তুমি
মৈনাক চক্রবর্তী
চৈত্রে বৈশাখের দগ্ধ বেলা
অথবা শ্রাবণের সোঁদা গন্ধ
কিংবা মাঘের শীত বুড়ির ভয়;
তবু রোজ তোমাকে দেখি-
ঠোঁটের রং মাখা তুমি-
শারীরিক নগ্নতাকে উজাড় করে,
ঠায় দাঁড়িয়ে থাকো কুপি হাতে।
বিনিময় প্রথার অবসান হয়েছে বহুকাল-
তবুও বিনিময় তোমাদের ছাড়েনি!
তোমার স্তনের বদলে অন্ন!
যোনির বদলে স্বাচ্ছন্দ!
আর রঙ মাখা ঠোঁট মুখ,
তোমাকে পরেরদিনের বাঁচার রাস্তা বলে দেয়।
ক্ষুধা জীবনের বড় অভিশাপ!
তাই, কখনো খাদ্যের চাহিদা অথবা পঙ্গু স্বামীর চিকিৎসায়,
কখনো অর্থের চাহিদা অথবা ইচ্ছের বিরুদ্ধে-
দেখি তোমাকে ধূসর গঙ্গার ঘাটে........
ফায়ারপ্লেসের ঝলসানো আগুনে.......
অন্ধ গলির মোড়ে কিংবা শহরের আদিম আস্তানায়.......
কিসের যেন এক নিরুপায় ক্লান্ততা
চোখের কাজলে লুকোনো একই প্রশ্ন,
শরীর বেচে কখন লক্ষ্মী হবে ধন্য!
ক্ষুধার দেবতা শোনে না কোন কথা
শোনে না সে শরীর রক্তাক্ত যন্ত্রণা-
শরীর ভেঙ্গে তিলে তিলে গড়ে তোলার
লক্ষ্মীর ভারে মোটা টাকার গোছা!
আমরা তোমাকে নিয়ে অনেক আদিখ্যেতা করেছি....
কখনো সমাজের একজন বলেছি-
কখনো যৌনকর্মী বলে তাচ্ছিল্য করেছি-
আবার তোমার ভিটের মাটি নিয়ে দুগ্গা প্রতিমা গড়ে,
তাতে অঞ্জলি দিয়েছি-
কিন্তু সমাজের স্বীকৃতি দিয়েছে কি?
বলা ভালো দিতে পেরেছি কি??
পৃথিবীর আদিমতম ব্যবসা!
অথচ তোমাকে পৌছে দিয়েছি
উচ্চ থেকে নিম্ন স্তরের মানুষের মখমলে বিছানায়!
তুমি প্রবল গতিতে সহ্য করেছে জঠর যন্ত্রণা-
তাও অন্নের জন্য, স্বচ্ছলতার জন্য--
চায়ের দোকানে কিংবা পাড়ার মোড়ে,
যেসব দাদারা দিদিরা নারী সুরক্ষা নিয়ে কথা বলে,
একবিংশে নারীকে সুরক্ষিত বলে
সেও অন্তত কিছুটা তোমার জন্য।
তুমি ছিলে তাই সমাজের বেশ কিছু নারী বেঁচে গেল
ক্ষুধার্ত হাঙ্গরের হাত থেকে।
ঝড়ের রাতে নড়বড়ে আস্তানা
যেমন তার ছাউনি দিয়ে রক্ষা করে বৃষ্টির হাত থেকে,
তুমিও যেন নগ্ন শরীরের স্তন ও ছায়ায়
রক্ষা করেছে বাড়ির মেয়েটাকে।
ক্ষুধার্ত হাঙরের কামড়ে তোমার দেহ রক্তাক্ত....
তবুও তোমাকে আমরা সামাজিক স্বীকৃতি দেবনা...
রুদ্রদেবের নারীমূর্তি তুমি।
সমাজের নীলকণ্ঠী।
তুমি সমাজের প্রকৃত সামাজিক মানুষ--
প্রকৃত সমাজকর্মী।
--------০০০---------
মৈনাক চক্রবর্ত্তী
অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন