অনুরূপা পালচৌধুরী - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

Thursday, March 8, 2018

অনুরূপা পালচৌধুরী



অবেলার ঘাসফুলে মহীরুহ প্রস্রবণ

--------------------------------------------------

প্রেম নাকি কাব্য কথা!!প্রেমের স্থান সাহিত্যে।ওসব সাহিত্যের গূঢ় তত্ত্ব;এক কথায় কাব্যরস।যদি প্রেম ছাপার অক্ষর থেকে ঘরের মেঝেতে পা রাখে আর তার নুপূরের আওয়াজ যদি স্বেচ্ছাচারী সুর তোলে তবে সেই অমৃতরস আর সুরধ্বনি একত্রে মিশে সেখানেই শুরু হয় বিষম গোলযোগ।জীবন তো আর সাহিত্যের রঙ্গমঞ্চ নয় যে কবির লেখনীর কায়দায় রাধার কৃষ্ণময় জীবন প্রেমসুধা পানেই তৃপ্ত  হয়ে সংসারসমুদ্রে শুধু ভালবাসায় সিক্ত হবে।পুরুষের ভালবাসা বাপু অনেক কিছুর মূল্যে স্ত্রীলোকের অর্জন করে নিতে হয়। হা কৃষ্ণ!হা কৃষ্ণ! করে উঠানের ধূলায় গড়াগড়ি দিলেই ঘরের কৃষ্ণ বাইরে এসে হাজির হয় না বা হাত ধরে ঘরে তুলে দুঃখমোচন করে না।সেখানে ভালবাসা ঝকঝকে উঠানে নিত্য হাঁটাহাঁটি করে,একদিন ঝাঁট না পড়লেই শুকনো পাতার নীচে চাপা পড়ে ভারি কান্নায় কেঁপে ওঠে।কলপাড়ে পড়ে থাকা এঁটো বাসনে ভালবাসা যখন জলের অভাবে শুকায় তখন নিত্য সাবানজলে ঘষেমেজে জলে ধুঁয়ে তাকে ঘরে তুলতে হয় পরিপাটি করে।ভালবাসা সবিশেষ ওই কাব্য থেকে বেড়িয়ে রান্নাঘরের কৌটোতে আশ্রয় নেয়।প্রতিদিন কৌটোর ঢাকা খুলে ফুটন্ত রান্নায় ভালবাসা মিশিয়ে তার স্বাদ বাড়িয়ে দিতে হয় নিত্যনতুন।তা না হলে শিক্ষার মূল্য থাকে না,অপমান হয় মা,মাটি,দেশের।তারপর টেবিলে যখন গরম ধোঁয়া ওড়ে তখন ভালবাসার চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে পরম আহ্লাদে।জড়িয়ে ধরে ভালবাসা জিভের অচেনা স্বাদে


এখন প্রেম যদি কাব্য কথাই হবে আর তা শুধু সাহিত্যেরই রসদ তাহলে প্রেমের পরিনতি পরিনয়ের সূত্র মেলাতে ৪হাতে উল্লাস ফুলকলমে চন্দন আর কালির সংরক্ষণে ঠেকবে কেন?তাহলে সেই তো সাহিত্যই চলে এলো।সাহিত্য মানে 'সহবাস' সহ  বাস/ বাস/ () স। ভিন্নভাবে পাঠক এটিকে নিতে পারেন।কোন গৃহবধূ ঘোমটা টেনে লজ্জায় জিভ কাটতেও পারেন।কেউ আবার তত্ত্বকথার নিগুঢ় রহস্য আলোচনায় পুঁথি ঘাটতে ঘাটতে জ্ঞান আহরণে ক্লান্ত হয়ে পরতে পারেন। কেউ আবার '' ঘরেই প্রাধান্য দিয়ে যৌনসঙ্গমেই লিপ্ত হওয়া নিয়ে বিবাহের পরিমাপ করতে বসে পরতে পারেন।আর সেখানেই তো তাহলে পরিনয় সূত্র চলে এলো।সেই ব্যালেন্স,শিক্ষা,সংস্কার ভকভকে যত বকবকম


বস্তুত স্ত্রীলোকের যদি সেই ভালবাসা বা বলা ভালো সকরুণ গদগদ কৃষ্ণপ্রেমের জন্য সেইসব টক-ঝাল বা নুন-মিষ্টির সূত্রই বিশেষ প্রয়োজন অথবা কার্যকারী হয়ে পরে সেখানে স্বপাণ্ডিত্যি ফলাতে বিদ্যাধরী হতে হয় না।বলাবাহুল্য, রান্নাঘরে ডিগ্রীর অঙ্কুরোদগম ঘটাতে ''-'' স্বরবর্ণ আর ''-'' ব্যঞ্জনবর্ণের  ছাপা অক্ষর গিলে পেট ভর্তি করতে করতে বয়সের চরকায় মোবিল দিতে হয় না।চালে জলের পরিমান আর জলে ডালের পরিমাপ সঠিক কত ডিগ্রীতে থাকবে সেই পাণ্ডিত্য ফলাতে পারলেই কাব্যপ্রেম সাহিত্য ছেড়ে সংসার ধর্মে বাস্তব সুখের রসদ জোগান দেয়।একপাশে দায়িত্ব আর একপাশে কর্তব্য নিয়ে মাঝে শুয়ে সুখটান দেয় ভালবাসা।খুব সন্তর্পণে দাঁড়িপাল্লার সঠিক ব্যালেন্স-এর  সহিত ওই দুই মস্ত দায়ভার তুলে নিতে পারলেই সংসারে ভালবাসা বাড়তে থাকে।যোগ ধর্মের চেয়েও সংসার ধর্ম বড় ধর্ম একথা মানি।সংসারের নিষ্কাম কর্মেই ভালবাসা জীবন্ত হয়ে কাব্যপাতা থেকে নেমে দিনের শেষে বিছানায় শোয়,বড় সোহাগ করে।আর ডাকবার অবকাশ লাগে না,অগত্যা কৃষ্ণ হাজির হয় নিজে থেকেই প্রফুল্লচিত্তে সাজি ভর্তি প্রেম বিলাতে

 =====================
লেখায় : অনুরূপা পালচৌধুরী

No comments:

Post a Comment