google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re দুটি গদ্য : নন্দিনী পাল - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২০

দুটি গদ্য : নন্দিনী পাল





ওরা ভালো আছে


আজ ওরা এসেছিল । আমার সাথে দেখা করতে। দরজার সামনে উঁকি মেরে চলে গেছে । ওদেরও সহবৎ আছে। অন্যের ঘরে যে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে নেই ওরা সেটা জানে। ওরা জানে ওদের চৌহদ্দি। ওরা রোজ আমাকে দূর থেকে দেখত। কাছে আসার সাহস করত না। আমি যে কতবার ওদের গৃহহীন করেছি। আমার নিষ্ঠুর পদাঘাতে নষ্ট হয়েছে ওদের রাতের ঘুম। আমার ভয়ে ওরা লুকিয়েছে। তবু আমি পিছু ছাড়িনি। আমার লোভ আর অহংকারের আস্ফালনে জল স্থল অন্তরীক্ষ গ্রাস করেছি। ওরা শুধু দেখেছে দূর থেকে। কোনদিন প্রতিবাদ করেনি। রাস্তায় মিছিল বের করেনি। স্লোগান লিখে গলা ফাটিয়ে পথ অবরোধ করেনি। ওদের অধিকারের জন্য কোনো কমিশন বসেনি। মুখ বুজে সহ্য করে গেছে, কখনো জেহাদ করেনি। কখনো চীৎকার করে বলেনি, এই মাটি,জল,পাহাড়,নদী,বন,জঙ্গল,সমুদ্র এগুলো আমাদের ঘর। এগুলো নষ্ট কোরো না। আর আমরা ওদের দূর্বল ভেবে দিনের পর দিন অত্যাচার করেছি। নিজের স্বার্থে পৃথিবী থেকে নিঃশ্চিহ্ন করতে দ্বিধা বোধ করিনি বিন্দুমাত্র। আমি যে শ্রেষ্ঠ, স্রষ্টার বরপুত্র। আমার বুদ্ধির ধার,বাহুর বল সে তো দূর্বলকে সংহার করতেই বদ্ধ পরিকর।
  আর আজ আমি, সেই শক্তিমান -ঘরে বসে আছি, প্রাণ বাঁচাবার জন্য। কি নিদারুন অসহায়।  ওরা ভেবেছে আমি কি অসুস্থ, নাকি দূরে কোথাও চলে গেছি। ওরা জানে না আমি আসলে ভয় পেয়ে ঘাপটি মেরে বসে আছি। ওরা যদি জানতে পারত খুব অবাক হত। ভয় সেও আবার আমি। আমার জানলার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ওই বনের হরিণ, জলের নীল তিমি, আকাশে উড়ে যাওয়া ঐ পরিযায়ী পাখিদের দল। ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিকে। চোখে এক শূন্যতা, বিষন্নতা আর আতঙ্কের ছায়া। এ দৃষ্টি ওদের চেনা। জানলার পাশ দিয়ে হাত নেড়ে বলে গেছে ভালো থেকো। ঠোঁটের কোন দুটো কেঁপেছে তবু বলা হয়ে ওঠেনি তোরা ভাল আছিস জানি, আমি ভালো নেই বলেই তোরা ভাল আছিস।     


    টানেলের ওপাশে




একটা টানেলের মধ্যে বসে আছি ঘাপটি মেরে। না না ভুল করছেন বাইরে কোন যুদ্ধ বিমান হানা দেয়নি। কেউ পরমাণু বোমাও ফেলে নি। আমি লুকিয়ে আছি এখানে সাত দিন ধরে। টানেলের একদিকে আমার সুখস্মৃতি তার রামধনু রং নিয়ে আমার চোখে মাখিয়ে দিতে চায়, তবুও সেদিকে ফেরার উপায় নেই আমার। একমুখী এই টানেলে আমি চাইলেও ফিরতে পারব না আমার অতীতে। শুধু চোখ বুজে তাকে অনুভব করতে পারি। আর টানেলের উল্টোদিকে যেদিকে আমি যেতে পারি সেদিকে মৃত্যু ওৎ পেতে বসে আছে। যে মৃত্যুকে আমি চিনি। সে যে আমার জীবনের একমাএ লক্ষ্য এই সত্যকে তাচ্ছিল্য করেছি এতকাল। তাকে ঠেকিয়ে রাখার কত আয়োজন করেছি। আজ সেই মায়াবী মৃত্যুই এত ক্ষুদ্ররূপে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে যে তাকে দেখতে চাইলেও আমি দেখতে পারছি না, ধরতে চাইলেও ধরতে পারছি না। বৃহতের উপাসনায় এতদিন মাতাল হয়েছি। ছুঁয়েছি দূর দূর নক্ষএের আলো। সমস্ত পৃথিবীর পুঙ্খানুপুঙ্খ দখলের নেশায় নিজেকেও ভুলেছি। ভুলেছি এ শরীর ক্ষুদ্র থেকেও ক্ষুদ্রতর। সমস্ত বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের প্রভু হতে গিয়ে জানতে বাকি রয়ে গেছে নিজেকেই। এত শক্তিমান আমি, অথচ আজ কি অসহায়। সেই কেন্নোটার মতই যে মৃত্যু দেখলে নিজেকে আঁকড়ে ধরে বসে থাকে। ঠিক সেই রকমই, নিজেকে আঁকড়ে ধরে বসে আছি। আমার সমস্ত অহঙ্কার অভিমানকে চূর্ণ করে সেই মৃত্যু শয়নে স্বপনে আমাকে পিছুতাড়া করছে।
আমার সমস্ত ক্ষেপনাস্ত্র, মিসাইল, পরমাণু বোমা আমার ঘরে বিছানার পাশে জড়ো করা। তবুও আমি ঘুমোতে পারছি না।  

================

Mrs. Nandini Pal
D40
CEERI Colony, PILANI -333 031.
Rajasthan (INDIA).
Email: nandinipal1975@rediffmail.com