না বলা কথা -- নারী কথা...!!!
************************
বহু বছর আগে কবি নজরুল লিখে গেছেন - "এই পৃথিবীতে যা কিছু সৃষ্টি চির
কল্যাণকর / অর্ধেক তার সৃজিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর |"... তবু আজও এই
সমাজ, আইন আর প্রশাসনের কর্তারা.. এমনকি.. নারীরাও নিজেদেরকে ''দুর্বল"
ভেবেই তৃপ্তি পায় !! যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনার খবরে তাই আলাদা করে বলা হয় -
এত জন মারা গেছেন, এত জন আহত হয়েছেন.. তাদের মধ্যে এত জন নারী ও শিশু !!
তার মানে দাঁড়ায় .. নারীরা হলো শিশুদের সমগোত্রীয় !!
বিয়েতে পণপ্রথা
নারীদের পক্ষে সম্মান হানিকর.. এই বিষয়ে টেবিল চাপড়ানো বক্তৃতা শোনা যায়
| কিন্তু.. সেই নারী ডিভোর্সের সময় যখন নিজেকে "অসহায়" মনে করে তার
"অমানুষ" "অত্যাচারী" প্রাক্তন স্বামীর কাছ থেকে খোরপোষ দাবি করে.. তা সেই
নারীর পক্ষে কতটা সম্মানের... সে বিষয়ে কোনো বক্তব্য শোনা যায় না !!
বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের ক্ষেত্রে নারী এবং পুরুষ একে অপরকে
প্রতিশ্রুতি দেয় | কোনো কারণে পুরুষটি যদি সেই বিশ্বাস ভঙ্গ করে তবে.. আইন
ও জনগণের চোখে সে অপরাধী.. কিন্তু এক্ষেত্রে যদি কোনো নারী বিশ্বাস ভঙ্গ
করে তবে.. তাকে কোনো ভাবেই অপরাধী বলা হয় না !! এই অ-নিয়ম চোখে আঙুল দিয়ে
বুঝিয়ে দেয় ..নারীরা "দুর্বল" বলেই তার নিজের কোনো পুরুষকে ভোগ করার
অধিকার নেই .. কিন্তু.. বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য.. সে তার পছন্দের
কোনো পুরুষের ভোগের সামগ্রী হতে পারে !!
ডিভোর্সী নারীরা অনায়াসেই
তাদের প্রাক্তন স্বামীর যে কোনো পরিস্থিতিতে তার কাছে খোরপোষ দাবি করতে
পারে.. কিন্তু.. একজন বেকার স্বামী তার ডিভোর্সী চাকুরীরতা প্রাক্তন
স্ত্রীর কাছে কোনোভাবেই খোরপোষ দাবি করতে পারে না.. কেননা.. স্ত্রী যতই
চাকুরী করুক.. আইনের চোখে সে "দুর্বল".. কিন্তু স্বামী বেকার হলেও "সবল"
!!
বিবাহিতা হিন্দু নারীরা শাঁখা সিঁদুর পরে.. কিন্তু বিবাহিত
পুরুষদের বিবাহ পরবর্তী কোনো চিহ্ন ব্যবহার করতে হয় না |.. স্ত্রীরা শ্বশুর
বাড়িতে থাকলে তাদের "ঘর বৌমা" বলা হয় না.. কিন্তু স্বামীরা শ্বশুর বাড়িতে
থাকলে তাদের "ঘর জামাই" বলে ব্যঙ্গ করা হয় !!
সরকারী পেনশন পাওয়া
স্বামী মারা গেলে তার বিধবা স্ত্রী পেনশনের অর্ধেক টাকা পান কিন্তু সরকারী
পেনশন পাওয়া স্ত্রী মারা গেলে তার বেকার স্বামী মৃত স্ত্রীর পেনশনের অর্ধেক
টাকা পেয়েছেন বলে কখনো শুনিনি.. কেননা..এখানেও সেই দুর্বল সবলের তত্ত্ব
--সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিচারে.. "দুর্বল" হলেও পুরুষ "সবল".. আর
"সবল" হলেও নারী "চির দুর্বল" |
কোনো মেয়ে যদি পুরুষের প্রচলিত
পোশাক পরে তবে সমাজ তাকে 'আধুনিক', 'স্মার্ট' বলে.. কিন্তু.. কোনো ছেলে যদি
মেয়েদের পোশাক পরে তবে তাকে নানারকম ব্যঙ্গ বিদ্রুপের সম্মুখীন হতে হয়..
এর দ্বারা বোঝা যায়.. পোশাকের ক্ষেত্রেও পুরুষদের নিজস্বতা বজায় রাখতে
হবে... কিন্তু.. নারীদের ক্ষেত্রে কোনো রকম নিজস্বতার প্রয়োজন নেই | নারীরা
তাদের প্রচলিত পোশাকে "স্মার্ট" হয় না.. পুরুষদের পোশাকেই তাকে "আধুনিকা"
হতে হয়.. আর আশ্চর্যজনক ভাবে অনেক নারীই পুরুষদের প্রচলিত পোশাক পরে
নিজেকে "স্মার্ট" প্রমাণ করার চেষ্টায় মেতে ওঠে !!
প্রতি বছর "নারী
দিবস" আসে.. কবিতায়, গল্পে গানে নারীর অধিকার নিয়ে কথার ফুলঝুরি চলে..টিভি
চ্যানেলে বুদ্ধিজীবীরা গরম গরম বক্তৃতা দিয়ে.. টাকা পকেটে পুরে.. মহা
আনন্দে বাড়ি ফিরে.. নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ে... চ্যানেলের টি আর পি
বাড়ে... কিন্তু.. নারীরা যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই পড়ে থাকে... আর..
সমাজ নির্ধারিত নিয়মের স্রোতে গা ভাসিয়ে আহ্লাদে আটখানা হয় !!
এইভাবে নারীকে "দুর্বল" ভাবার অসুস্থ মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয় না
!!!...বছর বছর নারী দিবস আসে যায়... যুগ আধুনিক থেকে অতি আধুনিক হওয়ার
পথে এগিয়ে চলে .. কিন্তু.. আমাদের চিন্তা চেতনা মুল্যবোধ ঘুমিয়ে থাকে আদিম
মধ্যযুগীয় কুসংস্কারের অতল অন্ধকারে...
==================================
--দেব শংকর দাস, সাত মাইল, পূর্ব মেদিনীপুর।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন