Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

দেবাশিস কোনার



নারী আন্দোলনের একটি বঙ্গীয় রূপরেখা


দেবাশিস কোনার


ভারতীয় সমাজে বহু আদর্শ ও মহীয়সী নারীর দৃষ্টান্ত রয়েছে। পৃথিবীতে বহু নারীর কথা আমরা জানি। তাঁরা নারীত্বের আদর্শ দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। আজও তারা জগতে সকল নমস্য ও চিরস্মরণীয়া। তাঁদের শ্রেষ্ঠত্বের মূলে ছিল জীবন ভর কঠোর পরিশ্রম। সে পরিশ্রম হচ্ছে নারীত্বের জাগরণের সাধনা। কিন্তু বর্তমান যৃগের নারীর মধ্যে সে সাধনার খুবই অভাব দেখা দিয়েছে। সাধনা করে আগে নিজেকে তৈরি করতে হবে, তারপর অপরকে  তৈরি করার শক্তি পাওয়া যাবে। 'আপনি আচরি ধর্ম. জীবেরে শিখায়', এটাই হচ্ছে মূল মন্ত্র। নিজেকে তৈরি না করে অপরকে তৈরি করা যাবে না।
  নারী আন্দোলনকথাটি অনেক বড় অর্থ ধারণ করে। সারা পৃথিবীতেই নারী আন্দোলনের বিষয়ে অনেক কাজ হয়েছে। বাংলাদেশেও নারী আন্দোলনের ইতিহাস বেশ দীর্ঘ। বাংলার সাহিত্যে-শিল্পে-সংস্কৃতিতে নারীর দ্রোহ-আন্দোলন আর সাহসিকতার মূর্ত প্রকাশ ঘটেছে। রাজনীতির ক্ষেত্রেও নারীর ভূমিকা অতুলনীয়। সারা বিশ্বে নারী আন্দোলনের যে ধারা, তার স্রোত সে-ই ব্রিটিশ আমল থেকেই এই অঞ্চলের নারীদের মাঝে সঞ্চারিত হয়। আঠারো থেকে বিশ শতক পর্যন্ত বাঙালি নারীর অধিকার সচেতনতা ও আন্দোলনের ইতিহাস এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক উত্থান-পতন ও ভাঙা-গড়ার ইতিহাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। জনসংখ্যার অর্ধেক নারী সমাজের জীবন সেসময় কীভাবে আবর্তিত হয়েছে, বিকশিত হয়েছে; তা সে সময়ের রাজনৈতিক সামাজিক ইতিহাসের পাঠ থেকে জানা যায়। তবে নারী আন্দোলনের কোনো সুনির্দিষ্ট দিন তারিখ বা সন উল্লেখ সম্ভব নয় বলেই মনে হয়েছে। এটি সামাজিক বিকাশ পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং তার কোনো নির্দিষ্ট ধরন নেই। আগেই বলেছি, সারা পৃথিবীর নারী আন্দোলনের বাতাস এ অঞ্চলেও প্রবাহিত হয়েছে। তাই নারী আন্দোলনের একটি বৈশ্বিক সংজ্ঞা নির্ধারিত হয়েছিল প্রাথমিক পর্যায়ে। পৃথিবীর নানা স্থানের মতোই নারী আন্দোলনের পিছনে প্রাথমিক যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কাজ করেছে, তা হল দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা । আবার নারী অর্থনৈতিক স্বাধীনতার বিষয়টিও সারা পৃথিবীর মতোই আলোচিত হয়েছে বাংলায়। বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদেও তার উল্লেখ আমরা পাই। সেখানে যে শ্রেণির নারীর অর্থনৈতিক মুক্তির বিষয়টি এসেছে,তা অন্ত্যজ। ডোম্বী নারী বা শবরী বালিকার পরিচয় মেলে সেখানে। তাঁরা হাটে চাঙাড়ি বিক্রি করে। মধ্যযুগের লৌকিক জীবনে শ্রীকৃষ্ণ ও রাধা বিষয়ক যে কাহিনী প্রচলিত আছে, সেখানেও দেখা যায় রাধা অন্য গোপনারীদের সঙ্গে দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত অন্যান্য সামগ্রি বিক্রির জন্যে হাটে যেত। মঙ্গলকাব্যে খেয়া পারাপারের কাজে নিয়োজিত ছিল অন্ত্যজ নারী শ্রেণি। মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর চণ্ডীমঙ্গলকাব্যে ব্যাধনারী ফুল্লরার হাটে কিংবা বাড়ি বাড়ি ঘুরে মাংস বিক্রির কাহিনি আমরা পাই। মৈমনসিংহ গীতিকার দেওয়ান মদিনায়আছে কৃষকবধূ মদিনা স্বামীর কৃষিকাজে ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট। এভাবে প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য, লোকগাঁথা, পুঁথি সাহিত্যে নারীর অর্থনৈতিক মুক্তির বিষয়টি তীব্রভাবে আলোচিত হয়। কিন্তু সমাজব্যবস্থার সার্বিক কাঠামোর বাইরে নারী নয়। এবং অর্থনৈতিক মুক্তির বিষয়টিও শ্রেণিদ্বন্দ্ব থেকে আলাদা কিছু নয়। সুতরাং সমাজ কাঠামোর সার্বিক বদলে নারী নিজেকে নিয়োজিত করে আমাদের আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাসের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়েই। নারীর প্রতি সমাজের যে দৃষ্টিভঙ্গি তার একটি রাজনৈতিক ব্যাখ্যা আছে এবং সেটাই মুখ্য। আমরা বলতে পারি, যেদিন থেকে নারী তার মানবসত্তাকে আবিষ্কার করেছে, মানুষ হিসেবে নিজের অর্জন ও ত্যাগের খতিয়ান নিজেই লিখতে শুরু করেছে, সেদিন থেকে নারী আন্দোলন আসলে মানবসমাজের আন্দোলনের সঙ্গে মিলে গেছে। তখন মানুষের জন্য সংগ্রাম আর দ্রোহের মিছিলে নারী সহযোগী শক্তি হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। তাই রাজশাহীর রানী ভবানী, ঝাসীর রানী লক্ষ্মীবাঈ বা চট্টগ্রামের প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার প্রমুখের কথা যখন আমরা বলি, তখন মূলত মানুষের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেয়া জীবন উৎসর্গোকারী একজন মানুষের কথাই বলি। তবে সমাজ যেহেতু এখনও শ্রেণি আর বৈষম্যের চোখে সবকিছু দেখে, তাই নারীর অবদানকে সহযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিতেও নানা টালবাহানা দেখেছি আমরা। ফলে নারী আন্দোলনের একটি কালে নারীর স্বীকৃতি আদায়ের ক্রমধারাও আমরা লক্ষ্য করেছি।
   আন্দোলনের পিছনে যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিদ্যমান তা হলো দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। বৈশ্বিক পটভূমিতে যেমন একথা সত্য তেমন ভাবতবর্ষ তথা পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। বাংলার নারীরা সুপ্রাচীনকাল থেকেই নিপীড়িত ও নিগৃহীত হয়ে আসছে। ধর্মীয় কুসংস্কার, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি নারীকে গৃহের অভ্যন্তরে অন্তরীণ করে রেখেছে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সর্বক্ষেত্রেই নারীরা উপেক্ষিত। তবে ব্যক্তিপর্যায় কিছু নারী তাদের কর্মকা-ের স্বীকৃতি পেয়েছিল বটে, যেমন- রাজশাহীর রানী ভবানী ও ঝাসীর রানী লক্ষ্মীবাঈ, চট্টগ্রামের প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার প্রমুখ। তবে সাধারণ নারীর পক্ষে তাদের মতো স্বীকৃতি পাওয়া ছিল দুরূহ ব্যাপার। উনিশ শতকের শুরুতে বাংলায় নারীমুক্তি আন্দোলন শুরু হতে থাকে। বিশেষ করে এ সময় বাংলার রেনেসাঁ বা নবজাগরণের মানবিক আবেদন থেকে নারীর সামাজিক নিপীড়ন বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। পরে নারী আন্দোলনের ইতিহাস বাংলার রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুগপৎভাবে অগ্রসর হয়। এ সময় বিশেষ করে অসহযোগ আন্দোলন, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে নারীরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। এভাবে বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে দেশপ্রেমের মধ্যদিয়ে। বিদেশি শাসক ও শোষকদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার সংগ্রামে এদেশের নারী সমাজ বিশ শতকের শেষ পর্যন্ত এসে যুক্ত হয়েছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ও সামরিক শাসন উচ্ছেদের লড়াইয়ে।
বাংলার নারীমুক্তি আন্দোলনকে তিনটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। যথা : 

ব্রিটিশ আমল (১৭৫৭-১৯৪৭)
ভারতেের স্বাধীনতা  পরবর্তী কাল ( ১৯৪৭-১৯৭১)
বাংলাদেশের আমল ( ১৯৭১-বর্তমান)
ব্রিটিশ শাসকরা এদেশে শাসনের নামে প্রায় দুশ' বছর শোষণ করেছে। এ সময় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই অধিকার বঞ্চিত ছিল। ফলে জনগণের মধ্যে ক্রমশ ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব দানা বাঁধতে থাকে। এভাবে সমাজে সামগ্রিকভাবে এক ধরনের সচেতনতা জাগ্রত হয় ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে, এ সময় ভারতে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত উদার মনোভাবসম্পন্ন কিছু নেতৃত্বের আবির্ভাব ঘটে। যাদের সহযোগিতায় বাংলার নারী আন্দোলন আরো বেগবান হয়। এসব উদার মনোভাবসম্পন্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি ভারতীয় সমাজে বিদ্যমান ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক জীবনের ক্ষয়িষ্ণুতার বিরুদ্ধে রেনেসাঁ বা নবজাগরণের ডাক দেয়। এই রেনেসাঁর মানবকল্যাণমুখী জাগরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নারী জাগরণ। এ উদার মনোভাবসম্পন্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি রেনেসাঁর মানবিক আবেদন থেকে নারী সমাজের সামাজিক নিপীড়ন বন্ধের জন্য এগিয়ে আসেন, প্রতিবাদ জানান এবং নারী নিপীড়ন বন্ধের জন্য রাষ্ট্রীয় আইন তৈরির পক্ষে আন্দোলন করেন। এই আন্দোলন সমাজ সংস্কারমূলক হলেও বাংলায় নারী আন্দোলনের ইতিহাসে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
নারীমুক্তি আন্দোলনে সমাজ সংস্কারকদের ভূমিকা :
রাজা রামমোহন রায় (১৭৭২-১৮৩৩), ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-১৮৯১), মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮১৭-১৯০৫) প্রমুখ সামগ্রিকভাবে সমাজ পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। নতুন যুগ ও নতুন আদর্শের ভিত্তিতে সমাজ গড়ে তোলার জন্য তারা যে কাজ করে গেছেন তার একটি অংশ ছিল নারীর সামাজিক নিপীড়ন বন্ধ করা ও নারীকে শিক্ষিত করে আত্মনির্ভরশীল হতে সাহায্য করা। উনিশ শতকের বাংলায় নবজাগরণের সঙ্গে নারী জাগরণের সম্পর্ক এভাবেই অবিচ্ছেদ্য হয়ে আছে।
চিন্তায়, চেতনায় ও মননে নিজ যুগের চাইতে অগ্রসরমান রামমোহন রায় একই সংগ্রাম করেছেন জীবনভর। সমাজের চলিত ধ্যান-ধারণা, নারী নিপীড়নের জন্য চলিত সমস্ত রীতি-নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তিনি হয়েছিলেন নারী সমাজের বন্ধু এবং রক্ষাকর্তা। সামাজিক আচার-আচরণ ও বিধিনিষেধের মধ্যদিয়ে নারী সমাজের প্রতি মর্যাদাহীনতা প্রকাশিত হতে দেখে তিনি সামাজিক সব ধরনের প্রথা যেমন- বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, কৌলিন্য ও অধিবেদন প্রথা আইন করে বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন। অসহায় বিধবাদের জন্য অর্থ তহবিল গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া তার প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত আত্মীয় সভার অধিবেশনে বাল্য বিধবাদের বাধ্যতামূলক বৈধব্য নয়তো সহমরণ, বহুবিবাহ ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও নিন্দা প্রস্তাব থাকত।
নারী নির্যাতনের মূল কারণ খোঁজ করে তিনি দেখিয়েছেন অর্থনৈতিকভাবে নারী অন্যের ওপর নির্ভরশীল বলেই নারীরা অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকছে। নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য দরকার অর্থনৈতিকভাবে নারীকে স্বাবলম্বী করা।
নারী জাগরণে রামমোহন রায়ের বলিষ্ঠ ভূমিকার একটি অংশ হচ্ছে সতীদাহ প্রথা বন্ধে সাফল্য অর্জন। যদিও ব্যক্তিগত দুঃখবোধ থেকেই সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে এগিয়ে এসেছিলেন তবু সমাজ সংস্কারে তার দৃঢ়চেতামন সক্রিয় ছিল বলেই সতীদাহের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় আইন প্রণয়ন করার জন্য তার আন্দোলন সমাজে প্রসারিত হয় এবং তা সাফল্য লাভ করে। ১৮৮৫ সালের শুরুতে তিনি কলকাতায় এসে ইংরেজ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সতীদাহ প্রথা বন্ধের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। ১৮১৩ সালে লর্ড ময়রা সতীদাহ প্রথা আংশিকভাবে নিয়ন্ত্রিত করার জন্য নির্দেশ জারি করেন এবং ১৮১৭ সালে তা চূড়ান্ত রাজবিধি হিসেবে প্রচারিত হয়।
১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার কাছে এ সতীদাহের একটি লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে। কলেরায় মৃত এক যুবকের বিধবা পত্নী চিতার আগুন দেয়ার পর সবার অলক্ষ্যে চিতা থেকে নেমে জঙ্গলে পালিয়ে যায়। শ্মশান যাত্রীরা চিতার মধ্যে সতীকে না পেয়ে জঙ্গল থেকে টানতে টানতে এনে এক ডিঙি নৌকায় করে মাঝ নদীতে নিয়ে ডুবিয়ে মারে।
এ ঘটনায় দেশের মধ্যে দারুণ উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। রামমোহন রায়ের দল ও কলকাতাবাসী ইংরেজরা প্রতিবাদ করেন। তখন বড়লাট ছিলেন লর্ড আর্মহাস্ট। এতবড় নিষ্ঠুর ঘটনার পরও তিনি সতীদাহ প্রথা বন্ধের আইন জারি করতে সাহস করেননি। তবে আরো কিছু কঠোর নিয়ম জারি করে সতীদাহকে নিয়ন্ত্রিত করলেন তিনি।
নিয়মগুলো ছিল এরকম :
কোনো সহমরণ নারীকে মৃত পতির সঙ্গে ছাড়া অন্যভাবে দাহ করা যাবে না বা অন্য কোনোভাবে হত্যা করা যাবে না।
সহমরণকামী বিধবাকে নিজে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গিয়ে অনুমতি নিতে হবে, অন্যের মাধ্যমে অনুমতি নিলে হবে না।
বিধবার সহমরণে সহায়ক কোনো ব্যক্তি চাকরি পাবে না।
সহমৃতা বিধবাপতির কোনো সম্পত্তি থাকলে তা সরকার বাজেয়াপ্ত করবে।
সমাজের প্রতিকূল শক্তির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সংগ্রাম করে প্রতিরোধ আন্দোলন ও সংগ্রাম করেই রামমোহন রায় নিশ্চুপ হননি। তিনি হিন্দু শাস্ত্র থেকে সতীদাহ নিবারণের পক্ষে বহু উদ্ধৃতি সংগ্রহ করে এটাই প্রমাণ করলেন যে, বিধবার সহমরণ শাস্ত্র অনুমোদন করেনি এবং বিধবার শুদ্ধাচারের কথাই শাস্ত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। ১৮২৯ সালের ৪ জানুয়ারি লর্ড বেন্টিঙ্ক সতীদাহ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ডিক্রি জারি করলেন।
বাংলার নারীর বাঁচার অধিকার পেল রামমোহন রায়ের কাছ থেকে। আর শিক্ষা সম্মান, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচার পথ খুঁজে পেল ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের চেষ্টায়। উনিশ শতকের প্রথমার্ধের প্রধান পুরুষ রামমোহন রায় এবং দ্বিতীয়ার্ধের প্রধান পুরুষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের 'বাল্যবিবাহের দোষ' 'বিধবার পুনর্বিবাহ' বিষয়ে বহু লেখালেখি, তর্ক উত্থাপন ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আইন প্রণয়নের চেষ্টা করে সফল হয়েছেন। ১৮৫৬ থেকে ১৮৬৭ পর্যন্ত মাত্র ১১ বছর সময়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ৬০টি বিধবা বিবাহের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এসব বিয়ের খরচ বাবদ ৮২ হাজার টাকার দায়িত্ব তিনি নিজে বহন করেছিলেন। এজন্য ৫০ হাজার টাকা ঋণ হয়েছিল। এই ঋণের কথা শুনে তাকে ঋণমুক্ত করার জন্য হিন্দু পেট্রিয়ট ও এডুকেশন গেজেটের সম্পাদকরা এবং কয়েকজন ব্যক্তি বিধবা বিবাহ তহবিল খোলার উদ্যোগ নিলে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর আপত্তি জানান। সেজন্য এ উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যায়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নিজেই সমস্ত ঋণ শোধ করেন। শুধু বিধবা বিবাহের সমর্থনেই নয়, বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ বন্ধের জন্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর আন্দোলন করেছেন। বাল্যবিবাহ বন্ধের জন্য বহু আন্দোলনের পর ১৮৬০ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের চেষ্টায় সহবাস সম্মতি আইন জারি হয়। সে আইনে মেয়েদের সর্বনিম্ন বিয়ের বয়স ১০ বছর। যেসব বিবাহিত মেয়েদের বয়স ১০ হয়নি তাদের সহবাসকে পাশবিক অত্যাচার হিসেবে গণ্য করা হতো। নারী শিক্ষায় মিশনারিদের উদ্যোগ : সমাজ সংস্কারমূলক উদ্যোগ নিয়ে নারী সমাজের দুর্গতি দূর করার জন্য উনিশ শতকের পুরো সময়জুড়ে বাংলার ইংরেজি শিক্ষিত ব্যক্তিদের উদ্যোগে সৃষ্টি হয়েছে এদেশের মেয়েদের শিক্ষার জন্য তৎপরতা। শ্রীরামপুরের মিশনারিরাই নারী শিক্ষার উদ্যোগে সর্বপ্রথম, যদিও খ্রিস্টধর্মের প্রসারই ছিল মূল লক্ষ্য। ১৮১১ সালে প্রায় ৪০ জন বালিকা নিয়ে উইলিয়াম কেরি মার্শম্যানও ওয়ার্ড ধর্মশিক্ষার জন্য প্রথম একটি বালিকা বিদ্যালয় খোলেন। ১৮১৮ সালে চুঁচড়ায় বালিকাদের জন্য আলাদা স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন লন্ডন মিশনারি সোসাইটির রবার্ট মে। এরপর স্থানীয় ব্যাপটিস্ট মিশনারিদের স্ত্রীদের উদ্যোগে অবিভক্ত বাংলায় প্রথম মেয়েদের শিক্ষা বিস্তারের প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৯ সালের মে-জুন মাসে কলকাতায়। প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল 'দি ফিমেল জ্যুভেনাইট সোসাইটি'। এই প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলা ভাষায় শিক্ষা দেয়ার জন্য জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে ছাত্রীদের সুযোগ সৃষ্টি করে প্রথমে গৌরিবাড়ীতে একটি, পরে আরো কয়েকটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। এসব স্কুলের ছাত্রীর সংখ্যা প্রথম বছর ছিল ৮, দ্বিতীয় বছর হয়েছিল ৩২। ইংরেজ মিশনারিদের উদ্যোগে পরিচালিত মেয়েদের স্কুলগুলো খ্রিস্টধর্ম প্রচারের বিষয়ে খুবই গুরুত্ব দিত। এ কারণে হিন্দু সম্ভ্রান্ত বংশীয়রা এসব স্কুলে পরিবারের মেয়েদের পড়াতে অনিচ্ছুক ছিলেন। এ সংকট দূর করার জন্য এলিয়ট ডিঙ্কওয়াটার বীটন বা বেথুন উদ্যোগী হয়ে ১৮৪৯ সালে একটি অবৈতনিক বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন, যা বেথুন বালিকা বিদ্যালয় রূপে পরিচালিত হয়ে ওঠে। পরে বেথুন বালিকা বিদ্যালয় অনুসরণে বহু স্কুল খোলা হয়। ১৮৫৭-১৮৫৮ এর মধ্যে বাংলার বিভিন্ন জেলার মেয়েদের জন্য ৩৫টি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্কুলগুলোতে আনুমানিক ১ হাজার ৩০০ ছাত্রী পড়ত, ৬ হাজার ১৪৫ টাকা মাসিক খরচ হতো। স্কুলগুলোর খরচ চালানোর জন্য বহু দেশি-বিদেশি শুভানুধ্যায়ীরা চাঁদা দিতেন। সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মেয়েদের পড়ার জন্য ঘরে ও স্কুলে ব্যবস্থা করার উদ্যোগ বেড়ে যায়। ১৮৫৪ সালে বাংলাদেশে ২৮৮টি স্কুলে ৬ হাজার ৮৬৯ জন্য ছাত্রী পড়াশোনা করেছে। বেথুন বালিকা বিদ্যালয় মেয়েদের উচ্চশিক্ষার পথ প্রশস্ত করে। প্রবেশিকা পরীক্ষায় মেয়েদের সাফল্য লক্ষ্য করে ১৮৭৯ সালে বেথুন কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়। উল্লেখ্য, মেয়েদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির জন্য বেথুন কলেজকে ১৮৮৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। চন্দ্রমুখী বসু ও কাদম্বিনী বসু বেথুন কলেজ থেকে মহিলাদের মধ্যে স্নাতক হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। নারী শিক্ষার ইতিহাসে ১৮৮৩ সাল স্মরণীয় ও উজ্জ্বল একটি বছর। নারী জাগরণে ব্রাহ্মসমাজের ভূমিকা : রাজা রামমোহন রায় ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ১৮২৮ সালে। নারীরা সামাজিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য তার যেসব পদক্ষেপ আত্মীয় সভার মাধ্যমে সাফল্য লাভ করেছিল তার বিস্তৃতি ঘটেছিল ব্রাহ্মসমাজের মাধ্যমে। সমাজ সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে ব্রাহ্মসমাজের উদ্যোগে মেয়েদের শিক্ষা চালু করা ও অবরোধ প্রথা দূর করার আন্দোলন শুরু হয়েছিল। সমাজে আশ্রয়হীনা, পতিতা, বিধবা, অত্যাচারিত মেয়েরা ব্রাহ্মসমাজে আশ্রয় পেত। পূর্ববঙ্গ ব্রাহ্মসমাজ ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৪৬ সালে। পরে পূর্ববঙ্গের সর্বত্র ব্রাহ্মসমাজ গড়ে উঠেছিল। এসব ব্রাহ্মসমাজের মূল উদ্যোক্তারা নারী শিক্ষার প্রসার ও নারী সমাজের উন্নয়নের দিকে দৃষ্টি দিয়েছিলেন। তবে এরা মূলত নীতি শিক্ষার দিকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। ব্রাহ্মসমাজের উদ্যোগে অবিভক্ত বাংলার সর্বত্র নারী জাগরণের সূচনা ঘটে। মেয়েদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা, বাড়িতে বাড়িতে আত্মীয় মেয়েদের শিক্ষা দেয়া, বিধবা বিবাহের প্রসার করা, কুলীন বিয়ে বন্ধ করা প্রভৃতি বাস্তব কর্মসূচি গ্রহণ করে বাংলার ব্রাহ্মণরা নারীকে সমাজের দুর্গতি থেকে রক্ষা করেছেন এবং নারী প্রগতির পথ উন্মুক্ত করতে সাহায্য করেছেন। বাংলার নারীদের জাগরণের সূচনাপর্ব এভাবেই শুরু হয়েছিল। গুরুচরণ মহালাবনিশ প্রথম ব্রাহ্মণ যিনি সামাজিক নিপীড়নের হাত থেকে জনৈকা হিন্দু বিধবাকে মুক্তি দেয়ার জন্য বিয়ে করেছিলেন। তার বাড়িতে প্রায় ৩০ জন হিন্দু কুমারী ও বিধবা সামাজিক আশ্রয় নিয়েছিলেন। এজন্য তাকে অনেক বিপদ ও ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল। এভাবে ব্রাহ্মসমাজ নিপীড়নের হাত থেকে নারী সমাজকে রক্ষা করেছে। বাংলাদেশে ব্রাহ্মসমাজের মধ্যে বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবার থেকে স্বর্ণকুমারী দেবী, সরলাদেবী চৌধুরাণী, প-িত রমাবাঈ প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। ঊনবিংশ শতকের শেষ ভাগে স্যার সৈয়দ আহমেদ ব্রেলভি, মীরনাসির আলী তিতুমীর ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটাতে সচেষ্ট হন। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের সময় স্যার সৈয়দ আহমদ খান, নওয়াব আব্দুল লতিফ, আমীর আলী প্রমুখ মুসলিম নর-নারী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে সচেষ্ট ছিলেন। এদিকে প-িত রমাবাঈ, রমাবাঈ রানাডে, আনন্দিবাঈ যোশী, ফ্রান্সিসিয়া সোরাবজী, এ্যানি জগন্নাথ, রুমোবাঈ প্রমুখ শিক্ষিত নারী শিক্ষা ছাড়াও নারীদের নার্সিং শিক্ষা ও ডাক্তারি শিক্ষার জন্য আন্দোলন করেন। এভাবে অল্পসংখ্যক সমাজ সংস্কারক এবং কতিপয় শিক্ষিত ব্যক্তি বিশেষ করে ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ভারতে হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ে একটি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়ে ওঠে। এরই ফলে ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সর্বভারতীয় কংগ্রেস এবং ১৯০৬ সালের মুসলিম লীগে নারীরাও অংশ নিতে আগ্রহান্বিত হয়। এ প্রসঙ্গে সালমা খান বলেছেন, দেশের প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল কর্তৃক অনুসৃত ও সমর্থিত নীতিমালার ওপরই নির্ভর করে সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে নারীদের সম্পৃক্ততা। উনিশ শতকের শেষভাগে কংগ্রেস বিভিন্ন সামাজিক সংস্কার সাধনে অংশ নেয়। অন্যদিকে, মুসলিম লীগে কিছু মহিলা সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হয় যদিও তারা গতানুগতিক প্রথা বা ভাবমূর্তি তুলে ধরার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করতেন। জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে নারী : ঊনবিংশ শতকের শেষার্ধে বিশ শতকের প্রথমার্ধে ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন যখন তুঙ্গে ওঠে তখন বাংলার নারীরাও সে আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। একদিকে নিজস্ব অধিকারের দাবি প্রতিষ্ঠা, অন্যদিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মাতৃভূমিকে মুক্ত করার জন্য বাংলার অকুতোভয় নারীরা অনেক নির্যাতন, অত্যাচার ও জেল-জুলুম সহ্য করেও ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে সামিল হন। এ সময় নারীমুক্তি আন্দোলন ও ঔপনিবেশিক শাসনবিরোধী আন্দোলন একাত্ম হয়ে যায়। নিম্নে বিভিন্ন আন্দোলনে নারীদের আন্দোলন তুলে ধরা হলো : স্বদেশী আন্দোলনে নারী : স্বদেশী আন্দোলনে নারী সমাজের ভূমিকা ছিল উল্লেখ করার মতো। ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে বহুসংখ্যক নারী যুক্ত হয়েছিলেন। তখন ব্রিটিশ শাসনবিরোধী আন্দোলন দুই ধারায় চলছিল। জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সশস্ত্র আন্দোলন

জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের এই দুই ধারার মধ্যদিয়ে সৃষ্টি হওয়া নারী আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন সরজিনী নাইড়ু, বাসন্তী দেবী, উর্মিলা দেবী, নেলীসেন গুপ্ত, মোহিনী দেবী, আশালতা সেন, সরযু সেন, প্রফুল্লমুখী বসু, জ্যোতির্ময় গাঙ্গুলী, লাবণ্যপ্রভা প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। বিপ্লবী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, শান্তি ঘোষ, সুনীতি চৌধুরী, কল্পনা দত্ত, বীণা দাস, উজ্জ্বলা মজুমদার প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে মহাত্মা গান্ধী নারী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেন। এতে বহু নারী গান্ধীর শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদান করেন। নারীরা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে নানারকম দেশাত্মবোধক গান গেয়ে নিজেদের মধ্যে উত্তাপ ছড়াতেন। জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ব্রিটিশ পণ্য বর্জন, স্বদেশী পণ্য উৎপাদন ও স্বদেশী পণ্য ব্যবহারের নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। দলে দলে দেশি কাপড়ের জন্য চড়কার সুতা কাটতে শুরু করেছিল। এ পদক্ষেপ শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। এর মধ্যদিয়ে আন্দোলন আরো বেগবান হয়েছিল।
অসহযোগ আন্দোলনে নারী : ১৯২১ ও ৩০-এর অসহযোগ আন্দোলনেও নারীদের সাহসিক কর্মকা- ছিল উল্লেখ করার মতো। এ সময় গান্ধীজি নারী সমাজের মধ্যে তীব্র আবেগ সৃষ্টি করেন। বাসন্তী দেবী ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের সহধর্মিণী। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তার পরিবারের সদস্য নিয়ে। ১৯২১ সালের ১৭ নভেম্বর প্রিন্স অব ওয়েলস ভারতে এলে হরতাল কর্মসূচি দেন। এতে সভাস্থল থেকে বাসন্তী দেবী, উর্মিলা দেবী, সুনীতি চৌধুরীসহ ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে জনতার প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে বাসন্তী দেবীকে সরকার মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল। সারা বাংলায় সে সময় থেকেই নারীরা জাগরিত হতে থাকে রাজনৈতিক সচেতনতা নিয়ে। উর্মিলা দেবী নারীকর্ম মন্দির নামে সংগঠন গড়ে তোলেন। সেখানে বহু নারীকে নেতৃত্বের পর্যায়ে গড়ে তোলা হয়েছিল। এই সংগঠনের কর্মকা-ের প্রভাবে ও অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে হেমপ্রভা মজুমদার, সুনীতি দেবী, আশালতা সেন, নেলীসেন গুপ্ত, মোহিনী দেবী, জ্যোতির্ময়ী গাঙ্গুলী, সরলতা গুপ্ত, দৌলতুন্নেছা প্রমুখ প্রত্যক্ষভাবে উদ্বুদ্ধ হন। সমগ্র দেশের বিভিন্ন গ্রামে শহরে নারীর অসহযোগ আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি করে মহিলা সমিতি গঠন করে রাজনৈতিক কর্মকা-ে যুক্ত হতে থাকেন। এভাবে মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে ও প্রভাবে সিলেটের সরলাবালা দেবী, দিনাজপুরের বালুরঘাটের প্রভা চট্টোপাধ্যায়, ভোলার সুরবালা সেন, বরিশালের ইন্দুমতী গুহ ঠাকুরতা, নোয়াখালীর সুশীলা মিত্র, খুলনার স্নেহাশীলা চৌধুরী, বর্ধমানের সুরমা মুখোপাধ্যায় প্রমুখ নারী নিজ নিজ অঞ্চলে অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যোগ দিয়ে ব্যাপক নারীসমাজকে সংগঠিত ও সচেতন করার লক্ষ্যে বহু কর্মকা- পরিচালনা করেছেন। অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি অনুসারে ব্রিটিশ পণ্য বর্জিত হয়। সরকারি উপাধি বা খেতাব বর্জন, সরকারি দরবার পরিহার, সরকারি স্কুল-কলেজ বর্জন, ব্রিটিশ আদালত বর্জন, সৈন্য সংগ্রহে অসম্মতি, কাউন্সিল বর্জন, বিলাতি দ্রব্য পরিহার প্রভৃতি আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখ করার মতো।
খিলাফত আন্দোলনে নারী : ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বদেশকে মুক্ত করার জন্য অসহযোগ আন্দোলনের পাশাপাশি চলেছে খিলাফত আন্দোলন। ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে মুসলমানদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ও ধর্মীয় আবেগ অনুভূতি একত্রিত হয়ে খিলাফত আন্দোলনের গতি তীব্রতর হয়। খিলাফত আন্দোলনের মধ্যদিয়ে মুসলিম নারী সমাজের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। অসাম্প্রদায়িক মুসলিম নেতাদের অন্যতম শওকত আলী ও মওলানা মোহাম্মদ আলী সুপরিচিত ছিলেন। তাদের মা বিবি আম্মা (বি-আম্মা) এসব সভায় ভাষণ দিতেন। তার এই ভাষণে শিক্ষাপ্রাপ্ত মুসলিম, অভিজাত নারীরা উদ্বুদ্ধ হয়ে আন্দোলনের জন্য অর্থ সাহায্য সংগ্রহের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ব্যাপক সংখ্যক মুসলিম নারী এই প্রথম রাজনৈতিক আন্দোলনে ও কাজে যুক্ত হয়েছিলেন। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে নারীরা খিলাফত আন্দোলনের সভাগুলোতে যোগ দেন। সভাস্থলে বন্দেমাতারম ও আল্লাহ আকবর উভয় ধ্বনি উঠেছিল। মহিলারা পুরুষ সমাজকে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিতে আহ্বান জানাতেন। সন্তানদের মধ্যে দেশাত্মবোধ জাগ্রত করতেন ও অর্থ তহবিল সংগ্রহ করতেন। কংগ্রেসের এক সভায় বি-আম্মা উর্দুতে দেয়া ভাষণে বলেন, দেশ মাতৃকার মুক্তির জন্য প্রয়োজন হলে স্বামী পুত্রদের পাঠাতে হবে জেলে এবং নিজেদেরও ভয় দ্বিধা পরিহার করে বরণ করে নিতে হবে কারাগার। আমার সন্তানরা স্বদেশের স্বাধীনতার জন্য কারাবরণ করেছে। সেজন্য জননী হিসেবে আমি গৌরববোধ করছি। ১৯২১ সালে কংগ্রেসের অসহযোগ আন্দোলনের প্রচার কাজে বি-আম্মা তার দুই ছেলে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে বিভিন্ন অঞ্চলে সফর করেছিলেন। বি-আম্মার এই উদ্দীপ্তমূলক ভাষণে বাংলার মুসলিম জনগণের মধ্যে খিলাফত আন্দোলনে যোগ দেয়ার প্রেরণা জাগে। মৃত্যুর তিন বছর আগে এক জনসভায় বি-আম্মা ভাষণ দেয়ার সময় সর্বপ্রথম তার বোরকা ত্যাগ করেন। তিনি বলেছিলেন যে, তারা সবাই তার ভাই ও সন্তানের মতো। তাই তাদের সামনে পর্দা করার কোনো প্রয়োজন তিনি দেখেন না। এভাবে তার এই পদক্ষেপ মুসলিম নারী সমাজকে অবরোধ থেকে মুক্ত করতে সাহায্য করেছে নিঃসন্দেহে। আইন অমান্যকারী আন্দোলনে নারী : কংগ্রেসের আহ্বানে ও উদ্যোগে সারা বাংলায় ১৯২৮ থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত ব্যাপক আন্দোলনের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। এসব আন্দোলনের মধ্যে আইন অমান্য আন্দোলন ও লবণ আইন অমান্য আন্দোলন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। গান্ধীজির নেতৃত্বে এসব আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল। সিলেট কংগ্রেসের উদ্যোগে 'শ্রীহট্ট মহিলা সংঘ' গড়ে উঠেছিল ১৯৩০ সালে। এর সভানেত্রী ছিলেন জোবেদা খাতুন চৌধুরী। লবণ আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দিয়ে সিলেটের শত শত নারী ৪৪ ধারা ভঙ্গ করে পথ নেমেছিলেন। প্রায় ৬০ জনের মতো মহিলাকে কারাবরণ করতে হয়েছিল। লবণ আইন অমান্য আন্দোলনের সময় নারীরাও দলে দলে লবণ সংগ্রহের কাজে যোগ দেন। যে কোনো জেলায়, যে কোনো অঞ্চলে মহিলারা সভায় যেতেন জাতীয় পতাকা হাতে। জাতীয় পতাকা ওড়ানো নিয়ে পুলিশের সঙ্গে মহিলাদের বিরোধ বেধেই থাকত। এর ফলে বহু মহিলা গ্রেপ্তারও হতেন। স্বাধীনতার শপথ নিয়ে হাজার হাজার মহিলা আইন অমান্য আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠেন। নারীরা পাবলিক মিটিং ও মিছিল করার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করতেন। তারা প্রভাতফেরি, জাতীয় সংগীত ও দেশাত্মবোধক গান বাঁধতেও কার্পণ্য করেননি। সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হেনসা মেহতার নেতৃত্বে প্রায় পাঁচশত নারী তিলকের মৃত্যুবার্ষিকীতে যোগদান করে। এমনকি আইন পরিষদের একজন সদস্য আনাসুয়া বাই তাঁর সদস্যপদ প্রত্যাহার করে আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দেন। বরিশালের মনোরমা বসু (১৮৯৭-১৯৮৬) আইন অমান্য আন্দোলনের জন্য ১৯৩০ সালে কারাবরণ করেন। তেভাগা আন্দোলনে নারী : অবিভক্ত বাংলার ১৩টি জেলার লক্ষ লক্ষ কৃষকের রক্তস্নাত তেভাগা আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে (১৯৪৫) থেকেই জোতদার-জমিদার এর লাঠিয়াল বাহিনী ও পুলিশের সঙ্গে সংগ্রামে কৃষক রমণীরা বীরত্বের পরিচয় দিয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল এলাকায় কৃষক আন্দোলনের নেতা রমেন মিত্র ও ইলা মিত্রের নেতৃত্বে যে তেভাগা আন্দোলন গড়ে উঠেছিল ১৯৪৮-৪৯ সালে সেই আন্দোলনে নারীদের প্রাণপণ লড়াই ও আত্মত্যাগের কাহিনী ইতিহাসে উলি্লখিত হয়েছে। ১৯৪৬ সালে ঠাকুরগাঁও মহকুমার অটোয়ারী থানার রামপুর গ্রামের কৃষকরা বর্গাদারের ধান কেটে আধিয়ারের বাড়িতে তোলা শুরু করলে বহু কৃষক কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়, তা সত্ত্বেও ধান কাটা বন্ধ হয়নি। আবার পুলিশ আক্রমণ করতে এলে ওই গ্রামের রাজবংশী মহিলা দীপেশ্বরী লাঠি হাতে পুলিশকে তাগড়া করলে পুলিশ ভয় পেয়ে পিছু হঠে যায়। দীপেশ্বরীর এই বীরত্বমূলক প্রতিরোধের মুখে পুলিশের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা সব তেভাগা আন্দোলনকারীদের মধ্যে অণুপ্রেরণা জাগিয়েছিল। দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এলাকায় বহু মহিলা কৃষককর্মী আন্দোলনের নেতৃত্বে এগিয়ে এসেছিলেন। পুলিশের আক্রমণে পুরুষকর্মীরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য ধান কাটা ও কৃষকের গোলাতে ধান তোলার কাজে জয়মণির নেতৃত্বে শত শত মেয়ে পুরুষ কৃষকদের আগে থাকত। এজন্য মেয়েদের ওপর অনেক ধরনের নির্যাতন নেমে আসত। চুরি-ডাকাতি, মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হয়েছিল। তবে নারীর সাহসিকতার মাধ্যমে এগুলো মোকাবিলা করেছিল। রংপুর, জলপাইগুড়ির দেবীগঞ্জ, যশোরের নড়াইল এলাকার বাকড়ি, দেগোছা, কমলাপুর, ঘেড়োনাচ, হাতিয়ারা, গুয়াখোলা, বেলাহাটি ইত্যাদি গ্রামে তেভাগার আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠেছিল। গুয়াখোলা গ্রামের শত শত মহিলাকে নিয়ে ঝাঁটা বাহিনী গড়ে তোলেন। এরা শুধু ভলান্টিয়ার কাজ করতেন তা নয়, এরা দুর্ধর্ষ ও কৌশলী নেত্রী হিসেবে গড়ে উঠেছিলেন। ঢাকা জেলাতেও বিভিন্ন গ্রামে তেভাগা আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে মহিলারা সংগঠিত হয় এবং তারা বীরত্বের সঙ্গে পুরুষকর্মীদের পাশে লড়াই করতে থাকে। তেভাগা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায় ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বাংলার চাষি মেয়েরা বীরত্বের সঙ্গে ব্যাপকহারে সংগ্রাম করেছে। তেভাগা আন্দোলনের মধ্যদিয়ে প্রচারক, সংগঠক ও আন্দোলনকারী হিসেবে অনেক মহিলা তৈরি হয়েছে। রমেন মিত্র ও ইলা মিত্রের নেতৃত্বে তেভাগা আন্দোলনে অনেক সাঁওতাল মহিলা যোগদান করেছিল। তৎকালীন সরকার আন্দোলনকারীদের ওপর দুর্বিষহ নির্যাতন চালায় এবং নেত্রী ইলা মিত্রের ওপর চালায় নির্মম অত্যাচার। এতসব কিছু সহ্য করেও কৃষক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে পরিচালিত তেভাগা আন্দোলনে বাংলার নারীরা প্রাণপণ লড়াই করেছে, যা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে থাকবে। কৃষক বিদ্রোহ ও নারী : ব্রিটিশ যুগে বাংলার কৃষক আন্দোলনে গ্রামীণ নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়। শুধু অংশগ্রহণ নয়, আন্দোলন পরিচালনায়, সশস্ত্র সংগ্রামে, ত্যাগ স্বীকারে, শত্রু মোকাবিলায়, সংগঠন গড়ে তোলায় কৃষক রমণীরা যেমন শৃঙ্খলাবোধের পরিচয় দিয়েছেন তেমনি দেখিয়েছেন সাহস ও দৃঢ়তা। শুধু তাই নয় কৃষক পরিবারের মহিলারা একই সময় তাদের সামাজিক, পারিবারিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে নারী সংগঠন ও আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। বিশ শতকের তিরিশের দশক থেকে চলি্লশের দশকের মধ্যে ভারত উপমহাদেশের পশ্চিম ও পূর্ব বাংলার বিভিন্ন জেলায় টংক, নানকার আন্দোলন হয়েছে। এসব আন্দোলন একদিকে যেমন ছিল জোতদার জমিদারদের শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম, তেমন অন্যদিকে ছিল ব্রিটিশ রাজ্যের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি অবিচ্ছিন্ন অংশ। ব্রিটিশ সরকার ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের আইন জারি করে মধ্যযুগের সামন্ত প্রভুর বদলে নতুন সামন্তপ্রভু সৃষ্টি করল, এরা হলো জমিদার। এই জমিদাররা শহরের মানুষ, গ্রামে জমি রাখতেন। খাজনা আদায়ের জন্য তারা যাদের নিয়োগ করতেন বিভিন্ন নামে অভিহিত হয়ে হলেন তালুকদার, জোতদার, হাওলাদার ইত্যাদি মধ্যস্তরভোগী। বংশানুক্রমে চাষ করার যে অধিকার কৃষকের ছিল সে অধিকার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত আইনে কেড়ে নেয়া হয়েছিল। আর সেই অত্যযাচারে বিরুদ্ধে লড়াই করতে এগিয়ে  আসে নারী শক্তি। একথা ভুলে গেলে ইতিহাসের অবমাননা করা হবে ।

-------------------------------------

দেবাশিস কোনার, মনবিতান, বাদশাহি রোড, রবীন্দ্রকানন, বর্ধমান।



মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩