google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re তুষার সেনগুপ্ত - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

বৃহস্পতিবার, ৮ মার্চ, ২০১৮

তুষার সেনগুপ্ত

উইমেন পাওয়ার

তুষার সেনগুপ্ত


আজকাল  যেকোনো  ক্ষেত্রেই  মেয়েদের  এগিয়ে  যেতে  দেখলে  কেমন  যেন  ভেতর  থেকে  একটা  অন্যরকম ভালোলাগা   অনুভব  করে  সৌম্য ।  সেদিন  মৌমিতার  মুখে  যখন ওপরের  ফ্ল্যাটের  শুভময় বাবুর  ছোট  মেয়ের   বোর্ড  এক্সামে  টপার  হওয়ার  খবরটা  শুনল  নিজের  অজান্তেই  ওর  চোখ  চলে  গেল  ডিভানে  ঘুমন্ত  ছোট্ট  ঝিলিকের  দিকে ।  বছর তিনেকের    ঝিলিক  সবে  প্লেস্কুলে  যাচ্ছে ।  ওকে  নিয়ে  মৌমিতার   এখন থেকেই  অনেক  স্বপ্ন ।  মৌমিতার ও  ইচ্ছে  ছিল  গ্রাজুয়েশনের   পর  মাস্টার্সটাও  করবে ।  স্কুলে  পড়ানোর   ইচ্ছেটা  ওর  ছোটবেলা  থেকেই ।  কিন্তু  কলেজে   পড়তে  পড়তেই  বড়  জ্যেঠু  মারফত  সম্বন্ধটা  এসে  গেল ।  ফাইনাল  সেমেষ্টারের   পরেই  ছাদনাতলায় ।  মেধাবী  ছাত্র  সৌম্য । ক্যাম্পাস  ইন্টারভ্যুতেই  বছরে  আট  লাখের  চাকরি ।  মৌমিতার  বাবা  অবনীবাবু  তাই  আর  দেরি  করতে  চাননি ।  ছেলের  বাড়ির  দাবিদাওয়া   যদিও  একটু  বেশিই  ছিল ।  কিন্তু অবনীবাবুরও   তো আর পয়সার  অভাব  নেই ।  কাস্টমসের  চাকরিতে   পয়সা  কামিয়েছেন   দু'হাতে ।  একমাত্র মেয়ের  বিয়েতে  দশ-বারো  ভরির  গহনা  দেবেন  ভেবেই  রেখেছিলেন    ডিভান , হোম  থিয়েটার  আর  অন্তত:  একটা  অল্টোর  কথাও  ভাবা  ছিল ।  কিন্তু  ক্যাশ  পাঁচ লাখটা  শেষ  পর্যন্ত  একটু  চাপ  হয়ে  গেছিল ।  যাই  হোক, অবনীবাবু   ভেবে  দেখলেন  ছেলেকে  মানুষ  করতে  বেয়াই  মশাইয়ের  মেলা  পয়সা  খসেছে ।  দুধেল  গাই ,  মানে  ওই উচ্চ  বেতনের  ছেলের  বাপের   এটুকু  দাবী  মেনে  নেওয়াই  যায় ।  সুতরাং  লেন-দেনের  হিসেব  মিলে  যেতেই  চার হাত  এক ।  

কলেজ  লাইফ  থেকেই  সৌম্য  খেলা  পাগল ।  আরও  পরিষ্কার   করে  বললে   ফুটবল  পাগল ।  রাত  জেগে  ইপিএল  আর  লা-লিগা র  খেলা  দেখাটাও  সিগারেটের   মতই  ওর  আরেক  নেশা । এখন  অলিম্পিক   চলছে  একে  একে  অভিনব  বিন্দ্রা  আর  সাইনা  নেহওয়ালে  আশাভঙ্গ  হতে  না  হতেই  নড়েচড়ে   বসল  দীপার  পারফরমেন্সে      কিন্তু সেখানেও  একটুর  জন্যে  হাতছাড়া   পদক ।  মনে  মনে  সৌম্য  যখন  এক  রকম  সিদ্ধান্ত  নিয়েই  ফেলেছে  যে  ও আর  রাত  জেগে  খেলা  দেখে  সময়  নষ্ট  করবে  না,  ঠিক  সেই  মুহূর্তেই  ব্যাটনটা  হাতে  তুলে  নিলো  ভারতের  প্রমীলা  বাহিনী ।  প্রথমেই  নাম  না  জানা  সাকশি  মালিকের   ব্রোঞ্জ  মেডেল  এবং  সেই  রেশ  কাটতে  না  কাটতেই   সিন্ধুর  রূপো    খেলা  পাগল  সৌম্য   ভারতীয়  প্রমীলা  বাহিনীর  সাফল্যে  গর্বিত  হয়ে  ফেসবুকে  হ্যাচট্যাগ   সহযোগে  স্ট্যাটাস   দিল  "#ফিলিং_প্রাউড_উইমেন_পাওয়ার "

সৌম্য  মৌমিতার  ডিনার  শেষ ।  ঝিলিক  ঘুমিয়ে  কাদা ।  বাইরে  অঝোর  ধারায়  বৃষ্টি  পরছে ।  তরলপ্রিয়  পাবলিক  যেটাকে  আবগারি  আর  বর্ষাবিলাসিরা  রোমান্টিক  ওয়েদার  বলে  আজ ওয়েদারটা  ঠিক সেই  রকমই ।  তাছাড়া  আজ  সৌম্যর  মনটাও  খুশিতে  ভরে  আছে ।  মৌমিতা  রোজকার  রুটিন  মতই  ড্রেসিং  টেবিলের   সামনে  টুলে  বসে  মুখে  ক্রীম  ঘষছে ।  সৌম্য  একটু  ঝুঁকে  পেছন  থেকে  মৌমিতাকে  জাপটে   ধরে  ওর  কাঁধে   থুতনিটা  রেখে  রোমান্টিক   স্বরে  বলল ,

- “সিন্ধু  তো  রেডি  এবার  একটা  মেসি-রোনাল্ডো   কিম্বা  নিদেন  পক্ষে  একটা  বাইচুংও   যদি.......”

মুখে   ক্রীম  ঘসতে  ঘসতেই  আয়নায়  সৌম্যর  চোখে  চোখ  রেখে ,  ঠোঁটে  এক  চিলতে  অদ্ভুত  রহস্যময়  হাসি  ঝুলিয়ে  মৌমিতা  উত্তর  দিল ?

"সিন্ধুতে   শুধুই  খরচা ,  বংশ  রক্ষায়  বাইচুং উইমেন  পাওয়ার হ্যাচট্যাগ  "

বলেই  মুখে  ক্রীম  ঘষায়  ব্যস্ত   হয়ে  যায়  মৌমিতা ।  সৌম্য  আবার  টিভিটা  অন  করল ।  খবরের  চ্যানেলে   তখন   প্রধানমন্ত্রী র বাইট - “বেটি  বাঁচাও "  বাইরে  বৃষ্টির  তেজটা  যেন  আরও  বেড়ে  গেল।।
 ----------------------০০০০---------------------
তুষার সেনগুপ্ত
পারাদ্বীপ, ওড়িশা


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন