নারী : চাই চিন্তার ভারসাম্য
আশিস ভট্টাচার্য্য
কলকাতায় এক সাহিত্য অনুষ্ঠান থেকে ফেরার সময় শিয়ালদহ স্টেশনে দেখলাম একটু রানাঘাট লোকাল ট্রেন যেটি সম্পূর্ণ মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত (কেবল তিনটি কামরা পুরুষদের জন্য)। আচমকা মনে পড়লো আনন্দবাজার পত্রিকায় নারী দিবসে নদীয়ার এক কলেজ অধ্যক্ষা কিছু অভিযোগ করেছিলেন তার প্রবন্ধে। যেমন মহিলারা সমকাজে পুরুষের থেকে কম বেতন পান, মহিলা জনপ্রতিনিধিরা অমুকের বউ তমুকের মা বলে পরিচিত এবং মহিলাদের মানবাধিকার থাকতে নেই। তিনি অপেক্ষায় থাকছেন কবে নারী সমাজ 'না' বলা শিখবে!
একজন কলেজ অধ্যক্ষা ভারতের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক পত্রে অভিযোগ করেছেন, যে-অভিযোগ এমন দায়িত্বশীল পদে থেকে মানায় না বরং অতি শিশুশুলভ। মহিলা প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি থেকে আমাদের রাজ্যে যখন দাপুটে মুখ্যমন্ত্রীর দাপটে সারা রাজ্য, দেশ কম্পমান তখন নারী সমাজ সম্পর্কে যে ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন অধ্যক্ষা তা হাস্যকর। ব্যাংক, সরকারি দপ্তর, আদালত টিভি চ্যানেল সর্বত্র।
অসংখ্য নারী বেকার, সে তো অসংখ্য পুরুষও!
কর্মক্ষেত্রের মহিলা সহকর্মীরা বিভিন্ন আবদার করেন আমরা পুরুষরা প্রায় সময় পূরণ করি। অমুকের মা বা তমুকের বউ বলে পরিচিত হন তারাই যাদের নিজস্ব আইডেন্টিটি নেই। কিছুটা আদুরে স্বভাবের জন্য তারা যে কাজ নিজেদের করার কথা সেটা অন্যদের দিয়ে করিয়ে নেন। সিনেমা জগত থেকে খেলার মাঠ সর্বত্র পুরুষ এবং নারী কঠোর পরিশ্রমে সাফল্য অর্জন করেন।
চারটি S অর্থাৎ 'Speed' strength, stamina এবং spirit কে কাজে লাগিয়ে সাফল্য পেতে হয় কোন সংরক্ষণের সুবিধা এখানে নেই। পৃথিবীর সর্বত্রই এটা ঘটে। মহিলারা কেবল ফেসবুক ইত্যাদি সোশ্যাল মিডিয়ায় নয় বাস্তব জীবনে সর্বত্র সর্বক্ষেত্রে নিজেদের সংরক্ষিত, নিজেদের বিশেষ সুবিধা ভোগী এবং আদুরে ভাবতে চান। এটা বাস্তব,সব পুরুষই সব সময় মহিলাদের pampared করতে পারেন না। কোথাও নারী অত্যাচারিত হলেও টাকার উল্টো দিকটা ঠিকমতো আলোচিত হয় না। মহিলাদের অনেকেই মিথ্যা বধূ নির্যাতনের মামলায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে পুরুষদের (অনেক ক্ষেত্রে মহিলাদেরও) ফাঁসিয়ে দিয়ে দন্ড ভোগ করতে বাধ্য করেন। ইচ্ছা না থাকলে সংসার ভেঙে বারবার নতুন সংসার পেতেছেন অনেক অভিনেত্রী।
নারী কি কখনো নিজেকে বাবা-মায়ের আদুরে সন্তান না ভেবে পুরুষের সমকক্ষ, পুরুষের মতো দায়িত্বশীল, পুরুষের মত নির্ভিমান, স্বাবলম্বী হতে পারেন না?
নারী যদি পুরুষের মতো সমাজ ও পরিবারের একজন সৈনিক বলে নিজেকে ভাবতে এসেছে তাহলে পুরুষ ও নারীর দ্বন্দ্ব (যা বাস্তবে পাগলামি) কমে আসবে।
মহিলারা যে কোন ইস্যুতে যে কোন মুহূর্তে না বলতে শিখলে সংসার, সমাজ, রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে ভারসাম্যর অভাব তৈরি হবে। নারী এবং পুরুষের সমন্বিত মনন এবং পরিশ্রমে মানুষ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব। নারী সর্বত্র নিজেকে পুরুষ বিদ্বেষী ভাবলে মানুষ আগামী দিনে সংসার বিচ্ছিন্ন প্রাণীতে পরিণত হবে।
=============
আশিস ভট্টাচার্য্য
রামকানাই গোস্বামী রোড, শান্তিপুর, নদিয়া-৭৪১৪০৪
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন