Featured Post

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

ছবি
   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন:  'লেখাটি স্বরচিত ও অপ্রকাশিত'। মেল আইডি :  printednabapravat@gm

করোনা-পরিস্থিতিতে এক শিক্ষিকার একান্ত নিজস্ব অনুভূতি ।। অঞ্জনা গোড়িয়া

  
 

শিক্ষকদের ওপর এত বিষোদ্গার  না করে নিজেরা সচেতন  হোন

 অঞ্জনা গোড়িয়া

 
প্রথমেই  বলি, আমি   দিদিমনি। হ্যাঁ আমি অহংকারী। 
আমি একজন প্রাইমারী স্কুলের দিদিমনি। জানেন ছোটো বেলায় যখন পুতুল খেলতাম।
আমি  দিদিমনি সাজতাম। একটা কঞ্চির ছড়ি হাতে নাড়তে নাড়তে  সবাইকে  পড়াতাম। বড় বড় চোখ করে ছোটোবেলার স্কুলের বিষ্টুস্যারের মতো।  তখন খুব  দিদিমনি সাজার সখ ছিল। 

তখন কী জানতাম আমিও  দিদিমনি হবো?
 তবু হয়েই গেলাম দিদিমনি। তার আগে অবশ্য একটা  প্রাইভেট স্কুলেও ছিলাম।  তাই সরকারি  আর বেসরকারি  স্কুলের  কাজ কর্ম কোনো কিছুই  অজানা নয়।
এখন আমি  সরকারি দিদিমনি।ঠিকই ধরেছেন।  তাই অহংকারও কম নয়।  কেন হবে না  বলুন? 
দামী  দামী  শাড়ি পরে চোখে সানগ্লাস দামী  ঘড়ি পরে স্কুলে যাই।
যদিও  আমি বাম হাতেরই পরি। তবু বেশ সেজেগুজে স্কুলে  যাই।না না হাই হিল পরি না। তবে জুতোটা  বেশ দামী। 
তবু আমি গর্বিত  আমি ওদের একজন দিদিমনি।
যারা কে. জি, ইংলিশ  মিডিয়াম স্কুলে পড়তে পারে না। নিতান্তই  হা ভাতে ঘরের ছেলেমেয়েদের আমি দিদিমনি।
 গর্ব করারই মতো।  প্রথম যে দিন স্কুলে যাই।
 হাত পা কাঁপছে।  কান দুটো  বেশ লাল। থমথমে মুখে ক্লাস রুমে ঢুকলাম।  স্কুলের বড়দি পরিচয়  করিয়ে দিলেন।
কয়েকজন  ফিকফিক করে  হাসছে।
 আমি বললাম, কী ব্যাপার  তোমরা  হাসছ কেন? 
একজন  বলে উঠলো, নতুন দিদিমনি তোমার টিপটা চোখের পাশে আটকে  আছে।  তাই  হাসি পাচ্ছে। 
আমি চটপট  গালে হাত দিয়ে  দেখি, সত্যিই  তো  মুখ মুছতে গিয়ে  কখন সরে গেছে টিপ টা।
কিন্তু  ওদের ওই হাসিভরা মুখ গুলো  দেখে সব ভয় কেটে গেল। শুরু হলো  নতুন এক জীবন। 

দেখতে দেখতে  ১৫ বছর হয়ে গেল আমার শিক্ষকতা। 
পুরাতন স্কুল  বদলে এসেছি  নতুন স্কুলে।
তাও ১০ বছর  আগে। 
মানিয়ে নিয়েছি এদের সাথে।  ভালোবেসেছি নিজের মতো করে। 
তবু কোথাও  যেন একটা  খামতি একটা  যন্ত্রণায় বিষাক্ত হয়ে ওঠে  মন। যখন দেখি আমার  ই পাড়ার ছেলে মেয়েরা আমার ই স্কুল টপকে পৌঁছে যাচ্ছে কেজি স্কুলে কিংবা হাইস্কুল লাগোয়া প্রাইমারি স্কুলে।
সত্যি  তখন প্রচন্ড  রাগ হয়।  নিজেকে  খুব ছোটো  মনে হয়।  কী এমন  কম আমার স্কুলে, যেতে হচ্ছে অন্য স্কুলে?
বলবেন আপনারা নিশ্চয়  পড়ান না।
হয়তো  সত্যি আবার অনেকটাই আমাদের সরকারি বাধা। পাড়ায় পাড়ায় গিয়েছি বুঝিয়েছি প্রাইমারী স্কুলে  ভর্তি করান। এখন এই লকডাউনে  এই স্কুলে কত সুযোগ সুবিধা ।  লকডাউন শেষ হলে   গ্রুপ করে পড়াবো।  প্রতি মাসেই  প্রশ্ন পত্র দেওয়া হয় । নির্দিষ্ট পরিমাণ  বরাদ্দ  মিড ডে মিল ও দেওয়া  হয়।  তবু সরকারি স্কুলের প্রতি কিছু  মানুষের  একটা  অনীহা  অবহেলা   অসম্মান, অর্থ অহংকার  থেকে ই  অরুচি। 
একেবারে   নিম্নবিত্ত পরিবার ছাড়া খুব কম ই বড়ঘরের ছেলে মেয়েরা প্রাইমারী স্কুলে  ভর্তি করান।  যথা সাধ্য চেষ্টা করছি  প্রাথমিক স্কুলের প্রতি অনীহা  দূর করতে। 
তবু ---
জানেন, এখন সর্বত্র ই  শিক্ষকদের নিয়ে  নানা কথা নানা পোস্ট ফেসবুক হোয়াটস এপ এ  ভরে গেছে। 
শিক্ষকরা নাকি  আরামে বসে বসে মাইনে নিচ্ছে। কোনো  কাজ নেই। স্যোস্যাল ওয়ার্ক কিছু ই  করে না। 
লজ্জিত হই। এই সব মানুষের জন্য। যারা শিক্ষকদের নিয়ে এমন  সব মন্তব্য করেন। লজ্জিত  হই  সেই সব ছাত্র ছাত্রীদের কথা ভেবে। যারা এই শিক্ষকদের ই হাতে  মানুষ হয়েছেন। তারা ই এই সব পোষ্ট করছেন।
প্রথমে ই বলি এই ছুটি আমাদের জন্য নয়।
এটা আমাদের কাছে একটা  শাস্তি।
শিক্ষকের কাজ শিক্ষকতা করা।  ছেলে মেয়েদের পড়ানো, চরিত্র গঠন করা। সামাজিক ও সার্বিক উন্নয়ন করা। জানি আমরা শিক্ষক রা অনেক কিছু ই  দায়িত্ব  নিতে পারি। আমরা ছুটি চায় না।  
ছুটি নিতে কে চায়? কেন চায়বে? 
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের  জীবনের সুরক্ষার  কথা চিন্তা করে ই  এই ছুটি। তা আমরা সবাই  জানি।
তবু শিক্ষকদের ছুটি নিয়ে  সবাই বিরক্ত। রীতিমতো বিদ্রোহী। 

তবু আমি গর্বিত  আমি  সরকারি প্রাইমারি স্কুলের দিদিমনি। যে যা খুশি ভাবুক, স্কুল খুললে আমি ই প্রথম শুনতে ছোটো ছোটো  ছেলেমেয়েদের হাসির কলরোল। ছুটে  এসে গলা জড়িয়ে ধরে  বলবে "দিদি দিদি ভালো  আছো? "
তাতে ই আনন্দিত। এবার বলি কাজের কথা। 
 আমি  ব্যক্তিগত উদ্যোগে আমার স্কুলের ছেলে মেয়েদের জন্য  কিছু  উপহারের ব্যবস্থা করেছিলাম এই লকডাউনে। স্যার ও রাজী হলেন। সবাই মিলে  ই দেওয়া হবে কিছু উপহার।
কিন্তু তবু ও প্রথমে হেডস্যার শুনেই  কিছু টা ভয় পেলেন। সরকারি স্কুলে এভাবে  কিছু  দেওয়া  যায় না। শোকজ করতে পারে। অন্য স্কুল খবর পেলে অনেক কিছু  ঘটতে পারে। কিছুতে ই এভাবে স্কুলের ছেলেদের কিছু  দেওয়া যাবে না।  তবু সাহস করে ব্যবস্থা করলাম স্কুল থেকে  খাতা পেন কিছু  খাবার  আর কিছু  সামগ্রী  দিতে।
কিন্তু  প্রতিটি  মুহুর্ত  একটা  ভয় স্যারের  মুখটা কাচুমাচু হয়ে গেল। যতটা তাড়াতাড়ি  সম্ভব বিতরণ করে বাড়ি এলাম।সত্যিই  বুঝলাম  আমরা সরকারি শিক্ষক। ইচ্ছে মতো  সব কিছু  করা যায় না।  আমাদের হাত পা বাধা। আর ক্লাস নেওয়া  তাও এই মুহুর্তে  অসম্ভব ব্যাপার।
তবু প্রতি মাসেই  স্কুলে  যাই। চাল দিতে। 
স্যার স্কুলের ভেতর টা  রীতিমতো পরিস্কার করে  তবেই  পরের দিন  চাল দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
কিন্তু  মাঠ টা?  মাঠ বলতে খুব সামান্য  স্থান। পাঁচিল দেওয়া নেই।
 প্রত্যেক বার ই বলে আসা হয়,আপনারা স্কুল মাঠে গরু বাধবেন না। গাড়ি রাখবেন না।।জামা কাপড় শুকাতে দেবেন না।
খুটে,গম ধান রোদে দেবেন না।
 এটা স্কুলের মাঠ।জলের কল টা পরিস্কার  রাখবেন। এখানে স্নান করবেন না। 
স্কুলের সামনে  এভাবে  অপরিস্কার করে রাখবেন না। কে কার কথা  শোনে?
উত্তরে  বলেন, ও স্যার সেই তো স্কুল বন্ধ।
আমরা যদি একটু ব্যবহার  করি ক্ষতি কি?
বড্ড অসুবিধা  ধান শুকনো করতে দিতে।  নতুন গাড়িটা  একটু না হয় থাকল এই মাঠে। ক্ষতি কী?
 স্কুল খুললে কী আর এসব করব? 
বলুন কী উত্তর দেব?
আর গাছ বসানোর কথা  বলছেন। প্রতি বছর  শীতের মরশুমে গাছ লাগানো  হয়
 কয়েক টা সপ্তাহ একটু সাবধানে  থাকে।সবাইকে বকে বকে বলতাম।একদম  মাঠে গরু ছাগল মুরগী  ছাড়বে না। গাছ নষ্ট করে দেবে। কে কার কথা শোনে? কিছু  দিনের মধ্যেই  সব গাছ সাফ হয়ে যায় গরু ছাগলে। বলতে পারেন এটাও আমাদের দোষ।  ঠিক মতো  শাসন  করি না গ্রামবাসীদের।
একটা  যৌথ উদ্যোগে  স্কুল শিক্ষকরা মিলে ত্রাণের ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু  সেখানে ও কিছু  রাজনৈতিক বাধা।  থাক এসব কথা  নাই বা বললাম।  আমার মতো  অনেকে ই গর্বিত  আমরা স্কুল টিচার  তাই।কিন্তু  ছুটি নিতে আমরা চায় না।  
আমরা  অনেক কিছু করতে চাইলে ও সব কিছু  করা যায় না। 
অবশ্য  সবাই  যে এক তা নয়। 
অনেকে ই সুযোগ সন্ধানী হয়তো। 
মুষ্টিমেয় কিছু  শিক্ষক শিক্ষিকার জন্য সমস্ত শিক্ষক কূল আজ কলূষিত।
আজকের দিনে বলতে পারেন আমিও   একজন  ফাঁকিবাজ  দিদিমনি।
 আমি ও  সবার মতো  আরামে বসে বসে  মাইনে নিচ্ছি।
তবু যখন ভোটের ডিউটি পড়ল 
ভীষণ খুশি। সত্যিই  খুশি। জীবনের এই প্রথম  নির্বাচন  ডিউটি। ভীষণ  কষ্ট হয়েছে এত ভোট বাক্স গুলো নিয়ে যেতে। টিফিন  আহার কোনো  রকম সেরে আবার নির্বিঘ্নে ভোট পর্ব সেরে পরের দিন  রাত ১২ টাই  বাড়ি আসা।
তবু আমি গর্বিত।  এমন একটা  দেশের একটা  গুরুত্বপূর্ণ কর্মের একজন  অংশীদার  হতে পেরে।
 ভেবে ও ছিলাম ভোট পর্ব শেষে আবার স্কুল যাবো।
করোনা বিদায় নিয়েছে  নিশ্চয়।   ভাবিনি এমন ভাবে আবার করোনার থাবা আমাদের সমাজকে জীবনকে ধ্বংস করতে চলেছে।
কত কী ভেবেছিলাম।  স্কুলে গিয়েই ওদের শরীর চর্চা  যোগ ব্যায়াম প্রাণায়াম  শেখাব।
আমি নিজে ও শিখছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে  এটা বুঝেছি  সুস্থ ভাবে বাঁচতে  গেলে  সুস্থ শরীর  গড়তে হবে।  সেভাবেই  প্রস্তুতি নিচ্ছি স্কুলের ছেলে মেয়েদের জন্য।  একটু পরিস্থিতি  স্বাভাবিক  হলেই নিশ্চয়  সব করতে পারব।
আমি মনে করি সবার  মনেই এমনই কিছু  চিন্তা ভাবনা  তাদের ছাত্রছাত্রীদের জন্য।
তাই শিক্ষকদের  ওপর  এত অভিযোগ বিদ্রোহ  না করে নিজেরা সচেতন  হোন।
আপনি ও যদি শিক্ষক হতেন এমনই  পরিস্থিতির স্বীকার  হতেন।
সরকারি  আদেশ আইন মেনে চলতে  আমরা বাধ্য। তাই দয়া করে  আগে কীভাবে  করোনার মোকাবিলা  করবেন সেটা ভাবুন। দেখবেন করোনা যত তাড়াতাড়ি  বিদায় নেবে। শিক্ষকরা তত তাড়াতাড়ি  স্কুলে  জয়েন্ট করবে।
 তখন আর এত রাগ থাকবে না। 
 তাই আসুন শিক্ষক জনগন সবাই একত্রিত  হয়ে করোনা সচেতনতা বাড়িয়ে করোনা তাড়ায়। তাহলে  আর বসে বসে মাইনে নিচ্ছি এমন  কথা বলার আর সুযোগই পাবেন না। 
 
========০০০========




মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক