Featured Post
গল্প ।। মনুকালের কথা ।। দীপক পাল
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মনুকালের কথা
দীপক পাল
পুরাণে ৮ হাজার বছরের ঘটনা পাওয়া যায়। মনুর নামে আমাদের মানব বা মানুষ নাম। তার ১ম পুরুষ স্বয়ম্ভর মনু। ৭ম মনু ছিলেন বৈবস্বত। এইরূপ ১৪ জন ছিলেন। এছাড়া আর সব মনুর নাম, স্বরচিষ, উত্তম, তামস, রৈবত, চাক্ষুষ, সাবর্নী, দক্ষ সাবর্নী, ব্রহ্ম সাবর্ণী, ধর্ম সাবর্নি, রুদ্র সাবর্নী, দেবতা সাবর্নী ও ইন্দ্র সাবর্নী।
পৃথু রাজ্যের নামে এই দেশের নাম হয় পৃথিবী। তিনি ছিলেন তামস মন্বনতরে। অর্থাৎ প্রথম মনুর প্রায় হাজার বছর পরে। তার মৃত্যুর দুই পুরুষ পরে অর্থাৎ তৃতীয় মনুর কালে এক বিশ্বব্যাপী মহাপ্লাবন হয়ে সব কিছু ডুবে যায়। প্রায় ১০০০বছর (সঠিক ৯৮৭ বৎসর) পৃথিবী জলমগ্ন থাকে। এর দরুন সিন্ধু সভ্যতা সহ সব মানব সভ্যতা ধ্বংস হয়। ওই সময় দ্রাবিড় দেশের অধিপতি ছিলেন সত্যব্রত। মৎস্যরূপি বিষ্ণু সত্যব্রতর সাথে দেখা করে আসন্ন মহাপ্রলয়ের আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেন এবং কদিন পরে তাকে এক বৃহৎ নৌকা দিয়ে নির্দেশ দেন সমস্ত প্রাণী, ঔষধি গাছ নিয়ে সপ্তর্ষির সঙ্গে এই নৌকায় আরোহণ করতে। এই অন্ধকার যুগের পর পৃথু বংশের একজনের সঙ্গে এক অরণ্যবাসী কন্যার বিবাহ হয় ও তাদের পুত্রের নাম হয় দক্ষ। দক্ষের এক কন্যা অদিতির গর্ভে জন্মেছেন বিবস্বান আর বিবস্বানের পুত্র বৈবস্বত মনু। এক মনুর কাল ৩৫৫ বৎসর। বৈবস্বত মনুর কাল ৩৮১৪ খ্রিষ্ট পূর্বাবদে। তার মানে ৩৯০০ খ্রীষ্ট পূর্বাবদেরও আগে অন্ধকার যুগ হয়েছিল।সেই সময় যারা পর্বতের গুহায় আশ্রয় নিয়ে আত্মরক্ষা করেছিল, বৈদিক যুগের ঋষিরা তাদের দাস বা দস্যু বলে অভিহিত করেছেন।
এশিয়া মহাদেশ মনে হয় জম্বুদ্বীপ নামে অভিহিত হত। এর মধ্যে বর্ষ বিভাগ ছিল। হিমালয়ের উত্তরে পামির অঞ্চলের নাম ইলাবৃত বর্ষ ছিল। এরই মাঝখানে মেরু পর্বতকেই স্বর্গ বলা হত।ভৌগলিকরা এই পামির অঞ্চলকেই পুরাকালের স্বর্গ বলতেন। এই স্থান এখন রাশিয়ার অন্তর্গত। হিমালয়ের দক্ষিণে ছিল হিমবর্ষ। প্রথম মনু সমগ্র জম্বুদীপের রাজা ছিলেন। তার নাতি অগ্নিধ্র তার ৯ ছেলেকে এই জম্বুদ্বীপটি ভাগ করে দেন। নাভি পেয়েছিল হিমবর্ষ। এই নাভির নাতি ভরতের নামেই হিমবর্ষের নাম হয় ভারতবর্ষ। অগ্নিধ্রর আর এক ছেলে ভদ্রার্শ্ব বর্ষ পেয়েছিল। এটা চীন দেশের প্রাচীন নাম। এর অনেক পরে অর্থাৎ বৈবস্বত মনুর কালে বিবস্বান নামে দেবতাদের একজন অন্তরীক্ষে রাজা হয়েছিলেন। গন্ধর্ব ও অপ্সরারা তার রাজ্যেই বাস করত। পরবর্তীকালে একেই আকাশের সূর্য বলা হয়েছে। বৈবস্বত মনুর ছেলে ইক্ষ্বাকু বংশ সূর্যবংশ ও কন্যা ইলা চন্দ্র বংশের জননী। বুধ ও ইলার ছেলে পুরুরবাই চন্দ্র বংশের আদিপুরুষ। এই দুই বংশই এদেশে দীর্ঘকাল রাজত্ব করেছেন অতি সগৌরবে।
বিবস্বান যখন অন্তরীক্ষের রাজা তখন তার ভাই ইন্দ্র স্বর্গের রাজা। স্বর্গ হল ইলাবৃত বর্ষ। অর্থাৎ ভারতের উত্তরে। সুতরাং হিমালয়ের উত্তরাঞ্চল অর্থাৎ তিব্বতই ছিল অন্তরীক্ষ। আবার কৈলাস অঞ্চলের রাজা ছিলেন কুবের। তিনি রুদ্র বা শিবের ভক্ত ছিলেন। অর্থাৎ কুবের রাজা ছিলেন শিবের অধীন। কাশ্মীর অঞ্চল সমেত উত্তর ভারতের বিভিন্ন পার্বত্য অঞ্চল ছিল মনুদের বাসস্থান। সেই সময় ইলাবৃতবর্ষ অতি সমৃদ্ধ স্থান ছিল। পরে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে, নদ- নদী শুকিয়ে তথাকার সভ্যতা লুপ্ত হয়। দেবতাদের ভারতবর্ষে আগমন তাই নিশ্চিত হয়। দেবগন আধুনিক তুরকিস্তান থেকে কাশ্মীরের পথে পাঞ্জাব, পাঞ্জাব থেকে উত্তর বিন্ধ্যাচল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। ইলাবৃতবর্ষ, কাশ্মীর ও বিন্ধত্তর ভারত এবং দক্ষীনাপথ পর্যায়ক্রমে, স্বর্গ, অন্তরীক্ষ মর্ত ও পাতাল নামে পরিচিত। সপ্ত পাতাল ছিল। ভারতীয় পূর্বপুরুষেরা প্রথমে কাশ্মীর অঞ্চলে বা অন্তরীক্ষে এসে বাস করেন। তাই তার অপর নাম পিতৃলোক।
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন