Featured Post
স্মৃতিগদ্য ।। সুবীর ঘোষ
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
ছোট্ট করে বলতে গেলে গল্প শেষ
মধ্যজস্টির দুপুর । গনগনে রোদের রেখারা চোখের ওপর নাচছে । দু'পাশের বৃক্ষসারি উত্তাপে শশব্যস্ত । জনমনিষ্যিহীন পথ । দূরে এক চিলতে ছায়ায় গোরু ছাগলের সঙ্গে তাদের অভিভাবকটি । ডোবা পুকুর সব শুকনো । দিগন্ত ছাপিয়ে আগুনের শিখা । দূর গ্রামে কোথাও আগুন লেগেছে । শুকনো ঘাস বা খড়ে বিড়ির আগুন পড়ে ভয়ানক অগ্নিকান্ড ঘটে যাওয়ার নজির গ্রামদেশে কম নেই । আমার চোখে সানগ্লাস । নীল রেসিং সাইকেল । দু' কিলোমিটার পৌঁছুলে তবে স্যারের বাড়ি । যাচ্ছি পড়া বুঝতে । পৌঁছনোর পর পরই গুরু নিয়ে এলেন কলসির ঠাণ্ডা জল , সঙ্গে দুটো বাতাসা । এই স্যারের এক ছেলে কিশোরবেলাতেই মেনাঞ্জাইটিসে মারা যায় । স্কুলের সবাই শোকস্তব্ধ । স্যার যখন স্কুলে ফিরলেন তখন সবাই অবাক । সমস্ত শোক জয় করে তিনি ফিরেছেন । আসলে তিনি তাঁর অধীত বিদ্যা দিয়ে মৃত্যুচেতনার আলোকে মানুষের দেহাবসানের অনিবারণীয়তাকে বুঝে নিতে পেরেছিলেন ।
কীভাবে যেন আমি একবার আমাদের স্কুলের মাস্টারমশাই বেণুবাবুকে চটিয়ে ফেললাম । তিনি তখন একদিন ক্লাসে সবার সামনেই ঘোষণা করলেন অন্য যে কোনো ছেলে বা মেয়ে যদি আমাকে হারিয়ে পরের ক্লাসে প্রথম হতে পারে তাহলে তাকে বেণুবাবু বিশেষ পুরস্কার দেবেন । এটা আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াল । আমি আরো খেটে পড়তে লাগলাম । পরীক্ষার ফল বেরুনোর দিনে স্কুলে গেলাম না । যদি আমি প্রথম হতে না পারি । ফল বেরুল । যারা স্কুলে গেছিল তাদের মুখে বিকেলবেলা খেলার মাঠে খবর পেলাম আমিই প্রথম হয়েছি । এর পর কোনো বছরই প্রথম স্থানটা হাতছাড়া হতে দিইনি । কিন্তু সেই যে একবার চালু হল রেজাল্টের দিন স্কুলে না গিয়ে অন্যের মুখ থেকে রেজাল্ট শোনা সেটা স্কুলজীবন শেষ না হওয়া অব্দি চালু ছিল ।
নরসুন্দর । সেদিন আমার একটা লেখার মধ্যে কথাটা পেয়ে বন্ধু ফটিক চৌধুরী বলল—'কথাটা ছোটবেলায় খুব শুনতাম । এখন বিশেষ কেউ বলে না । কথাটা অনেকদিন পর শুনলাম' । আগেকার দিনে মানুষ ক্ষৌরকর্মের জন্য নাপিতের ওপর নির্ভর করত । নাপিত চুলদাড়ির জঙ্গল সাফ করে মানুষকে সুন্দর করত । আমার ছোটবেলায় দেখা নরসুন্দর বলতে দুই ভাই—নারান ও হারান । নারান বয়সে বড়ো, তাই সে প্রবীণদের চুলদাড়ি কাটত । হারান আমাদের মতো ছোটদের শুধুই চুল । সদ্য যুবকদের গোঁফের রেখাও ঐ হারানদাই ঠিক করে দিত । কেন জানিনা হারানদা আমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছিল । চুল কাটতে বসিয়ে শুরু হত তার যত সরস গল্প ।
--অসীম তাঁতী তোমার সঙ্গে পড়ে , না ?
--না হারানদা । ও আমার থেকে ওপরে পড়ে ।
--স্কুল যাবার সময় এক বান্ডিল করে বিড়ি নিয়ে যায় । খুব পেকেছে ।
--যাঃ ।
--মাইরি । আমি সাধু ময়রার দোকান থেকে বিড়ি নিয়ে বেরোতে দেখেছি ।
একদিন হারানদা বলল -- তোমার বাড়ির কাছে যে রঘু ঘোষ থাকে জানো তো ছকু শুঁড়ির ভাটিতে যেয়ে মদ খায় । মাঠের মুনিষ দিনমজুর ক্যানালের লেবার এই সব লোকদের সঙ্গে ।
--জানি তো । এই নিয়ে বাড়িতে কত অশান্তি । কত সম্পত্তি ছিল । সব একে একে বেচে দিচ্ছে ।
--ও তো মদ খায় না । মদই ওকে খাচ্ছে । ওর তো অনেকগুলো ছেলেমেয়ে । তা একদিন বলে কী জানো , বলে -- হারান , মদ কী সাধে খাই ! আমি ছেলেপুলে সব গুণে রেখেছিলাম । শেষের দিকের দুটো আমার নয় । তখন আমি বললাম—রঘুদা , আমাকে বললে বললে , আমি কাউকে বলতে যাবো না । কিন্তু এমন কথা আর কাউকে বোলো না । এমন কথা বলাও পাপ, শোনাও পাপ ।
স্কুল থেকে বেরিয়ে অন্যদিকে ছিটকে গেছি । কলেজ ক্যান্টিনের মটন প্যাটিস খুব সুস্বাদু । সুমন্তর আমার আরো অনেকের খুব প্রিয় । সুমন্ত একদিন বলল--জানো ক্যান্টিনের সমু মাঝে মাঝেই পয়সা চায় । আমি বললাম -- কী দরকারে চায় জিজ্ঞেস করেছো ? তারপর একদিন সুমন্ত এসে বলে—সমুর পয়সার দরকারের রহস্যভেদ করে ফেলেছি ।
--কী ব্যাপার ?
--আমাকে আমাদের কুক আনন্দীলাল বলেছে—দাদাবাবু, সমুকে পয়সাকড়ি দিও না । বাড়িতে ওর অনেকগুলো ছেলেমেয়ে । বউ বলে—হয় ভ্যাসেক্টমি করাও নয় আমার কাছে ঘেঁষবে না । সমু তাই এর ওর কাছ থেকে টাকাপয়সা জোগাড় করে নিষিদ্ধপল্লীতে যায় ।
স্কুলজীবনে যখন কিশোর পত্র পত্রিকায় কবিতা গল্প লিখছি সে সময় বীরভূম জেলার একটা ছেলের সঙ্গে আলাপ হল চিঠিপত্রে । সে-ও ঐসব পত্রিকায় লিখত । সে তখন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে কলাভবনে পড়ত । আমি যখন ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেলাম তখন আমার সেই সিনিয়র দাদাবন্ধুটি সবে চাকরি পেয়ে বর্ধমান শহরে । একদিন দুপুরে পোস্টম্যান এসে আমাকে একটা মস্ত খামের রেজিস্ট্রি চিঠি দিল । খামটা খুলে দেখলাম পুরো একটা খাতা । ঐ দাদাটা পাঠিয়েছে । পড়তে শুরু করে বুঝলাম ওটা একটা আত্মকথা । অল্পকথায় বলতে গেলে ঐ দাদার একটি স্কুলের মেয়েকে ভালো লাগত । এই ভালো লাগা এমন পাগলামির পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছিল যে মেয়েটিকে দেখলেই ঐ দাদা তাকে একটু দূর থেকে নজর রাখত । ক্রমে মেয়েটির বন্ধুরা ব্যাপারটা বুঝে যায় । এবং ঐ দাদাকে এমন করতে বারণ করে । দাদাটি তখন ওর বন্ধুদের বলে—আমি ওকে না পেলে পাগল হয়ে যাব । ওরাই যেন দু'জনের মধ্যে যোগাযোগটা ঘটিয়ে দেয় । বলাই বাহুল্য যে মেয়েটির বন্ধুরা কিছুই করেনি । আমি যেহেতু তখন ওখানে পড়ছি তাই চিত্রশিল্পী দাদা আমাকেই পরম ভরসা মনে করে আমাকেই দায়িত্ব দিয়েছে ওর একতরফা প্রেমকে ঠিকঠাক একটা রূপ দিতে । আমি তাকে দেখছি দেখছি বললেও কিছুই দেখতে পারিনি । শুধু একটি জিনিসই দেখেছিলাম --মেয়েটিকে । সে মেয়ে ছিল অপূর্ব সুন্দরী । এবং জানতে পারলাম সে কোনো বড় শহরের বিত্তশালী পরিবারের সন্তান ।
কোন্ আকর্ষণে আমি সেই মেয়েকে চিত্রশিল্পী গ্রামবাসী সাধারণ পরিবারের এক সন্তানের দিকে ঠেলে দিতে পারব সেটা ভেবে আর কুলকিনারা করে উঠতে পারিনি ।
*****************
সুবীর ঘোষ // ৩০১ আশ্রয় অ্যাপার্টমেন্ট // গ্রুপ হাউসিং , বিধাননগর //
দুর্গাপুর –৭১৩২১২ // চলভাষ---৯৯৩২৬৪০৯৪৯
সহযোগিতা
কাম্য এই সংখ্যার সমস্ত লেখা একত্রিত করে একটি
সুসজ্জিত ইবুক তৈরি করা হয়েছে। আপনি যদি সংগ্রহ করতে আগ্রহী হন তাহলে ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬
নম্বরে ন্যুনতম ১০ টাকা google pay, phonepe, paytm, freecharge বা amazon pay করতে
পারেন। প্রদানের স্ক্রীনশট ওই নম্বরে whatsapp করলেই ইবুকটি পেয়ে যাবেন। সহযোগিতা
কাম্য। |
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন