সব কিছু কেমন হঠাৎ বদলে গেল। এই কিছুদিন আগে ও কত ব্যস্ত ছিল এই শহর। এই রাস্তাঘাট। স্কুল কলেজ। থানা আদালত। বাড়ি- ঘর।মন্দির। মসজিদ। গীর্জা। কলকারখানা সর্বত্র ই।
গাড়ির শব্দে পাখির কলরব কানে আসত না। কারখানার ধোঁয়া ধূলোয় তাকান যেত না।গাড়ির তেলের গন্ধে রাস্তায় বের হওয়া অসহ্য হয়ে উঠতো জীবন।
তবু পথ চলায় ছিল জীবন।
স্কুল কলেজে ছেলেমেয়েদের হইচই আর হুল্লোড় লেগেই থাকত। রাস্তায় মোড়ে ছেলেদের আড্ডা। ক্লাব প্রাঙ্গণে কিংবা চায়ের দোকানে বয়স্ক থেকে তরুনদের তাসের আড্ডা, গল্প বেশ জমে থাকতো। বিকাল হলেই খেলার মাঠে ক্রিকেট ফুটবল। সব ঠিকই ছিল।
আর নিজের বাড়িতে ঘুম ভাঙলে, সেখানে ও ব্যস্ততা। ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়ার তাড়া। অফিস যাওয়ার তাড়া। সকাল থেকে ই রান্নাঘরে ছুটোছুটি লেগে যেত।
এখন শুধু ই ব্যস্ত হসপিটালগুলো আর প্রয়োজনীয় কিছু দপ্তর অফিস।
ডাক্তার পুলিশ নার্স সমাজসেবী, সাংবাদিক আর কিছু মানুষ ছাড়া সবাই এখন গৃহবন্দী। যদিও কিছু অশিক্ষিত বা অতিজ্ঞানী ব্যক্তি সরকারি নির্দেশ কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে সর্বত্র। আবার বেশির ভাগ মানুষ ই বোঝে। আমাদের সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার জন্য বাড়িতে ই থাকতে হবে নিরাপদে থাকা।
বর্তমানে সবাই আছি "লকডাউনে"। কথাটার মানে যতটা সম্ভব বাড়িতে থাকা তালা বন্ধ করে। তা আমাদের মানতেই হবে। নইলে আর কোনো উপায় নেই।
কেমন যেন থমকে গেল জীবন।একটা ভয় একটা আতঙ্ক ঘরে বন্দী করে রেখেছে। আমাদের ঘরে আটকে থাকতে বাধ্য করেছে।
একটা অজানা অদৃশ্য শত্রুর হানায় কোটি কোটি মানুষ আজ গৃহ বন্দী। লক্ষ লক্ষ মানুষ সংক্রামিত। হাজার হাজার মানুষ মৃত। সারা বিশ্ব মৃত্যু আতঙ্কে কাঁপছে। ভয়ংকর এক ভাইরাস "করোনা" আমাদের ওপর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আমরা সেই অসুরের বিরুদ্ধে একসাথে লড়ে চলেছি। মা দূর্গা দশ হাতে অস্ত্র নিয়ে অসুরের নিধন করে ছিল। আমরা সম্মুখ সমরে হারাতে পারব না এই অসুর কে। তবু সমস্ত মানব কূলকে এক ভাবনায় মিলিত করে একসাথে শক্তি সঞ্চয় করে, অজানা সেই শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ে যেতে হবে।
সারা বিশ্বে তথা ভারতে চলছে লকডাউন।জানি খুব কষ্ট হচ্ছে বাড়িতে থাকতে। কাজ বন্ধ করে দিন আনি দিন খাওয়া মানুষ গুলো কেমন অসহায় হয়ে পড়েছে। সরকারি সাহায্য কিংবা অন্য কিছু উপায়ে কোনো রকম দিন চলছে তাদের।তবু লক ডাউনে কিছু ভালো দিক ও আছে।
যেমন পরিবেশ দূষণ অনেকটা ই নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। কোথাও নোংরা জমছে না। গাড়ির ধোঁয়া ধূলা অনেক কমে গেছে। আগে মানুষ যত্রতত্র থুতু, পানের পিচ ফেলে, রাস্তাঘাট, হসপিটাল নোংরা করত। হাত ধুয়ে খাওয়া, মুখে চোখে হাত না দেওয়া সব ই জানি।কিন্তু ক,জন সেভাবে মেনে চলত? বলতে পারবেন? অনেক কিছু ই অসর্তকভাবে কাজ করতাম। এখন অনেক বেশি সচেতন হয়েছে মানুষ।
পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে থাকতে শিখেছে। হাল্কা ঘরোয়া রান্না খেতে শিখেছে।
এগুলোর খুব দরকার ছিল। অনেক পরিবারে স্বামী -স্ত্রীর দেখায় হতো না। সপ্তাহের পর সপ্তাহ। কাজের চাপ কিংবা কর্মসূত্রে দূর দেশে থাকার জন্য একসাথে থাকার সুযোগ হয় নি। আজ পরিবারের সকল মানুষ একসাথে। নিজ নিজ কাজে হাত লাগিয়েছে স্ত্রীর সাথে।
বাড়ির ছোটোরা অবশ্য টিভি কার্টুন ফোনে গেম খেলতে খেলতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। বাইরে যাওয়ার জন্য ব্যকুল হয়ে উঠেছে। মানষিক অবসাদ গ্রাস করছে। আবার অনেক পরিবারে অশান্তি ও হচ্ছে স্বামী স্ত্রীর সাথে। দিন রাত শুধু খাওয়া আর রান্নার হুকুম চালিয়ে যাচ্ছে কেউ কেউ। তবু সব কিছুই মানিয়ে নিয়ে চলতে হবে সবাই কে। নইলে আর পথ নেই।
এই অজানা শত্রুর নাম টা এখন সবার মুখে মুখে। ছোটো থেকে বড়ো সবাই জানি কে সেই শত্রু? "করোনা ভাইরাস"। সর্দি, হাঁচি কাশির মাধ্যমে এক শরীর থেকে আর এক শরীরে বাসা বাঁধে। তারপর জ্বর গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ক্রমশ ঝিমিয়ে যায় শরীর। মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। সবাই যে মারা যায়,তা নয়। বয়স্করা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম,তারাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে ও যাচ্ছে। কিন্তু এত দ্রুত মানুষের শরীর থেকে অন্য শরীরে পৌঁছে যাচ্ছে, যার মোকাবিলা করা সহজ হচ্ছে না। এত উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা, ডাক্তার নার্স প্রয়োজনীয় জিনিস ও নেই। তাই সাবধানতা একমাত্র অবলম্বন। আমরা জিতব ই। করোনার কাছে হার মানব না।
মানুষে মানুষে এত বিভেদ, এত ক্ষমতার লড়াই, ধর্মীয় দলাদলি, নোংরা রাজনীতির মাঝেই আমরা এক হয়েছি করোনার বিরুদ্ধে লড়তে। এক হয়ে বাড়িতে আছি ভালোবেসে নয়। মৃত্যু ভয়ে।
জীবন আর মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি সবাই। প্রতিটি মুহুর্তে একটা ভয় তেড়ে আসছে। জানি না কি অপেক্ষা করছে ? আমাদের কার জন্য? তবু আমরা তো মানুষ। আমাদের জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত লড়তে হবে। লড়তে ভয় পাই না।
কিন্তু এলড়াই সম্মুখ যুদ্ধ নয়। এ লড়াই এ জিততে হলে ঘরে থাকতে হবে। সামাজিক দুরুত্ব বজায় রাখতে হবে। সরকারের নির্দেশ মতো লকডাউনকে ই মেনে চলতে হবে। কোনো ভাবে ই অবহেলা , অমান্য করা চলবে না।
আমরা জানতেই পারছি না কখন কোন মুহুর্তে আমাদের শরীরে ঢুকে শরীর টাকে ঝাঁঝরা করে দেবে।
চীন ইউরোপ আমেরিকা ইতালির মতো শক্তিশালী দেশে ও আজ মৃত্যুর মিছিল চলছে। কোনো ভাবেই আমরা প্রতিহত করতে পারছি না।
প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে বাজারে বের হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। আমাদের পুলিশ কর্মী ভাইয়েরা কিছু সমাজসেবক বন্ধু রা কত ভাবে সবাই কে বাড়িতে থাকার অনুরোধ করছে। তবু চলেছে জনসমাগম। বাজারে বাজারে,পাড়ায় ক্লাবে মাঠে। কিন্তু কেন এত অবুঝ মানুষ? এক দল সমাজসেবক মানুষ ডাক্তার নার্স, সাফাই কর্মী দিনরাত মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে সমাজের মানুষের জন্য সেবা করে চলেছে। আর আমরা কিছু জন মজা করছি। এখনো যদি না সচেতন হই। আর কবে হবো? মানুষের জন্য কিছু না ভাবি,আর কবে ভাবব?
আসুন না সবাই মিলে আবার একটা সুন্দর সুস্থ সমাজ গড়ে তুলি। সমস্ত সরকারি নির্দেশ মেনে চললে যদি ভালো থাকি,তাহলে মানতে ক্ষতি কি?
আজ সমস্ত কাজ ব্যস্ততা ভুলে ঘরে আটকে থাকতে হচ্ছে। সুস্থ থাকার জন্য। কঠিন সময়ের মধ্যে চলেছি আমরা।
এই সুযোগে কিছু অসাধু লোক চড়া দামে প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র বিক্রি করে চলেছে। বাজারে আসছে নানারকম মাস্ক। যা স্বাস্থ্য সম্মত কিনা না জেনে ই কিনে ফেলছে কিছু মানুষ। যা আরও বেশি ক্ষতিকর। পাড়ায় পাড়ায় দান করা হচ্ছে। খুব ই ভালো। কিন্তু সত্যি ই কি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দেওয়া হচ্ছে? নাকি নিজেদের প্রচারের জন্য ক্যামেরাবন্দী করছি দান ক্রিয়া? সব ই সম্ভব। যত দিন এগিয়ে আসছে,ততই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
আমাদের ভালো ভাবে বাঁচতে হলে সমস্ত নির্দেশ মেনে থাকলে একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।
আবার পৃথিবী স্বাভাবিক হবে। চালু হবে স্কুল কলেজ কারখানা অফিস আর সব কিছু। আবার চলবে আড্ডা। আমরা ভালো থাকব৷ হাসব। খেলব। সব কিছু স্বাভাবিক হবে। একটু শুধু সময়ের অপেক্ষা। ভালো থাকব।সবাই আবার হাসব। কবি সাহিত্যিকরা লিখে চলেছে মনের ইচ্ছে মতো । মানুষকে সচেতন করতে গান গায়ছে বাড়িতে থেকে ই গায়ক- গায়িকা। নায়ক নায়িকারা দেশের সমস্ত শ্রেনীর মানুষ আজ এক শক্তি হয়ে লড়ছি। আমরা জিতব ই। আমরা জয় করব ই। সবাই ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। বাড়িতে ই থাকুন। পৃথিবী আবার শান্ত হবে।
===================
অঞ্জনা গোড়িয়া
গ্রাম-ভগবানপুর
পোস্ট- দিঘির পাড় বাজার
থানা- ফলতা
জেলা-২৪ পরগণা( দক্ষিন)
পিন-৭৪৩৫০৩