💐বিচার💐
গুরু স্বরূপ
মুখোপাধ্যায়
☺গাঁয়ের চণ্ডীমণ্ডপে বসেছে বিচার।গাঁয়ের মাতব্বর,প্রধান সকলে বসেছেন বিচারে।সেদিন নাকি রেশমী বৌদির বাড়ির জানালাদিয়ে এক ভিন গাঁয়ের লোক উঁকি-ঝুঁকি
মারছিল রাতের বেলা।রেশমী বৌদির স্বামী প্রায় কুড়ি বছর
নিঁখোজ ,সুতরাং আর এত বেলেল্লাপনা সহ্য হয় না।হয় তাকে গাঁ ছাড়তে হবে,নতুবা কুড়ি বছরের বেপাত্তা স্বামীর উদ্দেশ্যে পিণ্ডদান করে বিধবা সাজতে হবে।এতে আর যা হোক নাকি
সমাজের ধর্ম রক্ষা হবে।বৌদির একটি বারো বছরের ছেলে
আছে,সে যে পিতৃস্নেহ কি তা জানল না ; কারন জন্মের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তার বাবা
রোজগারের তাগিদে রাজস্থান পাড়ি দিয়েছিল।সেই যে ছেলের হাতে দুটাকা দিয়ে বলে গেলো পরের মাসে আসবে,কত মাস গেলো -বছর গেলো তবু এল না।গোপনে অনেকে বলে সে নাকি মারা গেছে।কিন্তু বৌদি সিঁদুর আগলে থাকে।
রেশমী বৌদি
মণ্ডপের মাঝখানে যেন শত অপরাধে অপরাধী হয়ে
বসে আছে আর তার পিতৃতুল্য মাতব্বররা কুদৃষ্টি এবং একরাশ বিষাক্ত শ্লেষ উদ্গার করছে।বৌদি দেখতে অতীব সুন্দরী,কিন্তু হায়; স্বামীর ঘর হল না।বিচারের শেষে সিদ্ধান্ত হল,যাক এবারের মত ক্ষমা ঘেন্না করা হল,তবে আর নয়।আর কিছুদিন পরেই না হোক শাঁখা
সিঁদুর তুলে দেওয়া হবে।
তারপর কয়েকমাস কেটে গেল।গ্রীষ্ম-বর্ষা পেরিয়ে
এল শীত।একদিন শীতের সকালে শোনাগেল বৌদি নেই,তার সেই বারো বছরের ছেলেটাও নেই।সকলে
ভাবল এতদিনে গাঁয়ের শান্তি হলো।কারণ চরিত্রহীনা মেয়েরা থাকলে গাঁয়ের দুর্নাম।স্বামীহীনা রেশমী বৌদির কথা প্রায় সকলেই ভুলে গেছে।পড়ে আছে তার
দোচালা খড়ের ঘরটা।কাঠবেড়ালি ,ইঁদুর আর ঘুঘু পাখির ডেরা হয়েছে ঘরটা।
হঠাৎ দেখা গেল
গাঁয়ের সেই মাতব্বর জ্ঞানীগুনী বয়স্ক ব্যক্তি
যাকে সকলেই মান্য করে হারানবাবু সেই বৌদির ঘরটা লোক লাগিয়ে ভেঙে ফেলছে-------নাকি পাকার বৈঠকখানা ঘর হবে।জিজ্ঞাসা করলে বলে ----ঐ নষ্টামেয়েটা
তাকে নাকি বিক্রি করেছে বাড়িটা।
সত্যই বিক্রি করেছিল।আর না করে উপায় কি? কারন হারানবাবু জানতেন কোথায় বৌদি গা ঢাকা দিয়েছিল।সেদিন এরকম কড়া কড়া ভাষায়
বিচার না করলে সে যে গাঁ ছাড়া হত না।আর তার বড় রাস্তার ধারে বাড়িটা কম দামে কেনা হত না।চুপিসারে সন্ধান করে নানারকম বুঝিয়ে কমদামে বাড়িটা কিনে
ফেল্লো। সকলকে তার কেনার দলিলও দেখাল। আবার হারানবাবু বড় মুখ করে বল্লো ,নষ্টাটার বাড়িটা কেনার ইচ্ছা ছিল না, তবে হাতে পায়ে ধরলো বলে আর না করতে পারলাম না।কটা টাকাতো তার হলো।বাকি জীবন খেয়ে বেঁচে থাকুক।সমাজ মাতব্বর
হারানবাবুর চাতুরীতে সমাজও দেখলো বুড়ো আঙুল ।
যে দেশের
হাইকোর্টের-সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিরাও ঘুষের টাকা আত্মসাৎ করে বিচার
করে------------সঠিক বিচারের নামে হয় নিরপরাধের সাজা।আর সেখানে গাঁয়ের
মাতব্বর এক স্বামীহীনা মহিলাকে অপবাদ দিয়ে ভিটেছাড়া করবে,এতে
অবাক হবার কি আছে? চলুক
বিচার-----------
----------------০০০০০০০০০০--------------------
গুরুস্বরূপ মুখোপাধ্যায়। কোতুলপুর, বাঁকুড়া।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন