রুনা দত্তর গুচ্ছকবিতা
বিশেষণভূষিত করবো
বেশ্যা, ব্যভিচারিণী, খারাপ মেয়ে
বেশ গালভরা বিশেষণ কিন্তু!
যদিও ছোট্ট থেকে শুনতে বা বুঝতে
কোন অভিধান হাতড়াতে হয়নি,
একেবারে ঘষে মেজে ব্যাচের মতো
সেঁটে দেওয়া, ঠিক যেনো -
ফেভিকলের মজবুত জোর ,যা আমৃত্যু
তোমার থেকে আলাদাই হবে না ।
তবে ভাবনাটা একটু অন্য
জায়গায়--
একা একা কি ভাবে জাত গেলো মান গেলো
শরীর তো গেলোই ,মনটাও পরাধীন!
তাহলে কেউ তো ছিলো যার জন্য গেলো ,যার
সাথে গেলো,যার সংস্পর্শে গেলো,
সেও তো সমান দোষে চিরটাকাল দোষী
কিন্তু কই এমন চোখা চোখা বিশেষণ তো
তার বা তাদের জন্য চোখে পড়ল না!
আজকে তাই উল্টোপথে একটু হেঁটে এলাম
ভ্রুকুটিতে এই মুখের আড়ালে আবডালের
মুখোশগুলোকে মন দিয়ে খুঁজলাম,
তারপর একটা মোটা অভিধান হাতে নিলাম-
এতোদিনের ছেড়ে রাখা পাপগুলোকে
আজ সযত্নে বিশেষণভূষিত করবো বলে।
একটা জীবন
কিছু মানিয়ে নেওয়া কিছুটা মেনে নেওয়া
কিছু ভুলত্রুটি কিছুটা বা দুষ্টু মিষ্টি খুনসুটি
কিছু ব্যস্ততা কিছুটা একান্ত আপন অবসর
যাপন
এই নিয়েই ছিলো মোটের উপর নির্দিষ্ট
আমাদের জীবন
তাও যেনো হঠাৎ ঘটে যায় কোথায় একটা ছন্দপতন
বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো ভেসে আসে
অপরিচিত কিছু শব্দ অনুক্ষণ
বিশ বছর সাথে কাটানো সেই আমিই
হয়ে যাই বড় অচেনা অজানা
সেই চির পরিচিত তুমিই বড় অবলীলায়
বদলে ফেলো তোমার ঠিকানা
কেমন নিশ্চিন্তে পায়ে মাড়িয়ে যাও যতো
পুরোনো স্মৃতি ,পুরোনো ভালোবাসা
এক নিমেষে ছিন্ন করে দাও জীবনের যতো
স্বপ্ন ,জীবনের সব আশা
তোমার তো মনে হয় আমি যেনো বড়ই জীর্ণ বিবর্ণ ,ঝরা পাতার
দলে
তোমার খোঁজ আজ বুঝি তাই অনাঘ্রাত
নিষ্পাপ ফুলে
হাবে ভাবে বুঝিয়ে দাও এটাই নাকি
আধুনিকতা
এটাই নাকি ক্রমবর্ধমান ধারাবাহিকতা
বেশ তবে তাই হোক ,মুক্ত হোক আবদ্ধ মন,
আমার আপন আকাশে
আজ মুখ ফিরিয়ে রাখা নিজের সাথেই বন্ধুত্ব হোক,নিজেকেই
যাবো ভালোবেসে
মেকী ছদ্ম আবরণ যতো ছিঁড়ে ফেলি নিজের হাতে এক এক করে
শুরু হোক পথচলা দেশ কাল সীমানা পার হয়ে
দূর হতে সুদূরে
মিথ্যে আধুনিকতার মোড়কে ঢাকা তোমার অহংকার ,তোমার
অহমিকা
তোমাকেই স্মারক উপহার দিয়ে আমিও আজ মুক্ত বিহঙ্গ ,পেরিয়ে
যাবো সমস্ত দ্বিধা।
তোমাকে ছুঁড়ে ফেলতেও আজ আমার নেই কোন সংকোচ কোন সংশয়
আজ তোমার সমস্ত বন্ধন ও আমি পিছনে ফেলে এলাম নিঃসঙ্কোচে ও নির্দ্বিধায়।
আমার বিশ্বাস আর ভালোবাসাই থাক আমার নিজস্ব ঠিকানায়
আমার এ ঘর শুধু ভরে উঠুক আত্মবিশ্বাস সততা আর পূর্ণতায়।
দৃশ্যমানতা
আমার জিন্সের প্যান্ট তোদের খুব ভাবায় বুঝি
আমার আঁটোসাঁটো লং টপ উফ্ফ সেটাও অসহ্য
কাঁধের পাশ দিয়ে ব্রার স্ট্র্যাপ উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে কিনা তা নিয়েও বড্ড
মাথাব্যথা যে-
রাত করে কাজের থেকে প্রতিদিন ফেরা
এটাও ঠিক হজম হওয়ার নয়,
মানে অমুকের বা তমুকের স্বেচ্ছাচারিতার
মাশুল দিতে না চাওয়া মিসেস আমি,
হঠাৎ করে মিস হয়ে নিজের আকাশটাকে
সাজিয়ে নিতে চাইলেই বাঁকা দৃষ্টির জল্পনা!
আচ্ছা আমার পাঁচবছরের ছেলেটার হঠাৎ করে অনেকটা মানসিক বড় হয়ে ওঠা
ওর বিবর্ণ শুকনো মুখ-
দিনের পর দিন রাতের পর রাত ছেলেকে
আঁকড়ে ধরে আমার বেঁচে থাকা,
একটু সুস্থ ভাবে জীবন যাপনের জন্য আমার প্রাণপাত,
শখ সুখ আহ্লাদ সবকিছু থেকে নীরবে স্বেচ্ছানির্বাসন ,
এসব ও নিশ্চই স্বচ্ছতায় চোখে আঙুল দিয়ে
চোখে পড়ার মতোই--
তাহলে তখন কেনো সবার তির্ষকভাবে পাশ
কাটিয়ে যাওয়া !
আসলে আলোচনা সমালোচনা ছাড়া
মেরুদন্ডহীন মানুষের
হয়তো গঠনমূলক কিছুই করার বা বলারও
বিশেষ থাকে না।
তাই তোদের এই বাঁকা দৃষ্টির ঝাঁজটা
আমাকে আর বিদ্ধ করে না
বরং বলা ভালো তোদের মতো অপাংক্তেয়
গুলোকে আমি ঠিক পাত্তা দিই না।
তাসের মতো ভেঙে পড়া ঘর একদিন আমি ঠিক সাজিয়ে তুলবই
আমার ছোট্ট ছেলেটা আবার হাসবে খেলবে সবুজ পৃথিবীতে দৌড়ে বেড়াবে
ততদিন আমার জিন্স আমার ব্রার স্ট্র্যাপ আমার রাত করে ফেরা
তোদের এই টক ঝাল রসালো আলোচনা গুলো আমি ফুৎকারে উড়িয়ে দিলাম
উদ্ধতএকরোখা দৃঢ়তায় হেঁটে গেলাম আমার অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে।
------------------------
@রুনা
Bahhh. . . .
উত্তরমুছুন