব যত্ন করলে, তোমার খুঁটিনাটি সব দেখলাম তোমার জীবন যাপনের জন্যে একতাড়া নোট দিলাম আর সঙ্গে নিয়ে এলাম তোমার ছায়া। সে ছায়া গ্রীষ্মের দুপুরে পায়ের কাছে পড়ে থাকে শীতে দীর্ঘায়িত হয়। আমার ক্যানভাস জুড়ে তোমার আঁচল তোমার বক্ষাবরণী তোমার ঠোঁট তোমার নগ্ন পা তোমার কাঁচের চুড়ি তোমার স্তনসন্ধি... আমার ডাইরিতে তোমার কষ্ট তোমার অসহায়ত্ব তোমার অসুস্থ বৃদ্ধা মা তোমার আমার পঙ্গু সমাজ...
আমার ব্যক্তিগত হতাশার জায়গায় তুমি রেখেছ তোমার বিপ্রতীপ হাতের ছাপ, সেই থেকে দেখছি আমার হতাশ হৃদয়ের অন্ধকার নিজের কাছেই বড় তুচ্ছ মনে হচ্ছে। আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন বেশে - কখনও এলোচুলে, কখনও খোঁপায় জড়ানো বেলফুলের মালায় কখনও রঙিন শাড়িতে কখনও জিনস আর শার্টে। তোমার পেছনে তোমার কাস্টমারদের লোলুপ দৃষ্টি। এখন আমার ক্যানভাসে সমুদ্র, একটি পণ্যবাহী জাহাজ আসছে। সেই জাহাজে শতরূপে ছড়িয়ে গেছ তুমি। জাহাজটি ক্রমশ এগোচ্ছে।
======০০০০======
বিজয়া দেব
কলকাতা - 78
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন