দুঃসাহসিক
শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়
অনেকে ফোনেই নানা রকম বিদঘুটে প্রস্তাব রাখে – বোল্ড দৃশ্য, বোল্ড পোষাক এবং প্রযোজক ও পরিচালকের সঙ্গে বোল্ড সম্পর্ক। কত রকম টোপ। আনকরা নতুন মুখকেও লাখ লাখ টাকা দেওয়া হবে যদি সংস্কার ত্যাগ করে তারা দুঃসাহসী হয়। কেউ বা রাত পোষাক দিয়ে কথা শুরু করে ক্রমশ ডিজাইনার অন্তর্বাস, অর্ধনগ্নতা ও শেষে প্রায় পুরোপুরি উন্মোচনের দাবি জানায়। অডিশন ফি ও ওয়ার্কশপের নামে টাকা ঢালতে না চাইলে সাহসী হতেই হবে। তবে নতুন স্বপ্নসন্ধানীরা টাকা ও সাহসিকতা দুটোই বিনিয়োগে প্রস্তুত থাকবে, সেটাই প্রত্যাশিত। এই বিজ্ঞাপণটা দেখে নিজের ছবি ইমেইলে পাঠিয়ে অনেকেই অডিশনের ডাক পেয়েছে সাহসিকতার সীমা কদ্দুর সে প্রশ্নের সম্মুখীন না হয়েই।
অডিশনের বদলে সাক্ষাৎকার নেওয়া হল। এখানেও দুঃসাহসিকতার জয়। অভিনেত্রী ও মডেল হিসাবে মরিয়া কিছু তরুণী জানে তাদের প্রতিভা ও সৌন্দর্যের কদর পেতে হলে বোল্ডনেস দেখাতেই হবে। চেহারায় তেমন চেকনাই নেই, তেমন কয়েকজন সাহস দেখাতে রাজি হলেও পরে যোগাযোগ করা হবে শুনে হতাশ মুখে ফিরছে। তাদের জন্য হয়তো আরও রগরগে প্রস্তাব আসবে।
পরীক্ষায় ডাঁহা ফেল প্রার্থীর সংখ্যাও কম নয়। তাদের মধ্যে এক কুর্তি সালোয়ার পরা সুন্দরী গজ্গজ্ করছে, “আগে-ভাগে ফোনেই বলে দিতে পারত কী দরকার। এখানে ধকল খরচ করে এসে যদি এইসব উল্টোপাল্টা কথা শুনতে হয়। যাদের উদাহরণ দিচ্ছে তারা আগে অভিনেত্রী হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে। ‘দাম’ করে দুঃসাহসী হয়নি। রাজি নই জেনেও কেবল ইনসিস্ট করে যাচ্ছিল!”
হঠাৎ শোরগোল শোনা গেল; পাশের ফ্ল্যাটের চার তলায় আগুন। একটা কোচিং সেন্টারে কতগুলো বাচ্চা আটকে পড়েছে। শিক্ষিকারা জানলা দিয়ে মখ বাড়িয়ে চিৎকার করে সাহায্য চাইছে। সিঁড়ির পথ বেকার, কারণ আগুটা দরজার কাছেই মেইন সুইচে লেগেছে। কুর্তি-সালোয়ার খানিকক্ষণ ওপরের দিকে তাকিয়ে নিজের ওড়নাটা ফেলে জলের পাইপ বেয়ে ওপরে উঠতে লাগল। মাঝে মাঝে জানলার ছারজা আর ব্যালকনির গ্রিল ধরে বিপজ্জনক ভাবে পৌঁছে গেল ধুঁয়ো বেরোনো জানলায়। চীৎকার করে সাহায্য চাইল। কয়েজন যুবক কোথা থেকে মই যোগাড় করে আনল। অডিশনে বাতিল মেয়েটি জানলা দিয়ে একের পর এক শিশুদের বার করে মইবাহীদের হাতে দিতে লাগল। বাকি বাতিলদের কেউ কেউ তাদের ধরে নিল। দিদিমণিরাও শেষ পর্যন্ত রক্ষা পেলেন যদিও তাঁরা তাপে ঝলসে আর ধোঁয়ায় গুরুতর অসুস্থ। পাড়ার ছেলেরা ও বাতিল মেয়েগুলির দল হাসপাতালে নিয়ে চলল কুচোকাচা ও দিদিমণিদের। টঙে চড়ে বসা মেয়েটাও ধুঁয়োর জ্বালায় চোখ নাক মুছতে মুছতে কোনওক্রমে নেমে বলল, “ভাগ্যিস সিন্থেটিক শাড়িটার বদলে সূতীর সালোয়ার-কামিজ পরে এসেছি।”
পাশের ফ্ল্যাটে তখনও সাহসিকতার পরীক্ষা দেওয়া নেওয়া চলেছে।
------------------------------------------------------------------------------------------------
Sriparna Bandyopadhyay
Flat 3A, Jagadish Apartment, 26 J. K.
Chatterjee Road
Sodepur, Kolkata 700110
Fantastic story... Sriparna is undoubtedly one of the best micro stories writer ....
উত্তরমুছুন