Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

প্রিয়ব্রত দত্ত

                        ও নদী রে

                             প্রিয়ব্রত দত্ত


সুন্দর একটা রিং- টোনে মোবাইলটা বেজে উঠতেই বিবেক হাতে নেয় ফোনটা| একটা অচেনা নম্বর |
—হ্যালো, কে বলছেন ?
— হ্যালো , বিবেক আমি তুহিনা বলছি |
সহসাই যেন স্মৃতির ঝরাপাতা উড়ে যেতে লাগলো বিবেকের চোখের সামনে থেকে |
এতগুলো বছর পর তুহিনা যোগাযোগ করতে পারে সেটা ভাবতেই পারছে না বিবেক | কলেজ জীবন থেকেই ওর সাথে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক | 
—আচ্ছা আমাকে সত্যি ভালোবাসো ?শরীর আর মনের গভীরতায় পৌছাতে পৌছাতে প্রশ্ন করেছে তুহিনা |
—হ্যা গো, সত্যি ভালোবাসি, ট্রু লভ্  সোনা, তুমি ?
— আমিও | ভালোলাগার আশ্লেষে আপ্লুত হতে থাকা তুহিনার সংক্ষিপ্ত উত্তর |
—সারাজীবন ভালোবাসবে তো ?
বিবেকের চোখে কী দেখতে পেলো কে জানে? বললো , কেন, তোমার বিশ্বাস হয় না ?
—হয় গো হয় | বিশ্বাসই তো সব |
—হুম্ | সব সময় বিশ্বাসটা রাখবে | আমার ওপরে মাঝে মাঝে অবিশ্বাস করো বলে মনে হয় ...
—তাই ? মুচকি হাসে বিবেক| কেন জানো?
—কেন ?
—কারন আমি তোমায় এত গভীরভাবে ভালোবাসি যে তোমাকে হারাবার ভয় পাই |
—আমি তোমারই থাকবো সারাজীবন | ভয় পেয়ো না |
— সত্যি ?
— সত্যি |
— আজ নীল শাড়ীতে দারুন লাগছে তোমায় |
—তাই ! ভ্রু নাচিয়ে বলে তুহিনা |
—হ্যা সোনা, বলতে বলতে তুহিনার নীল আকাশে ডুবে যেতে থাকে বিবেক |


গভীরে যেতে যেতে হঠাৎ যেন চৈতন্য ফিরে আসে বিবেকের |কয়েকদিন ধরে যোগাযোগ করছে না তুহিনা |ফোনে দু একবার সংযোগ হলেও অল্প সময়ের জন্য কথা হয় |
—এখন বাড়ির পরিস্থিতি খুব খারাপ, বাইরে বেরুতে দিচ্ছে না| ফোনে কথা বলছি কি না নজর রাখছে সবাই | তুমি ভালো থেকো| সময় হলে আমি ঠিক যোগাযোগ করবো |
ভিতরে ভিতরে ছট্ ফট্ করতে থাকে বিবেক |
তুহিনার অনেক ছেলেবন্ধু আছে | ভালোরকম মেলামেশা আছে| তাদের ই কারোর  সাথে প্রেম নেই তো ? না কি সত্যিই অসুবিধার মধ্যে আছে ও ! বিবেক যতই চাকরি করুক, তুহিনার বাড়ির লোক ওকে খুব একটা পছন্দ করেনা | তার জন্যেই কি ? কিন্তু আজকালকার দিনে চাকরিজীবি ছেলে কটা পাওয়া যায় ? এইরকম একটা সুপাত্র হাতছাড়া করবে ওর বাড়ির লোকেরা?
—তুমি কেন এমন করছো বলো না?এত কথা হতো , এত দেখা হতো আমাদের| তুমি কি চাও না আমার সাথে আগের মত করে থাকতে ?
—আমার কিছু করার নেই | তুমি একটু ধৈর্য্য ধরো, বিশ্বাস রাখো| 
তুহিনারএই উত্তরে ওর অসহায়তার ছবিটাই স্পষ্ট হয়ে উঠলো বিবেকের কাছে |সময় গড়িয়ে যেতে থাকে, পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তনই দেখতে পায় না সে | আবার খারাপ চিন্তাগুলো জড়ো হয়|সত্যি কি ভালোবাসে তুহিনা ওকে ? নাকি সবই ছলনা ছিল ? হয়তো অন্য কারোর সাথে জড়িয়ে পড়ছে ও ....
অসহ্য মানসিক যন্ত্রনার মধ্যে তলিয়ে যেতে থাকে বিবেক | সে তুহিনাকে প্রকৃত ভালোবাসে |তবু কেন মাঝে মাঝে ঘৃণা আসে,  রাগ আসে? কেন ক্ষোভে ফেটে পড়তে ইচ্ছে করছে তার ? ওর মনে হয় এক্ষুনি তুহিনার বাড়িতে গিয়ে ওকে সব জিজ্ঞাসা করে, কিন্তু তুহিনার সতর্কবানী মনে পড়ে, আমি যতদিন না আমাদের বাড়িতে যেতে বলবো তুমি আসবে না | আমি সব ব্যবস্থা করে তবে তোমাকে ডাকবো |না হলে আমার বাড়ির লোক তোমাকে মেনে নেবে না | যখন সময় হবে আমি ঠিক তোমায় জানাবো | আর একটা কথা আমরা যখন দুজন দুজনকে সত্যি ভালোবাসি, তাই মনে রাখবে যা হবে দুজনার ভালোর জন্যেই হবে|
প্রকৃত ভালোবাসা হলো যাকে ভালোবাসো সে যেন ভালো থাকে | নিজেকে বোঝায় বিবেক |তুহিনার যদি এতেই ভালো হয় তবে তাই হোক |
ও আর যোগাযোগ করবে না | তুহিনাই জানাবে বলেছে ওকে| দিন মাস বছর পেরিয়ে গেলেও যোগাযোগ করে নি বিবেক| সে যে আর পাঁচজনের মতো চাওয়া পাওয়ার ভালোবাসায় বিশ্বাসী নয় |সে তার প্রকৃত ভালোবাসার অপেক্ষায় থাকবে |
তবে বেশি নয় বছর দেড়েকের  মধ্যেই বন্ধু মারফৎ একজন প্রতিষ্ঠিত ইঞ্জিনিয়ারের সাথে তুহিনার বিয়ের খবর পেতেই দেরি করেনি বিবেক | সেও বিয়ে করে তনিমাকে | তুহিনার মতো তত সুন্দরী নাহলেও একটা অন্যরকম সৌন্দর্য্য আছে তনিমার | ভালো লাগে বিবেকের|
এই কয়েক বছরে ভালোবাসা দিয়ে তুহিনার স্মৃতি ভুলিয়ে দিতে পেরেছে তনিমা |

কিন্তু আজ তুহিনার গলার চেনা স্বরে সব স্মৃতি ভেসে উঠছে আবার |
—কেমন আছো ? খুব শান্ত গলায় প্রশ্ন করে বিবেক |
— ভালোই| তুমি কেমন আছো ?
 তুহিনার গলার স্বরে বিষন্নতার আভাষ পায় বিবেক |
—আমি বেশ ভালোই আছি | কথাটা শুনতে হয়তো তোমার খারাপ লাগছে ...
—না, তা কেন , তুমি ভালো থাকো  ঈশ্বরের  কাছে এটাই আমি চেয়েছি  সারাজীবন...
— তা চাইতে পারো, তবে সত্যি বলতে সব যন্ত্রনা ভুলতে অনেক সময় লেগেছে আমার |তুমি এমন কেন করলে বলো না ? আমাকে দেওয়া সমস্ত কথা মিথ্যে প্রমান করে দিলে কেন ?
— আমি কিছুই মিথ্যে প্রমান করি নি বিবেক |জানি এতসব ঘটনার পরে তোমার অবিশ্বাস স্বাভাবিক|তুমি হয়তো বুঝবেনা  এই বিশ্বায়নের যুগেও  ফ্যামিলির মানুষগুলোর মন রাখতে গিয়ে আমি আমার সুখ স্বাচ্ছন্দ বিসর্জন দিতে পারি| তুমি হয়তো বুঝবে না , একজন সফল ইঞ্জিনিয়ারের সাথে বিয়ে হলেও, সব পেয়েছির দেশে থেকেও আমার মনের গভীরের বিষাদের বীজ ধীরে ধীরে  মহীরূহে পরিনত হতে পারে |
আর সেখান থেকে ডিভোর্স পর্যন্ত হতে পারে তার কারন ও তুমি হয়তো বুঝবে না |
বিবেক কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে| তারপর বলে, আমি বোঝার চেষ্টা করছি তুমি বলো |
—তুমি হয়তো ভাববে আমি এখন বিপদে পড়ে তোমার কাছে ফেরার চেষ্টা করছি |সেই রকম ভাবনার কারন নেই | আমি আমার বাবা মায়ের, ফ্যামিলির আর সকলের কথা , আমার সংসারের কথা ভেবে তোমার সাথে যোগাযোগ করতে পারি নি | এই সহজ সরল কথাটাও তোমার দৃষ্টিভঙ্গিতে অন্যরকম মনে হতে পারে | কিন্তুএটাই সত্যি | আর  এটা তোমার জানা দরকার তাই জানালাম |
—এতদিন পর ? 
—হ্যা | এতদিন পর| কারন আমার কাছের মানুষজনদের মন রাখতে গিয়ে আমি এতদিন ধরে  অন্য খাতে নদীকে বইতে দেওয়ার চেষ্টা করে গেছি | কিন্তু এটাই বুঝেছি জোড় করে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা যায় না | সে যাক, একটা কথা জিজ্ঞাসা করা হয়নি, তুমি বিয়ে করেছো নিশ্চয় বিবেক ?
বিবেক মনের গভীরে কোথাও পাথরের বুক চিরে জলস্রোতের শব্দ শুনতে পায় | এই নদীর স্রোত তার খুব চেনা | 
      ***********************

     প্রিয়ব্রত দত্ত, বর্ধমান



মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩