আস্তাকুড়ে রাত্রি
কলকাতার ফুতপাথ। ভবঘুরে দিন। আস্তাকুড়ে রাত। বাঁকে বাঁকে চোরগলি। সেই কবে সুড়ুৎ করে ঢুকে পড়েছিলাম। মনে নেই। হারিয়ে ফেলা মস্তিষ্কের খোঁজ না পেয়ে ধাক্কা খেতে খেতে এখন আমি উচ্ছিষ্টে খুশি। সঞ্চয় বলতে কদর্যগাথা। কর্দমাক্ত পথে পা ডুবিয়ে আবার পথ চলা। সত্যিই অন্যস্বাদ। এ স্বাদের ভাগ হয় না।
পায়ে পায়ে রাত্রি মাড়ানো। অন্ধকার ক্রমে আরও গভীর। ব্রিজের তলা এখন নিবিড়তম ঘুমের আলিঙ্গনে। চাইলে দাম্পত্য সুখ আর কি। এখানে দ্যাখার কেউ নেই। দ্যাখানোরও কিছু নেই। ভুসভাস কয়েকটা কালো ইঁদুর এফোঁড় ওফোঁড় পর্বটি চালিয়ে যাচ্ছে সারারাত ধরে। কলকাতা রাতের শেষ ভাতঘুমে।
এইসব দ্যাখা আমার কাজ কি না।
দেখাতে ব্যাঘাত ঘটায়। দু একটা ট্যাক্সি। হুসহাস ছুটে মরে। এদিক দিয়ে ওদিক। ট্রাফিক সিগন্যালের বালাই নেই। হলুদ জ্বলছে তো জ্বলেই রয়েছে। সবুজ তো সবুজই। লাল সিগন্যাল উঠিয়ে নিয়েছে রাত্রি।
আমার খুব কাছে। প্রায় সামনের চাকা পায়ে উঠিয়ে দেবে এমন ভাবে একটি ট্যাক্সি এসে থামে। দু মিনিট বাদে ভেতর থেকেই একজন কি যেন ইশারা করল। ঠিক বুঝলাম না। এখন আবার ইঙ্গিত রপ্ত করব না কি? পাগল!
সত্যি বলতে কি, আমার কেন জানি মনে হল---যা গন্তব্য ভুলে গেছি।
কতটা হাঁটলাম? কী জানি! মাঝরাতে আবার হিসেব কেন। তারচেয়ে পথকুকুরের সাথে বরং খানিক পথ হাঁটি। হাঁটতে হাঁটতে এগোই। ওবেলা মেলা কাজ। কাজ হল ঘুমনো। হাঁটছি। আস্তাকুড়ে বরাবর। ওখানে যত কাক। কাকেদের জটলা। মহাভোজ পর্ব। খেয়োখেয়ি প্রতিযোগিতা কি না। সকাল হলে কর্পোরেশন এর গাড়ি। এইবেলা গোটা দশ কুকুরও। জমিয়ে খাচ্ছে। তারিয়ে তারিয়ে খাচ্ছে। পেছনের ঠ্যাং তুলে ব্যাটা ওই খাবারে পেচ্ছাপ করছে। তারপর ঠিক মলত্যাগ করবে। অবাক হচ্ছি। যে কুকুরটি আমার পায়ের কাছে শুয়ে থাকত, সেও এখন মহাভোজে।
কাকেদের জটলা। খা খা খা। বিয়েবাড়ি খা। শ্রাদ্ধবাড়ি খা। বড়লোকের পার্টি খা।
আমার মতো কেউ একজন গান গাইতে গাইতে আসছিল। চেনাগলা। চেনাগান। মনে পড়েছে। সাঁঘাত। তারপর সেই গলিতে। হারাল না মারাল কেজানে!
বস্তাভেবে তাকে মাড়িয়ে বুঝলাম, নরম কিছু। -ও চাঁদু! চাঁদ রাতে অন্ধ হয়ে হাঁটছ? তার চেয়ে এসো। এই বস্তায় ঢুকে পড়ো। দোসর হয়ে দিব্বি...।
এ মেয়েমানুষের গালি না আমন্ত্রণ? বস্তার ভেতর সেঁধিয়ে ওর শরীরের ওম নিতে নিতে মনে হল এ আমার চেয়েও হাড়গিলে। মাংস কোথায়।
--কি গো, কেমন লাগল হাড়মাস? এর কি কোনও জবাব হয়। হয়ত হয়। নয়ত না। ওর কানে কানে বলি -সত্যিই অন্যস্বাদ। এ স্বাদের ভাগ হয় না।
ভোরের আজানের শব্দ বুকে ধরে ও এখন গভীর ঘুমে। জেগে রয়েছে ওর পেচ্ছাপ পায়খানার গন্ধ।