google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re মৌমিতা ঘোষাল - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

বৃহস্পতিবার, ৮ মার্চ, ২০১৮

মৌমিতা ঘোষাল



নারী দিবস

মৌমিতা ঘোষাল  


অফিসের সারাদিনের খাট খাটুনির পর, এক মুখ হাসি নিয়ে নিজের মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেই চলেন প্রভা দেবী। স্বামীর মৃত্যুর পর একা হাতে সব সামলেছেন তিনি। নিজের অফিস, মেয়ের পড়া। মেয়েকে মনের মত করে গড়ে তুলতে একটুও কার্পণ্য করেননি। মেয়ে আজ স্বাধীন চেতা। কলেজে পড়ে। পুরোনো জঞ্জাল একঘেয়ে ভাবনারা জড়িয়ে থাকেনা তাকে। পাশের বাড়ির শিখা বৌদিতো বলেই দিল সেদিন, "মেয়ে মানুষকে অত ছুট দিচ্ছ তো, দেখো কি করে! যেদিন গলায় ছুরি এসে বসবে, সেদিন বুঝবে।"
অসীম থাকলে হয়তো মেয়েকে দেখে খুশি হত। সে মানুষটা ছিল উদার মনের। ইদানীং কিন্তু মেয়ের সাথে দূরত্ব বেড়ে গেছে। লক্ষ্য করেও এড়িয়ে গেছেন অনেকবার। ভয় হয় সমাজ তার মেয়েকে গ্রাস করে নিচ্ছে কিনা! সমাজের থেকে আড়াল করে মানুষ করেছে সে। সমাজের কোনো গন্ডি রাখেননি তার জন্য। কাল নারী দিবস, একই সাথে মেয়ের জন্মদিন। অসীম তাই নিয়ে কত খুশি হয়েছিল, সাধ করে নাম রেখেছিল 'অপরাজিতা' মেয়েকে হলে ঢুকতে দেখে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন প্রভা দেবী। 'কি রে কি প্ল্যান কালকের?'
_ন্যাকামি করো না মা। তোমার জন্য আমার মাথা কাটা যাচ্ছে। লজ্জায় আর কি করে বেরাবো। জন্মদিন! আবার নারী দিবস!
অপ্রত্যাশিত উত্তরে ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে পড়েন প্রভা দেবী
_কি বলেছিস তুই এই সব?
_অনিন্দ্য কাকুর সাথে তোমার কিসের সম্পর্ক! কেনো আসে বাড়িতে বার বার! লোকে কিরকম কথা বলে জানো? তোমার কি বয়েস বাড়ার সাথে মতিচ্ছন্ন হচ্ছে!
চোয়াল শক্ত হয়ে আসে প্রভা দেবীর। নিজের মেয়ের মুখে এত নীচ কথা। এই সেই মেয়ে! যাকে নিয়ে এত গর্ব তার! ছি!
_অনিন্দ্য দা তোর বাবার বন্ধু অপু। সম্মান দিয়ে কথা বল। শুধু একদিন এসেছিল, তুইও জানিস। নিজের মায়ের অসন্মান করতে আমি শেখাইনি। 
_কি করে জানাবো! একদিন না রোজ! আবার তো কিছু বলাও চলবে না, নারীবাদ জেগে উঠবে তোমার। জেনে রেখো মা এই সব ভীমরতী চলবে না
_তোর মনে যে এত বাজে ভাবনা ঢুকেছে। কি করে কোনো মেয়েকে এই ভাবে বলতে পারিস
_মেয়ে! নারী! নারী দিবস এফেক্ট।!
_কি বলতে চাস!
_তোমাকে মা বলতে লজ্জা করছে এবার। এই নারী দিবসের ছিটে ফোটাও ডিসার্ভ করেনা তোমার মত চরিত্রহীনরা
মেয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাবার পর সোফার উপর বসে ছিলেন প্রভা দেবী। চোখের জল শুকিয়ে যাচ্ছিল, জীবনটা হঠাৎ করে মূল্যহীন হয়ে গেছিল তার
                                    ************
রাতের বচসার পর বেরিয়ে গিয়ে রুমি দিদির বাড়ি চলে গিয়েছিল অপু। রাতেই বুঝতে পেরেছে সে, বড্ড বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে কাল।আজ সব ঠিক করে দেবে সে। বাড়ির কাছে অনেক ভিড়। ভয়ে বুক ধড়াস করে উঠল। শিখা কাকিমা রীতিমত কান্নাকাটি করে জড়িয়ে ধরলো তাকে। 'তোর মা আর নেই রে!'
_কি বলছো কি!
_তোর ছেলে বন্ধুদের নিয়ে বললে কি রেগে যেতো। সত্যি ভাগ্য করে এরকম মা পেয়েছিলি। এই নে.
এক টুকরো নোট তার হাতে গুজে দিল। মোড়া পাতার ভাঁজে মায়ের হাতে স্পষ্ট লেখা 'তুই আমার নারী দিবসের সেরা উপহার অপু। তুই ছাড়া নারী দিবসের অস্তিত্ব নেই আমার কাছে।'
----------------------------০০০০০০০--------------------------------------


Moumita Ghoshal
Soroj Gupta Cancer Center & Research Institute 
Thakurpukur, M. G. Road
Kolkata - 63

1 টি মন্তব্য: