বিপন্নতা
তনিমা হাজরা
সোহিনী আমার বন্ধু অভিরূপ এর ছয় বছরের মেয়ে। আজ দেখা করতে এলাম অভিরূপের বাড়িতে। গত পরশু দেশে ফিরেছি উইন্টার ভেকেসানে। থাকব একমাস।
প্রতিবছরই এই সময়টায় দেশে আসি। আমার স্ত্রী রুষা মারা যাবার পর ছেলের আমার আমার দুইবন্ধুর বেশ বাউণ্ডুলে নির্লিপ্ত সংসার। আমার শিক্ষকতা, দুজনের পড়াশোনা আর বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ নিয়ে দিব্যি আছি। এবার দেশে এসে ঋজুকে নিয়ে রাজস্থানটা ঘোরার প্ল্যান। ইতিহাসে ওর খুব আগ্রহ।
অভিরূপ আর মিলি দুজনেই আমার কলেজ ফ্রেন্ড। ওদের লেট ম্যারেজ। তাই ওর মেয়ে আমার ছেলের থেকে বেশ অনেকটাই ছোট।
প্রাথমিক চা-পানের পর সোহিনীকে আদর করে ডেকে পাশে বসাই। মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞাসা করি, তাপ্পর কুইন, কেমন চলছে তোমার স্কুল, পড়াশোনা?
ব্যাগ থেকে চকোলেটের বাক্সটা বের করে ওর হাতে দিই। চকিতে চকোলেটের বাক্সটা দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আর্তনাদ করে ওঠে ছয় বছরের শিশুটি।
আমাদের সবাইকে বিস্ময়ে হতবাক করে দিয়ে, নিজের প্যান্ট টেনে খুলে ফেলে সবার সামনে।
নিজের যৌনাঙ্গ সবাইকে দেখিয়ে বলে, আমার চকোলেট চাই না কাকুমণি। এই দেখো কি দেখবে। তুমি শুধু আঙ্গুল, পেন্সিল বা ছুঁচ ঢুকিয়ে ব্যথা দিও না আমায়। খুব খুব লাগে।
সারা ঘরে শ্মশানের স্তব্ধতা। ওকে উঠে গিয়ে বাধা দেবার জোর ও নেই বোধ হয় মিলির হাতে পায়ে। একটি ছয় বছরের শিশুকে কোন খাদের কিনারায় নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়েছে আমাদের সমাজ।
অভিরূপ স্তব্ধতা ভাঙ্গে। বলে, চারিদিকে যা সব সাংঘাতিক ঘটনা ঘটছে, মেয়েটার ওপর যে এভাবে এফেক্ট হয়েছে বুঝতেই পারিনি রে।
মিলি ছলছল চোখে এগিয়ে এসে সোহিনীর প্যান্টটা পরিয়ে দেয়। ওকে কোলে নিয়ে পাশের ঘরে চলে যায়।
এবার মুখ খোলে আমার আঠেরো বছরের ছেলে ঋজু।
বেশ দৃঢ় এবং দৃপ্ত কন্ঠে বলে, মনে হচ্ছে এসব নতুন শুনছ তোমরা, বাবার কাছেই তো শুনেছি আগেকার দিনে তোমাদের ইন্ডিয়ায় সব চার- পাঁচ বছরের মেয়েদের সাথে বুড়ো বুড়ো লোকেদের বিয়ে দেওয়া হত। তা সেইসব হাসবেন্ডরা ওদের ওয়াইফদের শরীর ভোগ করতো না? শিশু বলে কি হাতে মোয়া দিয়ে ছেড়ে দিতো? সেটা অবশ্য তোমাদের মতে লিগ্যাল। কারণ বিয়ে হয়ে গেলেই একটি মেয়ের শরীরের ওপর তার স্বামীর দাবী ন্যায়ত। আর অন্য কাউকে নারী টি যদি ভালবেসে শরীর দেয় তখন তোমরা তার গায়ে থুতু দেবার জন্য রেডি হয়ে বসে আছো।
আসলে কি জানো তো, এইসব চাইল্ড এ্যাবিউস ট্যাবিউস চিরকাল ছিল, এসব নতুন কিছু জিনিস নয়, এতদিন ওদের গলার সাউন্ডটা মিউট করা ছিল, এখন শুধু ওদের গলার আওয়াজটা শোনা যাচ্ছে।।
এই চিৎকার, এই সম্মিলিত গর্জন একদিন ঠিক দুর্বৃত্তদের ধংসের পরোয়ানা লিখবে।।।।
===========================================
আমার ঠিকানা
Tanima Hazra
Golepark co-op housing society ltd
Flat no -4-g-b2,
49b gobindapur rd
kolkata-45
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন