উইমেন পাওয়ার
তুষার সেনগুপ্ত
আজকাল যেকোনো ক্ষেত্রেই
মেয়েদের এগিয়ে যেতে
দেখলে কেমন যেন ভেতর থেকে
একটা অন্যরকম ভালোলাগা অনুভব
করে সৌম্য । সেদিন
মৌমিতার মুখে যখন ওপরের
ফ্ল্যাটের শুভময় বাবুর ছোট
মেয়ের বোর্ড এক্সামে
টপার হওয়ার খবরটা
শুনল নিজের অজান্তেই
ওর চোখ চলে
গেল ডিভানে ঘুমন্ত
ছোট্ট ঝিলিকের দিকে ।
বছর তিনেকের ঝিলিক সবে
প্লেস্কুলে যাচ্ছে । ওকে
নিয়ে মৌমিতার এখন থেকেই
অনেক স্বপ্ন । মৌমিতার ও
ইচ্ছে ছিল গ্রাজুয়েশনের
পর মাস্টার্সটাও করবে ।
স্কুলে পড়ানোর ইচ্ছেটা
ওর ছোটবেলা থেকেই ।
কিন্তু কলেজে পড়তে
পড়তেই বড় জ্যেঠু
মারফত সম্বন্ধটা এসে
গেল । ফাইনাল সেমেষ্টারের
পরেই ছাদনাতলায় । মেধাবী
ছাত্র সৌম্য । ক্যাম্পাস ইন্টারভ্যুতেই
বছরে আট লাখের
চাকরি । মৌমিতার বাবা
অবনীবাবু তাই আর
দেরি করতে চাননি ।
ছেলের বাড়ির দাবিদাওয়া
যদিও একটু বেশিই
ছিল । কিন্তু অবনীবাবুরও তো আর
পয়সার অভাব নেই ।
কাস্টমসের চাকরিতে পয়সা
কামিয়েছেন দু'হাতে । একমাত্র
মেয়ের বিয়েতে দশ-বারো ভরির গহনা
দেবেন ভেবেই রেখেছিলেন
। ডিভান , হোম থিয়েটার আর
অন্তত: একটা অল্টোর
কথাও ভাবা ছিল ।
কিন্তু ক্যাশ পাঁচ লাখটা
শেষ পর্যন্ত একটু
চাপ হয়ে গেছিল ।
যাই হোক, অবনীবাবু
ভেবে দেখলেন ছেলেকে
মানুষ করতে বেয়াই
মশাইয়ের মেলা পয়সা
খসেছে । দুধেল গাই ,
মানে ওই উচ্চ বেতনের
ছেলের বাপের এটুকু
দাবী মেনে নেওয়াই
যায় । সুতরাং লেন-দেনের হিসেব মিলে
যেতেই চার হাত এক ।
কলেজ লাইফ থেকেই
সৌম্য খেলা পাগল ।
আরও পরিষ্কার করে
বললে ফুটবল পাগল ।
রাত জেগে ইপিএল
আর লা-লিগা র খেলা দেখাটাও
সিগারেটের মতই ওর
আরেক নেশা । এখন অলিম্পিক
চলছে । একে একে
অভিনব বিন্দ্রা আর
সাইনা নেহওয়ালে আশাভঙ্গ
হতে না হতেই
নড়েচড়ে বসল দীপার
পারফরমেন্সে । কিন্তু সেখানেও একটুর
জন্যে হাতছাড়া পদক ।
মনে মনে সৌম্য
যখন এক রকম
সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে
যে ও আর রাত
জেগে খেলা দেখে
সময় নষ্ট করবে
না, ঠিক সেই
মুহূর্তেই ব্যাটনটা হাতে
তুলে নিলো ভারতের
প্রমীলা বাহিনী । প্রথমেই
নাম না জানা
সাকশি মালিকের ব্রোঞ্জ
মেডেল এবং সেই
রেশ কাটতে না
কাটতেই সিন্ধুর রূপো
। খেলা পাগল
সৌম্য ভারতীয় প্রমীলা
বাহিনীর সাফল্যে গর্বিত
হয়ে ফেসবুকে হ্যাচট্যাগ
সহযোগে স্ট্যাটাস দিল "#ফিলিং_প্রাউড_উইমেন_পাওয়ার "
সৌম্য মৌমিতার ডিনার
শেষ । ঝিলিক ঘুমিয়ে
কাদা । বাইরে অঝোর
ধারায় বৃষ্টি পরছে ।
তরলপ্রিয় পাবলিক যেটাকে
আবগারি আর বর্ষাবিলাসিরা
রোমান্টিক ওয়েদার বলে আজ
ওয়েদারটা ঠিক সেই রকমই ।
তাছাড়া আজ সৌম্যর
মনটাও খুশিতে ভরে
আছে । মৌমিতা রোজকার
রুটিন মতই ড্রেসিং
টেবিলের সামনে টুলে
বসে মুখে ক্রীম
ঘষছে । সৌম্য একটু
ঝুঁকে পেছন থেকে
মৌমিতাকে জাপটে ধরে
ওর কাঁধে থুতনিটা
রেখে রোমান্টিক স্বরে
বলল ,
- “সিন্ধু তো রেডি
এবার একটা মেসি-রোনাল্ডো কিম্বা নিদেন
পক্ষে একটা বাইচুংও
যদি.......”
মুখে ক্রীম ঘসতে
ঘসতেই আয়নায় সৌম্যর
চোখে চোখ রেখে ,
ঠোঁটে এক চিলতে
অদ্ভুত রহস্যময় হাসি
ঝুলিয়ে মৌমিতা উত্তর
দিল ?
"সিন্ধুতে শুধুই খরচা ,
বংশ রক্ষায় বাইচুং … উইমেন পাওয়ার … হ্যাচট্যাগ …
"
বলেই মুখে ক্রীম
ঘষায় ব্যস্ত হয়ে
যায় মৌমিতা । সৌম্য
আবার টিভিটা অন করল
। খবরের
চ্যানেলে তখন প্রধানমন্ত্রী র বাইট - “বেটি বাঁচাও …"। বাইরে বৃষ্টির
তেজটা যেন আরও
বেড়ে গেল।।
----------------------০০০০---------------------
তুষার সেনগুপ্ত
পারাদ্বীপ, ওড়িশা
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন