কবিতাগুচ্ছ : কুমারেশ তেওয়ারী - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

Tuesday, April 14, 2020

কবিতাগুচ্ছ : কুমারেশ তেওয়ারী





 

 

 

 

 

লকডাউন ৮


যেহেতু গরমকাল আগুনের পাশে বসে 
সেঁকে নেবো তাপ 
তার তো উপায় নেই কোনো
এখন রুদ্রবীণার তার
এমনই অশান্ত হয়ে আছে
আঙুলের ছোঁওয়ার আর, প্রয়োজন নেই
এমনিই বেজে চলে ঝনঝন করে

শীতকাল হলে তাপ নিতে নিতে 
কিছুটা সময় কেটে যেত
সরীসৃপ রক্তের ভেতরে জেগে উঠতো 
বিপুল প্রণয় আর সঞ্চালন কথা

এখন তো দেহ এমনই গরম হয়ে আছে 
মানুষের কাছে যেতে ভয় হয়
এখন নিঃশ্বাসে শুধু বিষের প্রণয়
কীজানি ভেতরে যদি গোপন লুকিয়ে তার বীজ 
কাছে গেলে যদি গলে যায় নারীটির ঠোঁট?
নিঃশ্বাসের বিষবাষ্প জমে ওঠে সন্তানের মুখে?
আপাতত স্তব্ধ আছি জটিল কুটিল এক
                                           মারণ অসুখে
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

লকডাউন ৯ 


লঝঝড় চেয়ারে বসে নিজেকে দোলাতে চাইছি খুব
অথচ দুলছে না কিছুই, না শরীর না মনের পরাগ দোতারা

দুলবে কীভাবে! ছন্দ হারিয়ে ছেঁড়া ঠোঙা হয়ে আছি
স্টীলের কোমর জং লেগে হেজে-মজে গেছে 
শুধু এক শব্দহীন বিস্ফোরণ শরীরের শিরায় শিরায়

দূরে হনুমান মন্দিরে বাঁশের ডগায় কারা বেঁধেছে পতাকা
হাওয়া দিলে ওড়ে, উঁকি মারে 
সংকটমোচকের ভয়ার্ত মুখের ছবি পলায়নকাঙ্খি দুটি চোখ

হাওয়া থেমে গেলে ঝুলে পড়ে পতাকার মুখ 
যেন মাধ্যাকর্ষণ মেখে শুয়ে থাকতে চায় মাটির ভেতর

ছোটো ঘাসজমিতে একটি বাছুর 
মা-র থন থেকে চুষে খায় দুধ 
খরখরে জিভে মা তার শরীর থেকে চেটে তোলে পরজীবী 
তাদের অসুখ নেই কোনো

আনন্দ বৈখরি ভুলে সান্ধ্যভাষা মুখে এঁটে 
মানুষেরা শুধু, দম দেওয়া পুতুলের মতো 
নড়েচড়ে ঘরের ভেতর

পৃথিবীর সমস্ত অসুখ আজ কিনেছে মানুষ
সুষেণ বৈদ্যের মতো কে এমন আছে 
ভয়ের ভেতর থেকে বের করে আনে সব দিলখুশ
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

লকডাউন ১০


অন্ধ ঘরে বসে আছি, অন্ধ গ্রাম, অন্ধ শহরে নগরে 
কেউ আজ চক্ষুষ্মান নেই, চোখের কোটরে অন্ধকার 
তবু কতো উৎসব ফোটে গ্লোবের ভেতরে
অস্ফুট গুঞ্জনধ্বনি জন্ম দেয় মহাবিস্ফোরণ 
যা ছিল শোকের গাথা স্তব্ধ হয় আহত লজ্জায়

অন্ধ মানুষেরা মেধা ও প্রতিভা নিয়ে 
মৃত্যুর অতল গর্ভে নেমে ব্যর্থ উল্লাসের বীজ পুঁতে আসে 
বীজ ফেটে অঙ্কুর বেরোলে তার প্রবল খিদের টানে 
খেয়ে ফেলবে মানুষের গন্ধ-রূপ-রস 
এসব মানুষ জানে তবু তারা জাদুপৃষ্ট 
কার্নিসে কার্নিসে আশ্চর্য সাজিয়ে রাখে 
নিজেদের আত্মহত্যা কত

অলীক আরোগ্য পাবে বলে 
ফানুসে ফানুসে ঢেকে দেয় আকাশের মুখ
অথচ ফানুস পুড়ে নেমে আসে মাটির উপর 
মৃত্যু পড়ে থাকে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকা জুঁই গাছটির পাশে

শূন্যতার নিষ্ফল ভেতরে এভাবে কি ওড়া যায়, হায় 
মানুষ এসবই জানে তবু 
মূর্খতার ভেতরে নেমে কত মূর্খ পুড়ে যায়