১.
লকডাউনের ডায়রী থেকে ১
বন্দী ঘরে আটকে আসে দম
রাস্তাঘাটে মানুষ বেশ কম
জানলা ধারে আকাশ খুলে রাখি
বালিশ বুকে আঁকড়ে ধরে থাকি
ভয়ে কেমন গুটিয়ে আছে মন
ভাল্লাগেনা দেখতে আর ফোন
বইয়ের পাতায় ডুবছে দুটো চোখ
ডুবতে ডুবতে আড়াল করি শোক
হঠাৎ ভালো লাগছে দুপুর রোদ
মায়ের কাছে গল্প শোনার পালা
তখন ঘুম ছিল না যেমন চোখে
সময় আজ ফিরিয়েছে সেই বেলা
দৌড়ে ঘর মাতাচ্ছে শৈশব
চারিদিকেই গমগমে সব রব
একলা নই ঘরের মাঝে আর
সবাই মিলে দেখছি সমাচার
হারিয়ে যাওয়া সেই মশলা মুড়ি
জামবাটিতে একটু আমতেল
সন্ধে হলেই মায়ের হাতে ধুনো
অসময়েই খাচ্ছি কৎবেল
নেইকো দিন নেইকো রাতের ডর
স্মৃতিগুলো পাতার মতো ঝরে
বাঁশবনে ওই চাঁদটি ওঠে যখন
কাজলা দিদির শোলক মনে পড়ে!
মায়ের গলা দশটি পাড়া শোনে
ঘুম আসে না দস্যি নরম চোখে
হাত পাখাতে গরম লাগে ভীষন
অন্ধকারে জাপটে ধরি মাকে।
এখন আবার পড়ছে মনে কথা
বদলে গেছে যদিও সব কিছু
বন্দী ঘরে আমরা এখন একা
সময়গুলো আসছে পিছু পিছু
তোমার কিছু দেওয়ার ছিল যেন
আমার কিছু বলার আছে জানি
জানলা ধারে আকাশ খোলা রাখি
আমরাও তো ঘর বাঁধতে জানি!
২.
লকডাউনের ডায়রী থেকে ২
মনকেমনের বারান্দা ঘিরে কিচমিচ করে গেল দুটো শালিখ।
কখনো দেখিনি এত খুশির মেজাজ। যেন সদ্য স্নানসিক্ত নবদম্পতি।
হাঁ করে তাকিয়ে ছিলাম পাঁচমিনিট। শুনেছিলাম কত গল্প।
ঝুরঝুরে সংসার, খড়কুটো দিন। রোগপালাহীন মখমলে আকাশ। মনে পড়ছিল কিভাবে আমরাও একদিন চেয়েছিলাম এমনই মসৃন সঞ্চয়।
মুখে রোদ এসে লাগল।
ফর্সা হয়ে গেছি বেশ গত কয়েকদিনে।
ছোঁয়াছুঁয়িহীন দুজনের সংসার। সমাজ থেকে বহুদূর, বহুদিন। জ্বরজ্বর ভাব নেই। ক্রমশ ছড়াচ্ছে আতঙ্কের রঙ । চেনা মুখগুলো আড়ালে চলে গেছে বহুদিন, প্রয়োজনে যেভাবে বেড়িয়ে পড়ে সমস্ত মুখোশ!
সারাদিন বন্ধ ঘরে টুকিটাকি। তেলহলুদ, ঝুলকালির পর কত জমা ধুলো। কাচের ফাঁকে বিন্দু বিন্দু জমে থাকা নিঃশ্বাস। তোমার ঘেমো জামা, দেয়ালের হুকে ঝোলানো পাঞ্জাবি। কতদিন দেখিনি এমন করে। খুঁজে খুঁজে বের করিনি কাচব বলে।
জমা জল সরে যাচ্ছে ক্রমশ। কাদা বালি পড়ে আছে মেঝের ওপর। দুজনে হাত লাগিয়েছি। ফুটন্ত ভাতের গন্ধে ভাসছে সারা ঘর।
বারান্দা জুড়ে তখন পাখিদের কলবর। শালিখের কিচিমিচ মাখা নতুন সকাল। বড়ো আহ্লাদে ভরা, সদ্য স্নানসিক্ত নব দম্পতি যখন গুছিয়ে নিচ্ছে আবার একটা ঘর!
৩.
লকডাউনের ডায়রী থেকে ৬
ব্যাগটা কিনেছিলাম ভীষন শখে
আলমারির হাতলে আজ ঝুলে আছে
শরীরে খিদের আগুন
শুকনো ত্রস্ত জিভ আর
ফ্যাকাশে দুর্বোধ্য দুই চোখ।
কিছুই বলার নেই
এরকম কতকি তো টুকিটাকি,
হিসাবের বাইরে পড়েছে আজ।
প্রয়োজন বলতে শুধু চাল ডাল আর একটু প্রোটিন।
কতকি তো আজ অসংগঠিত
যেমন সহস্র শ্রমিক
বুকের ভেতর সন্ধ্যা পাখির ডাক!
যত চালাকই হোই
পৃথিবীর কিচ্ছু এসে যায় না তাতে।
দু চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে আজ,
আমরা আসলে,
অন্ধ টানেলের ভেতর দৌড়ে মরা সেই ইঁদুর
যারা নিরাপদ ভাবছি নিজেদের,
অথচ জানিনা পৃথিবী কাতরাচ্ছে মৃত্যুযন্ত্রণায় !
============================
Sabarna Chatterjee
W/o-Hitangshu Sekhar Das
Mukherjee Apartment-I
Flat No.-3D
2nd Floor
Shalbagan
P.O-Noapara
P.S.-Barasat
Kol-700125
(Near Noapara Primary School)